
গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত ৭৪৩ ফিলিস্তিনি
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : জুলাই ০৬, ২০২৫
গাজার বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে ইজরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত সাতশোর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি বিতর্কিত সাহায্য প্রকল্পের বিরুদ্ধে নতুন করে নিন্দা জোরদার হয়েছে।
শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, জিএইচএফ-এর বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে সাহায্য নিতে গিয়ে কমপক্ষে ৭৪৩ জন নিহত এবং ৪,৮৯১ জনের বেশি আহত হয়েছে। মে মাসের শেষে গাজায় কার্যক্রম শুরু করা জিএইচএফ এরই মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। কারণ একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের ঠিকাদাররা ও ইজরায়েলি বাহিনী সাহায্য প্রার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ মন্ত্রণালয়ের এ তথ্য সম্পর্কে বলেন, “নিহতের এই সংখ্যাটিও আসলে কম। বাস্তবে বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে খাদ্যের প্যাকেটের জন্য অপেক্ষারত মানুষের হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।”
গাজা সিটির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মাহমুদ বলেন, “ইজরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছেছে এবং পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে সাহায্য নিতে আসছে। মানুষ ক্ষুধার্ত। তারা যা পাচ্ছে তা দিয়েই সংসার চালাচ্ছে। অনেক পরিবার একেবারেই খেতে পারছে না। মায়েরা তাদের সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য নিজেরা খাওয়া বাদ দিচ্ছেন।”
গত সপ্তাহে বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে আমেরিকান ঠিকাদারদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, জিএইচএফ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে সাহায্য নিতে আসা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সরাসরি গুলি ও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন ঠিকাদার এপিকে বলেন, “সশস্ত্র কর্মীরা ইচ্ছামতো গুলি চালাচ্ছে।” তবে জিএইচএফ এই প্রতিবেদনকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা তাদের কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে ‘অত্যন্ত সতর্ক’।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও জিএইচএফ-এর পক্ষ নিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, “এই সংস্থাই একমাত্র সত্তা যারা গাজায় খাদ্য ও সাহায্য পৌঁছে দিতে পেরেছে।”
জুনের শেষে ট্রাম্প প্রশাসন সংস্থাটিকে ৩০ মিলিয়ন ডলার সরাসরি তহবিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। শনিবার (৫ জুলাই) জিএইচএফ জানায়, খান ইউনিসের একটি বিতরণ কেন্দ্রে খাদ্য বিতরণ শেষে গ্রেনেড হামলায় ২ মার্কিন কর্মী আহত হয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে, আহত মার্কিন নাগরিকদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের অবস্থা স্থিতিশীল। তবে হামলার জন্য কে দায়ী তা এখনো স্পষ্ট নয়।
প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাৎক্ষণিকভাবে জিএইচএফের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এই সংস্থা ২০ লাখ মানুষকে অতিরিক্ত ভিড় ও সশস্ত্র এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন গুলি ও ব্যাপক মানুষ হতাহত হচ্ছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এই প্রকল্পকে ‘অমানবিক ও প্রাণঘাতী সশস্ত্র পরিকল্পনা’ বলে বর্ণনা করেছে। সূত্র: আল জাজিরা