পাবলো নেরুদার দুটি কবিতা
বাঙ্লায়ন: খন্দকার ওমর আনোয়ারপ্রকাশিত : জুন ০৯, ২০২০
পাবলো নেরুদার জন্ম চিলিতে ১৯০৪ সালে। তিনি চিলির কবি, একজন দার্শনিক ও কূটনীতিক ছিলেন। তার রাজনৈতিক চিন্তা, চর্চা, প্রেম ও দর্শনে পরাবাস্তববাদী মনোভাব বেশ স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি কবি হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। স্প্যানিস, ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ তিন ভাষাতেই তার সমান দখল ছিল। ১৯৫০ সালে তিনি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার ও ১৯৫৩ সালে লেনিন শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। ৬৯ বছর বয়সে তিনি স্বভূমি চিলিতেই মৃত্যুবরণ করেন।
ভুলো না আমায়
যদি প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ
অপ্রতিরোধ্য মাধুরীতে রাঙিয়ে ভাবনার দিগন্ত
তুমি নিশ্চিত পৌঁছে যাও আমার শিয়রে,
যখন প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ
পুষ্পের ঘ্রাণে লতানো তোমার ঠোঁট
চুম্বন সিক্ত হয়ে আমায় খোঁজে,
প্রিয়তমা প্রেয়সী আমার,
সুপ্ত দাবানল ভিসুভিয়াস হয়ে সহসাই জ্বলে ওঠে—
হৃদয়তন্ত্রী বেয়ে শরীরে সংক্রমণ!
অনিঃশেষ-নিঃশ্বাসে অক্ষত অবিস্মৃতির নোঙর।
প্রেম বাঁচে মমতায়!
যত দিন রবো বেঁচে
দুজনে ভালোবেসে
এসো আলিঙ্গনে হই একাকার...
প্রতিদিন
প্রতিক্ষণ।
প্রিয়তমার মৃত্যু
যদি অকস্মাৎ হারাও তুমি
জীবনের তরী বেয়ে মৃত্যুর ওইপারে,
আমি একা বেঁচে রই,
দ্বিধাগ্রস্ত, পরাস্ত—
তোমার অন্তর্ধানের জীবন্ত সাক্ষী হতে চাই না প্রিয়তমা!
মানুষের কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত হলে পরে জেগে উঠি আবারো ভয়ংকর চিৎকারে,
কৃষ্ণ কদাকার পিঠের রক্তজবা ক্ষত মৃত্যুকে পাঠায় চির নির্বাসনে।
অযুত সাখিদের সাথে নিঃশব্দ কারাগারে
নিযুত সহবাসে সাজাই বাসর।
পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের ক্ষণ আসে ডামাডোল সাথে নিয়ে,
যদিও মূক ও বধির আমি!
তবুও উচ্চাঙ্গ আর উচ্চারণে সহসাই হয়ে উঠি সরব,
বিজয় দিনের প্রথম আলোকচ্ছটা মেখে নিয়ে
হয়ে উঠি আরেক অন্ধ যুধিষ্ঠির!
আমায় ক্ষমা করো তুমি, প্রিয়তমা,
তোমার অকাল প্রয়াণে ক্রন্দনরত ঝরাপাতা—
অবিরাম ঝরে পড়ে বুকের গহীনে,
দিবারাত্রির অবিশ্রান্ত বর্ষণে আত্মার শুদ্ধি ঘটে,
বরফের কুণ্ডলিও অগ্ন্যুৎপাত হয়ে জ্বলে হৃদয়ের তন্ত্রীতে,
পদব্রজে পাড়ি দেই দীর্ঘ তুষারপাত আর বজ্র লেলিহান শিখা,
চারদিকে মৃত্যুর হিমঘর,
খুঁজে ফিরি তোমাকেই,
ধেয়ে চলি মৃত্যুর সোপান বেয়ে তোমারই সমাধি পানে...
আমিই শুধু বেঁচে গেছি—
অদম্য-অজেয় মৃত্যুঞ্জয়ীর এই বেশ—
সে যেন তোমারই ভাস্কর্যের আদলে গড়া এক নিপুণ কারুকাজ!
ওগো প্রাণপ্রিয় প্রেয়সী আমার,
তুমি তো জেনেই গেছ,
নিঃসঙ্গ এই মানবজন্ম আমার সার্থক হলো আজ।
























