ডা. অপূর্ব চৌধুরীর কলাম, ‘সেক্স ফ্যান্টাসি অ্যান্ড মিথ’

প্রকাশিত : মে ১৬, ২০২১

সেক্স ড্রাইভের দুটো পার্ট— হরমোন এন্ড ফ্যান্টাসি। হরমোনে হাত নেই, ফ্যান্টাসিতে কিছুটা আছে। সেক্সের ষাট ভাগ এই ফ্যান্টাসি গেম, বাকি চল্লিশ ভাগ হরমোন বা ফিজিকেল প্লেজারের গেম।

ফ্যান্টাসির প্রথম মিথ, এটি অসুস্থ ভাবা হয়। বাস্তবতা হলো, এটি অসুস্থ নয়। ফ্যান্টাসি একটি সুস্থ প্রক্রিয়া। ফ্যান্টাসি তো ফ্যান্টাসি, ফ্যান্টাসির ভালো-মন্দ কিছু নেই। তারপরেও তার একটা লিমিট আছে। লিমিটটি কন্টেন্টস অ্যান্ড ফ্যান্টাসির নয়। সীমাবদ্ধতা তার সীমারেখায়।

যে কোনো ফ্যান্টাসি ততক্ষণ পর্যন্ত সুস্থ, যতক্ষণ পর্যন্ত তা শুধু ফ্যান্টাসি। এটির সমস্যা শুরু হয় যখন এটি বাস্তবায়নের পথ খুঁজে। তাহলে ফ্যান্টাসি এত আনন্দ দেয় কেন? এর উত্তর মানুষের বেঁচে থাকার আনন্দের মধ্যে।

মানুষ প্রতিটি দিন আশা করে তার আগামী দিনটি ভালো যাবে। মস্তিষ্ক একটা আশা পেলে আনন্দে চাঙা হয়ে ওঠে। যা কল্পনা করে, তা বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ না থাকলেও বাস্তবে যদি এমন হয়, এটি মস্তিষ্কে মিরর নিউরোনাল এফেক্ট তৈরি করে, যা তখন মস্তিষ্কের নেটওয়ার্কে প্রভাব ফেলে।

ফ্যান্টাসির প্রথম মিথ ভেঙে দেবার পর মানুষের এই কল্পনার জগতের বৈচিত্র্য নিয়ে যে মিথগুলো আছে, তার বিপরীতে বিজ্ঞান ও গবেষণা কি বলে, সেই সব ট্যাবু নিয়ে আলোচনা।

এক. সবার মধ্যে সেক্স ফ্যান্টাসি আছে এবং থাকাটাই সুস্থতা, এটি মোটেও অসুস্থ কিছু নয়।

দুই. ফ্যান্টাসির সাথে মোরালিটির কোনো সম্পর্ক নেই। পার্টনার থাকলেও অন্য কারো সাথে ফ্যান্টাসাইজ তার লিবিডোকে হেল্প করে বরং।

তিন. ফ্যান্টাসি ডেইলি স্ট্রেসকে লিবারেট করে ডেইলি লাইফের কোথাও কোনো ক্ষতি না করেই।

চার. ফ্যান্টাসি ইনার রিয়েলিটিকে বাইরের রিয়েলিটির মাঝে একটা কম্প্রোমাইজ জোন তৈরি করে ভালো রাখে।

পাঁচ. ফ্যান্টাসির বৈচিত্র্য স্বাভাবিক এবং একেকজনের একেকটি সিগন্যাল স্বাভাবিক। তুলনামূলকভাবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সেক্স ফ্যান্টাসি বেশি। ছেলেরা ভিজুয়াল ওরিয়েন্টেড বেশি, মেয়েদের ইমাজিনেটিভ প্লেজার বেশি। তাই মেয়েরা রিয়েলিটির চেয়ে ফ্যান্টাসি এবং তার বৈচিত্র্যে আনন্দ পায় বেশি।

ছয়. জার্নাল অফ সেক্সচুয়াল মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরের ৬০ ভাগ সেক্সের ক্ষেত্রে ডোমিনেটেড হতে পছন্দ করে। এই ডোমিনেটেড হওয়া মানে কোনো নারী দুর্বল, এমনটি নয়। একটি পুরুষ তাকে ডমিনেট করুন— এটির মধ্যে দিয়ে দুটো জিনিস নারীকে আনন্দ দেয়। মনোযোগ অ্যান্ড কন্ট্রোল। নারী মনোযোগ পছন্দ করেন, নারী পরিস্থিতি কন্ট্রোল করতে পছন্দ করে। এজন্যে দেখা যায়, ৫২% নারী BDSM ফ্যান্টাসি পছন্দ করেন, কিন্তু সহজে এটি স্বীকার করে না।

সাত. আমেরিকান এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৩% মানুষের মধ্যে threesomes বা দুয়ের অধিক পার্টনারের সাথে সেক্সের ফ্যান্টাসি আনন্দ দেয়। মিথ আছে, এটি শুধু ছেলেদের ফ্যান্টাসি। এটি ভুল। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে থ্রি সামস ফ্যান্টাসিতে আরো বেশি আনন্দ পায়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৬% নারী থ্রি সামস ফ্যান্টাসিতে আনন্দ উপভোগ করে। তবে এখানে একটি মজার টুইস্ট আছে। পুরুষ অপরিচিত দুজন নারীর সাথে কল্পনা করতে আনন্দ পেলেও নারী এক্ষেত্রে একজন তার ভালোবাসার পার্টনার এবং তৃতীয় আরেকজন পছন্দ করে বেশি।

আট. মিথ আছে যে, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বেশিভাগ মানুষের আকর্ষণ কাজ করে। এটিও ভুল। প্রতি চারজন পুরুষের একজন সমলিঙ্গের প্রতি জীবনের কোনো না কোনো সময় আকর্ষণ বোধ করে, কিন্তু চারপাশে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ এবং চাহিদা এত তীব্র থাকে যে, এটি চাপা পড়ে যায় অথবা এটি চেপে রাখে। নারীর ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি। প্রতি দুজন নারীর একজন অন্য নারীর শরীরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৯% নারী আরেকজন নারীর সাথে  ফ্যান্টাসিতে আনন্দ পায়। লিঙ্গের এই আকর্ষণবোধ এবং ফ্যান্টাসিও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমন ফ্যান্টাসি করা মানেও আপনি সমকামী হয়ে যাওয়া না। এটি সামাজিক জেন্ডার প্রেশার থেকে তৈরি হয় এবং একটি এস্কেপ রুট হিসাবে প্লেজার পয়েন্ট তৈরি করে।

নয়. পাবলিক সেক্স বা একজিবিশনিজম একধরনের অসুস্থ বলে ভাবে অনেকে। এটির বাস্তবায়ন নুইসেন্স এবং পাবলিক অর্ডার ভঙ্গের সামিল। এজন্যে পৃথিবীর কোথাও পাবলিক প্লেসে সেক্স আইনত অপরাধ। কিন্তু একই আইনের চাপে অনেকের মাঝে পাবলিক প্লেসে সেক্স করা বা তাদের সেক্স এক্ট কেউ দেখুক, এমন ফ্যান্টাসি আনন্দ দেয়। ফ্যান্টাসি পর্যন্ত আনন্দটি আনন্দই, ভুল কিছু নয়, অস্বাভাবিক কিছু নয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৭% নারী পাবলিক প্লেসে সেক্স করছে এটির কল্পনা তীব্র আনন্দ দেয়।

দশ. মেয়েরা অপরিচিত কারও সাথে সেক্স এনজয় করে না, এটির আংশিক সত্য হলেও বাস্তবে ৪১% নারী স্ট্রেঞ্জারদের সাথে মিলনের কল্পনায় আনন্দ পায়।

এগারো. মেয়েরা সেক্সের ক্ষেত্রে পেইন পছন্দ করে অনেকে। পেইন তখন প্লেজারের একটা জোন তৈরি করে। ৬২% নারীর ফ্যান্টাসিতে পেইন অ্যান্ড প্লেজার সেইম জোনে কাজ করে।