অলঙ্করণ: রিফাত বিন সালাম

অলঙ্করণ: রিফাত বিন সালাম

পত্রিকার স্বাধীনতা ও বর্তমান দুনিয়া

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৯, ২০১৯

পুরো দুনিয়া দাঁড়িয়ে আছে পুঁজিবাদী অর্থনীতির উপর। তাই পুরো দুনিয়াকে একই চোখে দেখার অভ্যেস করতে হবে আমাদের। আফ্রিকাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নাই। যারা দুনিয়ার ভিন্ন-ভিন্ন রাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্নভাবে দ্যাখে, তাদের দৃষ্টি একচোখা। আধুনিক অর্থনীতির ফল রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে ভিন্ন হলেও সামগ্রিকভাবে একই। পুঁজিবাদ ধীরে ধীরে আরো অন্ধকারে আমাদের ঠেলে দেবে, তাতে সন্দেহ নাই। যত দ্রুত আমরা বুঝে উঠব, আমাদের আগামী প্রজন্ম ততই দ্রুত মুক্তি পাবে।

শুধুমাত্র তথ্য প্রকাশের দায়ে সাংবাদিক জুলিয়ান এ্যাসেঞ্জকে গ্রেফতার করার মধ্য দিয়ে নিজেদের মডেল নিজেরাই ভেঙেছে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো। ইরাক যুদ্ধের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত যে পুরোপুরি ভুয়া ছিল, তা আর কারো অজানা নয়। এ্যাসেঞ্জের গ্রেফতার পুরো দুনিয়ার বাক-স্বাধীনতার সম্মিলিত চিত্রের একটা অংশ মাত্র, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। বাংলাদেশের সাগর-রুনী হত্যা বা ভারতের গৌরী লঙ্কেশ হত্যাও আলাদা কিছু নয়। তাই এ্যাসেঞ্জের ক্ষেত্রে আমাদের সমান প্রতিবাদ করা জরুরি। যদিও বাংলাদেশের সাংবাদিকরা সে নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামায় না। ফলে নিজেরাও মরে, সাথে অন্যদেরও মারে।

বাক-স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও আমরা এতদিন পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর উদাহরণ টানতাম, যা আমাদের দেখার ত্রুটি ছিল। ২০০৮ এর পর পুঁজিবাদী অর্থনীতি যে ধাক্কা খেয়েছে তার ফলে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো তাদের পোশাকি চরিত্র নিজেরাই উন্মোচন করছে।

একটু গভীরভাবে দেখলেই দেখা যাবে, দুনিয়ার মাত্র ৯% দেশে পত্রিকার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। ১৭% দেশে তুলনামূলক কিছুটা ভালো, ৩৫% দেশে পত্রিকার স্বাধীনতার নামে নানা জটিলতা আছে, আর ২৭% দেশে স্বাধীনতা প্রায় নাই এবং ১২% দেশে অন্ধকার। এই তথ্য দিয়েছে খোদ পু্ঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোই, আন্তর্জাতিক প্রেস ফ্রিডমের তালিকা তাই বলে। আফ্রিকার বাক-স্বাধীনতার দায় পশ্চিমাদের উপরেও বর্তায়। বাণিজ্যিক থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে কেউ স্বতন্ত্র নয়। আমরা এখনো এই অর্থনীতি চাইবো?

লেখক: কবি, কার্টুনিস্ট ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী