আশরাফ রোকন

আশরাফ রোকন

আশরাফ রোকনের ৫ কবিতা

প্রকাশিত : জুলাই ০৭, ২০২০

পরগাছা

পরগাছাও তো গাছ, এদের কেউ কেউ
স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা
গাছেদের চেয়েও অধিক পরিচিতি পায়,
ডালপালা ছড়ায়, পাখিদের আশ্রয় হয়
ছায়া হয় রৌদ্রদগ্ধ পথিকের মাথায়
বিশ্রামের জায়গাও হয় পশুদের, মানুষের;
কাঠ হয়, ফুল-ফল হয়

শুধু পরগাছা গাছ হয় না কখনো কোনোদিন!

এক প্রকার আগুন

ফুলের বাগানে লাগা আগুনে বসেই মনে হয় এখানে হাসছে
কলকল অবিকল ইব্রাহিমের মতো যে লোকটি, তিনি কবি!
কণ্ঠে, চরণে পুষ্পের আশায় নয় কখনও এতটুকুমাত্র
মানবিক বোধ অর্জনের কামনাতে নিত্য জ্বেলে নিয়ে
চারপাশে নিজের ভিতরে সুপ্ত চেতনার গাঢ়, লাল অগ্নি
আগুনের শিখাগুচ্ছে ক্রমাগত নিজের আগুনে পুড়িয়েই
প্রকৃত আগুনকুণ্ডকে পরিণত করে পুষ্প নিকেতনে
বেদনানির্ভর অতীতের ফুলেল কাব্যে যে ঋজু; কাব্যিক
সেই লোকটি আসলে কবি, এক প্রকারের কোমল আগুন!

ফুল ফোটার স্বপ্ন

একটা বৃক্ষের সাথে দিনরাত যুদ্ধ।
এভাবে ফুল ফোটানোর স্বপ্ন সফল হয় না,
দু`হাতে মাটি কুপিয়ে ঊর্বর করা যায় না
নিরস ভূমি।
সারা শরীরে ঘাম ঝরতে পারে;
আঙুলের ডগায় জমতে পারে বেদনার রক্ত,
আঘাতে শক্ত নখ খসতে পারে।
তবু এভাবে একটি ফুল ফোটানো সম্ভব নয়
দিনরাত প্রহার করে কোনো বৃক্ষকে।

যুদ্ধ

আমি আমার নিজের অস্তিত্বটুকুর
লড়াই করি নিজের সঙ্গে,
আমার সাথে আমার যুদ্ধ।

আমার গভীরে একটা বর্শা লুকিয়ে
প্রতিবার ঘায়েল করতে উদ্ধত আমাকে
টের পাই এক অলৌকিক অন্ধকারে—
ক্রমাগত ঘিরে ফেলে শূন্যতা এখানে
নড়বড়ে ছায়া আমারও অস্তিত্বের:
অপ্রস্তুত হেরে গিয়ে চাইনি কখনো
চাঁদের উল্টোদিকে পা ফেলে,
চলে যেতে সর্বস্ব খুইয়ে বহুদূর
পাড়ির সংকল্পে কোথাও—

আপন অস্তিত্বটুকুর সবুজ আলো
হারাতে চাই না বলেই নিয়ত লড়ি,
লড়ে যাই নিরলে নির্জনে একা একা।

মৃৎবিজ্ঞান

বোধ করি মাটির সাথেই
আজ কথা বলা দরকার
মাটির বুকেতে কান পেতে
সংলগ্ন হয়ে যাওয়ার:

যে মাটিই ধারণ করেছে
যুগ যুগ প্রাণের ফসল
এখানে সগৌরব অস্তিত্ব
শুরু থেকেই আজ অবধি:

প্রপিতামহের কালেরও
বহু বহু যুগ আগে থেকে
মাটি হয়েছে শেষ আশ্রয়,
মাটিতে মাটি হওয়ারই
এক আশ্চর্য মৃৎবিজ্ঞান!