বাবরি মসজিদের রায়টা খুব পষ্ট

তুহিন খান

প্রকাশিত : নভেম্বর ১০, ২০১৯

বাবরি মসজিদের রায়টা, খুব পষ্ট। মূলত রায়ট দিয়াই রায় পকেটে আনতে হয়— লিবারালিজমের বিরোধীদের এই দাবিরেই আরো একবার পোক্ত করলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ১৯৯২-এর ভারতেরই অফিশিয়াল জয় হইল এই রায়ে। তথাকথিত সেক্যু-লিবারাল ভারতেরও অফিশিয়াল ইতি ঘটলো।

এই রায়ের পরেও, মুসলমানদের শান্ত থাকা লাগবে। জুলুম থেকে জুলুমই উৎপাদন হয়— মক্কা বিজয়ের দিন এই রাষ্ট্রধারণার মূলে আঘাত করছিলেন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যদি জুলুম থেকে জুলুমই উৎপাদন হয়, তাইলে ইসলামের কোনও নৈতিক গুরুত্ব আর থাকে না। এইসব অবশ্যই মুসলমানদের খেয়াল রাখা দরকার।

কিন্তু এমন একটা রায়ের পরে `মসজিদ নয়-মন্দির নয়, মানুষই সত্য`টাইপের লিবারাল বুলি যদি আপনি আওড়াইতে থাকেন, তা আসলে কোনও কাজের না। তালগাছ ঠিক রাইখা মানবতার আলাপই যে লিবারালিজম, এইটা এখন সকলেই বোঝে। তাই তালগাছের আলাপটুক করা লাগবে, খালি মানবতার আলাপে আর হবে না এখন।

কেউ কেউ বলছেন, বাবরের নামে মসজিদ থাকলেই কী, না থাকলেই কী? তারা এইখানে একটা নিরেট রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নরে, একটা জুলুমের প্রশ্নরে, স্রেফ ধর্মীয় নৈতিকতার আবরণে মুড়ায়ে `পরাজিত` মোসলমানদের সান্ত্বনা দিতেছেন। বাবর মদ-গাঁজা খাইতেন বইলা, তার নামে বানানো মসজিদ ভাঙা ভ্যালিড হয় না— এতটুক রাজনৈতিক বোধবুদ্ধি থাকা জরুরি।

বাবর খারাপ ছিল, তার নামে মসজিদ কেন— এসব প্রশ্ন অবান্তর। খুঁজলে আরো বহু `খারাপ` লোকের নামেই মসজিদ ও মন্দির পাওয়া যাবে। আপনার প্রশ্ন করতে হবে বাবরি মসজিদ ভাঙার জন্য উত্তেজিত জনতারে, তাদের আদর্শরে, ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় বিতর্কের নিষ্পত্তিতে সেক্যুলার আইনের সীমাবদ্ধতা, এখতিয়ার ও পক্ষপাতিত্বরে, রায়ট দিয়া ফয়সালা হওয়া রায়রে। তা না কইরা আপনি যদি মুসলমানদের শিখাইতে আসেন যে, `বাবর তো অনেক খারাপ, ওর নামে মসজিদেরই কী দরকার?`, তাইলে সেইটা আসলে কোনোকিছুই মিন করে না, এক ধরনের কূটালাপের মতো শোনায়। মানুষের রাজনৈতিক অধিকারের মামলারে ধর্মীয় নৈতিকতায় রাইখা বিচার করতে গেলে, সামনে বহু ইস্যুতে আপনারাই আবার ধরা খাইবেন।

অবশ্য এই কথার জবাবে একজন বলছেন, দুনিয়ায় যে ধর্মের অন্ধ অনুসারীদের জন্য সবচাইতে বেশি হানাহানি, তাদের নাকি একটু বেশিই শুনতে হবে! মানে, যেহেতু `অন্ধ মুসলমানরাই` সবচাইতে `বেশি হানাহানি` করে, ফলে যেখানে তারা হানাহানি কম করবে, বা প্রায় করবেই না; যেখানে তাদের উপর জুলুম করা হবে, সেইখানেও তাদেরই বেশি কথা শোনা লাগবে।

আমাদের লিবারাল থটের এই হইল অবস্থা। যেমন, কংগ্রেস এই রায়রে স্বাগত জানাইছে। তাইলে কংগ্রেসের আর দরকার কি দুনিয়ায়? নাই তো। বিজেপিই ওইসব কাজ ভালো পারবে বরং। ফলে লিবারালরা আর কিছু দিতে পারবে না দুনিয়ারে। নতুন দুনিয়া হবে মডার্নিজমের খোলসভাঙা নয়া মানুষের।