নিতির গল্প

উপন্যাস ৩৮

অমিত কুমার কুণ্ডু

প্রকাশিত : জুন ১৪, ২০২০

কয়েকদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। শহরে জাঁকিয়ে শীত নেমেছে। অন্যান্য বছরে এ সময়ে এত শীত নামে না। এবার শীতের আগমন একটু দ্রুতই হলো। পথ চলতি মানুষের গায়ে শীতের পোশাক দেখা যাচ্ছে। ফুটপাতে নতুন-পুরোনো শীতের কাপড়ের দোকান বসেছে। দোকানিদের হাঁকডাক, ক্রেতাদের দরদামে ফুটপাতে হট্টগোল শুরু হয়েছে।

সস্তা শ্রমের জন্য দেশে একের পর এক নতুন গার্মেন্টস হচ্ছে। সেসব গার্মেন্টসের কাজে গ্রাম থেকে আসা নারী শ্রমিকে ঢাকা শহর ও শহরতলি ভরে যাচ্ছে। তাদের পুরুষ সঙ্গীদের কেউ ফুটপাতে দোকান দিচ্ছে, কেউ রিক্সা চালাচ্ছে আবার কেউ পরিবহন শ্রমিক বনে যাচ্ছে। এত মানুষ! মানুষের কোলাহলে ফুটপাতে স্বাচ্ছন্দ্যে পা ফেলার জায়গা নেই। গ্রাম থেকে অর্থ রোজগারের আশায় মানুষ শহরমুখী। একদিকে গরিব শ্রমিকের মানবেতর জীবন যাপন, অন্যদিকে সেসব গরিবের রক্ত চুষে নব্য ধনী হওয়া সাহেবদের নতুন মডেলের গাড়িতে রাস্তায় দীর্ঘ যানজট।

ধনিকশ্রেণির প্রয়োজন মেটাতে নতুন মডেলের গগনচুম্বী অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে। নতুন নতুন আবাসিক এলাকা তৈরি হচ্ছে। গ্রাম থেকে সেখানে কাজ করতে আসছে নির্মাণ শ্রমিক, তাদের নারী সঙ্গীরা শহরের ধনী শ্রেণির বাসা বাড়িতে করছে গৃহস্থালির কাজ। কেউ কেউ নিচ্ছে মেসে রান্নার দায়িত্ব। চুক্তিতে দু`একটা ঘরকন্নার কাজে নামছে অনেকে, যাদেরকে বলা হচ্ছে ঠিকা বুয়া। যাদের বসবাসের স্থান মানবেতর।

একদিকে যেমন বাড়ছে বিলাসবহুল আবাসন, লাগামহীন বেলেল্লাপনা। অন্যদিকে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বস্তি, বাড়ছে দারিদ্র, বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম, বাড়ছে অশিক্ষা-কুশিক্ষা, শিক্ষিত বেকার, ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। সারাদিন কাজ করেও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন নির্বাহ করতে পারছে না অনেক শ্রমজীবি, অনেকের কিছু না করেও পৈত্রিক সম্পত্তি ডেভলপারের হাতে দিয়ে রাজার হালে চলে যাচ্ছে।

এত মানুষের আগমন সহ্য করতে পারছে না এই শহর। অত্যাধিক মানুষের চাপে শহরের প্রাণ-প্রকৃতি হচ্ছে দূষিত। কমছে জলাভূমি, মুক্ত অঞ্চল। দখল হচ্ছে নদী, খাল, খাস জমি, ছড়াচ্ছে রোগ-বালাই। ধনী আরো ধনী হয়ে যাচ্ছে, গরিব আরো গরিব হয়ে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করতে হাঁসফাঁস করছে। তরুণ সমাজের একাংশ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। কেউ হচ্ছে বিপথগামী।

