বিখ্যাত লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের আজ জন্মদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : জুলাই ১৯, ২০২৫

জনপ্রিয় সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেনের আজ জন্মদিন আজ। সেবা প্রকাশনীর কর্ণধর হিসেবে তিনি ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামক গুপ্তচর চরিত্র সৃষ্টি করেন।

এর কিছু আগে কুয়াশা নামের আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তার হাতেই জন্ম নিয়েছিল। কাজী আনোয়ার হোসেন ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নাম ব্যবহার করতেন।

কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্ম নেন। তার পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম ‘নবাব’। তার পৈত্রিক নিবাস রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলায়।

পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন। তারা ছিলেন ৪ ভাই, ৭ বোন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পূর্ব সীমানায় উত্তর ও দক্ষিণ কোণে যে দুটি দোতালা গেস্ট হাউজ আজও দেখা যায়, সেখানেই উত্তরের দালানটিতে আনোয়ার হোসেনের ছেলেবেলা কেটেছে। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় বাড়ি বদল করে তারা দক্ষিণ দিকের গেস্ট হাউসে চলে আসেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের কিছু অংশ দক্ষিণ দিকে ছিল। ড. কাজী মোতাহার হোসেন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। পরে অবশ্য তারা বাসা বদল করে সেগুনবাগিচায় নিজেদের বাসায় চলে আসেন।

কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৫২ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন।

পড়াশুনা শেষ হওয়ার পর রেডিওতে তিনি নিয়মিত গান গাইতে শুরু করেন। নিয়মমাফিক কোনো প্রশিক্ষণ না নিলেও বাড়িতে গানের চর্চা সবসময় ছিল। তার তিন বোন সনজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুন রবীন্দ্র সংগীতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

তিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৬ সার পর্যন্ত ঢাকা বেতারের সংগীত শিল্পী ছিলেন। ১৯৬৭ সালে রেডিও কিংবা টিভিতে গান গাওয়া এবং সিনেমার প্লে-ব্যাক তিনি ছেড়ে দেন।

১৯৬৩ সালের মে মাসে বাবার দেয়া দশ হাজার টাকা নিয়ে সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। আট হাজার টাকা দিয়ে কেনেন একটি ট্রেডল মেশিন আর বাকিটাকা দিয়ে টাইপপত্র। দুজন কর্মচারী নিয়ে সেগুনবাগান প্রেসের শুরু, যা পরবর্তীকালে নাম পাল্টে হয় সেবা প্রকাশনী।

পরবর্তীতে তার প্রকাশনা সংস্থা বাংলাদেশে পেপারব্যাক গ্রন্থ প্রকাশ, বিশ্ব সাহিত্যের প্রখ্যাত উপন্যাসের অনুবাদ এবং কিশোর সাহিত্যের ধারাকে অগ্রসর করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৪ সালের জুন মাসে প্রকাশিত হয় কুয়াশা-১, যার মাধ্যমে সেগুনবাগান প্রকাশনীর আত্মপ্রকাশ ঘটে।

তিনি ১৯৬২ সালে কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। কাজী আনোয়ার হোসেনের এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। তার মেয়ে শাহরীন সোনিয়া কণ্ঠশিল্পী। বড় ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন এবং ছোট ছেলে মায়মুর হোসেন লেখালেখির এবং সেবা প্রকাশনীর সঙ্গে জড়িত।

তার অধিকাংশ উপন্যাস ও গল্প বিদেশি কাহিনির ছায়া অবলম্বনে রচিত। মাসুদ রানা তার সৃষ্টি করা কাল্পনিক চরিত্র। ১৯৬৬ সালে ধ্বংস পাহাড় প্রচ্ছদনামের প্রথম গ্রন্থটি থেকে শুরু করে সেবা প্রকাশনী হতে মাসুদ রানা সিরিজে এই চরিত্রকে নিয়ে চারশোর বেশি গুপ্তচর কাহিনির বই প্রকাশিত হয়েছে।

মাঝে ১৯৬৯-৭০ সালের দিকে সাংবাদিক রাহাত খানের অনুপ্রেরণায় রহস্যপত্রিকা প্রকাশের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এবং পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭০ সালের নভেম্বরে। চারটি সংখ্যা বের হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের সময় পত্রিকাটির প্রকাশনা স্থগিত রাখা হয়।

স্বাধীনতার পর সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে পত্রিকাটি প্রকাশ সম্ভব হচ্ছিল না। এরপর ১৯৮৪ সালে রহস্যপত্রিকা আবার প্রকাশিত হয়। ১৯৭৪ সালে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া পেয়েছেন সিনেমা পত্রিকা ও জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার।

২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর তার প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর একবার ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্টএটাক হয়। ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি মারা যান।