বাস্তব সত্য, গল্পকথা নয়

ইলিনা হক

প্রকাশিত : মার্চ ২২, ২০২০

আমাদের পৃথিবীতে দু‘ধরনের মানুষ বেশি দেখা যায়। আস্তিক ও নাস্তিক। আস্তিকরা যেমন ধর্মে বিশ্বাসী তেমনি নাস্তিকদের কাছে ধর্মের কোনও অস্তিত্ব নেই। ধর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট ইতিহাস নিয়ে অনেকে আবার হাসি তামাশাও করে। তবে নাস্তিকরা যতই তা নিয়ে মজা করুক না কেন, নানা ধর্ম সংশ্লিষ্ট সভ্যতাগুলোর সুস্পষ্ট প্রমাণ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আবার নাস্তিকদের মধ্যে একদল গবেষক আছে যারা ধর্মকে ঠিক অস্বীকার করে না, তবে অন্যভাবে তা দেখার চেষ্টা করে।

পৌরাণিক গল্প-কাহিনিতে আমরা অতিপ্রাকৃত শক্তি আর অতিমানবদের বিষয়ে পড়েছি। হতে পারে সেটা গ্রিক ইতিহাস, ভারতীয় ইতিহাস, মায়ান সভ্যতা, ব্যবিলনীয় সভ্যতা, মেসোপটমিয়া সভ্যতা অথবা নাম না জানা অন্য কোনও সভ্যতা। কখনো কখনো বললে ভুল হবে বেশির ভাগ সময়েই মনে হয়, এগুলো অতি মাত্রায় রসালো করে লেখা গল্পকথা। তবে একদল গবেষক মনে করে, এগুলো সব বাস্তব সত্য। কোনও গল্পকথা নয়।

পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন, বাইবেল ও তাওরাত দিয়েই শুরু করি। এসব ধর্মগ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পারি, আল্লাহ তায়ালা যুগ যুগ ধরে পথভ্রষ্ট মানুষদের সঠিক দিক-নির্দশনা দেয়ার জন্য নবি পাঠিয়েছেন, ওহি নাযিল করেছেন। ফেরেশতারা তাঁদের কাছে আল্লাহর দূত হয়ে এসেছেন সঠিক বাণী নিয়ে। আর এখানেই সেসব গবেষকদের দ্বিমত।

সৌরজগতের বিশালতা আমাদের কল্পনার অনেক বাইরে। আমরা জানি না হয়তো জানতেও পারবো না আমাদের মতো প্রাণী সৌরগজতের আর কোথায় কোথায় আছে। সেসব গবেষকদের মতে, এলিয়েন বা অন্য গ্রহের প্রাণীর সাথে সকল নবির যোগাযোগ ছিল, যাদের আমরা ফেরেশতা বলি। তারা তাদের পছন্দ মতো মানুষদেরকে তাদের জীবনধারা শিখিয়ে যেত ভুল পথে চালিত মানুষদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে অতিমানব হযরত মোহাম্মদ (স.) এসেছিলেন আলোর বাণী নিয়ে। একজন লেখাপড়া না জানা যুবকের পক্ষে এত চিন্তাভাবনা করা স্বাভাবিক ব্যাপার না বলে তারা মনে করেন।

এমনকি উনার মেরাজ গমন করাটাও সত্যি ঘটনা। উনাকে এলিয়েন বা extra-terrestrial being যাদের বলা হয় তারাই মহাকাশ ভ্রমণ করিয়েছিলেন উনার আদর্শ আর ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে। হযরত মুসার (আ.) সাথে আল্লাহর সাক্ষাৎ, বন্যার সময় আল্লাহর নির্দেশে নূহর (আ.) মানুষ আর পশু নিয়ে বেঁচে যাওয়া, ইব্রাহিমের (আ.) সন্তানকে কোরবানি দেয়া ইতিহাসের সাথে ভিন্ন জগতের বাসিন্দাদের যোগসূত্র আছে বলে তারা scientific ব্যাখ্যাও দিয়েছেন যথেষ্ট পরিমাণে। এমনকি আজকাল ভ্রুণ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে কুমারী মেয়েরাও মা হতে পারে, সেটাও নাকি এলিয়েনদের প্রয়োগ করা প্রযুক্তি মরিয়মের (আ.) উপর সেটা তাদের দাবি।

সেসব গবেষকরা আরো মনে করেন, হিন্দু পুরাণের সব দেবতাদের অস্ত্বিত ছিল। মহাদেব, কালী, কানাই মিথ্যা নয়। তবে সংশয় হলো, তারা নিজেরাই কি এলিয়েন ছিলেন নাকি তাদের মনোনীত মানুষদের শক্তি আর প্রযুক্তি দান করেছিলেন। আরো নতুন উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ১৯১৩ সালে ভারতের এক প্রত্যন্ত এলাকার যুবক রামানুজ যুগান্তকারী এক অংকের সূত্র পাঠিয়েছিলেন ক্যামব্রিজের এক শিক্ষকের কাছে। কথিত আছে, রামানুজকে এক দেবী স্বপ্নে এই সূত্র দিয়েছিলেন যা একটু অস্বাভাবিকই। গবেষকরা মনে করে, সেই দেবী ভিন্ন গ্রহের মানুষ। আর্কিমিডিস, আইনস্টাইন, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি আর অনেক মনীষী এলিয়েনদের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন বলে তারা মনে করেন।

বিশ্বের নানা জায়গায় বিভিন্ন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ ঘেটে দেখা গেছে, অনেক মূর্তি পাওয়া আছে যেগুলোর আকৃতি মহাকাশযানের মতো। বিশেষ ভাবনার গবেষকদের ধারণা মধ্যপ্রাচ্যে সবথেকে বেশি আনাগোনা ছিল এলিয়েনদের আর তাদের সবথেক সুনিপুণ অবদান তারা রেখেছে হযরত মোহাম্মদের (স.) সাথে যোগাযোগ করে। গবেষকরা আরো মনে করে, অনেক ভিন্ন জগতের মানুষ খারাপ উদ্দেশ্য নিয়েও আমাদের গ্রহে এসেছিলো। হিটলার ও নাৎসির কার্যকলাপ আর জার্মানির বিভিন্ন গোপন ধ্বংসকারী অস্ত্রের ইতিহাস সেটাই বলে। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনেক নাৎসি নেতার হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়া চিরকালের জন্য প্রশ্ন জন্ম দেয় তারা কি পালিয়ে গিয়েছিল অন্য কোনও গ্রহে? হিটলারের আকস্মিক আত্মহত্যার কারণ কি, কোনও সত্যকে চেপে রাখার ক্ষমতা কি হারিয়ে ফেলেছিল সে!

আমদের ধারণার বাইরে এলিয়েনদের ক্ষমতা। আজ আমরা যা আবিষ্কার করছি যেমন নিউক্লিয়ার পাওয়ার, বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনিতে তেমনি রশ্মিজনিত অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায় যেগুলোকে নিউক্লিয়ার অস্ত্র বলা যেতে পারে। আমরা আজ যা ঘটা করে আবিষ্কার করছি তা হয়তো অনেক গ্রহে আরো কয়েক লাখ বছর আগে আবিষ্কার করা হয়ে গিয়েছিল। এমনকি এলিয়েনদের ক্রোধের কারণ স্বরূপ সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেছে বলে অনেকের মত। এমনকি প্লেগ আর করোনার মতো মহামারিও আমাদের জগতের মানুষদের উপর এলিয়েনদের এক ধরনের এক্সপেরিমেন্ট বলেও গবেষকরা যুক্তি দিয়ে থাকে।

কোল্ড ওয়ার চলাকালীন সময়ে আশির দশকে ইংল্যান্ডের এক বনের কাছে আমেরিকান বাহিনীর ঘাঁটি ছিল। একরাতে সেখান এক স্পেসক্র্যাফট দেখতে পাওয়া যায়। দুজন আমেরিকান সামরিক সদস্য সেটা দেখেছিলেন ২০১০ সালে। এ ঘটনা তারা হিস্ট্রি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে বলেন। একজন স্পেসক্র্যাফট স্পর্শ করার সাথে সাথে সেখানে এক আর ০ লেখা কোড আসে যা সে মনে রাখতে সক্ষম হয়। অনেক বছর পর সেই কোড একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার কোড করেন আর একটা দিক নির্দেশনা বের করতে সক্ষম হন। যেটা কিনা পরে দেখা যায় ব্রাজিলের এক প্রাচীন সভ্যতা। সেই দুই অফিসার সে ঘটনার পর চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল। এমনকি তারা দুজন ভয়ে মুখোমুখিও হতো না। প্রায় ত্রিশ বছর পর তারা সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়েছিল।

গবেষক দল আরো মনে করে, আগেকার মানুষদের কাছে এলিয়েনরা বেশি আসতো কারণ তারা তাদের দেবতা বা গড মানতো। তাদের আগমন নিয়ে প্রশ্ন না তুলে তাদের শক্তিকে ভয় করতো, প্রাধান্য দিতো। এখন এটা সম্ভব না, এলিয়েন নিয়ে আমরা সবাই কমবেশি জানি। তাই বলে কি এলিয়েনদের আসা যাওয়া বন্ধ আছে। তারা বলেন না। নাৎসিদের মধ্যে অনেকেই ভিন্ন জগতের বাসিন্দা ছিলেন বলে তারা মনে করেন জোরালোভাবে। এমনকি তারা এও মনে করেন, এলিয়েনর বা extra-terrestrial being রা আমাদের মাঝেই মিলেমিশে আছে।

উপরে এতক্ষণ আমি যা বললাম সব Ancient  Alien নামক ডকুমেন্টারি থেকে পাওয়া তথ্য। তবে একজন মুসলমান হিসেবে আল্লাহকে অস্বীকার করে এলিয়েনকে সর্বশক্তিমান মনে করা আমার জন্য কোনোভাবেই সম্ভব না। তার কারণটাও স্পষ্ট। এই এলিয়েন আর সৌরজগতেরও তো একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন আর তিনি আল্লাহ। আমরা পবিত্র কোরআনে জ্বিন আছে পড়েছি যারা আগুনের তৈরি, যেকোনো আকার ধারণে সক্ষম। আমি মনে করি, এই এলিয়েনরাই জ্বিন, বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী। তাদের সাহায্য নিয়েই নবিজি (স.) চাঁদে গিয়েছিলেন। তা না হলে উনি জানলেন কেমন করে চাঁদের মাঝে দাগ আছে। নীল আমস্ট্রং না গেলে সেটাও তো অজানাই থাকতো।

অতিপ্রাকৃত শক্তি নাকি এলিয়েনদের জন্মগত ক্ষমতা জানি না তবে পিরামিড দিয়ে সাধারণ মানুষদের দ্বারা তৈরি হয়নি সেটা সত্য। ছোটবেলায় শুনেছিলাম ফারাও রাজারা জ্বিন বশ করে রাখতো আর তারা পিরামিড তৈরি করে দিয়েছিল। হাজারো বছরের অজানা প্রশ্ন অজানাই রয়ে যাবে হয়তো। এই মহাকাশ, সৌরগজৎ বড় রহস্যময়!