প্লট দুর্নীতির মামলায় হাসিনা-জয়-পুতুলের বিরুদ্ধে ৩ বাদীর সাক্ষ্য

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : আগস্ট ১১, ২০২৫

ঢাকার পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পে ৩০ কাঠা প্লট বরাদ্দে জালিয়াতিতে দুদকের করা পৃথক ৩ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ৩ মামলার ৩ বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

সাক্ষীরা হলেন: শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন, পুতুলসহ ১৮ জনের মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া ও জয়সহ ১৭ জনের মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক এস.এম. রাশেদুল হাসান।

সাক্ষীরা বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে অন্য আসামিরা সহযোগিতা করে।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদ ও দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, পৃথক ৩ মামলায় ৩ বাদী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিরা পলাতক থাকায় তারা আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৬ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে।

এর আগে ৩১ জুলাই পৃথক ৬ মামলায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে গঠন করেন আদালত। এর মধ্যে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন আসামি শেখ হাসিনা পরিবারের তিন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১১ আগস্ট এবং ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম আসামি শেখ রেহেনা পরিবারের তিন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৩ আগস্ট দিন ধার্য করেন।

এসব মামলার অন্য আসামিরা হলেন: শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক।

শেখ পরিবার ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন: জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানে দুদক জানতে পারে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার ছেলে-মেয়ে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকের নামে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে শেখ হাসিনা ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০০৯) বরাদ্দ পেয়েছেন। ২০২২ সালের ৩ অগাস্ট তার নামে রাজউক প্লটের বরাদ্দপত্র দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয় (প্লট নম্বর ০১৫) এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও (প্লট নম্বর ০১৭) ১০ কাঠা করে প্লট পেয়েছেন। জয়ের বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর দেওয়া হয় এবং ১০ নভেম্বর মালিকানা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। পুতুলের বরাদ্দপত্র দেওয়া হয় ওই বছরের ২ নভেম্বর। শেখ রেহানাও ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০১৩) বরাদ্দ পেয়েছেন। তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১১) এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১৯) নামেও একই পরিমাণের প্লট বরাদ্দ হয়েছে।

পরে চলতি বছরের ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে পৃথক ৬টি মামলা দায়ের করে দুদক। তদন্ত শেষে শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারার অভিযোগ আনা হয়।