ধর্ষকামী রাষ্ট্র মেরামত যোগ্য নহে

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশিত : এপ্রিল ১২, ২০১৯

আপনারা, একেকজন বিশাল বড় ‘প্রগতিশীল’, আর প্রমাণ না দিলেও হয়! বর্ষবরণে মেয়েদের জামা ছিঁড়ে সংঘবদ্ধ যৌন নির্যাতন করাটা ছিল ‘সোনার ছেলেদের দুষ্টুমি’, সিসি ক্যামেরায় কেউ ধরা পড়ে না! এর বহু বছর আগে থার্টি ফার্স্ট নাইটে বাঁধনকে নগ্ন করার পক্ষে সন্ত্রাসীরা বই লিখে এমপি হয়েছিল! সুবর্ণচরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণকে বললেন, ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’, অথচ পুরো বিশ্ব দেখল, এটি রাজনৈতিক ধর্ষণ।

তনু হত্যা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। পাহাড়ে আদিবাসী নারীদের যেভাবে ধর্ষণ করা হয়েছিল, যেভাবে সেখানে গণহত্যা চালানো হয়েছিল, তা আপনারা এড়িয়ে যান— ওই ধর্ষকরা ‘রাষ্ট্রের নায়ক’ বলে কথা!

ভিকারুন্নেসা স্কুলছাত্রীর ধর্ষণ নিয়ে আপনারা যেমন উত্তেজিত হন, তেমনটা আবার একজন গার্মেন্ট শ্রমিকের ধর্ষণে হন না! তারমানে একটা চরম শ্রেণিবিভক্ত সমাজে ধর্ষণেরও যে শ্রেণিচরিত্র আছে, তা আপনারা সুস্পষ্টভাবেই তুলে ধরছেন! শ্রমিকের আবার লাজ-শরম কিসের! নিজেদের বা স্বজনদের মধ্যে যে ধর্ষকামিতা আছে, তা নিয়ে একটিবারও কি আপনারা সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন? নাকি আপনারা এবং আপনাদের সব স্বজনরা ধোয়া তুলসি পাতা?

নুসরাত নিয়ে অবশ্যই বলতে হবে, এ নিয়ে যে যেখানে আছেন, সেখান থেকেই বলতে বলে। কিন্তু নুসরাতের হত্যাকারী, ধর্ষকামীদের পক্ষে যারা মিছিল করেছিল, যারা সুবর্ণচরের সংঘবদ্ধ ধর্ষণকে ‘অরাজনৈতিক’ বলেছিল, তাদের বিরুদ্ধেও দুটো কথা বলুন!  এত কথা বলার আগে একটিবার ভাবুন তো, এসব প্রতিবাদে ব্যক্তির সমালোচনা করে, তাকে ফাঁসি দিয়ে কি ধর্ষকামের সামাজিক প্রডাকশন বন্ধ হবে?

না, তা কখনোই সম্ভব নয়। আর তাই আজ সময় এসেছে, অথবা সময়টা অনেক আগেই এসেছিল, আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিকারের ব্যবস্থা করুন। যে ধর্ষকামী রাষ্ট্র ধর্ষক উৎপাদন করে চলেছে প্রতিনিয়ত, তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন। সামাজিক আন্দোলন কোনোভাবেই অরাজনৈতিক নয়। আজ সেই রাজনৈতিকতা আপনাকে প্রশ্ন করছে, আপনি কার পক্ষে— ফ্যাসিবাদের গর্ভজাত ধর্ষকামীদের, নাকি গণমানুষের প্রকৃত গণতন্ত্রের পক্ষে? জবাব আপনাকেই দিতে হবে। ধর্ষকামী রাষ্ট্র মেরামত যোগ্য নহে!

দৃঢ় কণ্ঠে আওয়াজ তুলুন—
ধর্ষকামী রাষ্ট্র ভেঙে
ঐক্যবদ্ধ হোন
ব্যাপক নিপীড়িত জনগণের
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামে...