গরমকালের নরম জার্মান কবিতাগুচ্ছ

অনুবাদ: চয়ন খায়রুল হাবিব

প্রকাশিত : জুন ২৯, ২০২০

জার্মান ভাষার বিভিন্ন সময়খণ্ডের প্রধান পাঁচ কবির গরমকাল বিষয়ক কবিতা। জার্মান ভাষা জানি না। মূল জার্মানের সারাংশ শুনে নিয়েছি প্রাথমিক জার্মান জানা ছেলের কাছে, তা মিলিয়েছি ইংরেজি অনুবাদের সাথে। হুবহু অনুবাদ না করে, কালচিহ্নিত কাব্যধারার আবহ বজায় রেখে, নিজের মতো সাজিয়েছি বাংলাতে। চখাহা

গরমকাল

ইয়োহান ভলফগ্যাং ফন গুত (১৮১০)

গরম দিনের পিছুপিছু
জংলা জলাশয়ে কাঠকয়লার জ্বলজ্বল
আমাদের তৃষ্ণাতে তাড়নার জলপ্রপাত
স্বচ্ছ জলছোয়া পাথরে বসে  
তাজা পানি পানে মনে জাগে মাতলামির গান

এই এক ক্র্যাকিং রিফ্রেশ অজানির পাখি
মনে হয় বাজ পড়ার শব্দ এবং বিজলির ঝলক
অথচ চারপাশে সুনসান নীরবতার পাপড়ি ও পলক
গরমকালের হাসিকে পুড়ায় ভালবাসার রক্তরাখি

গরমকালের সন্ধ্যা

হাইনরিশ হাইনে (১৮২৭)

গরমকালের সন্ধ্যায় লাগে দশা
বন এবং সবুজে সম্পর্ক সর্বনাশা
নৌনীল আকাশে সোনালি চাঁদোয়া
পথিকের অন্তরে পথবন্ধনের মহালয়া

কাঁপে জোনাকির ঝাঁক ঝাঁক আলো
ঝিঁঝির ঝিঞ্জিটে শব্দগুলো পরমে হারালো
পথিক শুনতে পেল পানি দাপানো স্প্ল্যাশ
চারপাশে মাছকন্যাদের অট্টহাশির ফ্ল্যাশ

ওদের ঘাড় ওদের নগ্ন বুক
ওদের মাথার চুল ওদের টলটলে চিবুক
কোমর থেকে নামা রহস্য ঝলমলে যাদুপুচ্ছ
হারানোর আগে রেখে যায় ক্রিসানথিমাম গুচ্ছ

আমি গরমদিনে মাতোয়ারা

অগাস্ট হাইনরিশ হফমান (১৮৭২)

কী যে আনন্দ আজকে আমার এই গরমের দিনে
মাঠঘাট ঝোপ জংলা সবাই গাইছে সূর্যের গৌরবগাথা
প্রত্যেকটা ফুলকে সুধাই অভিবাদন
প্রত্যেকটা পাখিকে অনুরোধ: গান গাও জোরসে চিল্লাও

পৃথিবিটা আমার তা আবার অনুভব করলাম
সুখিতো সবাই হতে চায় তাও আজকে বুঝলাম
গরম দিনের ভেতর বসন্তপ্রাণের নবায়ন
তরুণ মনের ভেতর  চঞ্চলতার বনায়ন

কোনও আকুলতা আমাকে আনন্দ থেকে দূরে নেয় না
আমার আশা-দুরাশাতে নাই কোনও বেদনার পুরস্কার
ভাবনার ভবঘুরে আমি
গরমের দিনে আনন্দরূপের ঘরামি

অফসাইড

থিওডোর স্টর্ম (১৮৪৭)

এতটা নীরব যে, মনে হয় পাহাড় কোনও সত্য লুকাচ্ছে
একটা গোলাপ গাছ সমস্ত গোলাপের আভা নিয়ে কবরে গড়াচ্ছে
কিন্তু কবরে যাবার সময় নাই বাদলা বাতাসের
হা-হুতাশের ভেতর ফোটে একের পর এক নতুন নিশ্বাস

কালো দাগফুটকি লাল গুবরে পোকা গুটিশুটি মেরে
এগিয়ে যাচ্ছে সূর্যের সুবর্ণরেখায় আঁকা সোনালি পুকুরে
মৌচাক ঝোলা একের পর এক ডালকাণ্ড গাছপালা
ঘণ্টি বাজায় শোনাচ্ছে মৌসুমের ভনভন ত্রা লা লা লা লা

ঝকমকানো রোদ ঢেকে দিচ্ছে ক্ষয় ধরা পুরানো ঘরবাড়ি
গোফদাড়িঅলা বুড়ো দাদার মুখে কাঠের পাইপ
পেছনে সোনালি বেনি দোলানো কিশোরী নাতনির স্কিপিং দড়ি
যে ছিল যুবতী সে আগামিকালের ফ্রেমে স্মৃতিময় সুন্দরী বুড়ি

গরমকালের সন্ধ্যা

রাইনার মারিয়া রিলকে (১৯১৩)

সূর্যের স্প্রে
ধরে ধরে কেমন একটা ঘোরলাঘা ভাব
প্রেমিক নাকি প্রেমিকা বলল, তোমাকে আমি চাই
তারপর একটু লজ্জায় কে আবার কাকে, আমি এত ক্লান্ত

ধূপের ধোঁয়ার ধীরলয়ে
একটা গোলাপ ডাটার গায়ে
একটা সাদা গোলাপ
নিষ্পাপ ধবধবে সাদা

*একটা ধবল রাজহাঁসের ডানায়
ধবল অপেক্ষার দোটানায়
হৃদপিণ্ডে গরমকালের বৃষ্টি একটানা*

*মূল কবিতায় নাই। সংযুক্ত।