ছায়াবীথি শ্যামলিমার চিলতে গদ্য ‘ভ্রান্তিগল্প’
প্রকাশিত : জুলাই ০৫, ২০২০
এক বুড়ি প্রতিদিন একটি মসজিদের সামনে বসে ভিক্ষে করত। একদিন নামাজ শেষে মসজিদের ইমাম বাইরে এসে তাকে জিগেশ করলেন, আপনি কেন ভিক্ষা করেন? আপনি তো সচ্ছল পরিবারের মহিলা, আপনার ছেলেও তো অনেক ভালো আয় করে।
বড়ি জবাব দিল, আপনি তো জানেন, আমার স্বামী একবছর হলো মারা গেছেন। আর আমার একটাই ছেলে, সে আট মাস ধরে বিদেশে। সে আমাকে টাকা দিচ্ছিল, এরপর টাকা শেষ হয়ে গেছে। এখন আমার ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
ইমাম জিগে করলেন, কেন? সে কি আপনাকে আর টাকা পাঠায় না?
বুড়ির জবাব, না, কিন্তু সে আমাকে প্রতিমাসে একটা করে ছোট রঙিন ছবি পাঠায়। যেগুলো আমি আদর করে চুমু দিয়ে ওর স্মৃতি হিসেবে দেয়ালে লাগিয়ে রেখে দেই।
ইমাম সাহেবের কাছে ব্যপারাটা অদ্ভূত লাগলো, কী এমন ছবি! কেন টাকা পাঠানো বাদ দিয়ে ছবি পাঠাচ্ছে! ইমাম সাহেব সিদ্ধান্ত নিলেন, বুড়ির বাড়িতে যাবেন।
একদিন তিনি বুড়ির বাড়ি গিয়ে ঘরের দেয়ালে তাকিয়ে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। দেয়ালে লাগানো সেই রঙিন ছবিগুলো আসলে ডলারের চেক, যার প্রতিটা ছিল এক হাজার ডলারের। কিন্তু মহিলা অশিক্ষিত হওয়ায় বুঝতে পারেনি সেগুলো কী, এবং কীভাবে কাজে লাগাতে হয়। মহিলা ভিক্ষা করতো কিন্তু তার জানা ছিল না যে, তার ঘরে কত দামি সম্পদ পড়ে আছে।
গল্পটা একটু অদ্ভুত মনে হলেও আমরা প্রতিদিনই এই অদ্ভুত কাজটাই করে যাচ্ছি। আমাদের সকলের বাড়িতেই কোরআন বাসায় কুরআন নামের বিজ্ঞানময় একটি বই রয়েছে। কিন্তু আমরা তা পড়ি না। শুধু গেলাফে জড়িয়ে চুমু দিয়ে আদর করে সযত্নে তাকের ওপর রেখে দিই। আবার অনেকে কোরআন পড়লেও কোনোদিন জানতেও চায় না আসলে কী বলা হয়েছে এর আরবি হরফগুলোতে।
জগৎ-সংসারে আমরা হা-হুতাশ করে ছুটে বেড়াই। কত জায়গায় কত মানুষের কাছে যাই সুখশান্তি আর সফলতার খোঁজে। কত যে জায়গায় গিয়ে দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়ে পড়ে থাকি। কিন্তু সব সমস্যার সমাধান যেখানে, সেই কোরআন পড়ে আমরা সমাধান খুঁজি না।
এই ভ্রান্তি ও উদাসীনতা থেকে কবে মুক্তি ঘটবে আমাদের?
























