‘জীবনের সময় অল্প আর পড়ার জগৎ বিশাল’

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৮, ২০২০

ড্রয়িংরুমে কোনো বই নেই। শুধু একটি অ্যাকুরিয়াম রয়েছে। সেই অ্যাকুরিয়ামে রাজকুমারীদের মতো বিশাল গাউন পরে ভেসে বেড়াচ্ছে তিনটি সাদা রঙের মনোহর মাছ। তার সব বই ভেতরে, নিজের শয়নকক্ষে। বই তার সবচেয়ে প্রিয়। তাই প্রিয় জিনিসকে একান্ত করেই আগলে রেখেছেন নিজের কাছে। সেই সঞ্চয় তো আর কম নয়। শৈশব থেকেই তার পাঠ শুরু। অদ্যাবধি পড়ায় মজে থাকেন আকণ্ঠ। এখন পড়ছেন বসনিয়ার ১১ বছরের এক বালিকা লেখিকার যুদ্ধাভিজ্ঞতার উপর একটি মহৎ গ্রন্থ। সে-বই পড়ার রেশে তখনো ডুবেছিলেন। বললেন, ‘মেয়েটি তার নিজের অভিজ্ঞতা, নিজের দেখা ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দিয়েছে। সেজন্যে বইটিতে বাস্তবতা উঠে এসেছে বিশ্বস্তভাবে।’ কিন্তু তিনি কি জানেন, যারা তার লেখা পড়ে, তারাও এমনই মন্তব্য করে থাকে? রিজিয়া রহমান বাস্তব জীবনের বিশ্বস্ত রূপকার। ‘রক্তের অক্ষর’, ‘বং থেকে বাংলা’, ‘অলিখিত উপাখ্যান’, ‘শিলায় শিলায় আগুন’, ‘সূর্য সবুজ রক্ত’সহ বেশ কয়েকটি অসামান্য বই বাংলা সাহিত্যামোদীদের তিনি উপহার দিয়েছেন। তার সঙ্গে তারই প্রিয় লেখক ও প্রিয় বই নিয়ে গপসপ করেন কথাসাহিত্যিক হামিদ কায়সার। ১৯৯৭ সালের ৩০ অক্টোবর দৈনিক সংবাদের সাময়িকী থেকে গপসপটি পুনর্মুদ্রণ করা হলো:

হামিদ কায়সার: আপনার প্রথম পঠিত বই কোনটি? সেই বইটি কিভাবে আপনার হাতে এসেছিল?
রিজিয়া রহমান: প্রথম পঠিত গল্পের বইটির নাম ‘মুন্নির ম্যাজিক পেয়ালা’। এনে দিয়েছিলেন আমার বাবা। তখন সদ্য বাংলা টানা পড়তে শিখেছি।

হামিদ কায়সার: শৈশবে বই পড়ার আপনার পারিবারিক এবং সামাজিক পরিবেশটা কেমন ছিল?
রিজিয়া রহমান: ছেলেবেলায় আমার পারিবারিক পরিবেশটি নিঃসন্দেহে পাঠক তৈরির জন্য উপযুক্ত ছিল। আমার মায়ের ছিল ভীষণ বই পড়ার নেশা। বাঁধানো মাসিক ‘বসুমতী’, ‘প্রবাসী’, ‘ভারতবর্ষ’, সারি সারি সাজানো থাকতো তার বইয়ের আলমারিতে। বাবা ছিলেন ডাক্তার। যদিও তার পেশায় বই পড়ার অবকাশ কম ছিল, তবুও দেখতাম অবসরে কবিতা পড়তেন তিনি। বড়দের পত্রিকা ছাড়াও বাড়িতে নিয়মিত আসতো নানা ধরনের শিশু-কিশোর পত্রিকা। যেমন ‘শুকতারা’, ‘শিশুসাথী’ ইত্যাদি। আমাদের জন্যই রাখা হতো সেগুলো। এছাড়া গল্প উপন্যাসের আনাগোনা তো ছিলই মায়ের টেবিলে। আমার শৈশবের সামাজিক পরিবেশটিতেও বইয়ের নিয়ন্ত্রণ কম ছিল না। বইপড়া ছিল তখন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারের বিশেষ একটি বিনোদন মাধ্যম। ইস্কুলের লাইব্রেরির বইয়ের ভাণ্ডার তো ছিলই। আরো ছিল পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার। টিভি, ভিডিও ক্লাবহীন সেসব দিনে ক্যাসেটের লেনদেন ছিল না, ছিল পরিচিত আত্মীয় বন্ধুমহলে বইয়ের লেনদেন। আমার মতো গ্রন্থকীটের জন্য পরিবেশটি ছিল আদর্শ।

