তুহিন খানের প্রবন্ধ ‘দাবা খেলার হুকুম’

পর্ব ১

প্রকাশিত : আগস্ট ০২, ২০২১

কোত্থেকে আসলো শতরঞ্জ
আরবিতে দাবা খেলার জন্য ব্যবহৃত শব্দটা হলো, শতরঞ্জ বা শিতরঞ্জ شطرنج। শিনে যবর বা যের—দুইটা উচ্চারণই প্রচলিত আছে এক্ষেত্রে। প্রামাণ্য আরবি অভিধানগুলিতে শব্দটারে মুআররাব বা অন্য ভাষা থেকে আরবিকৃত হিশেবে দেখানো হইছে। ইবনে মনযুরের লিসানুল আরবে শব্দটারে `ফারসি থেকে আরবিকৃত` বলা হইছে। বর্তমানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত আরবি অভিধান আল মুজামুল ওয়াসিতে শব্দটারে হিন্দিয়্যা বা হিন্দুস্তানি বলা হইছে। মূলত সংস্কৃত শব্দ চতুরঙ্গ বা চারবাহু থেকে ফার্সি চতরঙ্গ বা শতরঞ্জ শব্দটা আসছে, যা পরে আরবি ভাষায় প্রবেশ করছে।

রাসুলের (সা.) যুগে কি আরবে দাবা খেলার প্রচলন ছিল
ইরানের বিভিন্ন পুঁথি ও বিখ্যাত ফার্সি মহাকাব্য শাহনামা মোতাবেক, ভারতীয় দূতদের মাধ্যমে ইরানের রাজদরবারে দাবা খেলার প্রচলন ঘটে। পরে হযরত উমরের শাসনামলে মুসলিমদের পারস্য বিজয়ের পর খেলাটা আরবে আসে। নবিজির যুগে কি আরবে এই খেলার প্রচলন ছিল? ফুকাহা, মুহাদ্দিসিন ও মুফাসসিরিন এ ব্যাপারে প্রায় একমত যে, নবিজির যুগে এই খেলার প্রচলন আরবে ছিল না। আল্লামা শাওকানির (১১৭৩-১২৫০ হি.) বিখ্যাত কিতাব `নাইলুল আওতার`, ইবনে তাইমিয়ার দাদা আবুল বারাকাত ইবনে তাইমিয়ার `মুনতাকাল আখবার` কিতাবের ব্যাখ্যাগ্রন্থ। মুন্তাকাল আখবার কিতাবটা মূলত বিভিন্ন বিধানভিত্তিক হাদিসের সংকলন।

আল্লামা শাওকানি তার `নাইলুল আওতার` এ, হাফেজ ইবনে কাসিরের (৭০২-৭৭৪ হি.) `ইরশাদুল ফকিহ ফি মারিফাতি আদিল্লাতিত তাম্বিহ` কিতাবের বরাতে লিখছেন, সাহাবাদের যামানায় আরবে সর্বপ্রথম শতরঞ্জ খেলার প্রচলন ঘটে। এর উদ্ভাবক ছিলেন صصة সিসসাহ ইবনে দাহির নামের এক ভারতীয় লোক। (১৪/৪৮৭; দারে ইবনুল জাওযি)। মোটকথা, দাবা মূলত হিন্দুস্থানের আদি খেলা, যা পরে পারস্য হয়ে সাহাবাদের যুগে আরবে আসে।

দাবা খেলা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কি কোনো নস পাওয়া যায়
দাবা খেলা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে রাসুলের (স.) সূত্রে সরাসরি কোনো নস বা হাদিস পাওয়া যায় না। কারণ রাসুলে পাকের যুগে এই খেলা আরবে ছিলই না। দাবার ব্যাপারে প্রচলিত হাদিসের সবগুলাই `আছার` বা সাহাবি বা তাবেয়িদের বক্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে বিভিন্ন পুস্তকে বর্ণিত সাহাবিদের আছারগুলি পেশ করা হলো:

