চাঁদ সোহাগীর ডায়েরী

পর্ব ৬৩

শ্রেয়া চক্রবর্তী

প্রকাশিত : জুন ২২, ২০২০

বাপের বয়সী কোনো কোনো পুরুষ নিজের মেয়ের বয়সী মেয়েকেও নিতান্তই শরীরি দৃষ্টিতে দেখে থাকে। প্রকৃতির ধর্ম নিয়ে কথা বলবো না। কারণ মানুষ হিসেবে আমরা কেবল সেই ধর্মের দাসত্ব করি, এমন নয়। করাটা কাম্যও নয়। সমাজ নামে আমরা অদ্ভুত কিছু তৈরি করে মানুষকে কোনো এক আশ্চর্য মনীষার কল্পনায় আসক্ত করেছি, যার দ্যুতির নাম `মানবিকতা`।

শুনেছি জীবজগতে মায়েরা অনেক বেশি শক্তিশালী। বাঘিনী একাই তার সন্তানকে স্বনির্ভর করে তোলে। বাপ সেখানে কেবলই এক অপরিচিত যুবক। কোনো এক সন্ধ্যার অরণ্যে যে কেবল মিলিত হতে আসে, তারপর হারিয়ে যায় পিতৃত্বের দাবি-দাওয়া ভুলে। মনুষ্য সমাজ পিতাকে মহান আলোয় রঞ্জিত করেছে। মাকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল করে রেখেই তার সুখ। সে প্রসঙ্গ যদিও আলাদা।

প্রেমের কথাও বলছি না। সে এক মহা আশ্চর্য জিনিস। কদাচিৎ ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ, অভূতপূর্ব বটে। কিন্তু সেকি এমন যা কিনা সহসাই ঘটে? যা ঘটে তা হলো শরীর, যা ঘটে তাহলো শরীরে শরীরে বিষাক্ত টানাটানি, সংঘাত কিংবা তারও অতিরিক্ত কিছু। `কন্যা` শব্দের পাশাপাশি আরও একটি শব্দ আছে, `কন্যাসমা`। আপনার আপন ঔরসজাত কন্যার মতো সেও কারো না কারো সন্তান তো বটেই

ফ্রয়েডের মতে, মাতা ও পুত্রের এবং পিতা ও কন্যার ভেতর বেশ শক্তিশালী কিন্তু প্রচ্ছন্ন যৌন আকর্ষণ থাকে। যৌনতা মানেই কেবল তা শরীর কেন্দ্রিক নয়, বরং অনেক বেশি মানসিক এবং তার ম্যানিফেসটেশন নানাবিধ। স্বাভাবিক ভাবেই পিতা-মাতা ও সন্তানের সম্পর্ক আপাদমস্তক স্নেহের মোড়কেই মোড়া থাকে, কিন্তু যা বললাম তার প্রকাশ ঘটে অধিকার বোধের তারতম্যে, যা থেকেই ইডিপাস বা ইলেকট্রা কমপ্লেক্সের জন্ম হয়েছে বলে মনে হয়।

আমি যার প্রেমে পড়েছিলাম, তার প্রেমে পড়ার অন্যতম কারণ ছিল, সে মানুষটা আমার থেকে দশ বছরের বড়। বিষয়টা অদ্ভুত হলেও সত্য। দশ বছরের বড় সেই কাব্যময় পুরুষ আমাকে প্রেম করবে আবার পিতার মতো আগলাবে বা স্নেহ দেবে, এই ছিল প্রচ্ছন্ন দাবি। একের ভেতর দুই সত্তাকে মিলিয়ে নেয়ার এ ছিল আমার এক মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা। কারণ আমার বাবার সাথে সম্পর্ক অমসৃণ ছিল।

একজন চিত্রকর যে ছবিটা আঁকবে, ভেবে তা আঁকা শুরু করে। অনেক ক্ষেত্রে শেষ অবধি তা দাঁড়ায় অন্য কিছু। ছবির মতো কবিতার মতো সম্পর্কও একটা নির্মাণ। ওই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়াটা একটা জার্নি, সবসময় সেটা মনের মতো নাও হতে পারে। জীবনে প্রতিটা সম্পর্কের ওপরেই আরোপিত করা থাকে কিছু তথাকথিত ইমেজ। সেইসব ভেঙে মানুষের অপ্রত্যাশিত উন্মোচনগুলিকে মেনে নেয়াই হলো আসল চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে যে মানুষ যত সফল তার উত্তরণের পথ ততটাই সুগম। চলবে