নীহার লিখন

নীহার লিখন

নীহার লিখনের ৫ কবিতা

প্রকাশিত : জুলাই ০২, ২০২০

কবিতা

একটা ভূখণ্ড দিয়ে যেতে পারি, মনে হতে পারে এ তেমন কিছুই না; আস্বাদ ভরা বর্ণিল বহুরূপতার এই জীবনে, অজস্র লভ্যতায় বরং মনে হতে পারে সাদামাটা একটা মধ্যাহ্ন ভোজের বাটিটা, কিংবা একটা নিরবিলি, নিরবচ্ছিন্ন ফাঁকে শস্যের কাটা মাঠ

ক্ষুতপিপাসার দিনে ধরো এক বিশুষ্ক লতায় ঝুলে আছে কোনো বাদামি ধুন্দল, নিচে আগাছার জমিটাই যদি হয় কবিতা আমার, উদাহরণের বাতাসে তাতে দুলে উঠবে মহাকাল, যাবতীয় অপেক্ষার নবত, তুমি টের পাবে মুক্তি ও মোহের যীশুকে আরও একটা বার, শহরতলীতে বসা কামারটার মতো আর একটা দিন

মৃত্যুর চর জেগে উঠে চিরদিন জলের কিনারেই, এসত্য জেনেছি বলেই আমি বিবর্ণ ফুল ভালোবাসি, ঝড়ের বিকেলে দেখেছি মর্মর গানের মতোই উড়ছে সব শুকনা পাতারা; আমার কবিতা

বক

কোলাহলে তোমার সাদা উপস্থিতিতে আমি সমস্ত রঙ ভুলে যাই, মনে হয় পা দুটো তোমার অচলায়তন ভেঙে দিচ্ছে পৃথিবীর, নড়ে উঠছে স্থিতি জরতার সব সহসা চলন, অপেক্ষার তীরে বসে আছে কেউ, যার ছায়াটা কেটে ফেলছে কোনো আলোর সম্ভ্রম, লাস্যময় ভ্রান্তির দিন

মিথ্যে সঙ্গীত ও মুখরতা প্রধান জগতে কতকাল পার হয়ে গেল কিছু না দেখেই; মামুলি গাছ অথবা মাছ, হাসি ও কমল, তবু মনে হয় সদ্ভাব আছেই আমাদের

তোমার আঙুলে যেন চিরকালই জমে আছে স্মৃতি আর স্পর্শারহিত কোনো সোনালি পালকের পাখিরা, হৃদয়টা কেটে রাখি চঞ্চুতে তাদের, ধন্য হই, মরি, উড়ি, আকাশ ভালোবাসি, ভাবি তারাদের পতনের ইতিহাস থেকে কোন ঘটনাটা অপুষ্পক গুল্মের শরীরে আর্দ্র হয়, সেটাও কি কোনো গন্দম, তবে তার রং কী!

এমনই বোধহয়

হলুদ কোটার এক মেশিন ঘরের পাশে গলিটার রাস্তার মতো, শিরায় আমার অবিরত, একটা গন্ধে থেকে যায় কেউ, নিয়ত বদলে যাওয়া ভূগোল জুড়ে, ছবি হয়ে রয়ে যায় একটা প্রাচীন রঙ, শুকিয়ে যাওয়া কোনো রক্তের মতো; কালশিটে দেহের প্রদীপ, সলতের জায়গায় কালো হয়ে থাকে এক ক্ষত, বয়সী গাছের বিদগ্ধ চামড়ায় জমা অলক্ষ্যে অজস্র ফার্ন, ঝিরিঝিরি বাতাসের নিরিবিলি দুলদুলে মোচড়ে উঠছে এক চিনচিনে বিদল সময়, বিস্মরণের ঝোপে দেশজ পাখি, দুপুরের অবসাদ, মিশে যায় গ্রীষ্মে, সব কথা, সব অনুনয়

