খুশির মধ্যে যে এত উদাসীনতা, লোকে তা জানে না

সুতীর্থ

প্রকাশিত : আগস্ট ০৬, ২০২০

প্রথমবার সাক্ষাতে তৎকালীন সুপার সেলিব্রিটি গায়ক জুনায়েদ জামশেদ বেশ ইতস্ততভাবে তারিক জামিলকে বললেন, আমার বয়সী একজন যুবক যা কল্পনাও করতে পারে না জীবনে, আমি সে সমস্ত কিছুই পেয়ে গিয়েছি। অর্থ, যশ, খ্যাতি, ট্রাভেল সবকিছু আজ আমার হাতের মুঠোয়। তবু কেন জানি না ভেতরে অসম্ভব শূন্য লাগে মাঝেমাঝে। কিসের শূন্যতা বুঝতে পারি না। লোকে ভাবে, আমি খুব খুশি আছি। কিন্তু এই খুশির মধ্যে আমার যে এত উদাসীনতা আছে, লোকে তা জানে না।

তারিক জামিল বললেন, তোমার সমস্যা এইরকম যে, তোমার চোট লেগেছে ডান হাঁটুতে। আর তুমি মলম লাগাচ্ছ বাম হাঁটুতে। কী করে চোট সারবে?

জুনায়েদ, মানে?
তারিক জামিল, দেখো, সৃষ্টিকর্তা আমাদের দু’রকমভাবে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের শরীর বানিয়েছেন মাটি দিয়ে। আর আমাদের রূহ বা আত্মা বানিয়েছেন শূন্য থেকে। সুতরাং শরীরের বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু চাহিদা, সেসব কিছুই সৃষ্টিকর্তা মাটির মধ্যেই রেখেছেন। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র, পরিধান, ঘরবাড়ি, আর যা যা কিছু প্রধানত লাগে, মাটি থেকে পেয়ে যাই। আর রূহকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য? যেহেতু রূহ সৃষ্টি হয়েছে আসমান থেকে, তাই রূহের খোরাক পাওয়া যায় বা আসে একমাত্র উপর থেকেই। তার খাদ্য সংগ্রহের জন্য মাটি অর্থাৎ পৃথিবীকে আঁকড়ে ধরলে রূহের চাহিদা কি করে পূর্ণ হবে!

জুনায়েদ, আর একটু সহজ করেন যদি...
তারিক, দ্যাখো, তোমাকে ধরো একটা সোনা দিয়ে তৈরি বাড়িতে চার দিন বিনা খাদ্যে রেখে দেওয়া হল। তোমার কি অবস্থা হবে?

জুনায়েদ, কষ্ট হবে, ছটফট করব।
তারিক জামিল, এক্স্যাক্টলি। কারণ ঘর যতই সোনায় মোড়া হোক না কেন, তোমার চাহিদার জন্য সোনা তো নিষ্প্রয়োজন। সেরকমই তোমার রূহও দামি দামি পোশাক পরে, দামি গাড়ি চালায়, বিরাট অট্টালিকায় থাকে, আর তুমি ভাবো তুমি সবকিছু পেয়ে গেছ। আর এদিকে তোমার রূহ তার খোরাকের জন্য হাহাকার করে, পাগল হয়ে যায়, তখন তোমার মাথাব্যথা করে। তোমার নিজেকে উদাসীন লাগে। মনখারাপ লাগে। ভেতরটা শূন্য মনে হয়। তুমি কখনও তো রূহের শুশ্রূষা করোনি!

জুনায়েদ, তো এই অসুখের ওষুধ কোথায়?
তারিক জামিল, রূহ যেহেতু আসমান থেকে এসেছে, তাই এর খোরাকও আসমান থেকেই আসে। মাটির উপরে নেই। আর হৃদয়ের প্রশান্তি এই মাটি থেকে তৈরি হওয়া শরীরের মধ্যে নেই, আছে আসমান থেকে আসা এই রূহের ভেতর।

জুনায়েদ, তো এর উপায় কি!
তারিক জামিল, এর উপায় আল্লাহর কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করা। আল্লাহর হুকুম মেনে চলা। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী মেনে চলা। রাসূলের কাজগুলিকে মেনে চলা। নাহলে তোমার শরীর ঠিক থাকবে কিন্তু তোমার রূহ অভুক্ত থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে মুষড়ে পড়বে। আর তুমি মুসলিম বলে এগুলো জানো। একজন অবিশ্বাসী যে এসব ব্যাপারে কিছু জানে না, সে এই উদাসীনতা, বিষণ্ণতা কাটাতে নেশা করবে, জুয়া খেলবে, আরও বহু খারাপ কাজে লিপ্ত হবে। কিন্তু নেশার ঘোর কেটে গেলেই সে ফের অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। সে তার হৃদয়ে প্রকৃত প্রশান্তি কখনওই অনুভব করতে পারবে না।