হামিদ কায়সার: শৈশব এবং কৈশোরে যাকে বলে বই পড়ার নেশা, সেই নেশা কি আপনাকে পেয়ে বসেছিল? কোথা থেকে কিভাবে বই সংগ্রহ করতেন?
রিজিয়া রহমান: সেই ‘মুন্নির ম্যাজিক পেয়ালা’র পর থেকে ‘আবোল তাবোল’, ‘ছানাবড়া’, ‘পাগলা দাশু’, ‘ঠাকুরমার ঝুলি’, ‘হ্যানস অ্যান্ডারসনের রূপকথা’ ক্রমাগত নেশাগ্রস্ত করতে থাকল। হ্যাঁ, বইপড়ার নেশাই আমাকে পেয়ে বসেছিল। কারণও ছিল। ছিলাম রোগা পটকা দুর্বল একরত্তি এক মানুষ। ছুটতে গেলে আছাড় খেয়ে পড়তাম। খেলার মাঠ থেকে বন্ধুরা হঠিয়ে দিল। ঠাঁই হলো বইয়ের জগতে। বই হলো বন্ধু। রাতে-দিনে, সময়ে-অসময়ে, ইস্কুলের টিফিন পিরিয়ডে বাড়িতে হোম ওয়ার্কের খাতার নিচে লুকিয়ে থাকে বই। খেতে বসলে ফ্রকের ঝুলের ভাঁজে বই। ঘুমুতে গেলে বালিশের পাশে বই। বই হলো সারাক্ষণের সঙ্গী। গোটা দশেক না পড়া বই হাতে জমা থাকলে নিশ্চিত। ফুরিয়ে গেলেই দুশ্চিন্তা। মায়ের কিনে দেয়া বই তো দু’দিনেই শেষ। সুতরাং বইয়ের জন্য উদ্যোগী হতে হয় নিজেকেই। ইস্কুলের লাইব্রেরি, পাড়ার পাঠাগার বন্ধুদের বইয়ের মওজুদ এবং মাঝে-মধ্যেই মায়ের বইয়ের আলমারিতে হানা দেয়া— এভাবেই সংগৃহীত হতো আমার প্রতিদিনের পড়ার খোরাক।

হামিদ কায়সার: বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যে-সব বই পাঠ করতেন সেসব বই সম্পর্কে আপনি কিছু বললে ভালো হয়।
রিজিয়া রহমান: ছেলেবেলা থেকে এত বই পড়েছি যে, সেগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গেলে একটা গোটা বইই লিখে ফেলতে হয়। তবে অনেক স্মরণীয় স্মৃতির মতো অনেক ভালো-লাগা বইয়ের স্মৃতিও রয়েছে মনে। খুব সম্ভব চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় পড়েছিলাম বিখ্যাত লেখক জুলভার্নের ‘টুয়েন্টি থাউসেন্ট লীগ আন্ডার দা সী’র বাংলা অনুবাদ। এ বইয়ের নায়ক ক্যাপ্টেন নিমো আর সমুদ্রের তলদেশে তার ডুবোজাহাজ মনে এমন দাগ কেটেছিল, মনে হতো যেন নিমোর সঙ্গেই ঘুরছি। আরো দু’এক ক্লাস টপকাতেই অন্য বইয়েরা এসে গেল। বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’, অপু-দূর্গা নিশ্চিন্দপুরের প্রকৃতি আবার জয় করল হৃদয়। এলো বিদেশি সাহিত্য, গ্রীক পুরাণের উপকথা, আরব্যোপন্যাসের গল্প পেরিয়ে রবিনসন ক্রুসো, গ্যালিভারস ট্রাভেলস, কোরাল আইল্যান্ড, পিজি উডহাউসের হাসির গল্প। এ সময়েই ভিক্টর হিউগোর ‘হ্যাঞ্চ ব্যাক অব নটারডেম’ ও ‘লা মিজারেবল’ পড়ে এতটাই অভিভূত হয়েছি যে, ঝরেছে চোখের পানি। ‘অ্যাঙ্কল টমস কেবিন’ পড়েও ঠিক একইভাবে চোখের পাতা ভিজেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছেলেবেলা’ ‘বিলাত যাত্রীর চিঠি’র সঙ্গে পড়েছি শিবরাম চক্রবর্তীর হাসির গল্প দেব সাহিত্য কুটিরের ‘দেড়শ খোকার কাণ্ড’, ‘হিমালয়ের ভয়ঙ্কর’ ও অন্যান্য রহস্য উপন্যাস। প্রিয় অনুবাদ গ্রন্থ ছিল তখন জার্মানি লেখক এরিখ মারিয়া রেমার্কের ‘অল কোয়ায়েট অন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’, এ বয়সে পড়ার তেমন বাছবিচার ছিল না। রামায়ণ মহাভারতের গল্প, শাহনামা যেমন পড়েছি বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের উপন্যাস, মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদসিন্ধু’ এবং ‘আনোয়ারা’, ‘মনোয়ারা’ উপন্যাস। উপন্যাস পাঠের হাতেখড়ি অবশ্য দশ বছর বয়সেই। মায়ের টেবিল থেকে নিয়ে পড়েছিলাম  ‘দেবী চৌধুরানী’ আর ‘কাশিনাথ’। বঙ্কিম, শরৎচন্দ্র পড়ে ফেললাম নবম শ্রেণিতে ওঠার আগেই। রবীন্দ্রনাথের ‘চার অধ্যায়’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘নৌকাডুবি’, ‘চোখের বালি’ও পড়া শেষ। শুরু হলো কল্লোল যুগের সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচয়। নবম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই পরিণত পাঠিকা হয়ে উঠবার প্রশিক্ষণ শুরু হলো। সে সময়ে যে প্রবীণ শিক্ষক আমাকে বাড়িতে অংক আর ইংরেজি শেখাতেন, উন্নত পাঠ অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য তিনি নিজে থেকেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ইংরেজি সাহিত্যের শেক্সপিয়রের নাটক পড়তে দিলেন। এলিজাবেথীয় ইংরেজির কঠিন বেড়াজাল ভাঙতে সাহায্য করলেন। শেকসপিয়ারের সব নাটক পড়া হয়ে গেল। প্রিয় কবি হয়ে উঠলেন শেলি, বায়রন, কীটস। পড়তে শুরু করলাম ইংরেজি গদ্যসাহিত্য। চার্লস ডিকেনসের ‘অলিভার টুইস্ট’ এ সময়েই পড়লাম। সে সময়ে আমার পড়া বিদেশি বইগুলোর মধ্যে প্রিয়তম বই ছিল রমারলাঁর ‘জাঁ ত্রিস্তফ’। বাংলায় অনুদিত চার খণ্ডের আশ্চর্য এ উপন্যাসটি আমার পাঠক-মনকে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছিল। আমার পাঠ গুরু এবার পড়তে দিলেন পৃথিবীর সব বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী। পড়া শুরু হলো ‘বায়োগ্রাফি’, ‘অটো-বায়োগ্রাফি’। এই সঙ্গে আমি প্রচুর সাহিত্য সমালোচনার বইও পড়তাম। মাস্টার মশাইয়ের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থেকে তিনি আমাকে বই এনে দিতেন। তার বন্ধু নিজেই আমার জন্য বই নির্বাচন করতেন। সাহিত্য সমালোচনা পাঠে উৎসাহদাতা তিনিই ছিলেন। ফলে নবম শ্রেণিতে থাকতেই ইংরেজি কবি শেলীর ‘স্কাইলার্ক’ ও ওয়ার্ডস ওয়ার্থের ‘স্কাইলার্কে’র তুলনামূলক সমালোচনা এবং রবীন্দ্র সাহিত্যসমগ্রের সমালোচনা পড়ে ফেলতে পেরেছিলাম। প্রিয় শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে যে পরিশীলিত পাঠ অভ্যাস তৈরি হয়েছিল, কলেজ জীবনে এসে তা আরো বিস্তৃত হলো। বিশ্ব সাহিত্য ভাণ্ডারের অমূল্য বইগুলো নিজেই নির্বাচিত করে পড়তে শুরু করলাম। পড়লাম ‘মাদার বোভারী’, জেইন অস্টিনের ‘প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস’। পরিচয় হলো এইচ জি ওয়েলস, টমাস হার্ডির সঙ্গে, পড়লাম দান্তে, ও গ্যোটের কবিতা, সমারসেট মমের ‘অব হিউম্যান বন্ডেজ’ ও ‘দি মুন এন্ড সিক্স পেনস’ এবং পার্ল. এস. বাকের-এর ‘মাদার’ও এ সময় আমার প্রিয় ছিল। প্রিয় কবি ছিল জর্জ ইলিয়ট, বোদলেয়র ও নাজিম হিকমত।

আমার পাঠিকা জীবনকে সমৃদ্ধ করেছিল ফরাসি এবং রুশ সাহিত্য। ভিক্টর হিউগো, এমিল জোলা, মোঁপাসা আমাকে জীবনবোধের বাস্তবতার সঙ্গে পরিচিত করেছিল, রুশ সাহিত্যিক ডস্টয়ভস্কি, আন্তন শেকভ, গোর্কি, গোগল, টুর্গেনিভ, টলস্টয় প্রমুখ কালজয়ী লেখকের লেখা এক মহাজীবনের মিছিলে আমাকে শরিক করে দিয়েছিল। আমার লেখক জীবন নিঃসন্দেহে এদের কাছে ঋণী। পরবর্তীকালে যে-সব বিদেশি লেখকের লেখা আমাকে আন্দোলিত করেছে তারা হাওয়ার্ড ফাস্ট, স্টাইনবেক, ভার্জিনিয়া উলফ এবং হেমিংওয়ে।
আলবার্তো মোরাভিয়া ও আলবেয়র কামুর লেখার সঙ্গে পরিচয় ছাত্রজীবন শেষে। বাংলা সাহিত্যের অতি আধুনিক লেখকের লেখা বইগুলোর মধ্যে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’, ‘প্রাগৈতিহাসিক’ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘উপনিবেশ’, তারাশংকরের ‘হাসুলী বাঁকের উপকথা’, বুদ্ধদেব বসু, অচিন্তকুমার ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের কিছু ছোটগল্প আমার বিশেষ প্রিয় ছিল সেকালে।

হামিদ কায়সার: লেখালেখির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হবার পেছনে কি প্রেরণা কাজ করেছে— কোন্ লেখক এবং বইয়ের কি ভূমিকা আছে?
রিজিয়া রহমান: লেখালেখিটা শুরু হয়েছিল এত কম বয়সে যে কারো কারো প্রেরণা সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব ছিল না। ন’ বছর বয়সে হঠাৎ করেই শুরু করেছিলাম কবিতা এবং গল্প লিখতে। সেই শুরুটা ক্রমে গভীর থেকে গভীরতর হয়ে বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে কত লেখকের কত বইই তো ছাপ রেখেছে মনে। এককভাবে কাকে কৃতিত্ব দেব? তবে অস্বীকার করার উপায় নেই বিশ্ব সাহিত্যের বিরাট পরিধি আমার সৃষ্টিশীল চিন্তাধারাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

হামিদ কায়সার: লেখালেখির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হবার পর থেকে আপনি কি বেছে বেছে বই পড়েন?
রিজিয়া রহমান: আমার লেখার এবং পড়ার জীবন দুটি প্রায় সমবয়সী। কেউ কাউকে অতিক্রম করে যায়নি। গভীরভাবে সম্পৃক্ত হয়ে লেখক জীবনের গভীরতর সময়টি খুঁজে বের করা আমার পক্ষে সত্যিই কঠিন। বেছে বই পড়া, লেখার জন্য হয়ত কখনো দরকার হয়েছে। কিন্তু গভীরতর লেখার লেখক হবার জন্য বেছে বেছে বই পড়ার প্রয়োজন অনুভব করিনি। কথাটা আরো ব্যাখ্যা করে বলি, যেমন ‘বং থেকে বাংলা’ উপন্যাসটি লেখার জন্য আমাকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে পড়তে হয়েছে জিওলজি, প্যালিওন্টোলজি, অ্যানথ্রোপোলজি। পড়তে হয়েছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, চর্যাপদ, মধ্যযুগের গীতি কবিতা, পুঁথি ইত্যাদি অনেক কিছুই। এ সবই লেখার কারণে পড়া। এই পড়াকে বিশেষ একটি লেখার জন্য বাছাই পড়া আখ্যা দেয়া যায়। কিন্তু এই বাছাই পড়ার জন্য আমাকে পছন্দসই উপন্যাস, কবিতা সমালোচনা, বিজ্ঞানধর্মী পড়াকে ছাঁটাই করে দিতে হয়নি।