১. ইমাম বাইহাকি তার `আস সুনানুল কুবরা`য় জাফর বিন মুহাম্মদ>তার পিতার সনদে বর্ণনা করেন, হযরত আলি বলেছেন, শতরঞ্জ জুয়ার মধ্যে পড়ে। (১০/২১২) এই আছারের ব্যাপারে আল্লামা ইবনে কাসিরের মতামত হলো, হাদিসটি মুনকাতি (যে হাদিসের সনদে সাহাবার আগেই এক বা একাধিক রাবি মিসিং থাকে, তাকে হাদিসে মুনকাতি বলে)। (ইরশাদ, ২/৪১৮-১৯)

২. ইমাম দায়লামি তার `আল ফিরদাউস বি মাছুরিল খিতাব` এ (হাদিস নং-৪৮৮) এবং ইবনে আবিদ দুনিয়া তার `যাম্মুল মালাহি` কিতাবে (পৃ. ৮০) ইবনে আব্বাসের সূত্রে শতরঞ্জের ব্যাপারে নেতিবাচক আছার বয়ান করছেন। তবে আল্লামা হাসান বিন আহমদ জালাল (১০১৪-১০৮৪ হি.) তার `দওউন নাহার` কিতাবে উল্লেখ করছেন, ইবনে আব্বাস, আবু হুরাইরা, ইবনে সিরিন, হিশাম বিন উরওয়া, সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব এবং সাইদ ইবনে জুবায়ের শতরঞ্জ খেলাকে জায়েজ বলছেন। (৪/২৩২১)

৩. ইবনে আবিদ দুনিয়া তার `যাম্মুল মালাহি`তে (হাদিস নং-১০৭) ইবনে উমরের সূত্রে শতরঞ্জকে হারাম বলছেন।

৪. ইমাম বাইহাকি তার `আস সুনানুল কুবরা`য় (১০/২১২) ও `আল-আদাব` কিতাবে (হাদিস নং-৯১১) আবু মুসা আশ`আরির সূত্রে বর্ণনা করেন, ক্ষতিগ্রস্তরাই শতরঞ্জ খেলে। আল-আদাব কিতাবে এই হাদিস বয়ান করার পর উনি লেখেন, এই খেলা মাকরুহ হওয়ার ব্যাপারে যাদের হাদিস আমরা বয়ান করছি, তারা হলেন, ইবনে আব্বাস, ইবনে উমর, আবু সাইদ খুদরি, ইবরাহিম নাখয়ি, ইয়াযিদ বিন আবু হাবিব ও মালেক বিন আনাস। আর এটা জায়েজ হওয়ার ব্যাপারে যাদের সূত্রে আমরা হাদিস আনছি, তারা হলেন: সাইদ বিন জুবায়ের, শা`বি, হাসান বসরি, হিশাম বিন উরওয়া। তবে, এটা না খেলাই ভালো। (আল আদাব, পৃ. ৪১৭)

৫. ইমাম বাইহাকি `আস সুনানুল কুবরা`য় আবু সাইদ খুদরির সূত্রে শতরঞ্জের সমালোচনায় হাদিস আনছেন। (১০/২১২)

৬. দায়লামি তার `আল ফিরদাউস` গ্রন্থে (হাদিস-৭১০) ওয়াসিলার সূত্রে শতরঞ্জের সমালোচনায় হাদিস বয়ান করছেন।

৭. দায়লামি তার `আল ফিরদাউস`-এ হযরত আনাসের সূত্রে বয়ান করেন, যে দাবা খেলে, সে অভিশপ্ত। (হাদিস নং: ২৩৯১)। এই হাদিসটাই ইবনে হাযম ও আবদান আনছেন এভাবে, দাবা খেলে যে, সে অভিশপ্ত; এগুলির দিকে ফিরে তাকানোও শুকরের গোশত খাওয়ার মতো। (নাইলুল আওতার, ১৪/৪৮৮)

