চাঁদ সোহাগীর ডায়েরী

পর্ব ১৬

শ্রেয়া চক্রবর্তী

প্রকাশিত : মে ১১, ২০১৯

পরীক্ষায় এত এত নম্বর কেন, একটু কমসম পেলে জীবন কেন বৃথা, এই নিয়ে আলাপ-আলোচনা-পর্যালোচনার শেষ নেই। আরে ভাই জীবন কিছুতেই বৃথা নয়, এমনকি এসব পরীক্ষা-টরীক্ষায় না বসলেও নয়। জীবনের মকসুদটা কি? অকিঞ্চিৎকর সময়টুকু শুধু বাদাম ভাজা খেয়ে কাটিয়ে দেয়া যায় না তো। ফ্রিতে বাদাম ভাজাই বা কে দেবে? পেটে ভাত দরকার। গরু ছাগলের মতো এ বাগানে ও বাগানে কলাপাতা চিবিয়ে খাওয়ারও জো নেই। তাই তোমার জন্য আছে একটি সিস্টেম। তোমার জন্য বেঁধে দেয়া হয়েছে নানারকম মাপকাঠি। সবেতেই ওসব ডিঙিয়ে টেনে হিঁচড়ে যেমন তেমন করে বাজারি অর্থনীতির নিরিখে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করাটাই তোমার কাজ। এর জন্যই সিস্টেম তোমাকে ছানবিন করে, করবেই। তারপর নিজের ইচ্ছেমতো একটি যোগ্যতার সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেবে।

রবীন্দ্রনাথ আইনস্টাইনের এসব কোনোদিন প্রয়োজন হয়নি। বনে থাকা জীবজন্তুরও নয়। প্রয়োজন পড়ে মাঝামাঝিদের। সেখানে নিরানব্বই শতাংশ পাওয়া আর ষাট শতাংশ পাওয়া ছেলেটি একই রকম অসহায়। কারণ কোনো পরীক্ষাই তো শেষ পরীক্ষা নয়, এই পরীক্ষামূলক সিস্টেম কে যে একবার অ্যাকসেপ্ট করেছে তার জন্য, এ হলো নিরন্তর সিঁড়ি ভাঙার মাঝামাঝি এক দশা।

কোনো এক মা তার ছেলের ষাট শতাংশের পক্ষে কথা বলে প্রচুর বাহবা কুড়িয়েছেন। এ তো ঠিকই সবাই যে সব বিষয়ে সমানভাবে দক্ষ হবে তার কোনো মানে নেই। কিন্তু যে নিরানব্বই শতাংশ ছাড়িয়ে গেল কিংবা সবেতেই একশো ছুঁই ছুঁই ট্যালেন্ট যার, তার চাপ কিছু কম? জীবনটা অনেক লম্বা। এবার প্রতিটি সিঁড়ির বাঁকে নিজেকে পুনর্প্রমাণিত করার দায় আছে তার। একবার হড়কে গেলেই হলো! তেড়ে আসবে আজকে বাহবা দেয়া ছদ্ম-শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনেকেই। বরং অনেক নিশ্চিন্ত সেই ছেলেটি যাকে চিনল না কেউ, চুপচাপ কোথাও না কোথাও ঠিক পৌঁছে যাবে সবার অলক্ষ্যে, সমালোচকরা পাত্তাটি পাবে না যার।

নম্বর পাওয়া কোনো খারাপ জিনিস নয়। নম্বর না পাওয়াও নয়। খারাপ হলো এই দুটোর ইমপ্যাক্টকেই খুব গভীরভাবে নেয়া। জীবন কোনো পরিস্থিতিতেই অর্থহীন হয়ে পড়ে না, যদি একটা পথ বন্ধ হলে অন্যটা খুঁজে নেয়া যায়, আবার জীবনের অতিরিক্ত কোনো অর্থও নেই সম্ভবত। মুহূর্তেরা দামি। এক একটি মুহূর্তকে সৃজন করার জন্যই জীবনব্যাপী উন্মাদনা। অথচ মুহূর্ত বলেও কিছু নেই। আসলে সবই শূন্য। আসলে সবই অন্ধকার। সৃষ্টি বলে জানি কেবল এই আলো।

সিস্টেমের মধ্যে ভালো-মন্দ দুটি দিকই থাকে। সাধারণ মানুষকে তার ভালো মন্দ দুটি দিকের মধ্যে দিয়েই যেতে হয়। এই করতে করতে কেউ আলোর দিকে দুই পা এগোয়, তো কেউ অন্ধকারের দিকে চার পা। কেবল এই আলো অন্ধকার সে তার নিজস্ব চেতনার শক্তিতে ধারণ করে। বাকি সবই এক, একইরকম অর্থবহ কিংবা একইরকম অর্থহীন।

লেখক: কবি