এমন এক অদ্ভুত বৈচিত্র্যময় শহর থেকে যে শুটিং টিম কক্সবাজার গিয়েছিল, তারা এক সপ্তাহ না যেতেই শুটিং অসম্পূর্ণ রেখে আবার সদলবলে শহরে ফিরে এলো। রিমি ঢাকা এসে হোস্টেলের পাট চুকিয়ে শুভোর ফ্লাটে উঠল। শোভা একটা ম্যাসেজ পার্লারে কাজ নিল। তুলি আগের মতোই শপিংমলের সেলস গার্লের কাজ করতে শুরু করল।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনে কিছু লোক নিয়োগ হবে। নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে। নিতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটা দেখে আজ বিসিআইসিতে আবেদনটা করল। এইচএসসি পাশের যোগ্যতা নিয়ে এর থেকে বড় পদে চাকরি পাওয়া যায় না। এটুকু পেলেও বাবাকে চিন্তামুক্ত করা যাবে। এই দিয়ে আলাদা আলাদা দুটো ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন দুটো পোস্টে আবেদন করতে দেখা গেল তাকে।

সকালে ক্লাস থাকলে কলেজে যায় নিতি। ক্লাস না থাকলে সহজে বাসা থেকে বের হয় না। যেসব দিনগুলোতে রিচিকে পড়ানো থাকে, সেসব দিনে আগে আগে রেডি হয়ে নিতে হয়। তখন একটু তাড়াহুড়া পড়ে যায়। সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে রিচিকে তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, এটা ভালো লাগে না নিতির কাছে। ছোটদেরকে সময়ানুবর্তিতা আচরণের মধ্যদিয়েই শেখাতে হয়। মুখে বলে বা নৈতিকতার বই পড়িয়ে নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, সত্যবাদিতার মতো মহৎ মহৎ গুণগুলো শেখানো যায় না। এগুলো আচরণগত ব্যপার। অন্তত রিচির কাছে নিতি নিজেকে সাধারণের পর্যায়ে আনতে চায় না। আফটার অল রিচি তার স্টুডেন্ট।

শোভনের সাথে নিতির এখন নিয়মিত দেখা হচ্ছে। অন্তত সপ্তাহে যে তিন দিন পড়াতে আসে সে তিন দিন মিস হয় না। শোভনের মধ্যে হ্যাংলামো ভাব নেই। একটু একটু করে দখল করার বাসনা আছে। জয় করে নেবার মনোবৃত্তি আছে, কেড়ে নেবার প্রবৃত্তি নেই। নিরামিষ স্বভাবের না, আবার বাঘের মতো হিংস্র মাংসাশীও না। একটা ব্যলেন্স করে চলতে জানে। এড়িয়ে যাওয়া যায় না, আবার এড়িয়ে যেতে ইচ্ছেও করে না। মিসটেরিয়াস ক্যারেকটার যাকে বলে। এক অনাবৃত রহস্যে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে।

প্রায় নিয়মিতই মোটরসাইকেলে করে নিতিকে হোস্টেল গেটে পৌঁছে দিচ্ছে শোভন। যেন কতদিনের চেনা, অথচ খুব স্বাভাবিক, একটুও বাড়াবাড়ি নেই। আজও অফিস থেকে ফেরার পথে শোভনের সাথে নিতির দেখা হয়ে গেল। এটা কাকতালীয়, না কি শোভন তার জন্যই বাড়িতে না ঢুকে বাইরে অপেক্ষা করে, এ ব্যপারটা নিতি ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। নিতির সাথে দেখা হতেই শোভন বলে উঠল, কেমন আছেন, রিচিকে পড়ানো শেষ হলো?
হ্যাঁ হলো, আপনি কেমন আছেন?
চলে যাচ্ছে।
শুধুই চলে যাচ্ছে?
এই যেমন আপনার জন্য এখানে অপেক্ষা করছি, এর থেকে ভালোভাবে সময় কীভাবে যেতে পারে বলুন?
কেন? বাড়িতে না ঢুকে আমার জন্য অপেক্ষা করা কিন্তু খুব খারাপ লক্ষণ। বলেই হেসে উঠল নিতি।