নাইলুল আওতারের দার ইবনুল জাওযি থেকে প্রকাশিত নুসখার হাশিয়ায়, শাওকানির প্রায় সব কিতাবের মুহাক্কিক ও মু`আল্লিক, সিরিয়ার বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ সুবহি বিন হাসান হাল্লাক (১৯৫৪-২০১৭) এই হাদিসের ব্যাপারে লিখছেন, আল্লামা মানাভি `ফাইজুল কাদির` এ (৫/৬) বলছেন, আবদান, আবু মুসা ও ইবনে হাযম সকলেই, আব্দুল মাজেদ বিন আবু দাউদ>ইবনে জুরাইজ>হিবা বিন মুসলিম, এই সনদে হাদিসটা বয়ান করছেন। আর এই শেষোক্ত রাবি একজন তাবেয়ি, যিনি এই একটামাত্র হাদিসই বয়ান করছেন। আল্লামা যাহাবি `মিযানুল ইতিদাল`-এ লিখছেন, হাদিসটা মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য। জালালুদ্দিন সুয়ুতি হাদিসটারে দুর্বল বলছেন। আর নাসিরুদ্দিন আলবানি তার `আদ দয়িফাহ` কিতাবে এটাকে জাল হাদিসের মধ্যে গণ্য করছেন। (দেখুন: নাইলুল আওতার, ১৪/৪৮৮; টিকা নং: ৬)।

৮. ইবনে আবি শাইবার `মুসান্নাফ`-এ (৮/৫৪৮), ইবনে আবু হাতেমের তাফসিরে (৪/১১৯৬), ও ইবনুল মুনযিরের সূত্রে `আদ দুররুল মানসুর`-এ (৩/১৬৮), হযরত আলির সূত্রে বর্ণিত আছে, পাশা ও দাবা জুয়ার মধ্যেই পড়ে। এছাড়া আবদ ইবনে হামিদের সূত্রে `দুররুল মানসুর`-এ (প্রাগুক্ত) বর্ণিত আছে যে, দাবা হলো আজমিদের জুয়া।

আল্লামা ইবনে কাসির এসব হাদিসের ব্যাপারে লিখেছেন, এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসগুলোর কোনোটাই শুদ্ধ না। আগেই বলছি, সাহাবাদের যুগে খেলাটা আরবে আসে; ফলে এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসগুলা শুদ্ধ না হওয়াই স্বাভাবিক। এ প্রসঙ্গে হযরত আলির সূত্রে বর্ণিত হাদিসগুলাই সনদের বিচারে সবচাইতে সহিহ। এখন ব্যাপারটা যদি এমন হয় যে, এই খেলার খেলোয়ারদের লাভ বা লোকসান হয়ই (অর্থাৎ, তারা জুয়া হিশেবে এইটা খেলে); তাহলে তো এটা জুয়ার হুকুমে পড়বে। হযরত আলির কথাগুলো দাবাখেলার ওই পার্টিকুলার ধরনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। (আল-ইরশাদ, ২/৪১৮)

এছাড়া, আল্লামা সুবহি বিন হাসান হাল্লাক নাইলুল আওতারের হাশিয়ায় লিখেছেন, আমি বলি, এসব হাদিসের একটাও শুদ্ধ না। (১৪/৪৮৯)। আল্লামা ইবনে হাজার হাইতামি (মৃ. ৯৭৪ হি.) তার কিতাবে লিখছেন, কিন্তু অনেক হাফেজে হাদিসের মতে, এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসগুলার একটাও সহিহ বা হাসান সনদে বর্ণিত হয় নাই। এমনকি সাহাবি, তাবেয়ি ও তাবে তাবেয়িদের একটা বড় জামাত এটা খেলছেন। এদের মধ্যে সাইদ ইবনে জুবায়ের একজন, যিনি মাঝেমধ্যে দাবা খেলতেন। (তুহফাতুল মুহতাজ, ১০/২১৭)