হামিদ কায়সার: আপনার প্রিয় লেখক এবং প্রিয় বই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
রিজিয়া রহমান: প্রিয় লেখক এবং বইয়ের তালিকা বেশ দীর্ঘ। সংক্ষেপে কিছু জানাতে পারি। বাংলা সাহিত্যের রবীন্দ্রনাথ আমার প্রিয়। ফররুখ আহমেদের কবিতা আমার ভালো লাগে। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবিদের মধ্যে বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা এবং বাংলাদেশের শামসুর রাহমানের কবিতা আমি পছন্দ করি। তারাশংকরের ‘হাসুলী বাঁকের উপকথা’ মানিকের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ আমার প্রিয়। বিশ্ব সাহিত্যের খ্যাতনামা লেখকদের মধ্যে টলস্টয়ের ‘ওয়ার এন্ড পিস’ এবং নিকোলাই গোগলের ‘ওভারকোট’ গল্পটি আমার অত্যন্ত প্রিয়।

হামিদ কায়সার: এমন কোনো বই কি রয়েছে যা আপনি বারবার পড়েন এবং গভীর তৃপ্তি পান?  
রিজিয়া রহমান: সব পাঠকেরই তার নিজস্ব অভিরুচির কিছু বই থাকে যা বারবার পড়ার পরও পুরনো হয়ে যায় না। আমারও এমন কিছু বই রয়েছে। প্রথমেই রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটির উল্লেখ করছি। বহুবার পড়ার পরও ভালো লাগা নিঃশেষ হয়নি। কালজয়ী লেখক লিও টলস্টয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পীস’ আমি একাধিকবার পড়েছি। যতবার পড়েছি একজন শক্তিশালী লেখকের কলমের শক্তিমত্তা অনুভব করেছি। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ এবং ভাসিলি ইয়ানের ‘চেঙ্গিস খান’ উপন্যাস দুটি পড়েছি বার-কয়েক। পুরনো হয়নি। প্রায় সাড়ে ছ’শ’ বছর আগের ভূপর্যটক ইবনে বতুতার পর্যটনের অনুলিপি লিখেছিলেন ইবনে জুযাই। ‘ইবনে বতুতার সফরনামা’ নামের এই ভ্রমণকাহিনীটি বহুবার পড়েছি। মাঝে মাঝেই পড়ি। ইতিহাস ছাড়াও বইটিতে সাহিত্যিক মূল্য ও মানবিক মূল্যবোধ রয়েছে। বর্ণনার ভঙ্গীটি এত চমৎকার যে যতবারই পড়ি আশ্চর্যরকম ভালো লাগে। এক বই বার বার পড়া নিয়ে একটি মজার অভিজ্ঞতা আছে। কলেজে পড়ার সময় আইরিশ লেখক রিচার্ড লিওলীনের লেখা, ‘হাউ গ্রীন ওয়াজ মাই ভ্যালি’ নামের একটি উপন্যাস হাতে এসেছিল। বইটি পড়ে আমার এত ভালো লেগেছিল যে বই শেষ হবার পরই আবার প্রথম থেকে পড়তে শুরু করেছিলাম।

হামিদ কায়সার: যখন লেখালেখি শুরু করেছিলেন তখন সমসাময়িকদের লেখা পড়তেন? আপনার পূর্ববর্তী এবং সমসাময়িকদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
রিজিয়া রহমান: লেখা যে বয়সে শুরু করি, তখন সমসাময়িকদের প্রশ্নটি ছিল অবান্তর। ষাটের দশকে যখন উপন্যাস নিয়ে পত্রিকার পাতায় আবির্ভূত হলামÑ তখন অবশ্যই পড়তাম সমসাময়িক লেখা। আমাদের পূর্বসূরিরাই বিভাগ পরবর্তীকালে এদেশের সাহিত্যের আধুনিক ধারার প্রবর্তক। তাদের অনেকেই এখন আমার সমসাময়িক হলেও বাংলাদেশের নিজস্ব ধারার সাহিত্য সৃষ্টির কৃতিত্ব তাদেরই। আমার সমকালীন যারা তারা একটি উর্বর সময়ের ফসল। ষাটের দশকই একসঙ্গে বেশ কয়েকজন প্রতিভাদীপ্ত লেখক উপহার দিতে সমর্থ হয়েছে। আমার পূর্বসূরি এবং সমসাময়িকদের মধ্যে জীবনঘনিষ্ঠতা অনেক বেশি। বিষয় বৈচিত্র্যও এ সময়ের লেখকদের বড় অবদান। লেখায় এরা সৎ এবং আন্তরিক।

