দিনমজুর সায়েদ আলী ও বেগুনি কালেম

চয়ন খায়রুল হাবিব

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২৪, ২০২০

ব্রাক্ষ্মণডোরা গ্রাম থেকে ষোড়শী বিউটিকে লাখাইতে নানুর বাড়িতে রেখে আসার সময় দিনমজুর সায়েদ আলী কিছুদূর যেতে যেতে কখনো নৌকায় অন্যদের ভিড়ে, কখনো হাঁটাপথে ঘাড়ে রাখা যে গামছায় কপালের, ঘাড়ের, আধপাকা খোচাখোচা দাড়িমোচসহ মুখের ঘাম মুছেছিল, সে ঘামের প্রত্যেক ফোটায় আমাদের ইতিহাসের ভিতরের ইতিহাসগুলো করচ ফুলের দেহলি ছুঁয়ে, বৈঠার ছলাত ছলাতে বিউটির তেজদিপ্ত চোখের মনিতে ঠিকরে ঠিকরে মিলায়েছিল পানির অল্পতলের নরম মসলিনে ছড়ানো শিংড়াফলের গহিন বুননে, যে বুনন সেচে নীলাদ্রির হাসন রাজা হাস্যচ্ছলে লিখেছিল, এগো দেখোগো আসিয়া, কমলায় নিত্য করে ঠমকিয়া, ঠমকিয়া!

কাজেরসময় কখনো মাথাল, কখনো বিড়া বাধা মাথায় আধপাকা খাটো ছাটের চুল চেপে বসে আছে স্থায়িভাবে। রোদপোড়া, দড়ি পাকানো শরিরের সায়েদ আলীর পরনে চেক লুঙ্গির সাথে খাটো সাদা ফতুয়া, শশুর বাড়ি যাবার সময় বৌ টিনের তোরংগ খুলে হাতে দেয়। বিউটির ছিপছিপে একহারা চেহারায় রোদ পড়লে মধু রংটা গাঢ় হয়ে ফোটে, গাড় নীল আটো সালোয়ার আর হাঁটু লম্বা হালকা নীল শেমিজ। রোদ আড়াল করতে কালো ওড়নাটা ঘোমটামত এসে কপালে পড়েছে, ঠিক হিজাব না। হাটার সময় কোমরে বেধে রাখে। মায়ের হাতে ছাটা ঘাড় ছড়ানো ঘন চুল ওড়নার বাইরে কপালে, ঘাড়ে, পিঠে এসে মেলে ধরছে লালশীর হাসের কালো ডানা, কখনো ছড়ানো, কখনো গোজানো। কাধে ঝোলা ব্যাগে কয়েকদিনের কাপড়। বাপ মেয়ে দুজনের পায়ে প্লাস্টিকের স্যান্ডেল। হাওরে এখন শুকনার মৌসুম, বিলের বুকে এখানে ওখানে সবুজ রোপা ধানগাছে শিশ আসি আসি উকিঝুকি মারছে।

যে হাওরি অঞ্চল শায়েস্তাগঞ্জে সায়েদ আলী বিউটিকে কোলেপিঠে বড় করেছিল, তা বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জের এক কোনায়, হাওর ধরে ধরে, পাহাড়ি টিলায় প্যাচ খেলানো বনজ পথ বেয়ে, উত্তরে  সুনামগঞ্জ, দক্ষিণে ত্রিপুরা, পূবে মৌলভীবাজার, পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও  কিশোরগঞ্জ।

সায়েদ আলী বাপদাদার কাছে শুনেছে, হাওর এলাকার আশেপাশের পাহাড়, টিলা বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার সাথে লালমাই পাহাড় ধরে সিলেট, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং মধুপুরের উঁচু এলাকাগুলোর সাথে যুক্ত ছিল। প্রাচীন কামরূপ বা প্রাগজ্যোতিষপুরের নাচনেওয়ালি, চড়কের ডুগির বাজনায় বয়ে চলেছে একটু দূরে চাকলাপুঞ্জী চা বাগানের কাছাকাছি চান্দির মাজার ছোঁয়া বালু নদী।

