
ড. ইয়াসির ক্বাদির গদ্য ‘হাজরে আসওয়াদ’
অনুবাদ: এনামুল হক মনিপ্রকাশিত : মে ০৬, ২০২১
জিব্রাইল (আ.) জান্নাত থেকে এই পাথর ইব্রাহিমের (আ.) কাছে নিয়ে আসেন। তখন এটি সাদা ছিল। ঈসার (আ.) সময়কালে জুরহাম গোত্রকে যখন মক্কা থেকে বের করে দেয়া হয়, তখন তারা এই পাথর নিয়ে যায় এবং লুকিয়ে রাখে। আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় খুজায়া গোত্রের এক মহিলা এটি দেখে ফেলে এবং তার গোত্রকে জানিয়ে দেয় কোথায় এটি লুকানো আছে। তখন তারা এটি উঠিয়ে নিয়ে এসে আবার ক্বাবায় বসিয়ে দেয়। সম্ভবত তখন প্রথমবারের মতো এই পাথর ভেঙে যায়, যদিও তথ্যসূত্র অস্পষ্ট।
ক্বাবা কয়েকবার পুনর্নির্মাণ করা হয়। প্রতিবারই হাজরকে তার নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেয়া হয়। রাসুলের (সা.) বয়স যখন ৩৫ বছর, তখন ভয়াবহ বন্যায় ক্বাবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটাই সেই ঘটনা যেখানে রাসুল নিজ বরকতপূর্ণ হাতে হাজর আসওয়াদকে ক্বাবায় বসিয়ে দেন। কিছু কিছু সুত্রমতে, এই সময়ে পাথরটা অলরেডি ভাঙা ছিল।
আব্দুল্লাহ বিন জুবায়েরের শাসনকালে উমাইয়াদের দ্বারা মক্কায় দু’বার আক্রমণ করা হয়। ৬৪ হিজরিতে প্রথম আক্রমণের সময় ক্বাবায় আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের প্রথমবারের মতো নির্দেশ দেন, ভাঙা পাথরগুলোকে রক্ষার জন্য সিলভারের মধ্যে বসিয়ে দিতে। ৭৩ হিজরিতে দ্বিতীয় আক্রমণের সময় ক্বাবার কিছু দেয়াল ভেঙে গেলেও হাজারের কোনো ক্ষতি হয়নি। শতাব্দী পরে খলিফা হারুন আল রশিদ হাজরের সিলভার কেসের করুণ অবস্থা দেখতে পেয়ে ১৭০ হিজরিতে নতুন একটি বানানোর নির্দেশ দেন। এটি ডায়মন্ড, সিলভার এবং অন্যান্য মূল্যবান পাথর সম্বলিত সুসজ্জিত পাত্র ছিল।
হাজরের সবচেয়ে ভয়ানক ক্ষতি হয় ৩১৭ হিজরিতে ইসমাইলিদের গোত্র কারামাইতদের আক্রমণে। এই বর্বর আক্রমণের সময়কালে জমজম কূপ হাজিদের লাশে ভরে যায় এবং কয়েক বছর হজ্জ বন্ধ থাকে। তাদের নেতা আবু তাহির আল জান্নাবি ক্বাবার উপর উঠে গালিগালাজ করে এবং কুড়াল দিয়ে হাজর আসওয়াদকে ভেঙে ফেলে। তারা হাজর ছিনতাই করে নিয়ে তাদের বানানো নকল ক্বাবায় বসিয়ে দেয়। ২২ বছর হাজর সেই নকল ক্বাবাতেই ছিল। অবশেষে ফাতিমিদ শাসকদের মধ্যস্থতা এবং বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে হাজর আসওয়াদের ভাঙা টুকরো এবং নুড়িগুলোকে মক্কায় নিয়ে আসা হয়।
সর্বমোট ১৫টির মতো টুকরো ছিল, যার কোনোটাই দুই সেন্টিমিটারের বড় না। সিলভার এবং অন্য কিছু মূল্যবান ধাতু গলিয়ে এগুলো বসিয়ে দেয়া হয়। এসময় আটটা নুড়ি গলে যায় এবং সাত টুকরার মতো এখনো দৃশ্যমান। ১৯৫০ সালে রাজা আব্দুল আজিজের সময়ে এখান থেকে সামান্য স্যাম্পল নিয়ে গবেষনাগারে পরীক্ষা করানো হয় এবং তিনি নিজেই পুনরায় এটিকে সিলভার ধাতুর মধ্যে বসিয়ে দেন।
বর্তমানে আমরা ক্বাবা তাওয়াফের সময় অরিজিনাল পাথর দেখতে পাই না। পাথরের উপর সিলভার এবং অন্যান্য ধাতুর প্রলেপের মধ্যে পাথরের সামান্য আকৃতি দেখা যায় মাত্র।
লেখক পরিচিতি: ড. আবু আম্মার ইয়াসির ক্বাদি (বা ইয়াসির কাজি) হলেন একজন পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত আমেরিকান মুসলিম লেখক এবং পশ্চিমা বিশ্বে বহুল পরিচিত অন্যতম ইসলামিক শিক্ষামুলক প্রতিষ্ঠান, আল-মাগরিব ইন্সটিটিউটের একাডেমিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের ডিন।