একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ক্লাস

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ক্লাস

বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগ ও সিলেবাস নিয়া জরুরি আলাপ

জগলুল আসাদ

প্রকাশিত : জুলাই ২৩, ২০১৯

সিলেবাস তৈরির কাজটি খুব নির্দোষ ও অরাজনৈতিক কাজ নয়। আমরা কী শিক্ষা দিতে চাই তার সাথে সম্পর্ক আছে আমাদের ‘জাতি, রাষ্ট্র ও নাগরিক’ কল্পনা ও বাসনার। শিক্ষা, সিলেবাস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ideological state apparatus বা মতাদর্শ তৈরির কারখানা। আমাদের মনোজগত তৈরির পেছনে এদের ভূমিকা প্রবল।
 
ইংরেজির ছাত্র ও ‘মাস্টারি’র সুবাদে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের সিলেবাস নিয়ে কিছু জানাশুনার সুযোগ আমার হয়েছে। এ বস্তু নিয়া আমার আক্ষেপের অন্ত নাই। জগতের সবকিছুকে প্রয়োজনীয় ঠাওরানোর প্রয়োজন নাই বলিয়া অনার্স লেভেলের ইংরেজি সাহিত্যের সিলেবাসটুকুর বেশিরভাগই আমাদের জন্য অপ্রয়োজনীয়। এই সিলেবাসে ইংরেজিতে পড়েছি বলে গরিমা করা ছাড়া আজকাল আর কিছু করা যায় না।

নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো তো ইংরেজি বিভাগ উঠিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন, On the abolition of the English Department. আমি এতদুর বলতে পারবো না, রুটি-রুজির প্রশ্ন তো। তবে অনার্স লেভেলের ‘ইংরেজি সাহিত্যে’র সিলেবাসের ব্যাপক সংস্কারের পক্ষে আমি। চার বছরের ইংরেজি অনার্স কোর্স নানা আজিনিস কুজিনিস দিয়ে ভরা। (দেখুন থার্ড ইয়ারের ঢাউস গা-জ্বলা সিলেবাস)। তার উপর মাস্টারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিছুদিন পরপর সিলেবাস চেইঞ্জ করে মহান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

নম্বর বণ্টন, পরীক্ষা পদ্ধতি ও এই ব্যপারে শিক্ষকদের ক্ষমতায়নের নানামুখি বাহারি পরীক্ষা-নীরিক্ষার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ী প্রতিভায় চোখ অন্ধ হইয়া যাইবার জোগার। বিভাগীয় শিক্ষকগণ ইনকোর্সের ১৫ নম্বর উদারচিত্তে বিলিয়ে ছাত্রবান্ধব থাকেন। ভাইভায় ৮০-৯০% নম্বর মুড়িমুরকির মতো দিয়ে ছাত্র ও বিভাগের মান `উজ্জ্বল` ক`রে সমাজের হাতে তুলে দেন কিছু আজব জিনিস! বর্তমান সিলেবাস না ইংরেজদের বা ইংরেজি সাহিত্যের উপকার করতে পারে, না পারে আমাদের বা বাংলাসাহিত্যের কাজে লাগতে। তবে ভুয়া আত্নমর্যাদাবোধ তৈরিতে এর জুড়ি নেই।

ইংরেজি বিভাগগুলো ‘ইংরেজি সাহিত্য’ না পড়িয়ে ‘ইংরেজিতে সাহিত্য’ পড়ানোর ব্যবস্থা করতে পারে। যেমন, ইংরেজি কবিতার সিলেবাস তৈরির সময় বাংলা কবিতাও পাশাপাশি রাখা উচিত, তুলনামুলক বিশ্লেষণের জন্য। মাঝে মাঝে মনে হয়, এমন ব্যবস্থা হলে ভালো হতো, ইংরেজি সাহিত্য বা ইংরেজিতে অনুদিত সাহিত্য বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বাংলায় উত্তর লিখব আর বাংলা সাহিত্য নিয়ে লিখবে ইংরেজিতে। এতে ক্রিটিকাল ফ্যাকাল্টি ডেভেলপ করতে পারত দুই ভাষাতেই। একই সাথে বাংলা উপন্যাস ও ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষার কিছু উপন্যাসকে পাশাপাশি পড়ানোর ব্যবস্থাও তো করা যেতে পারে/পারত। তাছাড়া অনুবাদ নিয়েও একটা কোর্স থাকা উচিত। যেখানে বাংলা সাহিত্যের কিছু নির্বাচিত অংশকে ইংরেজিতে, আর ইংরেজির কিছু অংশকে বাংলায় রূপান্তর করতে হবে, সাথে অনুবাদের কিছু তত্ত্বও পড়ানো দরকার। তাছাড়া বিভিন্ন লিটারেরি টেক্সটের ফিল্ম এডাপ্টেশান দেখানোর পাশাপাশি দেশি ও বিদেশি নানা মুভিকে টেক্সট হিসেবে ‘পাঠ’ করানো যেতে পারে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে।

বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগগুলোতে কেউ পিএইচডি করতে গেলে তাকে থিসিস ইংরেজিতে লিখতে হবে এটাতো খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু মজাটা হচ্ছে, বাংলা সাহিত্যের সাথে বা এতদ অঞ্চলের কোন আর্ট ফর্মের বা ইতিহাসের সাথে কোনো তুলনামূলক আলোচনা করতে চাইলে একেকজন মুখ ভারি কইরা ফেলেন, বা রাজভাষা বা সাহিত্যের সাথে কি একটা অন্যায় হইবার অনাগত সম্ভাবনায় তারা আঁতকে ওঠেন। (যদিও কিছু ব্যতিক্রম তো আছেই)। আমাদের এই কলনিয়াল মাইন্ডসেট কবে চেঞ্জ হবে?

বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগগুলোকে বাংলাদেশেরই ইংরেজি বিভাগ হতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইংরেজি বিভাগগুলোকে কি তাদের জাতীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের পর্যালোচনা, নির্মাণ ও পুননির্মাণের চাহিদাকে মাথায় রেখে সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে না? ‘দিব আর নিব, মিলাব মিলিব’ এই নীতির বহিঃপ্রকাশ ইংরেজি বিভাগের সিলেবাসে কেন দেখবো না?

ইংরেজি বিভাগগুলো বর্তমানে যে হালতে আছে সেটা বাংলাদেশে আদৌ প্রাসংগিক কিনা এই প্রশ্ন কিন্তু করাই যায়। বাংলাদেশে ইংরেজি বিভাগগুলোর ‘রয়াল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক-শিক্ষার্থী’ হওয়ার এই আত্মঅহমিকা ছাড়া জ্ঞান ও উপলব্ধির বিস্তৃত দিগন্তের সাথে `হয় না কো দেখা`। বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগগুলোর কাজটা কি আসলে, বা কি হওয়া উচিত এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। বিশ্বসাহিত্যের জ্ঞান দিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে ব্যাখ্যা করা ও এগিয়ে নেয়া এই বিভাগের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। বাংলা ভাষা থেকে ইংরেজিতে, এবং ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা ও করানো হবে এ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ এসাইনমেন্ট। আজকাল ইংরেজি বিভাগকে ‘সংস্কৃতি অধ্যয়ন ও তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ; নামে পুনরায় নামকরণ করা হচ্ছে। কার্যক্ষেত্রেও এটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ, প্রাইভেট-পাবলিক সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই প্রযোজ্য হওয়া উচিত। বাংলাদেশের জন্য উপযোগী ও প্রয়োজনীয় শিক্ষাই বাংলাদেশে দেয়া উচিত, দেয়া দরকার। ‘জাতীয় শিক্ষার’ যে-ধারণা সেটা কিন্তু ফেলনা নয়।

দুই.
বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগগুলোতে ছোটগল্প অবহেলিত। অথচ ইংরেজি ছোটগল্পের এক দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আছে। অনার্স প্রথম বর্ষে ৬-৭টা ছোটগল্প ছাড়া আর কোনো ছোটগল্পই পড়নো হয় না। কোনো ইয়ারেই না। অথচ স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত উপন্যাস পাঠ্য প্রায় ২৩-২৪টি। নাটকও পাঠ্য সর্বসাকুল্যে ২৫-২৬টি। তবে শিক্ষার্থীরা এই নাটক বা উপন্যাসের সামারিই শুধু পড়ে। খুব হাতে গোণা দুই চারজন নভেল বা ড্রামা সম্পূর্ণ পড়ে। আমরা বেশিরভাগ শিক্ষকরাও বলিহারি। আত্মাত্মপ্রচার ও ভালো ভালো কথা বলে প্রাইভেট পড়ানোর ধান্দা, নিজের ব্যক্তিত্ব ও নোটের প্রতি আকৃষ্ট করা ছাড়া জীবনের আর `মহৎ কোনো সূর্যালোক` নেই (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি)। অনাগ্রহীকে আগ্রহী করে তোলা, জ্ঞান সৃষ্টি ও জানার প্রতি আগ্রহ কিংবা তা সৃষ্টির দায়বোধ দুরাশা মাত্র। পশ্চিমা দুনিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান বা জ্ঞানভাষ্য তৈরি হয় একাডেমিয়াতেই, মানে কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

