কবিতার ফেরিঅলা
প্রাচ্য তাহেরপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
সন্ধের আবছায়া আঁধার ঢেকে ফেলছে চারদিক। টিনের চালের ওপর কোথায় যেন হুতোম পেঁচা ডাকছে। বাড়ির পেছনদিকে বাঁশঝাড়ের ওপর গোলগাল চাঁদ ঝুলছে। লাল, তবে গাঢ় নয়। রাত যত বাড়বে, চাঁদের আলো তত বাড়বে।
বাড়িটা ঘিরে বেশ গাছপালা। ফরফর শব্দ তুলে এগাছ থেকে ওগাছে উড়ে যাচ্ছে বাদুড়। ডানায় সারা দিনের ক্লান্তি নিয়ে পাতার আবডালে আশ্রয় নিয়েছে পাখি। ডানার ঝটপট আওয়াজ পাওয়া যায়।
মাগরিবের আজান শেষ হয়ে গেছে। শ্বশুর বের হচ্ছিলেন মসজিদে। কলতলায় ছায়া ছায়া অন্ধকারে তিনি দেখলেন, সূর্যবান বসে আছে। চেয়ে আছে বাঁশবাগনের মাথার ওপর। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। কী দেখছে? চাঁদ? ভারি পাগলি এই মেয়েটা। এগিয়ে গেলেন তিনি।
সাবের কই মা?
শ্বশুরকে দেখে মুখ ফেরালো সূর্যবান। জিগেশ করল, নামাজে যান আব্বা?
শ্বশুর বললেন, শোনো গো মা, আল্লাহ আল্লাহ করো। সাবের কই? তারে কইও, মাথা গরম না করতে। আর ওজু করে নামাজ পড়ে ন্যাও। আল্লার কাছে চাও মা, মানুষ কাউরে কিছু দিতে পারে না।
আর কিছু বললেন না তিনি। থমথমে তার মুখ। লাঠি ঠুকতে ঠুকতে ঘাসপাতার রাস্তা ধরে বেরিয়ে গেলেন।
সূর্যবান কলতলায় বসে থালাবাসন মাজতে লাগল। ভারি বিচ্ছিরি ব্যাপার। ভাসুর আনিস মানুষ হিশেবে মোটামুটি ভালোই বদমাশ। সকালের ছবিটা চোখের সামনে ছবির মতো দেখতে পেল সূর্যবান। গাছের গুড়ি নিয়ে ভাসুর বেজায় হম্বিতম্বি দেখাচ্ছে, আর সাবের ক্রমাগত বলেই যাচ্ছে, আপনে ঠক। আপনে আমারে ঠকাইতেছেন। যান, ওই ছয় হাত জায়গা আপনেরে আমি সদকা দিলাম।
ভাবি মুখ ঝামটা দিয়ে জবাব দিল, ক্ষমতা তো নাই। আর কী করবি...!
ভাসুর বলছে, যা পারিস করগে, যা। আমার সীমানা আমি ঠিক করে নিছি। এদিকে আর এক পা বাড়াবি না। তোরে রাস্তাও দেব না। কোত্থেকে বাইর হবি, আমি জানি না।
ধুর ছাই, মেজাজ খচে যাচ্ছে। ক্ষমতার জন্য নয়, সূর্যবান জানে, সাবের অন্য ধাতের মানুষ। জমিজমার ভেতর কখনো সে থাকে না। কী এক ঘোরের ভেতর যেন তার বেঁচে থাকা। বিয়ের ছয় মাস পেরিয়ে গেছে তাদের। মানুষটাকে যত দেখছে সূর্যবান, তত মুগ্ধ হচ্ছে।
এই যে এখন, নতুন বিয়ে করা বউ রেখে সে চলে গেছে নদীর পারে। গোধূলি তার সবচেয়ে প্রিয় দৃশ্য। এরচে মুগ্ধকর কোনো দৃশ্য সাবেরের চোখে নেই, জানে সূর্যবান।
বিয়ের আগে শ্বশুরের কাছে কোরআন পড়ত সূর্যবান। তখন তো তাকে চাচা ডাকত। একদিন কী এক ভুল করায় এমনভাবে তার কান মলে দিলেন যে, চোখে তার পানি এসে গেছিল। তিনিই সাবেরের জন্য তাকে পছন্দ করলেন। প্রস্তাব দিলেন বাড়িতে। সূর্যবানের আব্বা কিন্তু রাজি হলেন না। সাবের কবিতা লেখে। আর বই ছেপে স্কুল-কলেজগুলোতে ঘুরে ঘুরে বেচে বেড়ায়।
পাত্র কি করে? কবিতার ফেরিঅলা। বেশ তো মজা। নিজে বানিয়ে বানিয়ে কবিতা লেখে, এরপর তা বেচে বেড়ায়। এই হচ্ছে একজন মানুষের পেশা। কী রকম যেন টান সে টের পেল কবিতার ফেরিঅলার প্রতি। কিন্তু সূর্যবানের দৈনিক মজুরি দেয়া রাজমিস্তিরি আব্বার কাছে মনে হয়েছিল, এ ছেলের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। ঠুকো কাজে কখনো সংসার চলে না। এর জন্য নিশ্চিত আয়ের কোনো উৎস দরকার।
এদিকে সাবের একদিন একগাদা বই নিয়ে তাকে দেখতে এলো। সূর্যবান পরেছিল স্কার্ট। এমনিতে গোলগাল তার দেহ। স্কার্টে বেশ পুতুল পুতুল দেখাচ্ছিল। মুখোমুখি বসে কিছু সময় তারা কথাটথা বলল।
ব্যস। এরপর প্রেমে পড়ে গেল সে সাবেরের। তার পাগলামিতে রাজি হলেন আব্বা। এরপর বিয়ে। এরপর ভাসুরের জমি মাপামাপি। ঠকানো। যেন ছবির মতো...! প্রজাপতির ডানার ফুরফুরে ঢেউ সূর্যবানের বুকের ভেতর ছড়িয়ে পড়ল। কবির সাথে চাঁদের নিচে তার সংসার। বাড়ির চারদিকে উঁচু উঁচু কোন আমলের সব গাছপালা। আর কী সুনসান। রাতের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ এখানে থাকে না।
হঠাৎ হঠাৎ মাঝরাতে সাবের তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। উঁ উঁ করতে করতে শরীর মোচড়ামুচড়ি করে সূর্যবান। এতে খুব একটা কাজ হয় না। সাবের তাকে প্রায় কোলে তুলে নেয় আর কী। তো সূর্যবানকে উঠতেই হয়। চৌকাঠে পাশাপাশি বসে তারা। বসেই থাকে। তার একটা হাত সাবেরের মুঠোয় ধরা। চুপচাপ ভূতের মতো বসে থাকে সাবের। আর ঘুমে ঢুলতে থাকে সূর্যবান।
এই ছয় মাসে সাবের তাকে ছয়টা বই পড়িয়ে ছেড়েছে। এ বইগুলো নাকি ক্লাসিক। ও বলে। বইয়ের বিশাল ডাঁই এ সংসারে। আর কিছু থাকুক না-থাকুক, বইয়ের অভাব নেই। অসভ্যের মতো একদিন সূর্যবান বলে ফেলেছিল, এত বই যোগাড় করতে পাগলরেও তো কোনোদিন দেখিনি।
তখন দুপুর। উঠোনে পাটি পেতে তার ওপর বই বিছিয়ে দিচ্ছিল সাবের। চৌকাঠে দাঁড়ানো সূর্যবানের মুখের দিকে চেয়ে সে খুব হেসেছিল। হেসেছিল সূর্যবানও।
ট্রিট ট্রি... ট্রিট ট্রি...
বাঁশবাগান থেকে ভেসে এলো কী এক পাখির ডাক। মুখ তুলে সেদিকে তাকালো সূর্যবান। বাঁশবাগানের নিচে ঘন অন্ধকার ভূতের মতো ছমছমে, আর ওপরে ¯িœগ্ধতার নরম আলো।
হাসনাহেনার গন্ধ অনেক দূর ছড়িয়ে দিচ্ছে সন্ধের ঝিরঝির হাওয়া। কী মিষ্টি এই গন্ধ, বেশ লাগে সূর্যবানের। সারাদিন যেমন তেমন, সন্ধের পর থেকে হাসনাহেনার গন্ধে নেশার মতো মাথা ধরে যায় তার। এই গাছ নিয়েই তো সাবেরের মন খারাপ।
পাশাপাশি জমিতে দুভাইয়ের বাড়ি। আজ সকালে আমিন ডেকে ভাসুর তার সীমানা ঠিক করে নিলেন। এরসাথে ছয় হাত সাবেরের ভেতরে ঢুকে গেলেন। শ্বশুরের কথা শুনলেন না ভাসুর। সাবের প্রতিবাদ করতে গেলে মারমুখো হয়ে ওঠেন। ওই ছয় হাত জায়গাতেই হাসনাহেনা গাছটা। সাবের লাগিয়েছিল।
ওই তো, আবছা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে গাছটা। চাঁদের আবছায়া আলোয় তারার মতো দেখাচ্ছে ছোট ছোট শাদা ফুলগুলো। বুক ভরে নিশ্বাস টেনে নিল সূর্যবান। আহ, এত মিষ্টি...
