চাঁদ সোহাগীর ডায়েরী

পর্ব ৩৮

শ্রেয়া চক্রবর্তী

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯

অযাচিত ন্যাকামি, ইতরামি, মিথ্যাচার, অনাচার আর তেল মারামারির জংশনে লোটা কম্বল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় লাগে। কেউ এখান থেকে এক ধাক্কায় ফিরতি ট্রেনে উঠিয়ে দেয় না কেন আমাকে? একটার পর একটা ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যায়। একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বুঝি যবে থেকে ওরা আমার জীবনে ঢুকে পড়েছে, সেই সেদিন থেকেই সব বদলে গেছে।

আমি যেন ছিলাম এক নিশুত অরণ্যে। ছিলাম বিভোর আলো হাওয়া বৃষ্টির সাহচর্যে। ছিল কেবল এক খোঁজ, নিরন্তর আত্মজিজ্ঞাসা। ছিল পাতাঝরার গান, ফুল ফোটার সহজতা। তারপর এলো ওরা একদল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। প্রথমে দূর থেকে দেখতো। খবর রাখতো প্রতিটি পলের। তারপর একদিন সুযোগ বুঝে ঘিরে ধরলো। বিঁধিয়ে দিলো আমার তপোবনসুলভ নিমগ্নতার আঁচলে তার নাগরিক জীবনের কদর্য ফলা।

ব্যাস। তারপর থেকে আমিও ওদের একজন হয়ে উঠবো বলে উঠেপড়ে লাগলাম। পেছনে রয়ে গেল আমার অরণ্য, পর্ণ কুটির, সাধের মালা গাঁথা। নতুন শহরের মায়া আমাকে বেঁধে ফেললো আষ্টেপৃষ্টে।

আমিও ওদের মতো করে বাঁচতে শুরু করলাম। বাঁচা নয়, ওদের মতোই কোনও এক চরিত্রে শুরু হলো আমার বেঁচে থাকার অভিনয়। তারপর বুঝলাম, এদের ভাইব্রেশন আমি নিতে পারছি না। যেন কেবল মাটি খোঁড়ার বীভৎস উল্লাসে এরা সকলেই হুড়মুড় করে এসে ঢুকে পড়তে চাইছিল আমার ভেতরের শূন্যতায়।

কিন্তু ফিরবো কোথায়? কোনও মানুষের ভেতর আর তেমন কোনও তপোবন নেই যে, আশ্রয় দিতে পারে। যেদিকেই দেখি, শুধু এক পৈশাচিক ছুটে চলা। সবাই কোথাও একটা পৌঁছতে চাইছে হুলুস্থুলু করে। কেবল পৌঁছে গেলেই যার ঘ্রাণ উবে যায়।

আমার ইচ্ছে করে উড়ে যাই অনন্তের দ্যোতনায়। কে না জানে, ‘মানুষ নিকটে এলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়...’ চলবে

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক