আহাদ আলী মোল্লা

আহাদ আলী মোল্লা

আহাদ আলী মোল্লার ছড়াসাহিত্য

অমিত কুমার কুণ্ডু

প্রকাশিত : জুলাই ২৫, ২০২০

আপনারা আজ যার সম্পর্কে জানবেন, আপনারা আজ যার ছড়া পড়বেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপ্রিয় মুখপত্র চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত দৈনিক মাথাভাঙ্গার বার্তা সম্পাদক। স্থানীয় নদী মাথাভাঙ্গার নামে পত্রিকাটির নাম। এটি ১৯৯১ সালের ১০ জুন প্রথম প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলার প্রথম দৈনিক সংবাদপত্রও এই দৈনিক মাথাভাঙ্গা।

পত্রিকাটি যদিও শাদা-কালো, তবুও এর প্রচার সংখ্যা ঈর্ষণীয়। দৈনিক মাথাভাঙ্গা প্রতি শনিবার ‘কিচিরমিচির’ নামে একটি ‌শিশু-কিশোর সাময়িকী প্রকাশ হয়। আহাদ আলী মোল্লা এই `কিচিরমিচির` বিভাগটিও দেখে থাকেন। এছাড়াও তিনি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রতিনিধি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আলমডাঙ্গা উপজেলার সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে।

এতক্ষণ ধরে যার পরিচয় দিলাম, তার আসল পরিচয়টিই দেয়া বাকি রয়ে গেছে। তিনি তো শুধু পত্রিকার বার্তা সম্পাদক নন, তিনি শুধু বিভাগীয় সম্পাদকও নন, তিনি শুধু সাংবাদিকও নন, তিনি যে সাহিত্যিক। শুধু সাহিত্যিক বললে ভুল হবে, তিনি কবি। আবার যে সে কবি নয়, তিনি একজন ছড়াকার। শুধু কী ছড়াকার? না না, তিনি একজন শিল্প মানসম্পন্ন ছড়াকার। একজন শিশুসাহিত্যিক। একজন হাসিমুখের মানুষ।

এতক্ষণ ধরে যে মাথাভাঙা পত্রিকার কথা বলা হচ্ছিল, সেই পত্রিকার সাথে আহাদ আলী মোল্লার জীবন ও কর্ম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পত্রিকাটি প্রকাশের প্রথম দিন থেকেই তিনি প্রথম পাতায় ‌`টিপ্পনী` শিরোনামে একটি ছড়া লিখে আসছেন। বিগত ৩০ বছর ধরে নিরলসভাবে নিয়মিত তিনি যে সমাজ সচেতনমূলক ছড়া লিখে আসছেন তা এককথায় অভূতপূর্ব কৃতিত্ব।

মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত টিপ্পনী ছড়ার সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এ কারণে ছড়াকার হিসেবে এলাকায় সব মানুষের কাছে তিনি সমধিক পরিচিত। এই বিরল প্রতিভা ও প্রকাশের সুযোগ আর কেউ পেয়েছেন বলে আমার জানা নেই। অন্তত বাঙালি কোনও সাহিত্যকের এই সাফল্য নেই। এ ধরণের বিরল গুণের অধিকারী হবার কারণে দেশের একটি মফস্বল শহর চুয়াডাঙ্গায় থেকেও তিনি দেশের পরিচিত মুখ। তিনি লিখে চলেছেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে। সমস্ত জাতীয় দৈনিক, মাসিক, আঞ্চলিক, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক এমনকি লিটিল ম্যাগেও তার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।

যা তা লেখা প্রকাশিত হয় না, ছন্দের নৈপুণ্যে, অন্তমিলের চমৎকারিত্বে, ভাবের গভীরতায়, তার এক একটি লেখা অমূল্য হয়ে ওঠে। তিনি ছড়া নিয়ে যে নিরীক্ষা করেছেন তা যে কেউ করতে পারবে বলে বিশ্বাস হয় না। তিনি হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করেন। আড্ডা ভালোবাসেন। ঘৃণা করেন দম্ভে, অহংকারে ও ঈর্ষায়, সরল-সুন্দর জীবন যাপনে তিনি অভ্যস্ত। তিনি সুকোমল মন নিয়ে, শিশুর মতো সরলতা নিয়ে সাহিত্য চর্চা করে চলেছেন বহু বছর ধরে। আপনারা যারা তাকে এখনও চেনেন না তারা আজ চিনে নিন। যারা একটু চেনেন তারা পুরোটা চিনুন, যারা পুরোটা চেনেন, তারা হৃদয়ে স্থান দিন, যারা হৃদয়ে স্থান দিয়েছেন, তারা আহাদ আলী মোল্লার ছড়া পাঠে বিভোর হয়ে যান।