ডেকে উঠল হুতোম পেঁচা। ফরফর শব্দ তুলে মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল বাদুড়। আর তখন হঠাৎ তার মন খারাপ হয়ে গেল। আজ থেকে ওই গাছ আর তাদের নয়। কিন্তু... ভাবল সে, তাতে কি? সে তো ঠিকই হাসনাহেনার ঘ্রাণ পাচ্ছে। ঘ্রাণের তো কোনো মালিকানা নেই। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল সূর্যবান। তাই তো, পাখিরা যেখানে খুশি উড়ে চলে যেতে পারে। তাদের তো কোনো মানচিত্র নেই। গাছ যার, শুধু তারই জন্য হাসনাহেনা ফোটে না। সে প্রকৃতির সন্তান। তার ঘ্রাণ সবার জন্য।
মানুষ তবু সীমানা নিয়ে মারামারি রক্তারক্তি করে। যা নিয়ে এতকিছু, সে কিন্তু কারো মালিকানায় থাকে না। যদিও মানুষ মনে করে, সে ওর মালিক।
গুনগুন গান ভাজতে ভাজতে বাসন মাজতে লাগল সূর্যবান। হলুদিয়া পাখি সোনারই বরণ পাখিটি ছাড়িল কে...
গান থেমে যায় হঠাৎ। ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে সূর্যবান। তার সামনে কার যেন ছায়া। পেছন ফিরে দ্যাখে, সাবের দাঁড়িয়ে মিটমিট হাসছে।
কী, তোমার বেড়ানো হলো?
হুঁ। বলতে বলতে সাবের বসে পড়ল কলতলায়। জিগেশ করল, তোমার খুবই মন খারাপ হইছে, না? কী বিচ্ছিরি ব্যাপার। আসতে সময় মসজিদের সামনে আব্বা কইল, চুপচাপ থাকতে। কও তো, আমি কি কিছু কইছি? কেউ যদি আমার ওপর অন্যায় করে, আমি কি কথা বলব না? তবে আমি আনিসকে ঘেন্না করি। ওর ভেতর লোভের ইবলিস বাস করে।
বাসন মাজতে মাজতে সূর্যবান বলল, বাদ দ্যাও। একটু থেমে এরপর বলল, গন্ধ পাচ্ছ হাসনাহেনার?
সাবের ঠিক বুঝতে পারল না সূর্যবানের কথার মানে। সে ভুরু কুচকে জিগেশ করল, হ্যাঁ, পাচ্ছি তো।
বাসন মাজা থামিয়ে সূর্যবান বলল, জোরে নিশ্বাস টানো।
সাবের জিগেশ করল, কেন? কী হবে তাইলে?
সূর্যবান বলল, আহা, জোরে নিশ্বাস টেনেই দ্যাখো না।
সাবের বুক ভরে বাতাস টেনে নিল। এরপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে তাকালো সূর্যবানের দিকে। সূর্যবান হাসছে। চাঁদের আলোয় ঝিকমিক করছে তার শাদা মসৃণ দাঁত।
কী ব্যাপার, ভূতে ধরছে নাকি তোমারে? এমনে হাসতেছ কেন?
এমনি। একটা বিষয় নিয়া ভাবনা আসছে। তাই হাসতেছি। কী মিষ্টি না হাসনাহেনার গন্ধ?
তো?
প্রতিদিন যে রকম পাও, আজ কী তারচে কম পেয়েছ হাসনাহেনার ঘ্রাণ?
সাবের ঝুঁকে আসে সূর্যবানের দিকে। জিগেশ করে, কেন?
আহা, বলো না, হাসনাহেনার ঘ্রাণে কোনো হেরফের ঘটেছে?
সাবের জবাব দিল, তা কেন হবে? ঘ্রাণ তো ঘ্রাণই।
এই কারণে হাসতেছি। ঘ্রাণের কোনো মালিকানা নেই। গাছের মালিকানা আছে। যদিও এসব মালিকানা দিয়ে গাছের কিছুই এসে যায় না।
থ হয়ে সূর্যবানের মুখের দিকে কিছু সময় চেয়ে থাকে সাবের। এরপর বলে, এই না হলে আমার সূর্যবান। শোনও, তোমারে নিয়া একটু আগে একটা কবিতা হইছে। শুনাই তোমারে?
সূর্যবানের জবাবের তোয়াক্কা না করে মোবাইলে রেকর্ড করা কবিতা ছেড়ে দিল সাবের। কাগজে কলমে সে খুব একটা লেখে না। যা মনে আসে, গড়গড় করে রেকর্ড করে যায়। পরে আবার এসব কাগজে লিখে দিতে হয় সূর্যবানকে। বেশ লাগে এসব লিখতে। মনে হয়, যেন সে-ই কবিতা লিখছে। একথা একদিন বলায় সাবের খুব হেসেছিল। তার মাথায় ছোট্ট এক চাটি মেরে বলেছিল, আসলে তুমিই তো লেখো। কিন্তু সংসারের কাজটাজ করে তুমি সময় করে উঠতে পারো না, তাই তোমার হয়ে আমিই লিখে দেই।
সূর্যবান বাসন মাজতে মাজতে শুনল সাবেরের ভরাট স্বর:
আমাদের খুব কাছাকাছি এক
নদী আছে গোধূলির
ঝিরঝির তার ঢেউগুলি আর
স্নিগ্ধ দুই তীর।
গোধূলির মুখোমুখি দ্যাখা সূর্যবানের সাথে
গোধূলির মধ্যে দিয়ে সে এসে দাঁড়ালো ওইপারে
নেমে এলো পানির কাছাকাছি
আর, এইপারে আমি বসে আছি।
পানিতে সাঁতরে চলা হাঁস
ডেকে ডেকে তুলে নিল সে
এরপর হাঁসের পিছু পিছু গোধূলিরঙা মেয়েটি চলে গেল
হাঁসেরা সূর্যবানের বাড়ি নিয়ে গেল ডানায় লেগে থাকা
গোধূলিরাঙা নদী
আমাদের খুব কাছাকাছি এই নদী
আমাদের খুব ইচ্ছে হলো তাই
নদী সাঁতরে যাওয়ার
আমাদের নদী উত্তেজনায়
কাঁপতেছে তিরতির
সূর্যবান স্রোতস্বিনী, এখন
আমার উন্নত হবে শির।
ফেনায়িত জল
নদী টলোমল
এরপর ঘুঘুর ডাক নদীতীরে একটানা।
শুনতে শুনতে এক ঘোরের মধ্যে থেকে সূর্যবান তাকালো সাবেরের মুখের দিকে। সাবের মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে তার দিকে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে একটু হেসে চোখ নামিয়ে নিল সূর্যবান।
আর ঠিক তখন গোলগাল চাঁদ বাঁশবাগান ছাড়িয়ে আরো একটু ওপরে উঠে এলো। এমনিভাবে রাতভর একটু একটু করে উঠতে থাকবে চাঁদ। আর মানুষ চাঁদের থই থই আলোর ভেতর রাতের নীরবতায় ঘুমিয়ে থাকবে।
আনন্দবাড়ি
ছিমছাপ দোতলা বাড়ি। লাল রঙের। কীরকম শান্ত আর নির্জন। টলটলে সবুজ দিঘির মতো শান্ত যেন। চারদিকে গাছপালা। সারাক্ষণ পাখিরা ডাকাডাকি করে। এছাড়া আর কোনও শব্দ নেই। খা খা রোদ আলসের মতো পড়ে থাকে লোহার গেটটাতে। ইসকুলে যেতে-আসতে ছায়াবীথি বারবার তাকিয়ে দ্যাখে ভেতরটা। নিচতলার বারান্দায় দুটো বেতের চেয়ার। কখনও সেখানে কাউকে বসতে দ্যাখেনি ছায়াবীথি। তবে কি চেয়ার দুটো খালিই পড়ে থাকে? আবার খালিও না। প্রায় দিনই ছায়াবীথি দেথকে পায়, চেয়ার দুটোর ওপর কয়েখটা পাখি চুপচাপ বসে থাকে। কখনও ডাকাডাকি করে। সামনে ঘেসোজমি। একদিকে ফুলের ছোটটো বাগান। বাড়িটাতে লোকজন আছে বলেও মনে হয় না। শুধু একদিন ছায়াবীথি সুন্দর চেহারার একটি তরুণীকে বসে থাকতে দেখেছিল দোতলার বারান্দায়। তার দিকে ফিরেও তাকায়নি। কিন্তু ছায়াবীথি চেয়ে চেয়ে তাকে দেখেছিল। কী করছেন উনি? প্রথমে মনে হয়েছিল, বই পড়ছেন। কিন্তু না, উনি আসলে চেয়ে আছেন সামনের দিখে। কী রকম উদাসমুখে। যেন নিজের ভেতর ডুব দিয়ে দিয়ে আছেন।
রোদ চচ্চর হয়ে মাথায় চড়ে যাচ্ছে। ছায়াবীথি আর দাঁড়ায়নি সেদিন।
এরপর আর কাউকে সে দ্যাখেনি। তবে একদিন একটা প্রাইভেট গাড়ি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। ড্রাইভার ছিল না। রোদে কী সুন্দর যে চকচক করছিল গাড়িটা! ছায়াবীথির ভালো লেগেছিল। তবে ভালো লাগেনি গাড়িটার এই একা একা থাকা। ড্রাইভার না থাকলে আর গাড়ি কেন? বাড়িটাও কীরকম অদ্ভুত! পাখিদের ছাড়া মানুষের কোনও সাড়া মেলে না। নিজের মতো একা একা থাকতেই যেন বাড়িটার আনন্দ। তাই কি বাড়িটার নাম আনন্দবাড়ি? ছায়াবীথি তা জানে না। তবে বাড়ির সামনে নেমপ্লেটে দে দেখেছে লেখা, আনন্দবাড়ি। আনন্দবাড়ির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলে বোঝা যায়, একাকিত্ব নিয়েও বাড়িটার একটা গাম্ভীর্য আছে। আর নির্জনতা।
