জুয়েল মাজহার
জুয়েল মাজহারের কবিতা ‘বিষভল্ল: মনোশৈলচূড়ে’
প্রকাশিত : জুন ১১, ২০২০
এক.
কথা বললে চুপিসারে ঘুমন্তের স্নায়ুর ভেতরে
সেই থেকে গলছে বরফ। সেই থেকে কত
পার্বত্য ঝরনা এসে হিমজলে ধুয়ে দিলো
অভিমানী পাথরের জ্বরতপ্ত মাথা
উঁচু থেকে নিচে পড়ে ভেঙেছে পাঁজর। তার
প্রগাঢ় রক্তের বুদ্বুদে এই কালো রাত্রি হয়ে উঠল লাল
দলছুট একা সেই বনমানুষের মাথার উপরে তুমি
মেলে ধরলে ছায়ার ক্যানোপি;
অগাধ ঘুমের জলে দিলে তাকে অপার্থিব স্নান
বললে তাকে: হে পাগল, পদতলে ক্ষত নিয়ে এভাবে ছুটো না
নররাক্ষসের বনে, সর্পঘেরা এ-ঘোর জঙ্গলে
নগ্ন হয়ে একা হয়ে এভাবে ছুটো না!
—ইশারায় এই কথা বলে তুমি মৃদু হেসে অন্তর্হিত হলে
বিষভল্ল মনোশৈলচূড়ে বহু হননের উদ্যত কৃপাণ
তুচ্ছ করে, সে জানে না, অখিল শুশ্রূষা নিয়ে
তুমি তার শিয়রের পাশে এসে শান্ত বসেছিলে
রেখেছিলে হাসি ও অরোরা
তার ফাটা খসখসে ঠোঁটের নিকটে তুমি মায়া-পয়োধর
মেলে ধরেছিলে। দিয়েছিলে স্তনের আরতি
অমল ধবল গাঢ় ফোঁটায়-ফোঁটায়;
দিয়েছিলে স্বাদু মোহ-মদ সারারাত
রাতুলাঙ্গ-নিদালির স্পর্শ দিয়ে
রতিরূপবিশল্য মাদুলি বুলিয়ে
অপরূপ লীলা তুমি সম্ভব করেছো, ওগো দেবি
একা সেই বনচারী
বুকের হাপরে যার জমা আছে অতি অল্প শ্বাস
সে আসলে অর্ধেক নিহত তার ললাটলিখনে
অভিশাপে শিলীভূত ছোটো তার পরাণকুঠুরি
অথবা সে বোঁটা থেকে খসেপড়া আধপচা ফল
পাখির চঞ্চুর ঘায়ে ঝোপের আড়ালে ভূপাতিত
পথে যেতে তুমি তাকে তুলার বলের মতো কুড়িয়ে নিয়েছ
তুমি তাকে কোল পেতে অক্লেশে দিয়েছ ঠাঁই জঘনপ্রসারে
তাতে তার উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল তরল আগুনভরা বীজ
ফেটে গেল ফেটে গেল
হলো তীব্র শ্বেত অগ্নিপাত
ছিটকাল মুহূর্মুহু
ছিটকাল লাবণ্য ও লাবণিক ক্ষার
দিগ্বিদিক
ঝলকে
ঝলকে!
ওম শান্তি! ওঙ্কার!
ওম শান্তি!
ওওওওওম্ম্ম্ শান্তি
ওওওওওম্
দুই.
এরও বহু আগে সে যখন
কুঁকড়ে ছিল পারমা ফ্রস্টে ভয়াবহ শীতে
বহুযোনি, তুমি তাকে দিয়েছ কার্পাস
তুমি তাকে করেছো উদ্ধার। তাকে ঘিরে
রন্ধ্রহীন রক্ষাব্যূহ করেছো রচনা
অপরূপ লীলার ভেতরে তাকে করিয়েছ অপার্থিব স্নান;
নররাক্ষসের বনে বিষভল্ল তুচ্ছ করে তুমি
তার পাশে দাঁড়িয়েছ। তার ওষ্ঠে তীব্রতম করেছ চুম্বন
তারপর তার হাতে তুমি তুলে দিয়েছ কুঠার
তুমি তাকে বিষহর মন্ত্র শিখিয়েছ
অয়ি,পরমাপ্রকৃতি!
অয়ি, কাম্যযোনি!
তুমি বর্ম ও আয়ুধ নিয়ে তার পাশে ছিলে
তুমি সুহাসিনী, তুমি সৌগন্ধের নম্র পসারিণী
অপচ্ছায়ার প্রতি সদা অকরুণ তোমার ভ্রূকুটি
বহুছিদ্র-স্তনের বোঁটার শীর্ষে সঞ্চিত রেখেছ তুমি শিশুতোষ মদ
লাবণ্যের ক্রীড়া ও উদ্ভাস। ক্ষতে ও জখমে উপশম
ভোর অব্দি ঘুমন্তকে অমিত আড়াল দিয়ে রক্ষা করো তুমি
অয়ি কাম্যযোনি! অয়ি স্নায়ুশিখরে চিরসমাসীনা
তোমার হৃদয় যেনো অপত্যের অনবদ্য বীণা
পঙ্কজলে শুয়ে শুনি অমরার সে-সুরমূর্ছনা
রাত্রির কান্তারে তুমি অবিরত ছড়িয়ে চলেছো বসন্তের কুহু
মাতৃগাছেদের ছড়ানো পায়ের কাছে বসে
ঘাসের আড়াল থেকে, মাটির ফাটল থেকে
নানা সম্ভাবনা, নানা বিকাশের বীজ ও পরাগ
সযতনে আপন গর্ভথলিতে তুমি কুড়িয়ে এনেছো
ওই তো সমুদ্রশিয়র থেকে ধীরে ধীরে চোখ মেলছে
তোমার প্রণয়ে তৃপ্ত তীব্র লাল সূর্য ও গোলাপ
