শোভনও হাসিতে সঙ্গ দিয়ে, কিছু ভালোর জন্য, কিছু খারাপ হলে ক্ষতি কি?
আমার জন্য অপেক্ষা করে কিসের ভালো হবে স্যার?
আপনাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিতে পরব, একজন ব্যাচেলারের জন্য এটা কি কম ভালো কাজ? হা হা হা
তাহলে তো বাইকে ওঠাই উচিৎ না?
খুব উচিত।
কেন বলুন তো?
সব কেন-র উত্তর হয় না, বুঝে নিতে হয়।
বড্ড শক্ত হয়ে গেল কথাটা।
গল্প পরে হবে, তর্কটাও তোলা থাকল, এখন চলুন তো, রাত হচ্ছে, আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।
গত পরশুও তো দিলেন। আজ থাক। আমি নিজেই চলে যেতে পারব।
আমার বাইকে চড়তে আপত্তি থাকলে অনুরোধ করব না, না হলে--
আপত্তি থাকলে কখনোই উঠতাম না। আপনি অফিস থেকে এসেছেন, ক্লান্ত...
ক্লান্ত থাকলে এ অনুরোধ করতামই না। অবশ্য আপনাকে দোখলে ক্লান্তি ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
এটা কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে। নিতির মুখে হাসি।
এখানে দাঁড়িয়ে আমার বকবক শুনে বেশি বোর হতে না চাইলে উঠে পড়ুন।

নিতি আর কথা বাড়াল না। শোভনের বাইকে উঠে বসল। নিতিকে পৌঁছে দিয়ে শোভনের বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত নয়টা বেজে গেল।

শোভা ঢাকায় এসেছে তিন দিন হলো। এর মধ্যে ম্যাসেজ পার্লারের কাজে গেছে দু`দিন। গতকাল একজন গাইনোকোলজিস্ট কাছে যেতে হয়েছিল। কাজে যেতে পারেনি। আজ সকালে ডাক্তারের পরামর্শ মতো একটা কাজ করেছিল। তাই নিয়েই ঘণ্টা দু`য়েক পরে নিচে কোলাহল শুরু হয়ে গেল, ছি! ছি! ছি!
কী হলো? এত ছি ছি দেয়ার কী আছে?
ছি ছি দেব না, দেখ, তোমার পাঁচতলার ভাড়াটিয়ার মেয়ে কী করেছে?
কী করেছে?
ছাদে গিয়েই দেখ। আগেই বলেছিলাম পুরুষ মানুষ ছাড়া বাসা ভাড়া দিও না। তখন তো দরদ উতলে উঠল, এখন বোঝ?
বাজে কথা বলো না, কী করেছে সেটা আগে বলো?
আমি বাজে কথা বলি, আর তোমার দরদের ভাড়াটিয়া ভালো কাজ করে?
আমি সেটা বলেছি?
তা কী বললে শুনি?
এই সাতসকালে ঝগড়া করতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। কী হয়েছে বলো?
আগে ছাদে চলো, গেলেই দেখতে পাবে।
আচ্ছা চলো।

আকবর সাহেব সস্ত্রীক ছাদে গেলেন। ছাদে পৌঁছে আকবর সাহেবের মাথায় হাত। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি-তর্জনি দু`পাশে প্রসারিত করে গোঁফ চুলকাতে চুলকাতে বলে উঠলেন, কী আশ্চর্য!

আকবর সাহেব লেখক মানুষ। ছড়া-টরা লেখেন। পেশায় একটা বেসরকারি বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের কনসালটেন্ট। বুয়েট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ। ফেসবুকে প্রতিবাদী পোস্ট দেয়, সুশীল সমাজের পক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষে। তার বাড়িতে কিনা এই অনাচার?

ছাদের এ দৃশ্য দেখে নিজের ফ্ল্যাটে এসে শোভার মাকে ডেকে পাঠালেন তিনি। দশ মিনিট পর শোভার মা বাড়িওয়ালার বাসায় আসতেই, এ ধরনের কাজ করলে আপনাদের বাড়ি ছাড়তে হবে।
বাড়ি ছাড়তে হবে? কী অন্যায় করেছি? শোভার মা অবাক, যেন আকাশ থেকে পড়ল!
অন্যায় নয়? বাড়িতে ছেলেমেয়েরা আছে। অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা আছে। তারা কী বলবে?

শোভার মা এই অহেতুক মোড়লিপানা সহ্য করতে পারছে না। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল, কী হয়েছে? না বললে বুঝব কী করে?
এখনো বুঝতে পারছেন না?
না পারছি না।
আপনার মেয়ের ওই সব পোষাক, নাম বলতেও রুচিতে বাধে, ছাদে অইভাবে শুকাতে দেবার কী মানে?
কীভাবে শুকাবে?
কেন, বাসায় গ্যাস নেই? গ্যাসের চুলাতে শুকান যায়। বারান্দায় পাতলা কাপড়ের নিচে দিয়ে শুকান যায়। তাই বলে এভাবে? আকবর সাহেবের মুখ থেকে কথাগুলো কেড়ে নিয়ে ঝড়ের মতো বলে গেল আকবর সাহেবের স্ত্রী।
বুঝেছি! তবে আপনারা যখন এতকিছু বলছেন তখন কারণটা তো জানবেন?
এর আবার কী কারণ থাকতে পারে? আকবর সাহেবের স্ত্রী ঝাল ঝেড়ে বলে উঠল।
মেয়েকে নিয়ে গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। তিনিই খোলা ছাদে রোদে ভালো করে শুকিয়ে ব্যবহার করতে বলেছেন।
আমরাও তো যায়, আমাদেরও তো মেয়ে আছে? কই এসব বলে না তো? কী হয়েছে মেয়ের? আকবর গিন্নী মুখ ঝামটা দিয়ে কথাটা বলে উঠলেন।
এখানে ভাই আছে, এত কিছু বলতে পারছি না।
বেশ, এই তো বুঝেছেন। ভাই যখন আছে তখন ভাইয়ের সম্মান রাখতে এই শেষবার। আর কখনো দেখলে আমরা আপনাকে এ বাসায় রাখতে পারব না।

আকবর সাহেব আর কিছু বললেন না। শোভার মা, `আসি` বলে, একরকম মাথা নিচু করেই ঘরে থেকে বেরিয়ে এলো। মার কাছে ঘটনাটা শুনে শোভার রাগে শরীর জ্বলতে শুরু করল। ছাদে গিয়ে ব্র্যা-প্যান্টি রোদে শুকানোর ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করল। দু`একটা কথা লিখল ছবির এগেনেস্টে। পোস্ট করা শেষ, আর যায় কোথায়?

তাকে নিয়ে, তার পোস্ট করা ছবি নিয়ে ফেসবুকে গ্রুপ খোলা হলো। ফেসবুকে ট্রল শুরু হলো। নোংরা কথাবার্তা ভরে গেল অনেকের টাইমলাইন। নেটিজেনদের অত্যাচারে শোভার টেকা দায় হয়ে উঠল। তারপর? বাকিটা ইতিহাস!

অন্যান্য দিন নিতি আসলে রিচি দরজা খুলে দেয়, আজ শোভন দরজা খুলে দিল। নিতির একটু খটকা লাগল। যেকোন পরিবর্তন মানুষকে ভাবায়, ভাবতে বাধ্য করে। মানুষ পরিবর্তনে ভয় পায়। নিতির গা ছমছম করে উঠল। পরমুহূর্তেই শোভনের গলা, আরে, দরজায় দাঁড়িয়ে কী অতশত ভাবছেন? ভেতরে আসুন। আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি।
রিচি কোথায়? নিতি কথাটা বলতে বলতে বাসায় ঢুকল।
শোভন জবাব দিল, বাড়িতে নেই।
আমার আসবার কথা তারপরও বাড়িতে নেই?
না।
আপনার মা?
রিচির সাথে।
তাহলে আমি উঠি।
আরে না না, ওরা এখনি চলে আসবে। আপনি ভয় পাচ্ছেন?

আচমকা প্রশ্নটা করে উঠল শোভন। নিতির মুখ পাণ্ডুর বর্ণ হয়ে গেল। যে কেউ দেখলে বুঝতে পারবে। মুখে ভয়ের চিহ্ন স্পষ্ট। প্রশ্নটা নিতিকে ভীষণভাবে নাড়া দিল। ভাবিয়ে তুলল। আসলেই কী সে শোভন কে ভয় পাচ্ছে? শোভনকে বন্ধু ভাবা যায়, আবার যায়ও না। এত অল্প সময়ে এতকিছু ভাবার অবকাশ পাওয়া যায় না। ওর বাইকে উঠছি, যে কেউ যা তা ভেবে বসে থাকবে। তবুও, আমি তো জানি, আমাদের মধ্যে বলার মতো কোন সম্পর্কই এখনো দাঁড়ায় নি। নিতি নিজের মনকে শক্ত করল। স্বাভাবিক হয়ে বলে উঠল, ভয় পেতে যাব কেন? আপনি বাঘ না ভাল্লুক? নিতি হাসল।

আমিও তো তাই বলতে চাচ্ছি? আমি বাঘও না ভাল্লুকও না, তবে পালাতে চাচ্ছেন কেন?
মোটেও না, পালাব কেন? রিচিকে পড়াতে আসি, সে নেই চলে যাওয়াটা স্বাভাবিক?
হয়তো, হয়তো না?
বাদ দেন, এখন বলুন তো রিচি এ সময় বাইরে গেল কেন?
রিচির হাত একটু কেটে গেছে।
হাত কেটে গেছে, কীভাবে? নিতির চোখেমুখে আতঙ্ক।
লেবু কাটছিল। জুস করবে, আপনার জন্য। হঠাৎ হাত ফসকে বটিতে।
ইশ্ কী বলেন! আমার জন্য? না না, আমার ভীষণ খারাপ লাগছে।
লাগাটা স্বাভাবিক।
কোথায় ডাক্তার দেখাতে গেছে? নিতির কণ্ঠে উৎকণ্ঠা!
পাশের গলিতে, একটা ওষুধের দোকানে একজন এমবিবিএস বসে মা তার কাছেই নিয়ে গেছে?
অনেকটা কেটে গেছে, বেশি রক্ত পড়েছে?
না না, কেটেছে সামান্য, রক্ত বেশি পড়ে নি, তবুও ডাক্তার দেখান দরকার।
হ্যাঁ, দেখান দরকার। ভালো করেছে নিয়ে গিয়ে।
আপনি কী খাবেন বলুন। আচমকা কথা পাল্টে প্রশ্নটা করে বসল শোভন।

আরে না, আমার জন্য ব্যস্ত হবেন না। রিচি একবার হাত কেটেছে, আপনাকে আর আঙুল কাটার দরকার নেই। কথা কটা বলতেই নিতি জিভে কামড় দিল। এমন সময় কথা বলতে বলতে রিচি ঘরে ঢুকল, পেছনে মা। সদর দরজা খোলায় ছিল। ডাক্তার দেখিয়ে ওরা সরাসরি চলে এল ড্রয়িং রুমে। নিতি একটা দূরত্ব রেখে শোভনের পাশে বসে ছিল।

রিচিকে আসতে দেখে উঠে দাঁড়াল। একটু ক্লান্ত, একটু পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছে রিচিকে। নিতি রিচিকে বুকের ভেতর জড়িয়ে টেনে নিল। নিতির কান্না পেল, তাকে কিছু একটা করে খাওয়াবে ভেবে মেয়েটা হাত কেটে ফেলল? মানুষ ভালোবাসার কাছে ঋণী হয়ে যায়। চলবে