
কবি মোহিতলাল মজুমদারের আজ মৃত্যুদিন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : জুলাই ২৬, ২০২৫
কবি মোহিতলাল মজুমদারের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৫২ সালের ২৬ জুলাই তিনি মারা যান। ১৮৮৮ সালের ২৬ জুলাই চব্বিশ পরগণা জেলায় মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়া মহকুমার অন্তর্গত বলাগড় গ্রাম। তার বাবার নাম নন্দলাল মজুমদার।
নন্দলাল ছিলেন কবি দেবেন্দ্রনাথ সেনের জ্ঞাতি ভাই। মোহিতলালের কৈশোর ও বিদ্যালয়জীবন কাটে বলাগড় গ্রামে। ছোটবেলায় তিনি কিছুদিন কাঁচড়াপাড়ার কাছে হালিশহরে মায়ের মামাবাড়িতে অবস্থান করে সেখানকার বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
মোহিতলাল চার-পাঁচ বছর বয়সে কাশীরাম দাসের মহাভারতের সঙ্গে পরিচিত হন। নয় বছর বয়সে তার রোমান্স পাঠে আগ্রহ জন্মায়। বারো-তেরো বছর বয়সে পলাশির যুদ্ধ ও মেঘনাদ বধ কাব্য পড়ে শেষ করেন।
বলাগড় বিদ্যালয় থেকে ১৯০৪ সালে তিনি এন্ট্রান্স পাস করেন। ১৯০৮ সালে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন থেকে বিএ পাস করেন। কিন্তু অসুবিধায় পড়ে এমএ পড়া ছেড়ে দেন। ১৯১০ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত কলকাতার তালতলা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এরপর ১৯১৪ সালে সরকারি জরিপ বিভাগে কানুনগো পদে চাকরি নেন।
তিন বছর তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পুনরায় বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তিনি। ১৯২৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃত বিভাগে অধ্যাপনা কর্মে নিয়োজিত থাকেন। ১৯৪৪ সালে অধ্যাপনার চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তারপর তিনি কলকাতায় চলে যান। পরে বঙ্গবাসী কলেজে গিরিশ সংস্কৃতি ভবনে অধ্যাপনায় যোগ দেন।
মানসী পত্রিকাতে তার সাহিত্যজীবনের সূত্রপাত হয়। বীরভূমি পত্রিকায় কবিতা প্রবন্ধ অনুবাদ প্রকাশ করেন। দেবেন্দ্রনাথ সেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের ফলে তার কাব্যচর্চায় দেবেন্দ্রনাথের প্রভাব দেখা যায়। এছাড়া করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতার ছন্দোমাধুর্য তাকে মুগ্ধ করেছিল। মোহিতলাল কিছুকাল ভারতী গোষ্ঠীর অন্যতম লেখক ছিলেন।
তিনি শনিচক্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। রবীন্দ্র পরবর্তী কাব্যে কবি মোহিতলালের স্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্য-সমালোচক হিসাবেও তার সবিশেষ খ্যাতি ছিল। ভাষারীতির বিশুদ্ধতা নিয়ে তার প্রবল আগ্রহ ও নিষ্ঠা ছিল। কবি ও প্রবন্ধকাররূপে তিনি বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করেন।
মোহিতলাল মজুমদার সৃজনধর্মী সাহিত্য সমালোচক ও প্রবন্ধকাররূপে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করেন। তিনি নিপুণ ও শব্দ সচেতন কবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশাতেই তার কাব্য আপন বৈশিষ্ট্যে প্রোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। নজরুল ইসলামের পূর্বে আরবি-ফারসি শব্দের সার্থক প্রয়োগ তার রচনায়ই বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
ভাবে ও ভাষায় প্রচলিত কাব্যরীতিতে মোহিতলাল ছিলেন বিদ্রোহীস্বরূপ। বাংলা সাহিত্যের দেহাত্মবাদী কবি হিসেবে তার রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। তার কাব্যে ক্লাসিক্যাল ভঙ্গি ও রোমান্টিক ভাবের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে।
তার লিখিত কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে, দেবেন্দ্র-মঙ্গল (১৯২২), স্বপন-পসারী (১৯২২), বিস্মরণী (১৯২৭), স্মরগরল (১৯৩৬), হেমন্ত-গোধূলি (১৯৪১), ছন্দ চতুর্দশী (১৯৪১) (সনেট সঙ্কলন) এবং কাব্য মঞ্জুষা।
তার রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ হচ্ছে, আধুনিক বাংলা সাহিত্য (১৯৩৬), সাহিত্যকথা (১৯৩৮), বিবিধ কথা (১৯৪১), বিচিত্র কথা (১৯৪১), সাহিত্য বিতান (১৯৪২), বাঙলা কবিতার ছন্দ (১৯৪৫), বাঙলার নবযুগ (১৯৪৫), জয়তু নেতাজী (১৯৪৬), কবি শ্রীমধুসূদন (১৯৪৭), সাহিত্য বিচার (১৯৪৭), বঙ্কিমবরণ (১৯৪৯), রবি-প্রদক্ষিণ (১৯৪৯), শ্রীকান্তের শরৎচন্দ্র (১৯৫০), জীবন জিজ্ঞাসা (১৯৫১), বাঙলা ও বাঙালী (১৯৫১), কবি রবীন্দ্র ও রবীন্দ্র কাব্য (প্রথম খণ্ড ১৯৫২, দ্বিতীয় খণ্ড ১৯৫৩), বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস (১৯৫৫), বিবিধ প্রবন্ধ এবং বঙ্কিম বরণ (১৯৪৯)।