ছায়াবীথির ধারণা, বাড়িটাতে যারা থাকে তাদের কোনও দুঃখ-টুকখো নেই। এই বাড়িতে থাকলেই যেন আনন্দে থাকা যায়। নিজের মনমতো আনন্দে বেঁচে থাকা মানুষ খুব তো একটা দ্যাখা যায় না। ছায়াবীথি তাই ভাবে, আনন্দবাড়ির সুখি মানুষদেরও এ কারণে দ্যাখা যায় না। তবে তারা যে আছে, এরকম আভাস পাওয়া যায়। আনন্দবাড়ির ভেতর কখনও ঢোকেনি ছায়াবীথির। সুনসান দুপুরে গেটের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থেকেছে। ভেতরটা দেখতে খুব ইচ্ছে হয়েছে কখনও কখনও। কিন্তু সাহস হয়নি।
কালরাতে ঝুম বৃষ্টি হয়েছিল। রাস্তা তাই কাদা-কাদা। ছিঁটেফোটা মেঘ আকাশে। খেয়েদেয়ে ইসকুলে বের হলো ছায়াবীথি। তার পকেটে আম্মু দশ টাকা দিয়ে বললেন, আজেবাজে খাবার কিন্তু খেও না। চকলেট আইসক্রিম খেলে দাঁতে পোকা ধরবে। এরচে বাদাম খেয়ো।
ছায়াবীথিও ঘাড় নেড়ে বলল, ঠিকাছে আম্মু।
এরপর আম্মু তার থুতনি ধরে একটু নেড়ে দিলেন। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার পথে এই এক আদর আম্মুর। ভারি ভালো লাগে ছায়াবীথির। আম্মুকে তখন মনে হয় রানি। তার রাজকন্যাকে ইসকুলে পড়তে পাঠাচ্ছেন।
আনন্দবাড়ির সামনে এসে ছায়াবীথি থমকে দাঁড়ালো। দোতলার বারান্দায় একজন লোক। জিনসের প্যান্ট আর টি-শার্ট পরা। চোখে সানগ্লাস। মোবাইলে কথা বলছেন। হাত নাড়ছেন। দেখে মনে হচ্ছে, উত্তেজিত। কথা শোনা যাচ্ছে না, তবু ফুরফুরে লাগল ছায়াবীথির ভেতর। বাড়িটাকে এ মুহূর্তে আর মনে হলো না যে, সে একা। আড়মোড়া ভেঙে বাড়িটা যেন জানিয়ে দিচ্ছে সুখি মানুষের উপস্থিতি। ভেতর থেকে বারান্দায় এলেন আগের দ্যাখা সেই তরুণী। শাড়ি পরে আছেন। সবুজ শাড়ি। মায়াবী দেখাচ্ছে তাকে। মুগ্ধ হলো ছায়াবীথি। ও আচ্ছা, এনারা তাহলে এ বাড়িতে থাকেন। নিচে ঘাসের জমিতে নীলরঙের একটি প্রাইভেট গাড়ি। আগের গাড়িটা নয়, আরেকটি। তরুণীর চোখ হঠাৎ ছায়াবীথির দিকে পড়ল। ছায়াবীথি গেট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখাচোখি হতেই কেন যেন লজ্জা পেল ছায়াবীথি। তরুণীর আঙুলের ইশারায় লোকটি তার দিকে ফিরতেই ছায়াবীথি মুখ সরিয়ে নিল। এরপর হাঁটতে আরম্ভ করল। একটি ডাক শুনতে পেল সে। তরুণী মেয়েটি ডাকছেন, এই যে মেয়ে, এই...। ছায়াবীথি দাঁড়ালো না।
ইসকুল থেকে ফেরার সময় গাড়ি আর ওই দুজনকে দেখতে পেল না ছায়াবীথি। তবে মনে হলো না যে, বাড়িটা আগের মতো একা। গাছপালা ঘাস পাখি নিচের বারান্দার দুটো চেয়ার, সবকিছু যেন আনন্দের এক একটা ছবি। দুঃখ যেখানে ঢুকতে পারে না। বাড়িটার প্রতিটি ছবি ঝকঝকে সুন্দর।
বাড়ি ফিরে খেয়েদেয়ে সে আঁকতে বসল বাড়িটার আজকের ছবি। প্রায়-প্রায়ই সে আনন্দবাড়ির ছবি আঁকে। একই বাড়ি, কিন্তু প্রতিবার সে আঁকে। কেন আঁকে, তা সে জানে না। দুটো খাতাভর্তি তার এসব ছবি। আম্মু-আব্বু জানেন, ছায়াবীথি ছবি আঁকে। বাড়ির ছবি। কিন্তু কোন বাড়ির ছবি, তা জানেন না। ছায়াবীথি কাউকে বলেও না। বাড়িটার সুখি সুখি চেহারার মানুষজন তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সে যেন তাদের দেখতে পায়। ঘরগুলো পরিষ্কার তকতকে। কোথাও এতটুকু ময়লা পড়ে নেই। দেয়াল ও মেঝে থেকে হিম হিম শিহরণ জড়ানো শীতলতা উঠে আসে। আরাম লাগে।
ছায়াবীথি? ছায়াবীথি?
