কাজী বর্ণাঢ্যর গদ্য ‘ত্রাণকথা’

পর্ব ২

প্রকাশিত : জুন ২৮, ২০২২

ছোট-বড় সবাইকেই দেখছি বৃষ্টিতে ভিজে তুমুল দৌড়াচ্ছে। যেন দৌড় প্রতিযোগিতা। আশপাশের কোথাও চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে ধরেই নিয়েছি, হয়তো ঝগড়াঝাটি হচ্ছে কোথাও। অল্প কিছু সময় পেরুতে না পেরুতেই দেখলাম, যেদিক থেকে লোকজন গেল আবার তারা সেদিকেই ফিরে আসছে। না, হাতে কোনো দেশীয় অস্ত্র নেই। প্রত্যেক দৌড় প্রতিযোগির হাতেই পুরস্কার হিসেবে দু’তিনটে জাতীয় ফল কাঁঠাল। কোনোরকমে যার যার নিরাপদ স্থানে কাঁঠাল রেখেই আবার দৌড়াচ্ছে। আবার আনছে। বারবার দৌড়াচ্ছে আর বারবার দ ‘তিনটে করে কাঁঠাল আনছে। জনপ্রতি ১০/১৫টি কাঁঠাল মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই জমা হয়ে গেল। কেউ কেউ রাস্তার পাশে বসে কাঁঠাল বিক্রিও শুরু করে দিয়েছে। কিছু অসহায় ভদ্র মানুষেরা তা কিনে নিয়ে যাচ্ছে বাড়ি।

স্মরণাতীত কালের ভয়াবহ বন্যায় ধর্মপাশা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ দুস্ত ও অসহায় বন্যার্তদের সাহায্যার্থে কাপাসিয়া নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ১২,০০০ কাঁঠাল উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন। জাতীয় নেতার কন্যা তার বাগান থেকে কাঁঠাল পাঠিয়েছেন। বিষয়টি একদমই ভিন্নধর্মী ও প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন তারা কি বিতরণের ক্ষেত্রে সঠিক ছিলেন? নিশ্চয়ই দায়িত্ববানরা দায়িত্বহীনের মতো অপরিকল্পিত বণ্টন করে কিছু মানুষের মাথার তাজ আর কিছু মানুষের পাদুকা বনে গেলেন। কাঁঠালের ট্রাক ফিরতে হবে তাই ট্রাক থেকে ধাক্কা দিয়ে কাঁঠাল ফেলছে আর যে যার মতো নিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, ভোটার লিস্ট অনুযায়ী কি কাঁঠাল বিতরণ করা যেত না! কিংবা ট্রলারযোগে এই কাঁঠাল হাওরের গ্রামগুলোতে পৌঁছে দেওয়া যেত না!

সবই করা যেত সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সমবণ্টনের মধ্য দিয়ে। যদি সত্যিকার অর্থে নেতা থাকতো তবে অসম্ভব বলে কিছুই হতো না। তাহলে আমরা যাদের নেতা হিসেবে দেখছি, তারা কারা। তারা কি কেবল নেতা চরিত্রের অভিনেতা! বাঙালি নাকি পয়সা খরচ করে দুধ কিনতে রাজি না থাকলেও মাগনা বিষ পেলেও আবার চেয়ে বসে আমারে আরেক শিশি দেন। অবস্থাটা কিন্তু তা-ই ঘটলো। এই গরমে না বুঝে যারা অতিরিক্ত কাঁঠাল খাবে তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতেই পারে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটা খুবই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক এজন্যই যে, স্বচক্ষে দেখলাম কিছু শিশু হাঁটতে হাঁটতে হাতে রেখেই তিন-চারটে কাঁঠাল ভেঙে খেয়ে ফেললো! আরও যে কত শিশুরা এভাবে খেয়েছে, তার হিসেব আমার অজানা।



ত্রাণের মোহে নদী তীরবর্তী অঞ্চলের কতিপয় মানুষেরা মরিয়া হয়ে উঠছে। বেকার ও অলস জীবনকে আপন করে রেখেছে। তাদের মধ্যে কর্মমুখী প্রাণবন্ত জীবনের প্রতি নূন্যতম চেষ্টা ও আগ্রহ নেই। তারা কেবল অপেক্ষা করে আর মোবাইল মাধ্যমে একে অপরের কাছে ত্রাণের নতুন ট্রাক আসছে কিনা সে খবর রাখছে। অথচ তীরবর্তী অঞ্চল পেরুলেই বিস্তৃত হাওর। হাওরের মানুষ বড় অসহায়। পানির ওপর ভাসমান মানুষের খবর কে রাখে! চলবে

লেখক: কবি