নাসরিন জয়া হকের গদ্য ‘যৌনতার ভাষা’

প্রকাশিত : মার্চ ২৬, ২০২১

আঁকায়, লেখায় ও চলচ্চিত্রে সহজ নান্দনিকতায় যৌনতা নিয়ে আসা ও তাতে প্রাণ ফোটানো খুবই কঠিন। যে ব্যাপারটা কোটি কোটি মানুষ কোটি কোটি বার করছে, তার দিকে তাকানোর, তাকে লেখার খাতায় আনার সাহস আমাদের বেশির ভাগ মানুষের নেই।

কথিত অলৌকিকতা ও দেবভাষার সাথে সম্পর্ক পাতাতে হাজার বছর ধরে সমাজপতিরা সহজ দৈনন্দিন দেহভাষার সাথে আমাদের দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছে। ব্যাপারটাকে গোপনীয়তায় নিয়ে গেছে। আমি মনে করি, এটার সাথে আদপকেতার কোনো সম্পর্ক নেই।

যাদের মনে কালিমা নাই, তারা যৌনতাকে সহজে শিল্প-ভাষায় নিয়ে আসতে পারে, প্রিটেনশানের আশ্রয় তাদের নিতে হয় না। অনেকে দেখি, খুব ভালো হুবহু পোট্রেট স্কেচ করতে পারে। কয়েক দিন আগে এক ভক্তের করা মেহের আফরোজ শাওনের পোট্রেট দেখলাম। সেটা শাওনই, কিন্তু কোনো প্রাণ নেই, আবেগের ডাইমেনশান নেই।

এটার জন্য যে বিশেষভাবে যৌন আবেদনময় বা আবেদনময়ী হতে হবে, তা নয়। আমাদের উচ্ছ্বাস, বিষণ্ণতা ও আকাঙ্ক্ষা সব আবেগে যৌনতা জন্মমুহূর্ত থেকে বিভিন্নভাবে কাজ করছে। যৌনতাকে গোপন করে আমরা আবেগের বিচিত্রতাকে বোতলবন্দি করি। আমরা মরে প্রমাণ করি, আমরা বেঁচে ছিলাম।

বিশেষভাবে যৌন আবেদন তৈরি করতে গিয়ে ভোজপুরি ফিল্ম, ঢাকাই ফিল্ম, তামিল ও বলিউড ফিল্ম মেয়েদের পেট, ছেলেদের টাইট শার্ট দেখায়। একই নির্মাতা, তাদের শিল্পী ও দর্শক সহজ খোলামেলা যৌনতার সামনে দাঁড়াতে পারছে না। যেরকম পারে না হুমায়ূন ভক্তকুল।

ছেলেমেয়েরা বাবা-মাদের থেকে লুকিয়ে পড়ছে যৌন বিষয়ক বইপত্র। বাবা-মায়েরা আগে থেকেই জানে সেই লুকানোর ভাষা। ধর্মের আবেগ এবং ধর্ষণের প্রতিবাদের মাঝখানে যৌনতার নান্দনিকতার সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।

সুলতানের পেইন্টিংগুলো সব যৌন আবেদনময়। অথচ সুলতানকে ও তার বিষয়কে তারেক মাসুদ যেভাবে গণ-মানুষের শিল্পী ও ভাসানী রাজনীতির অংশ হিশেবে তুলে ধরেছেন, তাতে তাকে সেই মেহের আফরোজ শাওনের নিষ্প্রাণ পোট্রেটের মতো মনে হয়।

চয়ন খায়রুল হাবিবের `রমণ` কবিতাটায় আমি সুলতানের পেন্টিংয়ের শক্তি পেলাম, অমৃতা শেরগিলকে পেলাম, আমাদের প্রাণশক্তির ভেতর যে যৌনতা, তাকে পেলাম।

প্রাণশক্তির ভেতরের যৌনতাটা কি রকম? রিকশায় ঘুরতে ঘুরতে যখন আমরা চারদিক ভুলে একজন আরেকজনকে গভীরভাবে চুমু দেই, তারপর আবার সচকিত হয়ে যাই— `রমণ` কবিতাটাতে মনে হচ্ছিল, চারদিককে না ভুলে চারদিককে পাশে নিয়ে সবাই মিলে চুমোচুমি করা যেত।

ব্যাপারটা স্যাটায়ার বা অ্যাবসার্ড নয়। কিন্তু হালকা নির্ভার নির্মেদ— যেভাবে কবিতাতে এসেছে।