খাটে উপুড় হয়ে শুয়ে বাড়ির ছবি দেখতে দেখতে ছায়াবীথি জবাব দিল, এই যে আম্মু।
আয়তো মা এদিকে।
ছায়াবীথি রান্নাঘরে গেল। বটিতে আম কাটছেন আম্মু। বসে বসে আম খেতে থাকে ছায়াবীথি। আম্মু জিগেশ করলেন, কী করছিলে মা?
আম খেতে খেতে ছায়াবীথি বলল, ছবি আঁকছিলাম।
কিসের ছবি?
একটা বাড়ির ছবি। ছায়াবীথির থুতনি আমের রসে মাখামাখি হয়ে গেছে। আম্মু আর কিছু জিগেশ করলেন না। রান্নাঘরের চালার ওপর কাঁঠালগাছে ডেকে উঠল একটা ঘুঘু। বিকেলের নরম রোদ উঠোনের ঘাসে। উঠোনের পরেই বাঁশবাগান। বনজঙ্গল।
আম্মু বললেন, যা তো ছায়া, জগটা ভরে নিয়ায়।
আম খাওয়া শেষ করে ছায়াবীধি জগ নিয়ে গেল টিউবঅয়েলে। পানি খেয়ে জগ ভরে নিয়ে এলো। বসতে বসতে জিগেশ করল, রুটি বানাবা আম্মু?
আম্মু জবাব দিলেন, হুঁ।
পরোটা খাব।
খেয়ো মা।
আম্মু রুটি বেলতে থাকেন। ছায়াবীথি ছোটটো একটু আটার দলা নিয়ে খেলতে খেলতে জিগেশ করল, আচ্ছা আম্মু বলো তো, কোনও বাড়ির নাম যদি আনন্দবাড়ি হয়, তবে কি বাড়ির লোকজনও আনন্দে থাকে? কখনোই তারা অসুখি হয় না?
একটু অবাক চোখে আম্মু জিগেশ করলেন, কেন রে?
না এমনি, বলো না!
আম্মু এক টুকরো আম মুখে দিয়ে বললেন, হয়। মানুষ বাড়ির নাম এমনি ওরকম রাখে। কিন্তু ধর, সত্যিই যদি আনন্দবাড়ির লোকজন সদাসর্বদা সুখে-শান্তিতে থাকিত, তাহা হইলে কেমন হইত বল তো খুকি?
আম্মুর কথা শুনে ছায়াবীথির সারামুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ল। জিগেশ করল, তুমি সুখি মানুষ দেখেছো আম্মু?
সে কী আর দ্যাখা যায় রে মা! আল্লার এই দুনিয়ায় সুখ আর দুঃখ সমানে সমান। সুখ থাকলে দুঃখ আছে। দুঃখ থাকলে সুখ আছে। আর তাই কোনও মানুষ পুরোপুরি সুখি হয় না। আম্মু হাসলেন। জিগেশ করলেন, হঠাৎ এই ভাবনা মাথায় কেন রে?
না এমনি। সুকুমার রায়ের গল্পে সুখি মানুষের কথা লেখা আছে। তুমি পড়োনি?
হ্যাঁ, ওই যে রাজার একবার কঠিন অসুখ হলো। চিকিৎসক জানালো সুখি মানুষের জামা পড়লে রাজা সুস্থ হবেন। সুখি মানুষ পাওয়া গেল, কিন্তু পাওয়া গেল না তার জামা। সুখি মানুষটার কোনও জামাই ছিল না।
হ্যাঁ আম্মু। কিন্তু সুখি মানুষটির বাড়িটা অনেক সুন্দর। ঝকঝকে। বাড়ির নাম কি জানো আম্মু?
আম্মু মিটিমিটি হাসেন। বলতো শুনি।
আনন্দবাড়ি।
রহস্য ছড়ানো মুখে হাসি ছড়িয়ে আম্মু জানতে চাইলেন, আছে নাকি সত্যি এরকম বাড়ি? কোথায় রে? আব্বুর গল্পে? নতুন গল্প লিখছে বুঝি? তোর আব্বু শুধু তোকেই গল্প শোনায়, আমাকে তো আর শোনায় না।
ছায়াবীথি ভাবছিল, আনন্দবাড়ি সত্যি সত্যি তো একটা বাড়ির নাম। এ বাড়িতে একজন পুরুষ আর একজন নারী থাকেন। বলবে নাকি সে আব্বুকে? চাইলে আব্বুও এ গল্পটা লিখে ফেলতে পারবেন।
মাগরিবের আজানের পরপরই ফিরল সাবের। পিঠে বইয়ের ব্যাগ। ব্যাগটা নামিয়েই ছায়াবীথির মাথায় ছোটটো একটা টোকা দিয়ে বলল, যা তো মা, গামছাটা নিয়ায়। সাবের টিউবঅয়েলে গেল। ছায়াবীথি নয়, গামছা নিয়ে এলো সূর্যবান। জিগেশ করল, আজ কোথায় গেছিলা?
টিউবঅয়েল চেপে হাতমুখ ধুতে ধুতে সাবের জবাব দিল, শঙ্খডাঙা গ্রামে।
সূর্যবান জিগেশ করল, বই বেচতে পারছ?
সাবের বলল, হইছে কিছু। মানুষ তো এখন আর বইটই পড়ে না। প্রত্যেকে যার যার ধান্দায় ঘোরে। এই যে দ্যাখো, আমি ভেবেছিলাম শঙ্খডাঙা নামটার প্রশংসা করবে তুমি। কিন্তু জিগেশ করলে বাণিজ্যের খবর। শঙ্খডাঙা এলাকাটা আমি ঘুরে এলাম, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষজনের সঙ্গে কথা বললাম। তাদেরকে আমার লেখা বই দেখালাম। বেশিরভাগই মানুষই কেনেনি। যারা কিনেছে তারা আমাকে দেখেই কিনেছে। এটাও আনন্দ বউ। আমি আনন্দের মানুষ, তাই আনন্দে থাকি।
সূর্যবানের হাত থেকে গামছা নিয়ে, কই রে আমার জননী... বলতে বলতে সাবের ঘরে ঢোকে।
রাতে আধেক চাঁদ লটকে রইল বাঁশবাগানের মাথার ওপর। ঝোপঝাড়ের ওদিকে জোনাক জ্বলছে। ডাহুক ডেকে চলেছে কোথাও। উঠোনের এককোণে বাঁশের মাঁচায় বসে ছায়াবীথির সঙ্গে গল্প করছে সাবের।
জানিস মা, শঙ্খডাঙা গ্রামে একটা নদী আছে। নদীর পারে শনের একটা ঘরে থাকে সুখিয়া।
ছায়াবীথি জিগেশ করল, সুখিয়া কে আব্বু?
সুখিয়া তোর মতো একটা মেয়ে। ওর মা ধানভানা চাতালে কাজ করে। সুখিয়া আর তার বুড়ো দাদু বাড়িতে থাকে। সারাদিন সে খকখক করে কাঁশে। সুখিয়া ইসকুলে পড়ে। খুদে বই সে কিনেছে। ওর কাছে জমানো টাকা ছিল। ছায়াবীথির ছড়া পড়ে সে তো ছায়াবীথিকে দেখতে চাইল।
খুশি হলো ছায়াবীথি। মাঁচার ওপর বসে পা দুলিয়ে জিগেশ করল, তাই আব্বু?
সাবের বলল, হ্যাঁ। আরও কি বলল জানিস?
কি বলল আব্বু?
বলল, ছায়াবীথিকে নিয়ে লেখা ছড়া সুন্দর হয়েছে।
বলল বুঝি?
হ্যাঁ। তাই তো বলল। তোর কি মনে হচ্ছে, আমি বানিয়ে বানিয়ে এসব বলছি?
মাথা নাড়ল ছায়াবীথি। না-না, আমি তা বলিনি। আমি তো জানিই, ছড়াগুলো সুন্দর। আচ্ছা বাবা, সুখি মানুষ নিয়ে তুমি একটা গল্প লিখতে পারবে?
ছায়াবীথির মাথায় টোকা মেরে সাবের জিগেশ করল, সে আবার ক্যামন গল্প রে মা?
ভালো গল্প আব্বু। আমি তোমাকে গল্পটা বলি? এরপর তুমি লিখে ফেলতে পারবে না?
তুই বানিয়েছিস বুঝি?
হ্যাঁ।
হাসি ছড়ালো সাবেরের মুখে। বলল, কস কীরে! আমার ছোটটো ছায়াবীথিও তাইলে গল্প বানাইতে পারে! আম্মুকে বলেছিস?
ঘাড় নাড়ে ছায়াবীথি। না, বলিনি।
তাইলে আমারেই বল। দেখি গল্প লেখা যায় কীনা।
ছায়াবীথি বলতে থাকে, বাড়িটার নাম আনন্দবাড়ি। মাঝ বয়েসী একজন পুরুষ আর একজন নারী থাকেন বাড়িটায়। তারা দুজনই দেখতে খুবই সুন্দর। মানুষের দ্যাখা স্বপ্নের মতো। এই হচ্ছে আমার গল্প। এরপর বাদবাকি তোমাকে লিখতে হবে।
সাবের মেয়েটাকে টেনে নিলেন বুকের ভেতর। তুই যে অনেক কিছু ভাবতে পারিস খুকি? ওরে আমার ছায়াবতী শ্যামলিমারে...
ছায়াবীথি দু’হাত দিয়ে আব্বুর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, আর রাখালছেলে।
হ্যাঁ, আমার মেয়েটার আরেক নাম তো রাখালছেলে। আর যেন কি নাম রে?
ছায়াবীথির জবাব, আর সবুজপরি আর রাঙাপরি মেহেদি গোল্ড...। জানো আব্বু, আজ ফেরিঅলার কাছ থেকে আম্মু আমাকে রাঙাপরি মেহেদি গোল্ড কিনে দিয়েছে। এই যে হাতে আল্পনা এঁকেছে আম্মু।
ছায়াবীথি দু’হাত সামনে এনে আব্বুকে হাতের আল্পনা দ্যাখায়। চাঁদের আলোয় সাবের মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে ছায়াবীথির হাতের আল্পনায়। তার মেয়েটি সারামুখে হাসি ছড়িয়ে তার দিকে চেয়ে আছে।
ঘর থেকে সূর্যবানের ডাক শোনা গেল, কই খাইতে আসো। ভাত বাড়ছি।
খাড়া রোদ। ঝাঁ ঝাঁ করছে চারদিক। ছায়াবীথি ইসকুল থেকে ফিরছে। আনন্দবাড়ির গেটের সামনে দুটো প্রাইভেট গাড়ি দাঁড়ানো। তিনটে মোটরসাইকেল। লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। গেট খোলা। ভেতরেও লোকজন। দোতলার বারান্দাতেও দু’চারজন। সবারই কী রকম যেন দুখি দুখি চেহারা। কেউ কেউ মোবাইলে থমথমে স্বরে কথা বলছে।
অকস্মাৎ নির্জনতা ভেঙে পড়েছে বাড়িটার। কী একটা গুরুতর ঘটনা ঘটে গেছে। বাড়িটার দিকে চেয়ে ছায়াবীথির মনে হলো, আনন্দবাড়িকে সে এই প্রথম যেন দেখছে। গুটি গুটি পা ফেলে গেটের ভেতরে ঢুলক ছায়াবীথি। তার দিকে কেউ ফিরেও দেখল না। নিচতলায় তেমন কিছু সে দেখল না। দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে লোকজন উঠছে-নামছে। সবার চোখমুখে কী যেন একটা ইঙ্গিত। পায়ে পায়ে সিঁড়ি দিয়ে সে উঠে এলো। সিঁড়ির পাশেই ঘরটার সামনে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে কান্নার শব্দ। উঁকি দিয়ে সে দেখল, বিছনায় ধবধবে শাদা চাদরে ঢাকা একটা মৃতদেহ। লোকজন আড়াল করে থাকায় ছায়াবীথি মুখ দেখতে পেল না।
কী এক পাথর যেন চেপে বসল ছায়াবীথির বুকের ভেতর। হিম হয়ে গেল সে। কী হুটহাট চলে আসে মৃত্যু। যে কোনও মুহূর্তে, ভাবনারও আগে। পায়ে-পায়ে সে বেরিয়ে এলো রাস্তায়। হাঁটতে হাঁটতে ছায়াবীথি ভাবল, সন্ধেয় আব্বু এলে বলতে হবে, আনন্দবাড়ি গল্পটা তুমি আর লিখো না আব্বু। কিন্তু আব্বু যদি জিগেশ করেন, কেন? তখন সে বলবে, আনন্দবাড়িতেও নিশব্দে মৃত্যু ঢুকে পড়ে। থামিয়ে দ্যায় আনন্দ। যদি তা-ই হয়, তবে আনন্দবাড়ির মানুষগুলো মানুষের দ্যাখা স্বপ্নের মতো সুন্দর হলো কীভাবে? সুতরাং সুখি মানুষও নেই। আর নেই কোনও আনন্দবাড়ি। মানুষ বাড়ির নাম এমনি ওরকম রাখে।
























