তুহিন খানের গদ্য ‘কোনটা জিহাদি বই আর কোনটা না’
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২০
কয়দিন আগে দেশে তোলপাড় হইল `জিহাদি বই` নিয়া। র্যাব `ফাজায়েলে আমল`, `জিন জাতির ইতিহাস` এইসব বইসহ একজনরে আটক করল, এবং সেগুলারে `জিহাদি বই` আখ্যা দিল। এর আগেও, `জনকণ্ঠ`র এক নিউজে, আরবি বাক্যতত্ত্বের বই `শরহে মিআতে আমেল`কে, যা কিনা কওমি মাদ্রাসার টেক্সটবুক, জিহাদি বই আখ্যা দেওয়া হয়।
এক ভাইয়ের সাজেশনে আজ ইন্ডিয়ান টিভি সিরিজ `পাতাল লোক` দেখতে বসছিলাম। `পাতাল লোক` সিরিজের ফার্স্ট সিজন এই বছরই রিলিজ হইছে। ইন্ডিয়ার ডানপন্থী রাজনীতি, কাস্ট পলিটিক্স, ক্লাশ কনফ্লিক্ট, লিবারালদের মোরাল ও পলিটিকাল ডিলেমা ও ফেইলিওর নিয়া এত অসাধারণ সিরিজ এর আগে হয় নাই, আই মাস্ট সে।
দিল্লির এক নামি জার্নালিস্ট, যে কিনা আবার লেফট লিবারাল এবং গভমেন্টের সমালোচক, তারে খুন করার জন্য চারজনরে এসাইন করা হয়। কিন্তু খুনের আগেই তারা ধরা পড়ে। কেস শুরুতে দিল্লি পুলিশকে দেওয়া হয়। পুলিশ একটা করে লিড পাইতে থাকে, আর কোন না কোন ঝামেলায় সেই লিড গায়েব হয়। একপর্যায়ে সামান্য একটা ঘটনায়, সিবিআই কেস টেক ওভার করে।
যারা এই কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করছিল, তাদের একজন ছিল মুসলিম। তার থ্রুতে সিবিআই এইটারে আইএসআই-র ষড়যন্ত্র বানায় এবং কেস ক্লোজড। প্রেস কনফারেন্সে ওই মুসলিমের এগেইন্সটে এই বইগুলারে `জিহাদি বই` হিশাবে উল্লেখ করা হয়। অ্যান্ড হোয়াট আর দিস বুকস? তাবলিগ জামাতের তা`লিমি বই `ফাজায়েলে আমল` এবং মাওলানা আশরাফ আলি থানবির লেখা বিখ্যাত ফিকহের কিতাব, উপমহাদেশের সবচাইতে বেশি পঠিত কিতাবগুলার মধ্যে অন্যতম: বেহেশতি জেওর। দিজ বুকস আর রিপ্রেজেন্টেড এজ `জিহাদি বুকস` ইন টিভি সিরিজ, মিডিয়া অ্যান্ড, আওয়ার ডিয়ার `র্যাব`।
কোন বই জিহাদি আর কোনটা না, এর তো কোনও নীতিমালা নাই। এগুলা জাজ করার জন্য কোন এক্সপার্টিজ কি আছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর? নাই। তাইলে, তাবলিগ জামাত, যারা সেক্যুলার লিবারালদের কাছেও এমনকি সবচাইতে `গুড মুসলিম`, সরকারের কাছে সবচাইতে নরমপন্থী দল, তারা যে বইটা প্রকশ্যে শত বছর ধইরা পইড়া আসতেছে, মসজিদে মসজিদে যে বইয়ের তালিম হয়, সেই বইরে র্যাব হঠাৎ জিহাদি বই হিশাবে কেন দেখায়? কোত্থাকে তারা এই টিপস পায় যে, কোনটা জিহাদি বই আর কোনটা না?
ফাজায়েলে আমল আর জিন জাতির ইতিহাস এখন বাঙলাদেশে জিহাদি বই। এই যে নতুন `জিহাদি বই` এক্সপ্রেশন, এর রাজনৈতিক কালচারটা কী? এই `জিহাদি বই` কালচারের অরিজিন কোথায়? ইন্ডিয়ায় ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ছোঁয়ায়ই কি তাইলে আজকাল ফাজায়েলে আমলও `জিহাদি বই` হওয়া শুরু করছে? উই মাস্ট রাইজ কোশ্চেন অ্যাবাউট দিস। আমরা জানতে চাই, `জিহাদি বই` কী? ইসলামিক যেকোন বইরে, উর্দুতে লেখা বা আরবিতে লেখা যেকোন বইরে `জিহাদি বই` হিশাবে রিপ্রেজেন্টের এই কালচার এদেশে কারা আমদানি করতেছে? ঠিক হুবহু, ইন্ডিয়াতেও একই ঘটনা যেহেতু ঘটতেছে, উই মাস্ট রেইজ দ্য কোশ্চেনস।
উপরে আমি বলছি, সিরিজটা ভাল। সম্ভবত ইন্ডিয়ায় এত ক্রিটিকালি এই ইস্যুগুলারে আর কোন মুভি বা সিরিজে ডিল করা হয় নাই। কেন বলছি? কারণ, এই কেসের ইনভেস্টিগেটিভ পুলিশ অফিসারদের একজন, আনসারি, ছিল মুসলিম। প্রেস কনফারেন্সে এসব বইরে জিহাদি বই বলায় সে অবাক হয়। কারণ, যার ব্যাপারে এসব বলা হইতেছে, সেই মুসলিম অ্যাসাসিন উর্দু পড়তেই জানে না, এইটা আনসারি জানত। বাট স্টিল, যে বইগুলারে মিডিয়ায় `জিহাদি বই` বলা হইতেছে, সেগুলার ব্যাপারে কোন ক্রিটিকাল রেসপন্স নাই এই সিরিজে। মানে, আসলেই বইগুলা ওই মুসলিম অ্যাসাসিনের কিনা, সেইটা নিয়া ডাউট; বাট বইগুলা যে `জিহাদি`, সেইটা নিয়া কারো কোন ডাউট দেখা যায় না।
তার মানে, এই সিরিজে এই `জিহাদি বই` প্রোপাগান্ডা ভিন্ন একটা মোড় নিতে যাইতেছে, `জিহাদি বই`র রিপ্রেজেন্টেশনরে ক্রিটিক্যালি দেখা হইতেছে। আমি এখনও পুরাটা দেখি নাই, তাই শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটারে এই সিরিজে কীভাবে হ্যান্ডেল করা হইছে, বলতে পারতেছি না।
ইন্ডিয়ার টিভি সিরিজে একটা বইরে `জিহাদি বই` বলা হইতেছে। বাঙলাদেশে ওই বই সর্বোচ্চ পঠিত ইসলামি বই হওয়া সত্ত্বেও, র্যাব ওই বইটারে `জিহাদি বই` হিশেবে মিডিয়ায় উপস্থাপন করতেছে, ইজন্ট ইট ইন্টারেস্টিং?
























