
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
ইসলামি আবহে মুসলমানি ঐতিহ্যের কবিতা
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহপ্রকাশিত : মার্চ ১৯, ২০২২
প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করে থাকবেন, আমি মাঝে মধ্যে ইসলামি আবহে মুসলমানি ঐতিহ্যের কবিতা লিখি। সেই কারণে আমার শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে ‘সাহসী কবি’ বলেন। তারা আমাকে ‘সাহসী’ কেন বলেন, চিন্তা করে দেখি। আগে কখনো আমাকে এমনভাবে বলা হয় নাই। তার মানে আমার কবিতায় একটা পরিবর্তনের সুর তারা আবিষ্কার করতে পারছেন। কী সেই পরিবর্তন? আসলে পরিবর্তন নয়, আমি বলব, আদর্শ আর বিশ্বাসের রিজারেকশন বা পুনর্জাগরণ।
লেখকের জীবনে পরিবর্তন ঘটতে পারে তার স্টাইলে বা শৈলীতে, কদাচিৎ চেতনাগত। আমার এই বিশ্বাসগত চেতনা এতদিন যা চাপা দেয়া ছিল, এখন তা ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। বহুপথ ঘুরে ঘুরে আমি আমার আসল মঞ্জিলের খোঁজ পাইছি। আমি মুসলমান, বাঙালি মুসলমান, আমি এক আল্লাহর এবং তার প্রেরিত রাসুল মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর পূর্ণ ঈমান ও আস্থা রাখি। তাই আমার কবিতার কনটেন্ট ও টোনে ইসলাম প্রায়ই হাজির থাকে।
প্রিয় পাঠক, চিন্তা করে দেখেন, আমার বেড়ে ওঠা যা আমার জন্মগত বাঙালি মুসলমান হওয়ার অংশ, আমার সংস্কৃতির অংশ, তার একটু প্রতিফলন যদি আমার কবিতায় আসে তাহলে আমকে কেন পাঠক ‘সাহসী কবি’ বলবে! ‘সাহসী’ একটি গুণবাচক শব্দ। এর বিপরীতে আছে ‘ভীরু’ বা ‘কাপুরুষ’ শব্দ, যার সাথে নিশ্চিতভাবে জড়িয়ে আছে বাঙালির আত্মবিস্মৃতির ইতিহাস। তার মানে, আমার মতো অনেকেই এরকম লিখতে চায় কিন্তু প্রকাশে সাহস পায় না, অবচেতনে লুকাইয়া রাখে। কিন্তু কাদের ভয়ে এসব প্রকাশ সম্ভব হয়া ওঠে না? এরা কারা? এটির সামাজিক বা রাজনৈতিকভিত্তি কী? আমাদেরকে এসব প্রাশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে।
আমি একজন কবিতা-লেখক মাত্র, সমাজ বিশ্লেষক নই। কিন্তু আমার সাধারণজ্ঞানে যা বুঝি ওরা হলো তারা, যারা নিজেদেরকে সেকুলার, লিবারেল বা মুক্তমনা বলে মনে করেন, সেকুলারিজমে যারা ঈমান রাখেন এবং সেই ধর্মমতে নিজেদের জীবন পরিচালনা করেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন মুসলমান নামের, কিন্তু তাদের মানসিকতা ‘ছদ্ম সেকুলার’ এবং কেউ কেউ পলিটিক্যালি ও ফিলোসফিক্যালি বামঘেঁষা। আমি ‘ছদ্ম সেকুলার’ বললাম কারণ খাঁটি সেকুলার শিল্প, সংস্কৃতিসেবির কাছে, যারা মা কালী নিয়া লেখেন তাদের যেমন কদর থাকে, অন্যদিকে যারা আল্লাহ, রাসু্ল, নামাজ, রোজা তথা ইসলামিক অনুষঙ্গ নিয়া কবিতা লেখেন তাদেরও সমান কদর থাকে। তখন শিল্পের ওপর জাজমেন্ট হয়, শিল্পির ব্যাকগ্রাউণ্ডের ওপর নয়।
ছদ্ম সেকুলার বললাম কারণ তারা আসলে ছুপা উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী, সাম্প্রদায়িক, ব্লক হেডেড ইসলাম বিদ্বেষী শিল্প ও সংস্কৃতিসেবির দল। বাঙালি মুসলমানের জীবন, কালচার ভিত্তিক লেখা দেখলেই তাদের গা জ্বলে ওঠে। তাদের ভণ্ডামি দেখেন আপনারা, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পি যেই হোক না কেন, কেউ যদি হিন্দু বা বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান ধর্মের বিষয় আশয়, সঙ্গ অনুসঙ্গ নিয়া কিছু লেখেন তাহলে তাদের কোনো অসুবিধা নাই, তাদের কোনো মাথাব্যথা নাই। তাদের আপত্তি শুধু এই ইসলাম ধর্মে। এইটা এক ধরনের সাংস্কৃতিক বর্ণবাদ যা অজ্ঞতা থেকেই পয়দা হইছে, সত্যকে না গ্রহণ করার কারণে ঘৃণার সৃষ্টি হইছে।
এবার বামদের কথায় আসি। সারাজীবন মুখে কার্ল মার্ক্সের নাম আওড়ান কিন্তু তারা আজও বুঝে উঠতে পারে নাই যে, খোদ কার্ল মার্ক্সেও সমাজে ধর্মকে বাতিল করে দেন নাই। সমাজে শ্রেণিকরণ আছে, কারণ সম্পদের সুষম বণ্টন নাই, তাই অবহেলিত মানুষেরা ধর্মের কাছে জাস্টিস খুঁজে বেড়ান। মার্ক্স বলেছিলেন, সমস্ত ক্রিটিসিজম শুরু হইছে রেলিজিয়নের সমালোচনা দিয়া। কিন্তু কিছু বিপদগ্রস্ত বুদ্ধিজীবী ভুলভাবে এইটাকে ‘আফিমের সাথে তুলনা’ করার দিকে ঠেইলা নিয়া গেছে। বিশ্বের অধিকাংশ চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী আজকে একমত যে এর মাধ্যমে সোসিও-রেলিজিও জ্ঞান কাঠামোর ভেতর ঐতিহাসিকভাবে বড় একটা অবিচার করা হইছে। যার ফলে ঐতিহাসিকভাবে ধর্ম-কেন্দ্রিক শিল্প সাহিত্যকে একটা মনগড়া, মারাত্মক জেনেরালাইজেশনের বেড়াজালে আটকে পড়তে হইছে। কারণ সোস্যাল ফেনোমেনন হিসাবে রেলিজিয়নকে এভাবে দেখা হলে এর পেছনের কারণগুলো দেখা হয় না সত্যিকারভাবে। আমাদের বুঝতে হবে যে মার্ক্স এই কথা বলার আগে বলছিলেন, শত্রুভাবাপন্ন, প্রাণহীন প্রথিবীর প্রাণ হচ্ছে রেলিজিয়ন।
রেলিজিয়ন আত্মাহীন, জালিম সামাজিক, রাষ্ট্রিক দুনিয়ার আত্মা। তাই রেলিজিয়নকে বুঝতে হলে সবাইকে ক্যাপিটালিস্ট সোসাইটির মাধ্যমে আমদানিকৃত ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নতুন নতুন চাওয়া পাওয়ার ফলে সৃষ্ট সর্বগ্রাসী সামাজিক জুলুমকে বুঝতে হবে। কারণ এই বিদ্যমান জুলুমের কারণে, পথহীন, আশাহীন মানুষ আধ্যাত্মিক মুক্তির জন্য রেলিজিয়নের দিকে নিজেদেরকে সঁপে দিতে বাধ্য হয়। আসল কথা হইল, ইউরোপের চার্চ যখন নিজেই জুলুমের কারখানা হয়া গেছে, তখন মানুষ করাপ্ট খ্রিস্ট রেলিজিয়নের বিরুদ্ধে চলে গেছে। কিন্তু ঐশী ধর্মের মধ্যে ইসলামের বুনিয়াদ হইতেছে ন্যায় বিচার। সবাই জানে যে, ইসলাম শুরু থেকেই সকল প্রকারের জুলুমের বিরুদ্ধে লড়ছে। ইসলাম শ্রেণি বিভাজন, জাতপাত ভিত্তিক অন্যায় অবিচার এবং রেসিজিজমের বিরুদ্ধে তার পতাকা উড়াতে থাকে। তাই বাংলাদেশের মতো দেশে শিক্ষা, সমাজনীতি, রাজনীতি, সাহিত্য শিল্পকলা ইত্যাদি আর্ট কালচার করতে হইলে এর বিরাট জনগোষ্ঠীর ধর্ম ইসলামকে দিয়া বুঝতে হবে, ইসলামের তাওহিদ ভিত্তিক ন্যায় বিচারের এসেন্স দিয়া বুঝতে হবে।
এইটা বোঝা হয় নাই বইলা আমাদের বাম রাজনীতি দেখেন আজ কোথায় গিয়া দাঁড়ায়ছে? বাম রাজনীতিকদের নিজেদের ওপর, নিজেদের আদর্শের ওপর বিশ্বাস নাই বইলা তারা পুঁজিবাদী জালিম শাসকদের বগলতলে আশ্রয় নেয়, তাদের বড় নেতাদেরকে আরবে গিয়া হজ্জ করতে দেখা যায়। তাহলে বুঝতে পারছেন তাদের এই ইসলাম বিদ্বেষ কত ঠুনকো। অন্যদিকে সেকুলার বা তথাকথিত মুক্তমনাদের হিন্দু মিথ, ঘটনা ইত্যাদিতে কোনো সমস্যা নাই, ঈশ্বর/ভগবানে উপাসনা, প্রার্থনা বা পুজায় কোনো সমস্যা নাই। সমস্যা শুধু আল্লাহ, রাসুল, নামাজ, রোজা, মোহাম্মদ (স.) ও ইসলামিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যে।
তো দুভার্গ্যজনকভাবে আজ বাংলাদেশের কবিতা, সাহিত্য, শিল্পকলা বা আর্ট কালচার, নিজ বিরাট জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি অবহেলা করা একটা উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদি চক্রের হাতে বন্দি হয়া পড়ছে। যা আঠারো ও ঊনিশ শতকে ইংলিশ ও ফ্রেঞ্চ বুদ্ধিজীবীদের সৃষ্ট, ইউরোপীয় তথাকথিত এনলাইটেন্টমেন্টের আদর্শে গড়া, ঊনিশ শতকের কলকাতার উচ্চবর্ণের হিন্দু বাঙালি দ্বারা চালু, উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ দ্বারা কুলষিত। বাঙালিত্বকে আর হিন্দুত্বকে যারা ঐতিহাসিকভাবে এক করে দেখছেন এবং মুর্খতাবশত ইসলামিক সংস্কৃতিকে ভিনদেশি বলে জাহির করেন, সেই বিষবৃক্ষ আজ বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্যে শক্ত শেকড় গাইড়া বসে আছে। সাহিত্য, দর্শন, সমাজচিন্তা কোনোকিছুই, রাজনীতির বাইরে না। রাজনীতির স্ট্রাকচারে থাকে ক্ষমতা, তা যতই জনবিচ্ছন্ন হোক না কেন। রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র দ্বারা চালিত বা রাষ্ট্র দ্বারা পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করা সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একাডেমি সবই এই ক্ষমতার কাছে বন্দি। এই ক্ষমতা কাঠামো যতক্ষণ না পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরাট জনগোষ্ঠীর জীবন আচরণ, জীবন দর্শন, ভাষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ না করতে পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশের সাহিত্য সমাজে সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।
দুই.
আমার এত কথা বলার পেছনে আরো কিছু কথা থাকে, একটা শুরু থাকে। কীভাবে আমি শুরু করেছিলাম, তাই এখন দ্বিতীয় ধাপে বলতেছি। শুরু করছিলাম ২০১১ সালের দিকে, এক রমজান মাসে যখন কী একটা ঘোর আমাকে পাইয়া বসল! তখন আমার নবিজির কথা মনে পড়ত আর ইমোশনাল হয়া পড়তাম। রাস্তায় তাকাইয়া থাকতাম আর ভাবতাম কেমন ছিলেন তিনি। এই যে পথ, এই যে গলি, তিনি কি এরকম পথে হাঁইটা বেড়াইতেন! ভাবতাম আহা সেই মক্কার পথ যে পথে আমার রাসুল হাঁইটা বেড়াইতেন, কী রকম ছিল সেই মুহূর্তটি, সেই দৃশ্য দেখার জন্য আমার মন ব্যাকুল হইয়া উঠত। তরুণ বয়সে আমার নবি মোহাম্মদ (স.) দেখতে কেমন ছিলেন। তার মায়াবী চোখ, আলোকিত মুখ, কাধ পর্যন্ত ঘন কালো চুল! আহা আমার নবি! আহা এই জীবনে কোনোদিন তার সাথে দেখা হবে না! আমার চোখ ছল ছল কইরা উঠত। এই নীরব আকাঙ্ক্ষা, দিবাস্বপ্ন আমাকে যেন কোথায় নিয়া গেল! সেই শুরু। নবিকে ভালোবাসায় ফলস্বরূপ আমার যেন পুনর্জীবন ঘটল। ঠিক তখনি পর পর কয়েকদিনে লেখা হয়ে গেল আমার ‘সিজদা ও অন্যান্য ইসরা’ বইয়ের কবিতাগুলো। একটি অনলাইন পত্রিকায় দশটি কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পর সবাই পড়ে অবাক হয়া গেল। পলাশি ও পানিপথ, নো ম্যানস জোন, ক্রমশ আপেলপাতা বেয়ে’র কবি এ কোন ভাষায় কথা বলে উঠলো। এ দেখি নতুন আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ! কেউ কেউ আমাকে বাহবা দিল, প্রীতি জানাইলো। কেউ কেউ বলল, এই তো দেখতেছি পোস্ট মর্ডান, নতুন যুগের আল মাহমুদ! আবার এরকম ইসলামি আবহে মুসলমানি ঐতিহ্য, অনুষঙ্গ নিয়া লেখা আমার কবিতা পড়ে কেউ কেউ আবার নাখোশ হইলো। ক্ষোভ প্রকাশ করে জানাইলো, মধ্যযুগের ধ্যান ধারণায় সে কবিতা লিখে আসলে সে সাম্প্রদায়িক হয়ে গেছে, বাংলা কবিতা থেকে দূরে সরে গেছে ইত্যাদি। আমি বললাম ভাই, এসবই তো বাংলা কবিতা, বাংলাদেশের কবিতা। একটি দেশের জনগোষ্ঠী যে জীবন চর্চা করে, যে ভাষায় তাদের রোজকার দিন গুজরান করে, আমি তাদের ভাষায়ই কথা বলতেছি।
আমার অপরাধ আমি কবিতায় আল্লাহ (ঈশ্বর নয়) রাসুল, নামাজ, রোজা, সিজদা, ইসরা এসব মুসলমানি শব্দ ব্যবহার করলাম। এসব শব্দ, আবহ অনেকেই ব্যবহার করেছেন। সেকুলার কবি, সেকু-সুফি কবিও করেছেন। কিন্তু তাদের সাথে আমার যে পার্থক্য দাঁড়াইলো সেটি হইলো, ইসলামের বুনিয়াদ আল্লাহ তালার তাওহিদকে (একত্ব) নিয়ে। তাদেরটা তাওহিদ ভিত্তিক আক্বিদাগত নয়, ভাষাগত বা বেশি হইলে তা সামাজিকতা বা সাংস্কৃতিক অভ্যাস। কিন্তু আমি মুসলমান হিসাবে, এক আল্লাহর আবিদ হিসাবে তাঁর প্রশংসা করতে চাইলাম। এতদিন যা বলতে পারিনি, এতদিন যা লুক্কায়িত ছিল, এতদিন যা ঊনিশ শতকের কলকাতার হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের নির্মিত ট্যাবু বা বাঙালি কালচারাল হেজেমনির রক্তচক্ষুর আড়ালে ছিল, তাই যেন প্রকাশ করে ফেললাম। বাঙালিত্ব মানেই হিন্দুত্ব, বা বাঙালি কবি বাংলা কবিতায় আরবি, ফারসি শব্দ, ইসলামি আবহে মুসলমানি ঐতিহ্য, অনুসঙ্গ ব্যবহার করতে পারবে না, এই শেকল ছিঁড়ে আমি আমার ভাষায় কথা বলে উঠলাম, বাংলা ভাষায় কথা বলে উঠলাম। এরকম হাস্যকর মূখর্তার মুখে থাপ্পর মাইরা ‘সিজদা ও অন্যান্য ইসরা’র কবিতাগুলি লিখে ফেললাম। সাথে আথে আমি ভাইবা দেখলাম, আমার এই ধরনের কবিতাগুলিকে সন্দেহজনক বা অস্বস্তিকর বইলা যারা এই অজ্ঞতার পরিচয় দিতেছেন, এটি তাদের বাংলাভাষা বাহিত উগ্র জাতীয়তাবাদী অজ্ঞতা, এটি পশ্চিমা ওরিয়েণ্টালিস্টদের কাছ থেকে ধার নেয়া এবং তারপর ক্রমশ রক্তমাংসে ঢুইকা পড়া বর্ণবাদ ছাড়া আর কিছু নয়। বাঙালির জীবন যাপন, ধর্ম, ধর্মীয় আচার আচরণ, ভাষা, পোশাক আশাক ও খাদ্যদ্রবাদি সেবা করার অভ্যাস যদি বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হইতে পারে, তাহলে কীভাবে আমার কবিতা এবং আমার মত যারা লিখতেছে তাদের লেখা কিভাবে সন্দেহজনক হয়, গুরুত্বহীন হয়? এটি কি চরম সাংস্কতিক মূর্খতা নয়? বাঙালি কবি যদি ভারতবর্ষের সব বিষয় আশয় যেমন: হিন্দু জীবন, হিন্দু মিথ বা পুরাণকেন্দ্রিক শিল্প/কবিতা রচনা করতে পারে তাহলে বাঙালি কবি কেন ইসলামিক বিষয়, তথা মুসলমানের ইতিহাস, ঐতিহ্য, তার ইবাদতকেন্দ্রিক জীবন অনুষঙ্গ কবিতায় ব্যবহার করতে পারবে না? আমাদের ভাবতে হবে, আজকের যে বাংলা ভাষায় আমরা কথা বলি তার পেছনে ভারতবর্ষের মুসলমান বিশেষ করে সুলতানি আমলের শাসকদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। তারা যদি এর পৃষ্ঠপোষকতা না করত তাহলে আমি আপনি আজ বাংলা ভাষায় হয়ত এমনভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারতাম না। সংস্কৃত ভাষার হিন্দু পুরোহিত আর শাসকদের চাপেই এই ভাষা হারায়া যাইত।
কারণ ভাষা ব্যবহার মূলত রাজনৈতিক ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক। এইগুলি ইতিহাসের কথা, দালিলিক কথা। আমাকে বিশ্বাস না করলে অনলাইনে একটু ঘাটাঘাটি করেন। উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদিতার কারণে পয়দা হওয়া হিংসা বিদ্বেষ থেকে এখানকার সংস্কৃতিসেবীদের একাংশ বুঝতে পারে না যে, মুসলমান সমাজের জন্য ইসলামিক জীবন ব্যবস্থা, তথা কোরান ও সুন্নাহ বাহিত জীবন ব্যবস্থা, তা তাদের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য এবং তাজা অংশ। একজন বাঙালি মুসলমান কবি সাহিত্যিক এই সবের মধ্যেই বড় হয়, চিন্তা করে ও ভাব প্রকাশ করে। এই বুঝতে না পারাই বা সত্যকে গ্রহণ না করার কারণেই বাংলাদেশে সেকুলার আদর্শে গড়ে ওঠা কবি, সাহিত্যিক এবং শিল্প ও সাংস্কৃতিক দলের মধ্যে ইসলামফোবিয়া আসন গাইড়া বসে আছে। এর থেকে যত তাড়াতাড়ি মুক্তি পাওয়া যায়, ততই তা বড় বড় শিল্প-সাহিত্যের দরোজা উন্মোচন করার পক্ষে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।