
কিশোর মাহমুদ
কিশোর মাহমুদের ৫ কবিতা
প্রকাশিত : জুলাই ০৪, ২০২০
শোকগাথা
তোমার ছেলেরা ঘুমিয়ে পড়েছে কল্পমন্দিরে
যেখানে দেবতাদের চির কারাবাস
ক্লান্ত আমি অনেক জখম সয়ে প্রাণে
আর কত লাশ সরাবো লাশ!
কাফনে কাফনে মোড়া এ মন্দির
শুধু লোবান পোড়ে ঈশানে নৈঋতে
আর ফসলের মাঠে কত যে ডাকাত
ডেরায় ডেরায় উপছে পড়ে সখি
আগুন তো না
–অন্তর জুড়ে পুড়ছে কেবল বন
বৃষ্টি তো না
–প্রান্তর জুড়ে ঝরছে কেবল পাখি
অনেক আওয়াজ থেকে ছেনে এনে সুর
ঢোল খোল মন্দিরা জুড়েছি কীর্তনে
কুড়িয়ে কত যে হরফ তোমায় সাজিয়েছি
হাজার বছর কাঁদছি তবু নিজের নির্জনে
পুড়িয়ে জঙ্গল, গুড়িয়ে ঝিরি, হত্যা করে গান, ফুল ফল মাছ পাখি পাতার গল্প শেষে
দাঁড়িয়েছি আজ ধড়কাটা পাহাড় চূড়ায় এসে
হাঁটু গেড়ে বলছি আমি, যাব নিরুদ্দেশ?
মধুতো নাই! রক্ত আমার মৌচাকে মৌচাকে
নদীতো নাই! অশ্রু আমার বুনবে নির্ঝরিণী
দু’চোখ যেন প্রাচীন পর্বত
হু হু করে গড়িয়ে পড়ে পানি
হু হু করে গড়িয়ে নামে পানি
অপেক্ষা
ক.
তারা বলে আমার পাঁজরের হাড় দিয়ে
তোমায় গড়েছে গো প্রিয়া
তবুও তুমি নাকি শয়তান দুহিতা
আবার আজরাইলের গোপন চর
বাকি হাড়গুলো খুলে তোমারেই দিয়েছি
গ্রহণ করোনি,পাপিষ্ঠের দিলমোহর?
খ.
গোসল সেরে তার কাছে যাই
দেখি সে নাইতে আছে ঘরে
আড়ায় আড়ায় খেলছে ঘোড়া
তোরা তারে ডাকিস স্বরে সুরে সতী
আমিও ঠিক কৃষ্ণ নারে
তাহার প্রেমে স্বয়ং পদ্মাবতী
সে কোন ঘাটে আজ নামে চন্দ্রাবতী নাম?
গ.
যদি তুমি আসো
পৃথিবীর শেষ কোনও ভোরে
আদরে আদরে ফের পৃথিবী জন্ম দেব
হয়তো তার নাম হবে আগ্রহ
প্রেম অথবা প্রিয়া–
তবে এসো পৃথিবীর প্রথম কোনো ভোরে
নীলগিরি
সোহম সোহম
কথা ছিল ছোট্ট কাঠের ঘরে
চড়িয়ে দিয়ে লক্ষ জোনাক
হারমোনিকার সুরে
কথা ছিল বিন্দু বিন্দু
আলোয় সাজবে ঘর
যেখানে কালো পেশি
মাদল মন্দিরায়
যেখানে জীবন ঊর্ধ্বমুখী
মেঘে মেঘে চমকায়
তেমন রাতে বজ্রপ্রলাপ
খুব নরম সুরে
যেখানে মেঘ জিকির করে
কৃষ্ণচূড়া ঘিরে
তুমি! তুমিই কি সে?
সোহম সোহম
এবার হাজারখানেক জোনাক ধরে
আমায় সাজিয়ে দে
জবানবন্দি
হে রাত্রি, তোমার শরীর থেকে জোনাকিদের খুলে ফ্যালো
নিভিয়ে দাও চাঁদ, খুলে ফ্যালো তারা
আমার মুখের উপর থেকে
এই জরিনদার শামিয়ানা খুলে ফ্যালো তুমি
অন্ধকার আরো নিবিড় হলে সে আসবে
বাতাস তুমিও চুপ থাকো
পাখিরা ডানা ঝাপটিও না
গাছেরা তোমাদের ফিসফাস থামাও
সে আসবে
একুশটি ফুল ছেঁড়ার কথা তাকে বলবো
একাত্তরটি জোনাকি হত্যার কথা
আরো বলবো তেত্তিরিশ কোটি দেবতার মুখ আমি মুখস্থ করতে পারবো না
মিনতি
মেরাজ, সেতো দূরের বিষয়
প্রথমে তো তোমায় চেনা
গোলাম ক্যামনে স্বীকার করি
মোহর আর মালিক বিনা?
আসমান কবে খুলেছে দুয়ার
জিব্রাইলের গল্প শুনে?
কে হবে আমার বোরাক
কার উপর সওয়ার হবো?
পড়ে রই ভুল বাগানে
পড়ে রই ফুল বাগানে
পাষাণ, সেতো বুক চিরে চায়
একবিন্দু শিশির ফোঁটা
বেহুদা দাও কামিনীদের
মধুহীন ফুলের বোটা
আহ্, আমার বুক ফেটে চৌচির
কোষে কোষে ফুটছে তারা
দেখা নাহয় নাহি দিবে
না দিবে শীতল শরাব
চোখে তো দাও অশ্রুধারা
গুটিয়ে ফেলি জায়নামাজ আর
ছিড়ে ফেলি তছবিহমালা
উঠে যাই জিকির ছেড়ে
তুমি না এলেও জানি
তোমার আজাব আসবে তেড়ে
তোমার গজব আসবে তেড়ে
দোজখি বলবে আমায়
বলবে আমি ধৈর্যহারা
তোমার বেলায় শাহেনসি তখত
আমার বেলায় শুধুই কারা?
দেখা নাহয় নাহি দেবে
না দেবে শীতল শরাব
চোখে তো দাও অশ্রুধারা
চোখে তো দাও অশ্রুধারা...