এমনই বোধহয়, দূরাগত দিনে হাতরানো এক দিন থাকে মানুষের, গন্ধ ও দাগের

এমনই বোধহয়, বিগ্রহে হাত পেতে পুড়ে যায় ধুপ, বৃষ্টির মাঠ থেকে চিরদিন সরে যায় জল

পৃথিবী

দূরে কোনো সাশ্রয়ী পোতাশ্রয় থাকলে চলে যেতাম; কবে থেকেই এমন ভাবনা নিয়ে ঘুম ভাঙে মাছের মতো, যেন শ্যাওলাঘন জেটিতে কলজে পোড়া জাহাজ, ফেনায়িত দুপুর যেন করাতের মতো দাঁত নিয়ে লবণ ছিটানো জলে চিড়ে  যাচ্ছে পিঠ জীবনের সমস্ত ভারে; যেন কেউ পেটে বসে বাজাচ্ছে সেঁতার, যার পেয়ালাতে বর্ণিল সব সম্পাত তুলছে মদিরা, ঝলকের নারী, কুঠুরিতে সাদাকালো রঙ নিয়ে দেখছি দ্রাঘিমা ও অক্ষের যতি, একটা প্যাঁচার মতো বিশালতার এ জীবনে কেবলই জমছে অভিসার, উড়ে গেছে হিরামন পাখি

দূরে কোন ঝাউগাছ পেলে থেমে যেতাম, এমন ইচ্ছা নিয়ে কতদিন ভেবেছি হৃদয়, আঙুরের মতো করে সুউচ্চ দালানের ঝারবাতি রেখেছি সরিয়ে কত মোহনীয় রাতে, শরীরের আগড় পুড়িয়ে নিভে গ্যাছে সুগন্ধি কাঠি, অবশিষ্ঠ ধোঁয়া ও ছাই মনোবাসনার সব মুরতির গান গেয়ে গ্যাছে বিদানের

পৃথিবী, ও আমার লীলাবতী সুডৌল নারী, ব্রোথেল থেকে তোমারও মুক্তি নেই জেনো! যেমন আমিও পাই না কোনো পোতাশ্রয়, কোনো ঝাউগাছ

বিভ্রম

এক শূন্যতা; দাবানলে যেভাবে পাতারা সামিল হয় আপনা দহনে; সব পোড়ে, তবু এক বিভ্রম সোনালু গাছের মতো পড়ে থাকে

কিসের দোহাই থেকে অদ্ভুত হও তুমি এমন এক মন! শরীরে আমার কত ইতিহাস বাসা বেঁধে আছে, তবু এক মারণাস্ত্রে বেধেছো রসি! মহীরূহকাল আমি পেতে আছি সমস্ত অপেক্ষায় একটা চাতক, ডানা খসে গেল, ঠোঁটে নিভে যাচ্ছে, তারার ছায়ায় পাওয়া সামান্য আলো, তবু কাতরতা খুলে নাই নরোম সাকিন; দুটো স্তনের চিরল

মেঘগুলোর মতো যাকে দেখছি চিরটা দিন খুব শিয়রে, যেমন কিছু সবজি বড় করেছি আমি সবুজ সবুজ, তাতে কুয়াশার ঝিলিক ফলেছে কারও পাহারার চোখের মতো; কোলাজের সাদাকালো সময় থেকে

যেন একটা নিয়ম তুমি সংবেদে ঢুকিয়ে রেখে, নিশানায় রেখে গেছো কোনো হারপুন, আর আমি ভাবছি সমুদ্রটা আমার, যার বিশালতা আছে বলেই এই শরীরটা আমার আজো স্ফীত, বেঁচে আছে শরীরের মতো!

কবি পরিচিতি: জন্ম ৩ অক্টোবর, শেরপুর। ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। পেশা: অধ্যাপনা (মার্কেটিং)। প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে, ব্রহ্মপুত্র, আমি আপেল নীরবতা বুঝি ও পিনাকী ধনুক। সম্পাদিত ছোটকাগজ: উৎপথ