তিনি লিখেছেন `নাতির সেবা`। আমাদের সমাজে যেখানে সন্তানই মাতা-পিতার সেবা করতে ভুলে যাচ্ছে, সেখানে নাতির সেবা পাবার চমৎকার বর্ণনা তুলে এনেছেন তিনি। এটি একটি ইতিবাচক প্রচরণা। মানুষের মধ্যে সুপ্ত শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলার একটি প্রয়াস। আহাদ আলী মোল্লা সেই প্রয়াসটিই করেছেন। বাড়ির প্রবীণ ও নবীনের এমন হৃদয়গ্রাহী সম্পর্ক পৃথিবীকে স্বর্গ করে তোলে। পৃথিবীকে সুন্দর করে তোলে। আরেকটু বাসযোগ্য করে তোলে। তিনি সেই প্রচেষ্টাই করেছেন।

ভালোভাবে দাদা চলতে পারে না
লাঠি ভর দিয়ে হাঁটে,
বাতের ব্যথায় কুঁকিয়ে কুঁকিয়ে
রাত-দিন তার কাটে।

শুয়ে সুখ নেই বসে সুখ নেই
দাঁড়ালে দু’হাত কাঁপে
মাঝে মাঝে ভাবি ফুরিয়েই গেল
উচ্চ রক্তচাপে।

দাদি বেঁচে নেই হুকুম হাকামে
দাদার ভরসা আমি,
ছোটদের মতো দাদা প্রতিদিন
করে কত পাগলামি।

আমি খুব তার কাছাকাছি থাকি
জাগরণে কি বা ঘুমে,
যেই দরকার পড়ে তাকে ধরে
নিয়ে যাই বাথরুমে।

খাবার দাবার পানি এনে করি
আদর যত্ন খাতির,
বুড়ো হলে যেন আমিও এভাবে
সাহায্য পাই নাতির।

ছাত্র জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ ছুটি। বড় হলেও ছুটির আমেজ একটুও ফুরায় না। তবুও শৈশবের নির্ভাবনার ছুটির আমেজ কি পাওয়া যায়? যায় না। পাওয়া যায় না, সেই বাঁধনহারা আনন্দ, সেই আনন্দের কলোতান। ছুটিকে চমৎকার ভাবে তুলে এনেছেন তিনি। শৈশবকে চোখের সামনে তুলে ধরেছেন তিনি। শৈশবকে মুগ্ধ করে তুলেছেন তিনি, তার লেখা `ছুটি মজার ছুটি` ছড়াটিতে। আহাদ আলী মোল্লা শিশুতোষ লেখায় সিদ্ধহস্ত। তিনি শিশুদের শৈশব, শিশুদের চাওয়া-পাওয়া, তুলে আনতে পারেন তার অনন্য লেখনিতে। আমরা যারা তার লেখা পড়ি, আমরা কি সেটা টের পাই নে?

ছুটি মানেই মুক্ত স্বাধীন বাঁধন বিহীন; ছুটি
তাল বাগানে শাল বাগানে বেজায় ছুটোছুটি
গাঁয়ের সকল বন্ধু বাঁধি জুটি
হল্লা করে উঠি
এই চলে যাই খেলতে পাড়ায় পকেট ভরা গুটি
আবার মাঠে ছুটি
নিজের হাতে তুলে তুলে খাই তরমুজ ফুটি
ছোলার হোড়া চীনা বাদাম আলু মটরশুঁটি
তাড়াই ঘুঘু চড়াই শালিক টুনটুনি কুঁজঝুঁটি
নদীর ধারে দিঘির ঝোঁপে পুকুর পাড়ে জুটি
ধরি বসে বঁড়শি ফেলে ফলুই বেলে পুঁটি
তাতেই মোটামুটি
তরকারি হয়, মা সেঁকে দেয় গরম গরম রুটি
ছুটি মজার ছুটি;
মামা বাড়ির বায়না ধরা আর যতো খুনসুটি।

কী নান্দনিক অন্তমিল দিয়েছেন তিনি! কী অভূতপূর্ব অনুপ্রাস! লেখাটি যতবার পড়ছি ততবার নতুন লাগছে। আরো একবার পড়তে ইচ্ছে করছে। আরো একবার লেখাটির অন্তর্নিহিত সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। আহা! এই লেখাটি পড়ে শিশুরা কতই-না মুগ্ধ হবে!

তিনি `দাদার আমল` ছড়ায় পুরাতন ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করেছেন। স্বস্তা জিনিসের স্বস্তি এখন তো আমরা পাই না, তাই নাতিও হো হো করে হেসে ওঠে। তবে নাতিরাও একদিন জানবে, দাদা গল্প করতেন না, দাদা করতেন স্মৃতিচারণ। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ, যখন পৃথিবীটা আরো সবুজ ছিল, আরো সুন্দর ছিল।

আমার মাথায় টাক পড়েছে
এমনি তো নয় বয়েসে,
এসব কথা সেদিন দাদা
নাতির কাছে কয় এসে।

বললো দাদা সেই আমলে
যা করেছি বাস্তবে
আজকে তোকে সামান্য তার
দিচ্ছি খানিক আঁচ তবে।

পাই পয়সায় চাল কিনেছি
পেঁয়াজ রসুন ডাল কিনেছি
আত্মীয়তা শেষ করেছি
বাড়ির পোষা মুরগিতে,
দিন গিয়েছে হাসি-খুশি
ভাটিয়ালির সুর-গীতে।

চার পয়সায় কিনেছি ভাই
ইলিশও এক হালি,
দাদার কথা শুনে নাতি
হাসলো হো হো খালি।

হবে না কখনো শেষ
আহাদ আলী মোল্লা

রাসেলের হাতে পতাকা দেখেছি
সাহস দেখেছি বুকে,
হাজারো স্বপন-খোয়াব ছড়ানো
ছিল তার চোখে মুখে।

শৈশবকালে ভেবেছে রাসেল
মাতৃভূমির কথা,
বাবার দু’কানে বলেছে কিভাবে
আনা যায় স্বাধীনতা।

রাসেল জোগাল মমতা আদর
মুজিব দিয়েছে দেশ
তোমাদের ঋণ খেয়ে পরে আছি
হবে না কখনো শেষ।

শোকের মাস আগস্ট আসছে সামনে। আগস্টে বাঙালি জাতি হারিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। হারিয়েছে নিষ্পাপ শিশু রাসেল কে। হারিয়েছে বাঙালির গৌরব কে। বাঙালির বিশ্বাস কে। রাসেলের শোকে বাঙালি জাতি কাঁদে। কেঁদেছেন কবিও। তিনি লিখেছেন `এসো ফিরে এসো`

রাসেল তুমি তো জানো না এ দেশে
সবাই তোমাকে খোঁজে,
হাড়ে হাড়ে আজ তোমার অভাব
গোটা দেশবাসী বোঝে।

তুমি নাকি আছো অচেনা জগতে
বড় অভিমান বুকে,
এসো ফিরে এসো দেব বাংলার
সকল খারাবি রুখে।

ছড়াকাররা হন সমাজ সচেতন। তারা লেখেন সমাজের সমস্ত উত্থান-পতন নিয়ে। যখন বাজারে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেল, তখন তিনি লিখলেন `পেঁয়াজে দামের বিষ`

রাঁধুনিকে বলে দিয়েছি খাবারে দিয়ো না পেঁয়াজ আর
আজ থেকে শুরু, পেঁয়াজ ছাড়াই রাধাবাড়া দরকার
রাখো তো পেঁয়াজ দূরে
খাব না ও চিজ পান্তা সালাদ ছানা মুড়ি চানাচুরে।

পেঁয়াজ কিনতে গিয়েছি দাদার সাথে সেইদিন হাটে
ভীষণ গরমে ভাপ ওঠে দেখি পেঁয়াজে এ তল্লাটে
তখন থেকেই ভেবেছি পেঁয়াজ না খেলে কিসের দোষ
হেঁশেলে হেঁশেলে হোক না এ নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ।

পেঁয়াজ কিনেই পকেট সাবাড় মন হয়ে গেল ভারি
শপথ করেছি পেঁয়াজ ছাড়াই রেঁধে খাব তরকারি
পেঁয়াজে প্রখর তেজ বেড়ে গেছে বেড়েছে বেজায় ধক
চোখে দেখি যেই নাকি শুঁকি যেই ঘুরে ওঠে মস্তক।

লাগুক বেস্বাদ ভোলো না এ স্বাদ কী বা যায় আসে তাতে
নিকুচি করি গো পুরোনো রুচিকে আজই হবে বদলাতে
আকালের দেশে মাকালের মতো পাকালে পাকালে জোড়া
নানা কৌশলে দাবড়ায় তারা সিন্ডিকেটের ঘোড়া।

পেঁয়াজের ঝাঁজ বারে বারে আজ চোখে আনে লোনা পানি
ওই ছাতা কেন তোয়াজ করেই দেশে করো আমদানি
তাই শোনো আজ খেয়ো না পেঁয়াজ, কারণ জানো না ইস!
ইদানীং খুবই ঢুকেছে পেঁয়াজে বেয়াড়া দামের বিষ।

বাড়ির ছোট মানুষটি হয় সবার আদরের ধন। সবাই তাকে স্নেহ করে, তার পিছে ছুটে বেড়ায়, সে হয়ে ওঠে পরিবারের মধ্যমণি। `ছোট্ট মেয়ে টুপুর` টুপুর নামে তেমনি এক মধ্যমণিকে নিয়ে লেখা আহাদ আলী মোল্লার অনবদ্য ছড়া।

হাত ঝুমঝুম কাঁচের চুড়ি
পায়ে রুপোর নূপুর
গামছা পরে বউ সেজে সে
নাচে ঝাপুরঝুপুর।

রাঙা দু’ঠোঁট কথার বাঁশি
পাগলকরা মুখের হাসি
খায় চকোলেট ইগলু মালাই
চুষে চাপুরচুপুর।

এ ঘর ও ঘর ছুটে বেড়ায়
সকাল কি বা দুপুর
তার মধুময় বুলিতে মন
জুড়ায় খালা-ফুপুর।

বাবা মায়ের চোখের মণি
বুকের মানিক সোনার খনি
সারাবাড়ির আদুরে ধন
ছোট্ট মেয়ে টুপুর।

ছোটবেলায় আমরা সবাই দিগন্ত ছুঁতে দৌড়িয়েছি। দিগন্ত ছোঁয়ার বাসনা সব শিশুর মনেই উঁকি দেয়। নীল আকাশটা দু`হাতে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হয় সবার। কী দুরন্ত সেই ইচ্ছে! কী মিষ্টি সেই সুখানুভূতি!

বড় হলে জানা যায়, আকাশ ছোঁয়া যায় না। আকাশ আমাদের দৃষ্টির সীমা। তখন মন খারাপ হয়ে যায়। অাশৈশব লালিত ইচ্ছার মৃত্যুতে মন ভেঙে যায়। আহা! তখন কী কষ্টই না হয় বুকে! তখন কী বেদনায় না জমা হয় মনের কোনায়!

খোলা মাঠে চিৎকার করে প্রতিধ্বনি শোনা। এক পশলা বৃষ্টির পর হালকা রোদে আকাশের কোণে রঙধনু দেখা। খোলা মাঠে দৌঁড়ে দিগন্ত ছোঁয়ার প্রতিযোগিতা করা। এসবই তো শৈশব। এসবই তো জীবনের সম্বল।

নদীতে সাঁতার কাটা। নদীর ধারে গাছের মগডালে উঠে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পড়া। গীষ্মে জল শুকিয়ে গেলে কাঁদার মধ্যে মাছ ধরা। এসবই তো শৈশব। এসবই তো জীবনের সোনালি সময়। সেই সোনা ঝরা সময় নিয়ে তিনি লিখেছেন `আকাশের কাছে`

একটু দূরের মাঠের ওপারে আকাশ পড়েছে নেমে
ধূসর ধূসর মেঘের শরীর জল হয়ে পড়ে ঘেমে
ওখানে গেলেই ছোঁয়া যাবে নীল আকাশের সীমা রেখা
আহা কী দারুণ মেঘের বরণ খালি চোখে যায় দেখা।

দুই পা বাড়াই ছুটে যাই ওই আকাশের ছাদ ছুঁতে
যত ছুটি সেও সরে যায় আরও নিয়ে যায় কোন ভূতে
আমিও নাছোড় বান্দার মতো লেগে থাকি তার পিছে
ভেবেছ আকাশ সহজেই বুঝি হেরে যাব মিছে মিছে

মোটেও হবে না, তুমি যত দূরে ছুটে যাও হয়ে পাখি
কতটুকু গেলে দাঁড়ালে কোথায় সবই তার খোঁজ রাখি
তোমাকে ছোঁয়ার প্রত্যাশা নিয়ে বেরিয়েছি ঘর ছেড়ে
আজকে কালকে পরশু তোমাকে ধরবই তেড়ে তেড়ে।

পালিয়ে রেহাই পাবে না কখনো ধরা দিতে হবে ঠিকই
মরীচিকা হয়ে লুকিয়ে থাকার কৌশল জানো কী কী?
আমিও কায়দা কানুন শিখেছি তোমাকে ধরার মতো
সামনের দিকে এগিয়ে এগিয়ে ফাঁকি দেবে আর কতো?

