এলজিবিটি রাইটস মুভমেন্ট

তুহিন খান

প্রকাশিত : জুন ২৫, ২০২০

এলজিবিটি রাইটস মুভমেন্ট গত শতকের যেকোনো রাইটসভিত্তিক মুভমেন্টের চাইতে দ্রুত সময়ে অনেক বেশি এক্সেপ্টেন্স পাইছে পশ্চিমে এবং সারা দুনিয়ায়। অনেকে ভাবেন, এইটা এমনে এমনেই হইছে। যেন এই ব্যাপারটার কোনো পলিটিকাল বা হিস্ট্রিকাল লিগ্যাসি নাই। কিন্তু ব্যাপারটা তেমন না। যেকোনো আলাপ সোসাইটিতে কীভাবে প্রিচ করা হয়, কীভাবে তারে মেইনস্ট্রিম করা হয়, তার পলিটিকাল ও হিস্ট্রিকাল লিগ্যাসি আছে। ৯০ এর দশকে আমেরিকায় এলজিবিটি মুভমেন্টের জন্য যে মডেল চুজ করা হইছিল, সেটা ছিল মোস্টলি একটা `প্রোপাগাণ্ডিস্ট` মডেল।

After the Ball: How America Will Conquer its Fear and Hatred of Gays in the 90s বইটা বের হয় ১৯৮৯ সালে। বইয়ের লেখক দুজন: নিউরোসাইকোলজিস্ট মার্শাল কির্ক, আর অ্যাডভার্টাইজিং এক্সপার্ট হান্টার ম্যাডসন। এরা দুজনই ছিলেন এলজিবিটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপের মেম্বার।

এলজিবিটি রাইটস প্রথম ব্যাপকভাবে একটা মুভমেন্ট হিশাবে সামনে আসে ১৯৬৯ এর স্টোনওয়াল রায়টের মাধ্যমে। ১৯৬৯-১৯৮৯— মোট ২০ বছরে এলজিবিটি আন্দোলন তেমন কোন সাফল্যই পায় নাই। অন্তত, এই বইয়ের লেখকদের মতে, এই সময়ে এলজিবিটি মুভমেন্ট আমেরিকায় কোন সাড়া ফেলতে পারে নাই; সেকারণে বইয়ের প্রথম লাইনেই অনেকটা ঘোষণার মতো কইরাই এই লেখকদ্বয় লিখতেছেন— The Gay-revolution has failed.

তারপরে ওনারা এই ফেইলিওরের কারণ ব্যাখ্যা করছেন এবং একটা ছয় দফা প্রেসক্রিপশন দিছেন। এই প্রেসক্রিপশনগুলা হইল:

১. এলজিবিটির ব্যাপারে যতভাবে পারা যায় কথা বলা। এরে মেইনস্ট্রিম করা।

২. এলজিবিটিদের ভিক্টিম হিশাবে দেখানো। তাদের এমনভাবে পোট্রে না করা, যেন তারা সোসাইটি বা স্টাটাস কো`রে চ্যালেঞ্জ করতেছে। নট দ্যাট মাচ র‍্যাডিকাল। সিম্পলি পোট্রে দেম অ্যাজ ভিক্টিমস।

৩. যারা এর পক্ষে আছে, তাদের `সুপারহিরো` ইমেজ দেওয়া।

৪. এলজিবিটিদের মিডিয়া ফোকাস বাড়ানো এবং মিডিয়ায় তাদের প্রেজেন্টেশনে সতর্ক থাকা। তাদের `কুল` ও `সফিস্টিকেটেড` হিশেবে উপস্থাপন করা।

৫. যারা এই ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে, যারা এর বিরোধিতা করে, তাদের `মাম্বলিং ইডিয়ট`, পশ্চাদপদ, কূপমণ্ডুক হিশাবে উপস্থাপন করা।

৬.কর্পোরেট বিগশটদের সাথে কোন ঝামেলায় না জড়ানো। যাতে তাদের মাধ্যমে ফাণ্ডিং, মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, অ্যাডভার্টাইজিং ও অন্যান্য ব্যাপার ঠিকঠাক চালানো যায়।

বইটা সেসময় বেস্টসেলার হয়; এই বই নিয়া আমেরিকায় তুমুল তর্ক-বিতর্ক হয়, স্পেশালি এর `প্রোপাগাণ্ডিস্ট` স্টাইলের জন্য। বিরোধী অনেকেই এরে `হোমোসেক্সুয়াল এজেন্ডা` হিশাবে চিহ্নিত করে। বইটার রিভিউ হইছিল অনেক। এর মধ্যে সবচাইতে পজেটিভ রিভিউটা করছিলেন হিস্ট্রিয়ান জোনাথান কারশ্চ, `লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস`-এ। কারশ্চ তার রিভিউতে স্বীকার কইরা নেন যে, অবশ্যই এই বইয়ের লেখকেরা `প্রোপাগাণ্ডা`রেই এই আন্দোলনে জয়লাভের উপায় হিশাবে দেখতেছেন। মিডিয়ায় এলজিবিটিদের প্রেজেন্টেশনের পয়েন্টটার ব্যাপারে তার মন্তব্য— `সর্বোচ্চ লেভেলের দূরদর্শী ও ক্যালকুলেটেড প্রোপাগাণ্ডা`। বইটা তার কাছে অনেক `আনকমফোর্টেবল` লাগছে যদিও, তিনি বলতেছেন, তবু লেখকদের `আকর্ষণীয় আইডিয়া আর প্রাঞ্জল ভাষা`র কারণে বইটা তার ভালো লাগছে।

উইলিয়াম জ্যাসপার আরেকটা রিভিউ করেন, `দ্য নিউ আমেরিকান`-এ। সেইখানে উনি এই বইয়ের ব্যাপারে লেখেন, `মিলিট্যান্ট হোমোসেক্সুয়ালিটির সবচাইতে কার্যকর মেনিফেস্টো`। বইয়ের কন্টেন্ট মূল্যায়ন করতে গিয়া জ্যাসপার লেখেন, `এই বই অরওয়েল-কথিত এক ধরণের গোপন প্রোপাগান্ডা প্রোগ্রাম তুইলা ধরছে।` অনেক লেখক এই ৬ দফার ২, ৪, ও ৫ নম্বর দফারে `ম্যাকিয়াভেলিয়ান প্রোপাগান্ডা` বলছেন। আর ৬ নম্বর দফার খোলাখুলি ক্রিটিক করছেন অনেক মার্ক্সিস্ট।

৯০ এর দশকে এই ৬ দফার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার হইছে, এই ৬ দফা বাস্তবায়নে গইড়া উঠছে বিভিন্ন অ্যাডভোকেসি গ্রুপ। সর্বপ্রথম আমেরিকান টিভি শো`তে মেইন ক্যারেক্টার হিশেবে একজন গে`রে দেখানো হয় ১৯৯৮ সালে, শো`টার নাম ছিল: Will and Grace. এখন সবচাইতে বড় গ্রুপ যেইটা, `GLAAD`, এরা ২০১৯ সালে তাদের অ্যানুয়াল রিপোর্টে বলতেছে যে, মিডিয়ায় ১০% এলজিবিটি অ্যাডভোকেট ক্যারেক্টার বানাইতে তারা সক্ষম হইছেন। এই শতকের লক্ষ্যমাত্রা ২০%। কেউ চাইলে তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট কইরা আসতে পারেন।

তো, এই ব্যাপারটা কোন `কন্সপিরেসি` না আসলে। ইলুমিনাতির কারসাজিও না। এইটা এলজিবিটি গ্রুপগুলার স্ট্রাটেজিক প্ল্যান। সমাজে কীভাবে একটা আলাপের কনসেন্ট তৈয়ার করা হয় বা হইতে পারে, তার টেক্সটবুক এক্সাম্পল। এইজন্য, ব্যাপারগুলারে শুরুতেই যারা ধ্রুব বা মীমাংসিত ধইরা আলাপ করতে চান, বা যারা ভাবেন: হোমোসেক্সুয়ালিটিরে স্বীকৃতি না দিতে চাওয়া আসলে প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, তাদের কথা মানতে আমি প্রস্তুত না। আমরা কোন বাস্তবতায় বসবাস করি, এইটা আগে ভাবা দরকার। আমরা ট্রুলি একটা ইন্টেলেকচুয়াল বাস্তবতায় বসবাস করি। সেইজন্য যখন এলজিবিটি নিয়া আলাপ হইতেছে, তখন একদলরে প্রকৃতির পক্ষে আরেক দলরে বিপক্ষে দেখানো, গোটা ব্যাপারটারে জাস্ট একটা জিনরে মাইনা নেয়ার মত পিওর সায়েন্টিফিক আলাপের ভিতরে ঢুকানো, এর পলিটিকাল, সোশাল ও হিস্ট্রিকাল কনটেক্সটগুলারে ইগনোর করা— এইগুলা মোস্টলি জেনারেলাইজেশন।