হামিদ কায়সার: আপনার পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে কার কার লেখা আপনার দৃষ্টি কেড়েছে? তরুণদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন?
রিজিয়া রহমান: পরবর্তী-প্রজন্মের কথা উঠলেই প্রথমে প্রতিশ্রুতিশীল গদ্যকার মঞ্জু সরকারের কথা বলতে হয়। তার লেখায় জীবনের বাস্তবতাকে প্রকাশ করার নিষ্ঠা আছে। নিজস্ব পর্যবেক্ষণী ক্ষমতাকে বলিষ্ঠ রূপ দেবার মতো দক্ষ ভাষা ও স্টাইল তার আয়ত্বে। নাসরীন জাহানের লেখাও আমি পড়ি আগ্রহ নিয়ে। লেখার ভঙ্গিটি কিছুটা রোমান্টিকতাগ্রস্ত ও কাব্যাক্রান্ত হলেও ভাষাটি তার মিষ্টি। ঘটনার গভীরে পৌঁছে যাবার প্রয়াস লক্ষণীয়। এরা দুজনেই ভবিষ্যতে সম্ভব বড় মাপের লেখা আমাদের উপহার দিতে সমর্থ হবেন। আরো যে তরুণরা এখন লিখছেন তাদের লেখার মূল্যায়নের সময় এসেছে বলে মনে হয় না।

হামিদ কায়সার: পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের মধ্যে কার কার লেখা আপনার ভালো লাগে?
রিজিয়া রহমান: যে কোনো উন্নয়নের ক্ষেত্রেই উন্নতির একটা শীর্ষবিন্দু থাকে। জ্যামিতিক নিয়মে শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছানোর পর উন্নয়ন রেখাটি ক্রমে নিম্নমুখী হতে থাকে। বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে অতি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি উন্নয়নের সেই শীর্ষবিন্দুতেই পৌঁছেছে। সেই চরম উন্নতিকালের লেখকদের অনেকেই আমার প্রিয় লেখক। বলার অপেক্ষা রাখে না যে পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যের বর্তমান সময়টি শীর্ষবিন্দু অতিক্রান্ত নিম্নগামিতার সময়। পূর্ববর্তীদের প্রখর জীবনবোধ-সম্পন্ন মহৎ আবেদনটি এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধু পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নয়, বৃটিশ, ফরাসি এবং রুশ সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এই একই জ্যামিতিক রেখা কার্যকর। তদানীন্তন সোভিয়েত রাশিয়াভুক্ত ইউক্রাইনীয় লেখক সাইদ ওয়ালীর একটি উপন্যাস পড়ে এই সত্যকেই স্বীকার করতে হয়েছিল। একসময় ফঁসোয়াস সাগার উপন্যাস নিয়ে যখন হৈচৈ, তখন তার লেখা পড়ে মনে হয়েছে আগের বিশাল উত্তাল নদীটি যেন শীর্ণ এক স্রোতধারায় পর্যবসিত। যে ইংল্যান্ড অসংখ্য বিখ্যাত কবির জন্মভূমি সেই ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক এক উদীয়মান কবি জোশ্যাপকটের কবিতার বই ‘ইলেকট্রোপেইটিং দা বেবি’ পড়ে ধরে নিতে হয়েছে শীর্ষবিন্দু অতিক্রান্ত হয়েছে সেদেশের কবিতার। পশ্চিমবঙ্গেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তাই সমকালীন সাহিত্যে প্রিয় লেখক খুঁজতে বেগ পেতে হয় সেখানে। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নিঃসন্দেহে রয়েছে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা ও ভাষার ওপর অবাধ দখল। কিন্তু নিজের দেশের ও সমাজের প্রকৃত বাস্তবচিত্র অনেকক্ষেত্রেই তিনি চিত্রিত করতে আগ্রহী হননি। ফলে এই শক্তিমান লেখকের কলমের যাত্রা এক জীবনবিমুখ রোমান্টিকতার দিকে। তবু তার লেখা পড়তে ভালোই লাগে। শীর্ষবিন্দুর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ঘনিষ্ঠ সময়টিকে ধারণ করে যিনি একটি ভারসাম্য রক্ষা করেছেন তিনি মহাশ্বেতা দেবী। তার লেখা এখনও পছন্দ করি।