তুমিও সৃষ্টি আমিও সৃষ্টি, জানো কার বাহুবলে
তামাম দুনিয়া ঘড়ির কাঁটার মতো অবিকল চলে
আমি সেরা তার সৃষ্টিকূলের প্রমাণ পেয়েছি তাই
তাবৎ জগত নিয়ে নেব এই দু`মুঠোর কব্জায়।

তোমার চালাকি, দেখি আর কত, কত দূরে যেতে পারো
তোমাকে ধরার সাধ্যি কি আর পৃথিবীতে নেই কারো?
দাপট দেখিয়ে কোনো লাভ নেই, শুনে রাখো আজ তবে
আমার নাগালে তোমাকে একদা আসতেই হবে হবে।

তিনি `আমাদের গ্রাম` কবিতায় লিখেছেন `আমাদের গ্রামে বসবাস করা স্বর্গের মতো লাগে।` খুব সত্য লিখেছেন তিনি। আমরা যেখানেই থাকি না কেন। যেখানেই আমাদের থাকতে হয় না কেন। আমাদের মন পড়ে থাকে আমাদের নিজভূমে। যেখানে আমাদের জন্ম হয়েছে। যেখানের জল-হাওয়াতে আমরা বড় হয়েছি। সেখানে, শুধু সেখানেই আমাদের চির শান্তি। কিছু ব্যতিক্রম ছড়া জন্মভূমি, মাতৃভাষা, জন্মস্থান, ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। আহাদ আলী মোল্লা`র এই ছড়া-কবিতাটি মুগ্ধ করবে সকলকে।

আমাদের গ্রাম তোমাদের চেয়ে আলাদা রকম ঠিক
এখানে নদীর দুই কূলে বালু রোদে করে চিকচিক
কাতল বাঁওড়ে হাঁসপাখি সাঁঝে এসে নামে ঝুপ ঝুপ
গাঙশালিকেরা পাখনা ছড়ায় আহা কী যে অপরূপ।

ভালো লাগে ভোরে কিচির মিচির পাখিদের গান শুনে
বাবলা গাছের মগডালে ঘুঘু বাসা বাঁধে ফাল্গুনে
পানবরজের কোলে কোলে পুঁই ঝিঙে পটোলের বান
চাষীদের মনে হাসি খুশি সুখ রাতদিন অফুরান।

আউশ ধানের মুড়ির মজার স্বাদ বা ক’জনা বোঝে
যারা জানে তারা সোজাসুজি এই গ্রামে চলে এসে খোঁজে
তিলের পিঠার মজাই আলাদা সাথে খেজুরের গুড়
আখের গাঁদের পাটালি অথবা নইটানা পুড়পুড়-

একবার খেলে বারবার খাবে, মন খেতে আরও চায়
পাবে ভুরো যব মসুরের ভাত পাড়া ও মহল্লায়
পিঠা পায়েশের সুবাস এখানে বাতাসে দোদুল দোলে
সেই বাতাসের বিপরীতে মাঝি নৌকায় পাল তোলে।

সরস্বতী খালে কলমি ডগারা মাথা উঁচু করে ভাসে
নীল নীল ফুল গিটে গিটে তার নিটোল মেজাজে হাসে
কমলা বিলেও শাপলা কুমুদ লাল কমলের মেলা
পদ্মপাতার সবুজ থালায় মৌমাছি করে খেলা

জোল দিঘি খাল জলাশয় ভরা কত প্রজাতির মাছ
বাড়ির উঠোনে আমলকি কুল কাঁঠাল ডালিমগাছ
আউল বাউল লালনের গান গেয়ে গেয়ে যায় কারা
সন্ন্যাসী বেশে পথে পথে ঘোরে নিয়ে হাতে একতারা।

মাটির ঘরের জানালার পাশে কান পেতে শুনি খালি
জারি সারি পীর মুর্শিদি পুঁথি ভাউয়াইয়া ভাটিয়ালি
কত না পেশার মানুষ এ গ্রামে থাকে মিলেমিশে তাই
বড়দিন পূজা ঈদ পার্বনে কোনো ভেদাভেদ নাই।

চাষী জুলা ধুপা নাপিত ছুতোর কুলি মুচি কোল আরও
কত জাত পাত পাশাপাশি বাস বিবাদ লাগে না কারো
বিপদে আপদে সবাই সবার কাছে ছুটে যায় আগে
আমাদের গ্রামে বসবাস করা স্বর্গের মতো লাগে।

আমাদের এই সবুজ শ্যামল বঙ্গভূমি শতশত বছর ধরে বিদেশিদের হাতে শাসিত শোষিত হয়েছে। কখনো মোঘল পাঠান দ্বারা, কখনো ইংরেজদের দ্বারা, আবার কখনো পাকিস্তানিদের দ্বারা। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, শতকের পর শতক ধরে আমরা শুধু পরাধীন থেকে গেছি। আসাদের মুক্তির মহানায়ক হয়ে জন্ম নিয়েছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির পরিত্রাতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। `বাঙালিরা নির্ভীক` কবিতায় `আহাদ আলী মোল্লা` আমাদের সেই শাসন শোষণের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির ইতিহাস লিখেছেন।

বাঙালি কেবল নামে ধামে তার ভূমিকা নেই এ দেশে
আমাদের ধন লুটেপুটে নিয়ে যায় বিদেশিরা এসে
নলের আগায় বলের জোরেই শাসন শোসন করে
তাবৎ জনতা রাতদিন তাই ভয়ে কেঁপে কেঁপে মরে।

নিজেদের দেশ বেহাতে এখন, লাগাম চালিয়ে ওরা
কী বিধি বিধান সকাল বিকেল জারি করে আনকোরা
বলা তো যায় না চলা তো যায় না অধিকার নিল কেড়ে
কোনো জনমেই পাক নেতাজিরা এ দেশ যাবে না ছেড়ে।

লাথি খেয়ে মরি পিঠে লাঠি খাই গতরে ব্যথার জ্বালা
মিলিটারি এসে কয় বাঙালির মাথা-বুকে গুলি চালা
আগুনে পোড়ায় ঘর বাড়ি সব ওঠে লেলিহান শিখা
চোখের সামনে ঝাপসা মরুর কুহেলিকা মরিচিকা।

যুবক-যুবতী নারী-শিশু মরে বোমা খায় বুড়ি বুড়ো
বস্তি দালান হস্তির মতো পাকসেনা করে গুড়ো
দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে গেল যাব বলো কোনপানে
হঠাৎ মুজিব খাঁড়া হয়ে যান রেসকোর্চ ময়দানে।

স্বাধীনতা চাই আঙুল উঁচিয়ে ঘোষণা দিলেন তিনি
লাখো লাখো লোক যুদ্ধে গেলেন, আর চলে ছিনিমিনি?
মুজিবের ডাকে নয় মাস শেষে স্বাধীনতা আসে ঠিক
বঙ্গবন্ধু বুঝিয়ে গেছেন বাঙালিরা নির্ভীক।

সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি, ছড়াকার, রম্য লেখক, অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আলম তালুকদার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন পরপারে। আহাদ আলী মোল্লা প্রিয় আলম তালুকদারের স্মৃতির উদ্দেশে এই
ছড়াটি লিখেছিলেন। আলম তালুকদার চলে যাওয়াতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা অপূরণীয়। ছড়াটিতে আলম তালুকদারকে দেখতে পাই আমরা।

চলার ফাঁকে বলার ফাঁকে ছড়া বানান তিনি
হাসির মানুষ বলে যাকে আমরা সবাই চিনি
কথায় কথায় মজা করেন আসর মাতান বসে
আড্ডা জমান পোক্তভাবে পান চিবানোর জোশে।

মনের ভেতর খুশির নাচন লেগেই থাকে দেখি
সব মানুষের জন্য সদায় করেন লেখালেখি
মিষ্টভাষী সদালাপী খাসা মানুষ আহা
নতুন লেখক আসলে কাছে উৎসাহ দেন বাহা।

বন্ধুসুলভ এই আচরণ অন্তরে তার ভরা
কোমল মনের দেন পরিচয় যতই ডাকুক খরা
ঘুম তাড়ানো ছড়ার মানুষ গড়ার মানুষ বটে
অটুট থাকেন সাহসে খুব অভাব ও সংকটে।

হাসি দিতেন হাসাতেনও নামজাদা এক কবি
হঠাৎ সেদিন হয়ে গেলেন স্মৃতির পাতার ছবি
আড্ডা সভা আলোচনায় তাই দেখি না আর
ছন্দ গড়ার শিল্পী প্রিয় আলম তালুকদার।

করোনা সন্দেহ একটি রম্য ছড়া। আহাদ আলী মোল্লা ছড়াটিতে রম্যর পাশাপাশি কিছু নিষ্ঠুর সত্যও তুলে ধরেছেন। তবে এ সত্য সর্বসম্মতভাবে প্রমানিত সত্য নয়। বাড়ির বৌ যেমন স্বামীর কাছে বৌ। তেমনি তার সন্তানের মা-ও। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে, তার নিরাপত্তার কথা ভেবে, অনেক সময় তারা এমন অনেক কিছু করেন, যা স্বামীর জন্য স্বস্তিদায়ক হয় না। আর মা তো মা-ই। সব মা`ই তার সন্তানের জন্য নিবেদিত প্রাণ। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, পৃথিবীতে এমন মা বিরল, যে তার সন্তানকে ভালোবাসে না। `করোনা সন্দেহ` লেখাটা সে কারণেই বহুমাত্রিক ভাবে সুন্দর হয়ে উঠেছে।

সকাল বেলা উঠেই আমার হঠাৎ শুরু হাঁচি
ভেংচি কেটে পড়ল সরে পাশের বাড়ির চাচি
আড় চোখে চায় প্রাণের বিবি ‘হাঁচছো কেন বলো?
নাকি তোমার মনে মনে অন্য কিছু হলো?