যা বলছিলাম, প্রথম বর্ষে ছোটগল্প যে কয়টা পাঠ্য, সেগুলো পুরো ও সবগুলো পড়বে বা পড়ে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিন্তু বেশ ভালো। তাই নভেল আর নাটক কিছু কমিয়ে ছোটগল্পের সংখ্যা, বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা বাড়ালে ভালো হতো। সাহিত্যরুচি তৈরি করতে সিলেবাসও (পরীক্ষাপদ্ধতি তো বটেই) খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর ভাষা শেখার ক্ষেত্রেও এই সৃজনশীল ও মননশীল রচনাগুলোর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে।

তিন.
খুব ছোট একটা সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগগুলোকে কিছুটা উৎপাদনশীল বিভাগে রূপান্তরিত করতে পারে। খুব সহজেই ইংরেজি বিভাগগুলো জাতীয় জ্ঞানভাণ্ডারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার সুযোগ লাভ করতে পারে। পদ্ধতিটি বলছি:

অনার্স প্রথম ও দিতীয় বর্ষে অনুবাদ করার তাত্ত্বিক দিক নিয়ে হাফ বা ফুল কোর্স থাকবে। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৫০ থেকে ১০০ পাতা ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করতে হবে। এর জন্য থাকবে ১০০ বা ৫০ মার্কস। প্রতিবছর বাংলাদেশের পাব্লিক, প্রাইভেট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হাজার হাজার ছাত্র স্নাতক পাশ করে বের হয়। অনুবাদ নিয়ে বাধ্যতামূলক কোর্স থাকলে প্রতি বছর শত শত আর্টিকেল বা প্রবন্ধ বাংলায় অনুবাদিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। একাধিক ছাত্রছাত্রী মিলেও কোনো বই অনুবাদের দায়িত্ব পেতে পারে। শিক্ষকগণ অনুবাদের ভালো-মন্দ যাচাই করবেন। এ মুল্যায়ন প্রক্রিয়ায় অন্য শিক্ষার্থীদেরও পাঠক হিশেবে যুক্ত করা যেতে পারে। প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থা থাকবে যেখান থেকে এই অনুবাদগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য লেখা বই আকারে প্রকাশ পাবে। যেমন University of Chicago press, Oxford university Press ইত্যাদি। সম্ভবত পশ্চিমা প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন প্রেস আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও আছে। তবে বেহাল দশায়। আসলে সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজেদের নামে প্রকাশনা হাউজ থাকা উচিত। আপাতত যদি তা সম্ভব নাও হয়, তবুও অনুবাদ প্রকাশ করার জন্য এখনো বাংলাদেশের কয়েক ডজন প্রকাশনা সংস্থা প্রস্তুত আছে। অনুবাদ প্রকাশে তাদের লাভও বেশি।

সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শন, ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব ইত্যাদি নানা বিষয়ে অজস্র ভালো ভালো বই ও আর্টিকেল আছে যেগুলো বাংলায় অনুদিত হলে আমাদের জানাশোনার দিগন্ত উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হবে। বাংলাদেশের প্রায় ৩৫টার উপরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৯০ এর অধিক প্রাইভেট য়ুনিভার্সিটি ও কয়েক শত অনার্স কলেজ থেকে যে পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী ইংরেজিতে প্রতিবছর স্নাতক হয়ে বের হয়, তাদের সবাইকে যদি কিছু-না-কিছু পরিমান অনুবাদ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করানো যায়, তবে বিশ্বসাহিত্য বা বিশ্বজ্ঞানের এক বিপুল ভাণ্ডার খুব সহজেই বাংলায় অনুবাদিত হয়ে যাবে। সিলেবাসের এই `সামান্য` পরিবর্তনে জাতি বিপুল উপকৃত হতে পারে। আমাদের মহান নীতিনির্ধারকদের মগজ কবে যে আরেকটু বিকশিত হইবে!

আমাদের সরকারি কলেজের মাস্টারদের সরকারি আইন-কানুন আর হিশাব-নিকাশের উপর হাবিজাবি নানা পরীক্ষা দিতে হয়; এটা না করে নিজ বিষয়ে অনুবাদ বা আর্টিকেল প্রকাশের সংখ্যা দিয়ে যদি পদোন্নতি ও বেতনবৃদ্ধি, গ্রেড উন্নয়নকে শর্তাধীন করা হতো তবে শিক্ষাক্ষেত্রে নজড়কাড়া পরিবর্তন আসতো বলে মনে করি। সবকিছুতেই ফাঁকফোকর থাকে, আর সেই ফাঁকফোকর মেরামতের উপায়ও আছে নিশ্চয়!

চার.
কত অবহেলায় যে আমাদের পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়, কত অদূরদর্শিতার যে বাম্পার ফলন এ দেশে, তা বলে ফুরানো যাবে না। ভারিক্কি বিষয়ে ভরা হলেও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের যে ইংরেজি বইটি পাঠ্য ইদানীং, তা এমনিতে তেমন খারাপ নয়। কিন্তু পরিশ্রম আর অন্তর্দৃষ্টির ঘাটতি আছে, উদ্দেশ্য ও ভিশনে অস্পষ্টতা আছে আর দেশের কলেজ পর্যায়ের, বিশেষত গ্রাম ও মফস্বলের, শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে রয়েছে নিদারুণ অজ্ঞতা।

খুব দরকার ছিল English For Today নামক বইটির শেষে বইটিতে ব্যবহৃত কঠিন ও আপাত কঠিন শব্দগুলোর একটি তালিকা দেয়া, যাতে শিক্ষার্থী তার এরই মধ্যে আয়ত্ব করা শব্দভাণ্ডার সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারে, বারবার দেখতে পারে ও মনে রাখতে পারে। এ কাজটি কঠিন ছিল না, জাস্ট একটু পরিশ্রম দরকার ছিল। খুব সম্ভবত ক্লাশ সিক্স পর্যন্ত ইংলিশ ফর টুডেই বইটিতে ওয়ার্ড লিস্ট ছিল, কিন্তু পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে তারা এটাকে যে যুক্ত করা প্রয়োজন মনে করেন নাই, তা উদ্দ্যেশ্যপ্রণোদিত ও অদূরদর্শী। তাছাড়া বইয়ের পেছনে প্রশ্নের ধরণটি দেয়া থাকলেও শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারতো এই সরকারি পাঠ্যপুস্তক থেকেই। কিন্তু এখন তাদের নির্ভর করতে হয় বাজারের গাইড বইগুলোর উপরে। অথচ এই পাঠ্যবইটি থেকেই আরো বেশি উপকার হাসিল করা সম্ভব ছিল।

আমি ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র হিশেবে ইন্টারে আলাদা করে আইটেম ওয়াইজ গ্রামার পড়ানোর পক্ষপাতি নই। বরঞ্চ দরকার ছিল, প্রথমপত্র হিশেবে ব্যবহৃত বইটিতে থাকা প্যাসেজগুলো থেকেই গ্রামার সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে পরিচিত করানো, ভাষার ভেতর থেকেই ভাষার অন্তর্নিহিত নিয়মগুলো শিখানো। English For Today বইয়ের পেসেজ থেকেই পড়ানো দরকার ছিল রাইট ফর্ম অব ভার্ব, প্রিপোজিশান বা সেন্টেন্স স্টাকচারগুলো, দরকার ছিল সেই মতো প্রশ্ন করাও। ইংলিশ ফর টুডেই বইটিতে প্যাসেজসমূহ এমনভাবে বাছাই করা দরকার ছিল যাতে ইংরেজি ভাষার প্রায় সমস্ত নিয়ম, বৈচিত্র্য ও নানা নুয়ান্সেসগুলো তাতে ধরা থাকে। মানে ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র উভয় ক্ষেত্রেই English For Today বইটিই থাকা দরকার ছিল সর্বাগ্রে, একেবারে কেন্দ্রীয় গুরুত্বে যাতে ইংরেজি ভাষায় পড়তে পড়তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেন্স অব ল্যাংগুয়েজ গড়ে ওঠে, টনটনে ভাষাবোধ তৈরি হয়। ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে পরীক্ষা ও ভাষাশিক্ষাসংক্রান্ত সমস্তচর্চা ও অনুশীলন এই বইটি ঘিরেই হওয়া উচিত ছিল। সেক্ষেত্রে বইটির সংকলক ও লেখকদের দরকার ছিল আরো পরিশ্রমী অভিনিবেশ ও দায়িত্বশীলতা। পাঠ্যপুস্তক লেখা যে একটি জাতীয় গুরুদায়িত্ব এবং রাষ্ট্রকে গড়ে তুলবার অন্যতম গোড়ার কাজ, এই আক্কলটুকু না হওয়া নিদারুণ দুঃখের!

লেখক: প্রাবন্ধিক ও চিন্তক