হামিদ কায়সার: সম্প্রতিকালের ভারতীয় ইংরেজি উপন্যাস সম্পর্কে আপনার কি ধারণা?
রিজিয়া রহমান: সম্প্রতিকালের ইংরেজি উপন্যাস খুব একটা পড়ার সুযোগ হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আলোচনা পড়েছি। তার ওপর ভিত্তি করে এই মুহূর্তে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেয়া সম্ভব নয়। অরুন্ধতী রায়ের বইটি পড়া শুরু করবো ভাবছি। তখন কিছুটা ধারণা তৈরি হবে।

হামিদ কায়সার: উপন্যাস লেখার জন্য আপনার কি কখনও গভীরভাবে পঠন-পাঠনের প্রয়োজন হয়েছে? জীবনকে আরো গভীরভাবে জানার জন্য একজন লেখক হিসেবে আপনার পড়াশোনার অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয়তার কথা জানতে চাচ্ছি।
রিজিয়া রহমান: উপন্যাসের প্রয়োজনে অনেকবারই ভীষণভাবে পড়ালেখা করতে হয়েছে। একটু আগেই এক প্রশ্নের উত্তরে ‘বং থেকে বাংলা’ উপন্যাসটি লেখার জন্য প্রচুর পড়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছি। নৃতাত্ত্বিক উপন্যাস ‘শুধু তোমার জন্য’ ও ‘তৃণভূমির বাইসন’ লেখার প্রয়োজনে নৃতত্ত্ব বিষয়ে প্রচুর পড়তে হয়েছে। চা-বাগান নিয়ে ‘সূর্য সবুজ রক্ত’ লিখতে গিয়ে পড়তে হয়েছে চা ও চা বাগানের ইতিহাস। ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘উত্তর পুরুষ’ ও ‘অলিখিত উপাখ্যান’ লিখবার জন্য পড়তে হয়েছে ইতিহাসের ছাত্রীর মতোই। ‘শিশু’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে  প্রকাশিত ‘বাবলুর অভিযানে’র জন্য ‘হিস্টোরিক্যাল জিওলজি ও প্যালিওন্টোলজি। আমার মনে হয়, একজন আধুনিক লেখকের লেখার বিষয়ভিত্তিক পড়া ছাড়াও ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান সবই পড়া দরকার। এই বিশাল পৃথিবীজুড়ে যে অনন্ত মহাজীবন বয়ে চলেছে, তাকে খণ্ড খণ্ড করে তুলে আনার গুরু-দায়িত্ব একজন লেখকের। জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত জ্ঞান অর্জন ছাড়া সে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।

হামিদ কায়সার: সম্প্রতি কি বই পড়ছেন? পড়াশোনা কি মনের মতো করতে পারেন?
রিজিয়া রহমান: অভ্যাসের কারণে রোজ কিছু পড়তেই হয়। এই একমাসে পড়েছি দুটি বই। একাত্তরে বাংলাদেশের রক্তমাখা বেয়নেট যাদের হাতে ছিল সেই হানাদার বাহিনীর এক সেনা অফিসার সিদ্দিক সালিকের লেখা ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’। (বইটি ১৯৭৭ সালে লেখা হলেও হাতে এসেছে সম্প্রতি) এই বইয়ে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য থাকলেও, সত্যের অপলাপ রয়েছে প্রচুর। আমার মনে হয়েছে, পাকিস্তানি সেনা অফিসারের এই বইটি আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক লেখা। দ্বিতীয় বইটি বসনিয়ার যুদ্ধের ওপরে লেখা। এগার বছরের এক কিশোরী ফিলিপভিস্ যুদ্ধবন্দি সারাজোভোতে বসে লিখেছে এ বই। সার্ব গোলন্দাজ বাহিনীর বর্বরতার মুখে ক্ষুধার্ত, মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত, অনিশ্চিত মেয়েটি ধ্বংসস্তূপের মাঝে বন্দি হয়ে ঘটনার যে বর্ণনা প্রতিদিন লিখে গেছে তার প্রতিটি ছত্রে বিচ্ছুরিত হয়েছে যুদ্ধের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা। মেয়েটি মনে করে, রাজনীতিবিদরা নিজেদের স্বার্থে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে। যুদ্ধের সন্ত্রাস তারাই চায়। সাধারণ মানুষ চায় না। তার ভাষায় ‘এখানে আমরা কেউ ক্রোয়েট, সার্বিয়ান, ইহুদি, খৃস্টান, মুসলমান নই। আমরা মানুষ। সাধারণ মানুষ। আমরা বাঁচতে চাই। শান্তি চাই। যুদ্ধের গোলা, আগুন, ধ্বংস আর বর্বরতার মাঝে পিয়ানোতে মোজার্টের সুরের অনুশীলন করতে করতে সেই কিশোরী বাঁচার জন্য শান্তির অনুসন্ধান করছে।  

