প্রাচ্য তাহেরের ৫ কবিতা

প্রকাশিত : জুলাই ১৭, ২০২০

মুখোশ

মায়ের মুখের মতো কোনো এক ছায়া এসে পড়ে
আমি তার সাথে হাঁটি কিছু পথ
পথের অনেক মানে, জীবন খুঁড়ে তা তুমি জেনে নিতে পারো

জীবন আড়াল করে ঢুকে গেছি এই শহরে
মুখস্তবিদ্যায় এখনও আমি শিক্ষার্থী, তাই ভর্তি হই পাঠশালায়

বাইরে মেঘের ছায়ায় বসে মা
হিসেব করেন নদী আর সূর্যের বয়েস।

আমি পাঠ করি সম্পর্কের কূটকৌশল
আর জেনে নিই, কত রকমের মুখোশ আছে
মানুষের মুখে।

প্রকৃতির ছন্দ

চোখ থেকে চোখে পাঠাও যে ভাষা
কী মানে তার বলো কীর্তিনাশা?

উড়াও যদি এক দলছুট মেঘ
ঘাড়ে ধরে বলবে, কবিতা লেখ।

কবিতার অক্ষরে কাকে তুমি আঁকবে?
সন্ধের রঙছবি তোমাকেই ডাকবে।

পাশে ছিল নদী আর ছিল তার ছায়া
নদী তুমি ছেড়ে যাও বিষাদের মায়া।

মেঘ ডেকে ঘরে তুলি ভেজা এক সকালে
বৃষ্টির শব্দে কাকে কাকে জাগালে?

বাগানের বুকে থাকে বৃষ্টির গন্ধ
জঙ্ঘায় নেমে আসে প্রকৃতির ছন্দ।

বৃষ্টি

বৃষ্টি হবে। মাতাল বৃষ্টি।
আকাশজুড়ে মেঘের হুড়োহুড়ি
মেঘ নেমে আসে... ভেসে যায় তোমার ধূসর আঙিনা

আজ বৃষ্টি হবে। আগুন বৃষ্টি।
রাত্রির নিশ্চিদ্র মৌনতা ভেঙে, ওষ্ঠপটে ধ্যান
ভিজে যায় একান্ত অভিজ্ঞতা
                      গৃহসাজ
এখন বৃষ্টি হচ্ছে। উৎসবমুখর বৃষ্টি
রাত্রশেষে যুগল স্নানপর্বে রচিত হয় গোপন উন্মাদনা
মৃত নদীরা এসে ছুঁয়ে যায় আমাদের শরীর
হাতের ওপর হাত
সারাক্ষণ বৃষ্টি! কী অবিরাম বৃষ্টি... ওহ বৃষ্টি
শ্রাবণে শ্রাবণে বহু মেঘ জমে আছে আকাশে
অপেক্ষায় থাকো
স্বপ্নভোর...
তোমার জন্যে আরও একটি রাত।

বুকের ভেতর অন্ধকারে

ছাদের পাশে দাঁড়ালে কার যেন ছায়া কথা বলে ওঠে
পাশের বাড়ির হুলোবেড়াল
                    লাফিয়ে নেমে যায় আরেক ছাদে
সবুজ বনের অন্ধকার থেকে কে যেন ডেকে ওঠে, এই যে এখানে...

দুপুর ঝিমিয়ে পড়েছে
লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে এসেছে পুলিশ
ছুটে গেল অ্যাম্বুলেন্স, আহা!
কার বাড়িতে আজ শোকের পার্বন হবে?

রোদ তোর চোখটি কোথায়, টবের গাছে
ঝুলছে কি ফুল?
পারুল বুঝি! আয়না দেখে আয়না দেখে আয়না দেখে
চিনতে পারিস?
বুকের ভেতর অন্ধকারে ফুটছে যে ফুল

আয়না দেখে স্নানের পরে
চিনতে পারিস রোদের সে মুখ?

মেঘের চিহ্ন

মেঘের চিহ্ন এঁকে মুখ তার কালো
আমায় দেখতে পেয়ে কিছু চমকালো!

পাতার আড়াল থেকে রোদ নেমে এলে
সোনার মোহর কিছু হাতে হাতে মেলে।

তবু তো ঘোরের ধ্যান ভাঙেনি আমার
দরকার ছিল নাকি এভাবে নামার?

নেমে যাব? এই মন করেনি বারণ
পাহাড় পেরিয়ে এলে, এই কী কারণ!

উঠোনে ঝলসে ওঠে রোদজ্বলা খাঁচা
ভিটেমাটি ঘাসবন! এই হলো বাঁচা।