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল খুব শক্তভাবে দাবা খেলাকে হারাম বলছেন। কিন্তু উনিও এ ব্যাপারে হযরত আলির সূত্রে বর্ণিত আছারের বরাত দিছেন এই বলে যে, এ ব্যাপারে হযরত আলির বর্ণনাগুলাই সবচে সহিহ। রাসুলের (স.) সূত্রে বর্ণিত কোনো হাদিস তিনি আনেন নাই (ইমাম আহমদের এই কওলের কোনো সূত্র আমি পাই নাই। কেউ পাইলে জানাবেন)।

হাদিসে বর্ণিত نرد পাশা আর দাবা কি এক
বেশ কয়েকটা সহিহ হাদিসে নারদ বা নারদশিরকে হারাম বলা হইছে। কী এই নারদ? নারদকে نرد বাঙলায় বলা যায়, পাশা; যার বর্তমান রূপ হইল Backgammon বা Tables জাতীয় খেলাগুলো। এই খেলার বিভিন্ন রূপ বর্তমানে ক্যাসিনোগুলোতে প্রচলিত আছে। প্রশ্ন ওঠে, দাবা আর পাশার মধ্যে ফারাক আছে কী? আছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, দাবা আর এই খেলার মেজর ফারাকটা হইল: দাবা মূলতই স্কিল বেজড, স্ট্রং আইডিয়া বেজড গেম। ফলে এটা বেসিক্যালি ব্রেইন গেম। অন্যদিকে, পাশা মূলত লাক-বেজড গেম (যদিও, সেখানেও ট্যাকটিক্সের ব্যাপার থাকে)। ফলে, এই খেলায় মানুষ নামে মূলত ভাগ্য পরীক্ষা করতে। আর এ কারণেই, দুই খেলার উদ্দেশ্যও এক না, থাকে নাই। উৎপত্তির শুরু থেকেই পাশার একটা মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল জুয়া বা লটারি। প্রাচীন জ্যোতিষীরা ভবিষ্যতবাণীর কাজেও এই জিনিশ ইউজ করতেন। অন্যদিকে, দাবা ছিল মূলত রাজ-রাজরাদের অবসর‍যাপনমূলক খেলা। আর এই মেজর ফারাকের কারণেই দাবা সাধারণ মানুষ, স্পেশালি মিডল ক্লাশের মধ্যে যতটা ব্যাপ্ত ও জনপ্রিয় হইছে, পাশা তার সিকিভাগও হয় নাই।

পাশা খেলার উৎপত্তি মেবি প্রাচীন ইরানে। ইসলাম আসার আগেই আরবে এই খেলার ব্যাপক প্রচলন ঘটে, আর সেজন্যেই এর ব্যাপারে বেশকিছু সহিহ ও হাসান হাদিস পাওয়া যায়। পাশার ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হাদিসটি হযরত বুরাইদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, যে পাশা খেলল, সে যেন শুকরের গোশত ও রক্তে হাত ডুবাল। (মুসনাদে আহমদ, মুসলিম, আবু দাউদ)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববি বলেন, এই হাদিসের ভিত্তিতেই ইমাম শাফেয়িসহ জমহুর ওলামা পাশা হারম হওয়ার ব্যাপারে মতো দিছেন। (শরহু মুসলিম, ১৫/১৫) যদিও পাশার ব্যাপারেও কেউ কেউ জাওয়ায ও কারাহাতের ফতোয়া দিছেন। যেমন: আল্লামা আবু ইসহাক আল-মারুযির মতে এটা মাকরুহ, হারাম না (প্রাগুক্ত); ইবনুল মুগাফফাল ও সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব জুয়া না হওয়ার শর্তে একে জায়েজ বলছেন (নাইলুল আওতার, ১৪/ ৪৮৭)। তবে বেশিরভাগ ওলামার মতে এটা হারাম।

আল্লামা ফাইরুযাবাদি তার `তাহবিরুল মুওয়াশশিন` কিতাবে লিখেছেন যে, পারস্য রাজা আরদশির বিন বাবাক পাশা খেলার প্রচলন ঘটান। এজন্য এরে `নারদশির` (হাদিসে শব্দটা আসছে) বলা হয়। পরে, সিসসাহ বিন দাহির হিন্দি পারসিক রাজা শিহরামরে দাবা খেলা শিখান। তখন সেকালের জ্ঞানীগুণী লোকেরা সবাই দাবারে পাশার চাইতে ভাল খেলা হিশেবে রায় দেন। (পৃ. ৪৩; দারে কুতাইবা)

কাযি ইয়াজ আল-মালেকি (মৃ. ৫৪৪ হি.) বলেন, কোনো কোনো আলেম বলেন, পূর্ববর্তীরা দুনিয়াবি বিষয়গুলা ঘটার দুইটা পদ্ধতির কথা বলতেন। এক. কাকতালীয়ভাবে ঘটা; দুই. চেষ্টা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্জন করা। পাশা হইল প্রথমটার উদাহরণ; দাবা দ্বিতীয়টার। (ইকমালুল মু`লিম বি ফাওয়াইদি মুসলিম, ৭/২০২, দারুল ওয়াফা)

বিখ্যাত হাম্বলি আলেম আল্লামা ইবনে কুদামা হাম্বলি (মৃ. ৬২০ হি.) দাবা খেলাকে যেসব উলামা জায়েজ বলেন, তাদের দলিল উল্লেখ করতে গিয়ে লিখছেন, দাবা আর পাশার মধ্যে দুইটা ফারাক আছে। এক. দাবায় যুদ্ধকৌশলের ব্যাপার আছে; ফলে এইটা বর্শা নিক্ষেপ, তীরন্দাজি ও ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। দুই. পাশা খেলার মূল নির্ধারক হইল পাশা বা ছক্কার দান; ফলে এইটা লটারির সাথে মিলে যায়। অন্যদিকে, দাবার মূল নিয়ামক হল প্লেয়ারের দক্ষতা ও মেধা, ফলে এইটা তীরন্দাজি প্রতিযোগিতার সাথে মিলে যায়। যদিও পরে উনি এই যুক্তি রদ করছেন এই বলে যে, যারা দাবা খেলে, তাদের বেশিরভাগের এই উদ্দেশ্য থাকে না। এবং ট্রাডিশনাল হাম্বলি ফিকহ অনুসারে, উনি এর নাজায়েজ হওয়ার পক্ষে মত দিছেন। (আল মুগনি, ১০/১৫১, মাকতাবাতুল কাহিরা)

বিখ্যাত শাফেয়ি ফকিহ ও মুতাকাল্লিম আল্লামা ইবনে হাজার হাইতামি (৯০৯-৯৭৪ হি.) লিখছেন, দাবার মূলভিত্তি হইল সূক্ষ্ম নির্ণয়জ্ঞান, সঠিক চিন্তাশক্তি; ফলে দাবাখেলায় বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধির সুযোগ আছে। অন্যদিকে, পাশার মূলভিত্তি হইল আন্দাজ ও অনুমাননির্ভর ভাগ্যপরীক্ষা, যা মানুশরে মূর্খতা ও আহাম্মকির দিকে নিয়ে যায়। (তুহফাতুল মুহতাজ, ১০/২১৬; আল মাকতাবাতুত তিজারিয়্যা)

পাশা আর দাবার মধ্যে এই মৌলিক ফারাকের কারণেই, উলামারা নসের দলিলের ভিত্তিতে পাশাকে জুয়ার অন্তর্ভুক্ত ও হারাম ফতোয়া দিলেও, দাবার ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন; এবং খাইরুল কুরুনের ওলামায়ে কেরামসহ, আলেমদের একটা বড় জামাত জুয়া না হওয়ার শর্তে দাবা খেলার বৈধতার পক্ষে রায় দিছেন। এই লেখার পরবর্তী পর্বে আমরা সেগুলা নিয়াই আলাপ করব ইনশাল্লাহ। চলবে