হাওরের ধার ঘেঁষা নলখাগড়ার ময়ূরী লেঞ্জাগুলো রূপকথার জানালার ফ্রেমে হাজার রাত্রির পর্দা দোলায়: বাহরাস্থান-ই-গায়েবী কিতাবে লেখা ১৫ শতকে বাংলার কিম্বদন্তী খ্যাত বারো ভুইয়াদের দলভুক্ত সিলেটের জমিদার আনোয়ার খান এবং বানিয়াচংয়ের জমিদার হোসেন খান লড়াই করেছিলো মুঘল সেনাবাহিনীর সাথে। আফগান রাজা খাজা ওসমান বাকাই নগর দুর্গ ছেড়ে এসে গিরিপালের কাছে পুটিজুরীতে গড়ে তোলে একটি  দুর্গ। খাজা ওসমানের ভাই দুর্গ ত্যাগ করলে মুঘল সেনারা সে সুযোগ গ্রহণ করে খাজা ওসমানের সেনাদলকে বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার দালাম্বপুরে পরাজিত করে। ৪ এপ্রিল, ১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা তেলিয়াপাড়ায় ২য় ইষ্ট বেঙ্গলের সদরদপ্তরে সমবেত হয়। চা বাগান পরিবেষ্টিত  পাহাড়ী এ অঞ্চলে জেনারেল এম এ জি ওসমানী, লে: কর্ণেল আব্দুর রব, লে:  কর্ণেল সালাউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর শাফাত জামিল, মেজর মইনুল হোসাইন চৌধুরীসহ অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন সেদিন।

সায়েদ আলীর কাছে বাপদাদাদের মত দিন, তারিখ, সন হলো ব্রিটিশের আগে, পরে, রায়টের আগে, পরে,  যুদ্ধ্বের আগে, পরে, বন্যার আগে, পরে। ব্রিটিশের পর ভারতের সাথে সম্পর্ক খারাপ যে হতে থাকলো, শুধু তা না, সবইতো খারাপ হতে থাকলো। বাপ, দাদারা আসামের জঙ্গলে, ত্রিপুরার পাহাড়ে কাঠ কাটতে যেত, তা ভাসায়ে দিতো পাহাড়ি নদিতে,  সিলেটের বাজারে এনে সে কাঠ বিক্রি করতো, তাও বন্ধ হলো। পাওয়ার মধ্যে বিউটির একটা জাতিয় আইডি কার্ড। শেষ বছরে এসে বিউটি স্কুল ছেড়ে কোম্পানির কাজ নিলো। এখন সে আর তার বৌ বলে, বিউটির জন্মের আগে, পরে।

তার অঞ্চলে যুদ্ধের শুরুতে কমান্ডার ওসমানী ফৌজি বৈঠকে বসছিলেন। সায়েদ আলী তার পতাকার জোরে সদর থানার দিকে কদম চালায়। কমলারে, কন্যা আমার! কার কথা, কিসের কথা ভাবে দিনমজুর সায়েদ আলী? শীত মৌসুমে পানি শুকায়ে কমে  গেলে, বিলের পাড়ে কান্দা জেগে উঠলে শুধু কান্দা`র ভিতরের অংশে আদি বিল  থাকে, আর শুকায়ে যাওয়া অংশে কৃষকেরা ফলায় রবিশস্য আর বোরো ধান। এসময় এলাকাটি গোচারণভূমি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বর্ষায় থৈ থৈ পানিতে নিমগ্ন হাওরের জেগে থাকা উঁচু কান্দাগুলোতে দেশি পাখপাখালি, সাপখোপ, কাছিমের পাশে এসে আশ্রয় নেয় পরিযায়ী, বিদেশি পাখিরা— রোদ পোহায়, জিরায়! হেলেঞ্চার শাকভাজি প্রত্যেক দিন আর খাইতে পারবে না বলে সাত বছরের বিউটির জিদি মুখ তার মনে পড়ে এই মধুরঙ্গা, পরিশ্রমী, উচু চিবুকের কিশোরির দিকে তাকায়ে। মেয়েটা কি চোখ দিয়ে দেখে না কি যামীতে মেয়েটার চোখ, সায়েদ আলী ভাবে!

এত বছরে সে কতবার হাওরে ডুব দিয়েছে নিছক খেলার ছলে বা মাছ ধরতে, জাল পেতেছে সার বাধা নৌকার কিনার থেকে ভরা পূর্ণিমায় তার কোন হিশাব নাই। পানির তল, পানির উপর কোথায় সে বেড়ে উঠেছে এই হিশাবটার চেয়ে বেশি বড় যে পানিতে পানিতে সে বড় হয়েছে পানির পিরের দোয়ায়। গত বছর স্কুল থেকে ফিরে বিউটি বল্লো, সারেরা কিছুদিন হাওরে গোসল করতে নিষেধ করেছে। হাওরে ইউরেনিয়াম দূষণ ঘটেছে না কি তার না কি পরীক্ষা হবে ঢাকা থেকে লোক এনে। সায়েদ আলি নিজেও বেশ কিছু মরা হাস, মরা মাছ ভাসতে দেখেছে। সায়েদ আলী জানে, এই বাজে গ্যাস হয়েছে, হাওরে তলানো ধান পচে গিয়ে। মুরুব্বিরা পরে ঢাকার লোককে বলেছে। তারপরও সাবধানের মার নাই ভেবে পরীক্ষা হয়েছে। বানে তলানো ধান, গাছের ডালপালা, পাতা পচা পানির দূষণ ব্যাপারটা আগে থেকে সে জানতো। একটা নতুন শব্দ শিখেছে মেয়ের থেকে, তেজস্ক্রিয়া। মেয়ে খুব মিষ্টি করে বলে। তারপর মেয়ে খবর দিলো এই দিকের হাওরের পানিতে না কি স্বাভাবিকের চেয়েও কম তেজস্ক্রিয়তা। মানুষ এত বাড়লে সব কি আর ঠিকঠাক থাকে? নতুন শব্দ শেখার সাথে সাথে মনেও নতুন নতুন ভাবনা আসে। সে ভেবেছে ইউরেনিয়াম দুষন হলে এই লাখো মানুষের ঢল কোথায় যেতো। ভাবনার কোন কুল কিনারা সে করতে পারে নাই। ভারত না কি পাহাড়েও কাটাতার বসাবে। আফালকে ঢেউ বলতে শেখা ইস্কুলের ছেলেমেয়েগুলার দিকে সে তাকায় থাকে!

এক সন্ধ্যায় টিন ছাওয়া ব্যাড়ার ঘরে হারিকেনের টিম টিম আলোর বড় বড় ছায়ামাখা আলোআধারিতে মাটির মেঝেতে পাতা চাটাইতে ভাতের দলায় মরিচ ডলটে ডলটে মেয়েটা তাকে কাস্টমার সার্ভিস বুঝায়েছিল। কোম্পানির ক্লিনারদের বস বলছে, আশপাশ দিয়ে যে যায় তারে সালাম দিতে। আর ঢোকার দরজা পরিস্কার করার সময় কেউ আসলে বসতে বলতে, পানি খাবে কি না জানতে চাইতে, কেউ বাহির হবার সময় সালাম দিতে আর আবার আসতে বলতে। ধান বেচা, গার্মেন্টস বেচা টাকায় না কি সরকার পুলিশ, সেনাবাহিনি চালায়। আমরা সবাই না কি তাদের কাস্টমার। সায়েদ আলী মুচকি হেসে বলেছিল, পুলিশে আবার আসতে বল্লেতো খবর। বিউটি ফিক ফিক করে হেসে ফেলছিলো, আলো আধারির ভিতরেও সদরে দেখা মনোহারি দোকানের কাচে সাটা দাত মাজার বিজ্ঞাপন মনে আসছিল।

সায়েদ আলী ভাবে, মাছ কমে যাওয়াতে কি বড় জাতের ঈগল, বক বিরল হলো? দেশি পানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, ডাহুকেরও কি খাবার কমে গেল, মানুষের ভিড়ে? বাবা, দাদার মত বিউটিকেও সে চটে যাওয়া মুখ করে, চোখ গোলগোল করে চিনায়েছে চটাইন্নার বিল, রুপাবই বিলের নামের পাশে বলেছে এখানে রুপার বই পাওয়া যাইতো, হাতির গাতা বিলের পাশে কনুই মুখে এনে শুড় বুঝায়েছে, বেরবেরিয়া বিলে এক বুড়ি বেরবের করতো, অন্যগুলা বলে গেছে রোয়া বিল, লেচুয়ামারা বিল,বাইল্লার ডুবি, তেকুন্না ও আন্না বিল! আরো চিনায়েছে কোনটা ভুতিহাঁস, কোনটা পান্তামুখী, লাল মাথা ভুতিহাঁস, লালশির, নীলশির, পাতিহাঁস, লেনজা, ডুবুরি। সারা জীবনের কামাই দিয়ে যা সে স্বপ্নেও ভাবে না, আল্লাহ তা ছাপ্পর মেরে বাস্তবে দিয়েছে চারপাশে, আবার বানের থাপ্পড়টাও কি আসে আসমান থেকে?

সায়েদ আলি তার দিনমজুরি বুদ্ধি দিয়ে পাহাড়ি নদির ঢলের হিশাবটা বোঝে। এই ঢলের তোড় আটকানো যে মাটির বাধের কাজ না তাও সে বোঝে। জমি নাই তার, কিন্তু মাপামাপিটা সে বোঝে জমি মাপার আমিনের চেয়ে বেশি। জিরাতিরা আসে, পানির উপরে নৌকায় বসে আমিন পানি মাপে, জিরাতিরা সামর্থ্য অনুযায়ি দাগ কিনে নেয় সরকারি দফতরে টাকা জমা দিয়ে। পানি নামলে সেখানে আবাদ করে। কোন কোন জিরাতি বিশাল কাফেলা নিয়ে আসে, গাদাগাদি করে বাশ চালায় থেকে ধান ফলায়। তোড়ের আগে ফসল ওঠাতে পারলে ভাল, আর না পাড়লে কপাল পুড়লো। আজকের জিরাতি, কালকের দিনমজুর। আজকের দিনমজুর, কালকের জিরাতি।

আজকে যে আবাদ করছে হাওরের কান্দাতে, কালকে সে জাহাজ ভাংছে চট্টগ্রাম বন্দরে। সায়েদ আলীও গেছে জাহাজ ভাঙ্গারির কাজে। সে বোঝে পানি আটকানোটার চেয়ে বড়, পানির যাওয়ার পথ করা। দুরান্তের জিরাতিরা বলে উত্তরবঙ্গে ডিনামাইট ফাটায়ে খাল কেটে সাগরের নোনা পানি নিয়ে আসা হয় ক্ষেতি জমিতে চিংড়ি চাষের জন্য। সে বুঝে যে তাদের দরকার উলটা, যাতে ঢলের পানি তাড়াতাড়ি সাগরে চলে যেতে পারে। জিরাতিরা দল বেধে নামাজ পড়ে, এক অঞ্চলের জিরাতি আরেক অঞ্চলের সুলুক সন্ধান করে, বিয়েশাদির ঘটকালিও হয়। কিন্তু ফসল ধ্বংসের দোষটা যে সরকারের তা তারা বোঝে। ভারতের সাথে সম্পর্ক করে মাইলকে মাইল পাহাড়ে ডিনামাইট ফাটায়ে নালা না কাটলে যে এই পানি সরার জায়গা পাবে না, তা জিরাতিরাও বোঝে, তার দিনমজুরি বুদ্ধিও বোঝে। জিরাতিদের আসাযাওয়া, সাগরসম হাওয়ার তোড়ে তার বুক বড় করে দিয়েছে। সে জানে গরিবের দরকার বুকের পাটা, এটা তার আছে। এই বুকের পাটার জোরেইতো ছোট ছোট পাখিগুলা জিরাতিদের কাফেলার আদলে ঠাণ্ডার মৌসুমে না কি সেই সাইবেরিয়া থেকে এই হাওরে উড়াল দেয়। পাখি পারলে সেও পারবে, তার বিউটিও পারবে।

সায়েদ আলীর ছন ছাওয়া বাসাটাও পাখির বাসার মত। ছানাগুলোকে যে কত ঝড়, বৃষ্টির ঝাপটা, সাপের ছোবল থেকে আগলে আগলে পাখিগুলো আকাশে মেলে দেয় সে হিশাব কড়ায়গণ্ডায়ে জানে সায়েদ আলী। একবারতো ফালের নিচে কাদামাটিতে আটকায় যাওয়া তিরতির করা কয়েকটা হাসছানাকে সে খুটেখুটে তুলে আদি বিলে ভাসায় দিয়েছিল। বিউটিকে নানুর বাড়িতে দিয়ে আসবার সময় সেই হাসছানাগুলাকে আজ অনেক বেশি মনে পড়ছিল। কোন কুটুমের বিয়েতে য্যানো হাসন রাজার গানে অন্য ফুরিদের সাথে দুলায়ে দুলায়ে নাচছিল বিউটি আর ওর মা! সায়েদ আলীর মনে হয় যে হরেক রকম পাখালির কিচিরমিচির, চোখ ধাধানো বাহারি পালখের ছটা আর ঝাক বাধা ডানামেলা উথালিপাথালি উড়ালের তালেতালে তাদের এই নাচন আর গাওন! এসবের ভেতর শকুনও যে আছে সে জানে। শুকুনেতো মরা জিব খায়। মানুষে খায় জ্যান্ত মানুষরে। সায়েদ আলী পুলিশের কাছে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়।

বৌ তারে আবার তোরঙ্গে তোলা শশুরবাড়ি যাবার ফতুয়াটা দেয় আর নতুন কাচানো লুঙ্গিটার সাথে। মেয়ে তার বৌ এর গড়ন পেয়েছে। এত কমে এত সুন্দর হাসে কেমনে মা মেয়ে! সদর থানার বারান্দায় কতক্ষণ সে দৌড়াদৌড়ি করেছে মনে নাই। কেউ তাকে বসতে বলে নাই। এইসব তার গা সওয়া। এস আইকে সে বিউটির অপহরণ ও বেইজ্জতির কথা জানায়।গো ধরে নিশ্চিত করে যে  তার এজাহার লেখা হয়েছে এবং আশ্বাস আদায় করে যে পুলিশ নাম জানানো আসামিদের  ধরবে।শিতকালে হাওরের বাতাসে একটা হিমের আস্তর ঝোলে, গরম কালে পানি সরে গিয়ে  সেখানে আসে একটা সোদা ভাপ।এই হিমেল আস্তর, এই ভাপ মৌসুমের বদলি পাখিদের মত  তাকে জোর দেয়, সে জোর পায় ওসমানীর ফৌজি বৈঠকির বায়েনে।ওসমানী  পাকিস্তানিদের হটায়েছে, সে একবেলা অসৎ কামাই খায় নাই, পুলিশ তার মেয়ের  অপহরনকারিদের টাইট দেবে এরকম সিধা বিশ্বাস তার।বাড়ি ফিরে কয়দিন পর সে লাখাই  থেকে বিউটিকে নিয়ে আসে। তার বেগুনি কালেম পাখি।

তারপর সায়েদ আলী কি আউলায়ে যায়? সায়েদ আলীর ধন্দ লাগে, সে কি ভরা বর্ষার হাওরে তলানো হিজল গাছ? তার সাথে সাথে, ডালে ডালে বাসা বাধা বেগুনি কালেম পাখিরাও তলানো। কোদাল দিয়ে সে কবর খুড়তে মাটিতে না কি বৈঠা বাইতে লগি দিয়ে পানিতে কোপ মারে আর বুঝতে পারে না। কোপের পর কোপে হিজল গাছটাকে আবার পানি থেকে মাথা তুলতে দ্যাখে। বেগুনি কালেম পাখিগুলাকে ঝাক বেধে উড়ে যেতে দ্যাখে।