চিকিৎসকরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়ক: প্রধান উপদেষ্টা

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : জুলাই ২৮, ২০২৫

গণঅভ্যুত্থানের সময় আহতদের সেবায় যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সোমবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে আহত জুলাই যোদ্ধাদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভিডিও বার্তায় তিনি এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা কেবল চিকিৎসক নন, এই জুলাই বিপ্লবের অন্যতম নায়ক। আহতদের জন্য রক্তের সংকট ছিল, প্রশাসনের রক্তচক্ষু এড়িয়ে আপনারা রক্তের ব্যবস্থা করেছেন। আহতদের পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবস্থাপত্রে অন্য নাম, অন্য রোগ লিখে তাদের পুলিশের কাছ থেকে আড়াল করেছেন। প্রাইভেট ডাক্তাররা প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে হাসপাতালে গিয়ে গোপনে চিকিৎসা দিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “রক্ত দেওয়ার সরঞ্জামের সরবরাহ ছিল না, আপনারা নিজেরাই এগুলো ব্যবস্থা করেছেন। এন্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ আপনারা নিজেরাই সরবরাহ করেছেন। আপনারা যেভাবে এই দুঃসময়ে সেবা দিয়েছেন, জাতি তা কোনোদিন ভুলবে না। যখন চারপাশে কান্না, আতঙ্ক ও অজানা আশঙ্কা, তখন আপনারাই আমাদের আশার আলো। এই কঠিন সময়ে যারা ক্লান্তি ভুলে আহতদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আমি জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “যুদ্ধের সময় আক্রান্ত ও আহতদের চিকিৎসা বন্ধ করা যায় না। এটা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। এর ব্যতিক্রম দেখেছি আমরা বাংলাদেশে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু এ দেশের ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়ে থেমে থাকেনি। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে যাতে কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা না পায়।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাইয়ের আমাদের চিকিৎসকদের গল্প কোনও যুদ্ধ ক্ষেত্রের ডাক্তারদের গল্পকেও হার মানায়। রাস্তায় ছাত্রদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে মেডিকেলে ঢুকেও তাদের ওপর হামলা করেছিল। ডাক্তার নার্সদের হুমকি-ধামকি দিয়ে নানারকম বাধা দেওয়া হয়েছিল। শত-শত ছেলে-মেয়ে অন্ধত্ব বরণ করেছে, কারণ তারা সঠিক সময়ে চিকিৎসা পায়নি। নির্দেশ ছিল, আন্দোলনে আহত কাউকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া যাবে না।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা আহতদের গোপনে চিকিৎসা দিয়েছেন। হাসপাতালে হাসপাতালে নিজের জীবন বিপন্ন করে জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়েছেন। রোগীর কোনও তথ্য তারা নথিভুক্ত করে রাখেনি, কারণ এই নথির সূত্র ধরে আহতদের গ্রেফতার করা হচ্ছিল। বিনামূল্যে দিনরাত গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারীদের জীবন বাঁচাতে আপনারা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়েছেন। দুই চিকিৎসক বোনকে আমরা দেখেছি নিজ উদ্যোগে গ্যারেজের মধ্যে অস্থায়ী ক্লিনিক তৈরি করে চিকিৎসা দিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “অনেকেই নিজের ঘরের মধ্যে অস্থায়ী ক্লিনিক তৈরি করে চিকিৎসা দিয়েছেন। আপনারা নিজেরা ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন, আপনাদের পরিবার ঝুঁকির মধ্যে ছিল। তবুও পাহাড়সম বাধা পার করে আপনারা মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন।”