দুপুর বেলা দেখা দিল শুকনো কাশি খুবই
বন্ধুরা কয় টেলিফোনে হাত বারবার ধুবি
দুপুর গড়ায় ধীরে ধীরে গায়েও ভীষণ জ্বর
অমনি আমি হয়ে গেলাম বউয়ের কাছে পর।

সন্ধ্যা হতেই মা ছাড়া আর নিচ্ছে না খোঁজ কেহ
বউ করেছে আমার দেহে করোনা সন্দেহ
আমায় রেখে গোপনে সে হাঁটল বাপের বাড়ি
ফোনে জানায় খুব শিগগির করবে ছাড়াছাড়ি।

অনেক মানুষ প্রশ্ন করে ফোনে আমার কাছে
তুমি নাকি সংক্রমিত করোনা ভাইরাসে?
জবাব দেব কী?
চরম ব্যথা নিয়ে সেসব সাতবেলা ভাবছি।

জ্বর ও গলা ব্যথার সাথে কপাল মাথাও টাটায়
স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা নেয় পরীক্ষাতে পাঠায়
মা রয়েছেন আমার পাশে বলেন তিনি, খোকা
হয়নি কিছুই মিছে মিছে ভাবিস খালি বোকা।

মায়ের কথায় ধীরে ধীরে হই স্বাভাবিক আমি
এই সাধারণ সর্দি কাশি তাতেই এ পাগলামি?
বউ পালালেও মায়ের মতোন আপন আছে কে বা
ধীরে ধীরে সুস্থ হলাম পেয়ে মায়ের সেবা।

কদিন পরে বউ ফিরেছে রিপোর্ট নিয়ে সাথে
দামি দামি রান্না করা খাবারও তার হাতে।
সরি বলে পাশে বসে কামড়িয়ে কয় জিভ;
করোনা নেই তোমার দেহে, রিপোর্ট নেগেটিভ।

করোনা আমাদের জীবনযাপন পাল্টে দিয়েছে। আমাদেরকে নিষ্ঠুর শৃঙ্খলে বেঁধে রেখেছে। আমরা স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়েছি। আমরা গৃহে আবদ্ধ থাকতে বাধ্য হচ্ছি। শিশুদের এই বন্দিদশা মোটেও ভালো লাগছে না। তারা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছে। মানসিকভাবে বিপর্যস্থ আমরা বড়রাও। `বাইরে যেতে চাই` আহাদ আলী মোল্লা`র শিশু মনস্তত্ত্ব নিয়ে লেখা এক অসাধারণ ছড়া।

সেই কতদিন হলো আমি ঘরের ভেতর আছি,
যাইনি মাঠে বাঁওড় নদীর ঘাটের কাছাকাছি।
মন বসে না ঘরের ভেতর গোমড়া মুখেই থাকি
হয় না দেখা আকাশ আমার হয় না দেখা পাখি।

কখন সকাল আসে আবার যায় গড়িয়ে বেলা,
সাঁঝের আগেও হয় না দেখাসূর্য ডোবার খেলা।
ঘরের ভেতর দিনটা যেমন ঠিক সেরকম রাতি,
এইখানে নেই তমাল রূপম পাড়ার খেলার সাথি।

বন্ধ কোচিং ইশকুলও নেই বাইরে যাওয়া মানা,
কী হয়েছে? কেউ বলে না খুলে ব্যাপারখানা।
মা বলেছেন আর ক’টা দিন বাবাও বলেন তাই
ভাল্লাগে না আজই আমি বাইরে যেতে চাই।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চিন্তারাজ্যে নতুন যুগের সূচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ বাঙালির মননশীলতা রূপান্তর ঘটিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালিকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। সাহিত্য, সমাজ, রাজনীতি, সর্বক্ষেত্রে, সর্বসময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আলোচনার শীর্ষে থেকেছেন। আহাদ আলী মোল্লা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে লিখেছেন এই লেখাটি।

জোড়াসাঁকোয় জন্ম নিয়ে রবির আলো ছড়িয়ে দিলেন
ভাষার মোহ সব বাঙালির সারাদেহে জড়িয়ে দিলেন।
নাটক ছড়া গান কবিতায় সবারই প্রাণ রাঙিয়ে দিলেন
ঘুম কাতুরে কুড়ে লোকের জাগনা ঘুমও ভাঙিয়ে দিলেন

গীতাঞ্জলির সুরে সুরে সবারই প্রাণ ভরিয়ে দিলেন
মনের কালো আকাশ থেকে আঁধার যত সরিয়ে দিলেন
সবুজ সোনার এ বাংলাকে সুখের পুলক মাখিয়ে দিলেন
নতুনভাবে বাঁচার কত মন্ত্র জপে ঝাঁকিয়ে দিলেন

বাংলা ভাষার সব শাখাকে আলতোভাবে নাড়িয়ে দিলেন
নোবেল জয়ের মধ্য দিয়ে ভয় ভাবনাও তাড়িয়ে দিলেন
ভাষার তাবৎ দারিদ্র্যভাব লড়াই করে ঘুচিয়ে দিলেন
সব কাঙালের চোখের পানি নিজের হাতে মুছিয়ে দিলেন।

কে বলো সেই মহান কবি? প্রশ্ন ছোট কাকুর;
জবাব দিলাম বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

`উচিত মূল্য` ছড়ায় আহাদ আলী মোল্লা সাম্যের গান গেয়েছেন, সমতার গান গেয়েছেন, মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখার আহবান জানিয়েছেন, ভেদবুদ্ধি দূরে রাখার প্রেরণা যুগিয়েছেন।

মজুর মুটে ছুতোর নাপিত কোল ঘরামি কুলি
কাহার মেথর ঝি দফাদার রিকশাওয়ালা ঢুলি
কামলা মুনিশ কৃষক জেলে দরজি জুলা মাঝি
ময়রা কামার গাছি ধোপা কলু পিয়ন কাজি-

বাগদি বুনো চামার মুচি পাটনি কুমোর তাঁতি
কী ভেদাভেদ কোথায় ফাঁরাক আমরা মানুষ জাতি
যার যেখানে দু’হাত চলে
কাজ করে যাই বাহুর বলে
শ্রম বিকিয়ে পয়সা কামাই কার কাছে হাত পাতি?

মে দিবসের ডাক এসেছে সবাই জেগে ওঠ
সব অধিকার করতে আদায় বাঁধতে হবে জোট
বিশ্ব শ্রমিক এক হয়ে সেই ন্যায্য দাবি তুলল;
দিতেই হবে কাজের শ্রমের ঘামের উচিত মূল্য।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, `দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি, সত্য বলে তবে আমি কোথা দিয়ে ঢুকি?` শিশুরা মুক্তির স্বাদ চায়। তারা মুক্ত আকাশে ডানা মেলা পাখির মতো সবুজ ঘাসের উপর হাটতে চায়। মাখতে চায় শীতল বাতাস গায়ে। `আটকে রাখিস না রে`
আহাদ আলী মোল্লা`র শিশুদের নিয়ে লেখা এক অপূর্ব কবিতা। শিশুদের ভালোর কথা ভেবে আজ আমরা তাদেরকে শৃঙ্খলিত করছি, এতে মন্দটা যেমন শিশুর কাছে ধরা দেবে না, তেমনি ভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় সত্যটা বা ভালোটাও শিশুর কাছে ধরা দেবে না।

বলব কথা পাখির সাথে নদীর সাথে আমি
তোরা যতই ভাবিস না রে আমার এ পাগলামি
আমি যাব ফুলের কাছে সুবাস নিতে আজই
ঘরের ভেতর আটকে রাখার করিসনে কারসাজি।

আমি যাব হাওয়ার সাথে ওই পাহাড়ের কাছে
ওদের সাথে আমার কিছু মনের কথা আছে
আমাকে রোজ বনবনানী হাত বাড়িয়ে ডাকে
কেউ বোঝে না কেউ জানে না কে সেই খবর রাখে!

আকাশ আমায় গান শোনাবে যাব মেঘের দেশে
মেঘের ভেলায় ভর দুনিয়া ঘুরব ভেসে ভেসে
চন্দ্র তারা সূর্য ওরা সবাই আমার সাথী
দে ছেড়ে দে ওদের সাথে করব মাতামাতি।

আমার কিশোর মনের ভেতর বাস করে আর কারা
তারাই আমার ভাবনা জোগায় করে পাগলপারা
তাই আমি আজ উদাস উতল হচ্ছি বারেবারে
দে খুলে দে দরজা আমায় আটকে রাখিস না রে।

আহাদ আলী মোল্লা লিখে চলেছেন আপন ভুবনে। তিনি সরল সোজা পথে চলতে চান। কোন মুখোশ নেই তার মুখে। আমরা দু-চোখ তাকে যেমন দেখি, আমরা সরল মনে যেমন ভাবি তাকে, তিনি তেমনই। আমাদের প্রিয় এই ছড়াকার, প্রিয় কবি, প্রিয় শিশুসাহিত্যিক ও মহান শিক্ষককে জানাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালোবাসা।