অলঙ্করণ: শামসেত তাবরেজী

অলঙ্করণ: শামসেত তাবরেজী

করোনা ভাইরাস নিয়ে তিন কবির কবিতা

প্রকাশিত : মার্চ ২১, ২০২০

শামসেত তাবরেজী

এই দিনে, কোয়ারান্টাইনে

আগে কিংবা পরে, তা তো নয়, জানি
মুহূর্তগুলি, শুধু মৃত্যুরই

ঐ কালা-মোটা মেয়েটা আমাকে
বিয়ে করবে না
এবং রক্তশূন্য রসায়নশাস্ত্র পড়েছে যে
সেও নয়
বন্ধ শপিংমল, তা না হলে
দেখা যেত ঘুরঘুর বেগম
কিনছেন কাঁচুলি
আর কাঁচ দিয়ে বাঁধাই আঁধিয়ার!

এবার একটু মিল দেই নিজের অমিলে
নিজেকেই দেখাই বাহাদুরি
একদিন ছিল কাৎ হয়ে
তব সুর্মাদানি
কাতর নয়নে।

কেউ আমার নয়, এবং অন্যেরো
তাই অশরমে ছিঁড়ি
প্রাচীন পশম

তবু বলি,
সত্যিই দিতাম অবিবাহে রাজি হলে একটা আধুলি
মৃত্যুময়, দিলে, কি হতো আর!

ভাবি, আগে ও পরের মাঝখানে
অসম্পূর্ণ শয়নে
তিয়েনমেন স্কয়ারের থানে
এ কি খশবু ছড়ালেন মাও-মহথেরো!

কাজল শাহনেওয়াজ

করোনা ভাইরাসের দিনগুলিতে ভালোবাসার জন্মলাভ

সৃষ্টিকর্তা তুমি যে মহান,
তুমি থাকো জঙ্গলে হয়তোবা বাড়ির আশপাশে, ছিটালে
থানকুনি, রসুন বা কালিজিরার দানায় জন্মে থাকে তোমার সৃষ্টিদায়ী শক্তি

তোমার স্নেহের শেষ নাই, কিন্তু তুমিতো করোনা ভাইরাসের ব্যাপারটা
এখনো আমাদের জানালে না
এদিকে উৎকণ্ঠায় আমরা হাত ধুতে ধুতে ক্লান্ত হয়ে গেছি
বাজার থেকে চাল-ডাল খুঁজতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলছি

তুমি কি ঢাকা শহরের প্রতিদিনকার জ্যাম দেখে আমাদের ওপর রাগ করেছ প্রভু?
তুমি কি রাজনীতির সুতার বলের সাথে জড়িয়ে যাওয়া কথামালা শুনে ক্রুদ্ধ?
অভিযোগ করেছে কারখানার নামে তোমার কাছে শিশুরা?

তুমি আমাদের সবাইকে মাথা নুইয়ে ভালবাসতে দাও
তুমি কেন একটা আশার আলো দেখিয়ে
থানকুনি, রসুন বা কালিজিরার দানায় জন্ম দিচ্ছ না করোনা থেকে অভয় বাণী

আমাদের শক্ত হয়ে দাঁড়ায়ে থাকবার ভালবাসা দাও প্রভু
তুমিই তো আমাদের ভালবাসা থেকে নিজেকে ভালবেসেছো চিরদিন।

সাঈফ ইবনে রফিক

করোনা বদলে দিচ্ছে সামাজিক বোধ

করোনা বদলে দিচ্ছে সামাজিক বোধ।

সামাজিক দূরত্বের নামে
তোমাদের প্রত্যেককে
একা করে দেয়া হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগের চাপে
তোমরা এমনিতেই
অভ্যস্ত হয়ে গেছ
দলগত একাকিত্বে।
এবার সন্দেহ ঢোকাও মগজে—
হারুনের সাথে দেখা না হলেই
হয়তো কোভিড ১৯ হতো না
বরুণের। মানচিত্রে উহান না থাকলে
এভাবে ভেঙে পড়তো না চীন।
আর চীন না থাকলে আজ
বেঁচে যেত ইউরোপ!
আরও আরও অদ্ভুত সন্দেহে
বন্ধ করে দাও জুমার নামাজ
ওয়াজের রাত
অথবা মদের দোকান।
বিয়ের আসরে পুলিশের হানা
ভ্রাম্যমাণ আদালতে ইতালিফেরত
ভ্যালেন্টাইনকে পাঠাও
কোয়ারান্টাইনে।
পুঁজির অর্ডার বদলাতে চাইলে
আগে যে সামাজিক বোধটাকে বদলে দিতে হয়!