
কেন মানুষ লেখে
অভিষেক অরণ্যপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৯
মানুষ কেন লেখে তা বলতে গিয়ে ম্যাক্সিম গোর্কি একবার দুটো গল্প বলেছিলেন। গল্প ঠিক নয়, তার নিজের অভিজ্ঞতা। খ্যাতির মধ্যগগনে যখন তখন তার কাছে রাশিয়ার প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে দুটো চিঠি আসে। একটা চিঠি লিখেছিল পনেরো বছরের এক কিশোরী। আর দ্বিতীয়টা আশি বছরের এক বৃদ্ধ। যারা দুজনেই কিছু না কিছু লেখার চেষ্টা করে।
কাঁচা হাতের লেখায় সেই সরলপ্রাণ মেয়েটা লিখেছে, প্রিয় ম্যাক্সিম গোর্কি, আমি আপনার লেখার খুব ভক্ত। আপনার সব লেখা আমি পড়েছি। আমি আপনার মতো লেখক হতে চাই। কিন্তু আমি খুব অসুস্থ। যে ঘরটায় আমি থাকি তার সামনে একটা রাস্তা। আর সেই রাস্তার পাশেই বাজার। পুরো রাস্তাটা নোংরা ময়লা আবর্জনায় ভরে থাকে সারাবছর। মরা বিড়ালের বাচ্চা পড়ে থাকে এদিকে-ওদিকে। আর সেই নোংরা কর্দমাক্ত রাস্তার পাশে বাজারের লোকগুলোকে দেখতে দেখতে আর তাদের কথা লিখতে লিখতে আমি ভাবতে থাকি একটা কোপেকের (তৎকালীন রাশিয়ান মুদ্রা) জন্য মানুষ কত নিচে নেমে যেতে পারে।
গোর্কি লিখেছেন, এই মেয়েটা আসলে যে জীবনটা যাপন করে সেটা তার একদম ভালো লাগে না। তার থেকে সে মুক্তি চায়। লেখা তার আশ্রয়। লেখার মধ্যে দিয়েই সে এমন একটা জগতকে কল্পনা করে নেয় যার মধ্যে সে মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে পারবে কোনোদিন।
দ্বিতীয় চিঠিটা লিখেছেন আশি বছরের এক বৃদ্ধ। অল্প কথা। দুটো লাইন। সম্ভাষণ করে জানিয়েছেন প্রিয় গোর্কি, জীবনে এত দেখেছি এত শিখেছি যে না লিখে থাকতে পারি না।
গোর্কির মতে, এই মানুষটি যে লেখেন তার কারণ তার সঞ্চিত অভিজ্ঞতা। তিনি সেই অভিজ্ঞতার ভাগ অন্যকে দিয়ে যেতে চান। অন্যকে তার শরিক করতে চান। তার লেখার মূল অনুপ্রেরণা এটাই।
দুটো চিঠির সারসংকলন করে গোর্কি বলেছেন, যে কোনো লেখা, যে কোনো অনুপ্রেরণার মূল উৎস হলো জীবন। জীবনই শিক্ষক। তার থেকে বড় শিক্ষক পৃথিবীতে কোথাও নেই।