হামিদ কায়সার: বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে গল্প, কবিতা, উপন্যাস অর্থাৎ বই মানুষের কাছে তার আবেদন হারিয়ে ফেলতে পারে— আপনার কি অভিমত?
রিজিয়া রহমান: সাহিত্যের মাধ্যম বই। আর বই তো শিল্পের মাধ্যম। আপনার এই প্রশ্নের বক্তব্য যদি হয়— ইনফরমেশন বা তথ্যের যুগ মানুষের হৃদয় থেকে শিল্পের আবেদন মুছে দেবে— তাহলে আমি দ্বিমত পোষণ করি। সুররিয়ালিজমের আগ পর্যন্ত বলা হতো শিল্প সৃষ্টি হয় শিল্পের খাতিরে, অর্থাৎ শিল্পের জন্যই শিল্প। শিল্পী নিজের ভুবনের আত্মমগ্ন সুখ-তৃপ্তির জন্য সৃষ্টি করেন শিল্প। কিন্তু বাস্তবতার যুগ এ ধারণাকে আরো বিস্তৃত করে দেয় বলেই শিল্পের মাধ্যমে মানুষ তার প্রকৃত জীবন আর আবেগ-কে খুঁজে পেতে চায়। কিন্তু কেন খোঁজা? আসলে এই অনুসন্ধান মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষ আবেগহীন রোবট নয়। আবেগসম্পন্ন প্রাণী। আবেগের প্রতিচ্ছবি দেখতে সে ভালোবাসে অনাদিকাল থেকে। সেই কারণে প্রাগৈতিহাসিক মানবরা গুহাচিত্র এঁকেছে। আদি সমাজের গাল্পিক গল্পের ঝুড়ি নিয়ে ঘুরেছে গ্রামে-গ্রামান্তরে। কবিয়ালরা গানের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। আবেগ প্রকাশের ধারা এমনভাবেই প্রবাহিত হয়ে এসেছে মানুষের সমাজে। তথ্যের সঙ্গে প্রয়োজনের সম্পর্ক যতখানি, সুতরাং ইন্টারনেট আবেগকে তৃপ্ত করতে কি সক্ষম? আমার বিশ্বাস, আবেগ-প্রবণতাই মানুষকে শিল্প বিচ্ছিন্ন হতে দেবে না। আর দেবে না বলেই শিল্প-সাহিত্যের আবেদন মানুষের কাছে লুপ্ত হতে পারে না। এখন পড়তে শুরু করেছি নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত টোনি মরিসনের ‘জ্যাজ’ নামের উপন্যাসটি। পড়াশোনা অবশ্যই আগের মতো করতে পারা যায়, যদি আগের মতো ভালো ভালো বই হাতে আসে।

হামিদ কায়সার: কোন ধরনের বই পড়তে ভালো লাগে— কবিতা, জীবনী, গল্প-উপন্যাস, নৃতত্ত্ব ইতিহাস নাকি অন্যকিছু?
রিজিয়া রহমান: কবিতা, গল্প, উপন্যাস, জীবনী, সুলিখিত হলে পড়তে ভালো লাগে। ইতিহাস নৃতত্ত্ব পছন্দ করি। প্রকৃতি-বিজ্ঞান ও ভ্রমণ কাহিনির প্রতি আগ্রহ রয়েছে। একটি বইয়ের জন্য বহুদিন ধরে প্রতীক্ষা রয়েছে মনে যে বইয়ের কারণে সারা মধ্যযুগের পৃথিবীর মানচিত্রে শতাব্দীব্যাপী আগ্রাসন-ঔপনিবেশবাদের জন্ম নিয়েছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে মানব সভ্যতার জঘন্যতম অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি মার্কোপোলোর ভূ-পর্যটনের কাহিনী, জানি না পাবো কি না। জীবনের সময় এত অল্প আর পড়ার জগত এত বিশাল, জানি না এর কতটুকু অতিক্রম করতে পারব। তবুও জ্ঞানের জগতে চলার বাসনায় কবি রবার্ট ফ্রস্টের মতো বলতে ইচ্ছে করে— যোজন মাইল হেঁটে যাব...