
বিজ্ঞানী পুলিনবিহারী সরকারের আজ মৃত্যুদিন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : জুলাই ১৪, ২০২৫
অজৈব রসায়নের গোড়াপত্তনকারী বিজ্ঞানী পুলিনবিহারী সরকারের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৭১ সালের ১৪ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৮৯৪ সালের ২২ নভেম্বর কলকাতার ঝামাপুকুরে মাতুলালয়ে তার জন্ম। পিতা ছিলেন আইনজীবী বসন্তকুমার সরকার।
তৎকালীন যাদবপুর ও সোনারপুর অঞ্চলের বিশাল জমিদার যাদবনারায়ণ সরকার ছিলেন তার প্রপিতামহ। (এর নামেই কলকাতায় নামাঙ্কিত বর্তমানের যাদবপুর)। জমিদারির আবহ থেকে দূরে রাখতে চাইতেন তার মাতা সরোজিনী দেবী।
পিতার কর্মক্ষেত্র ছিল মেদিনীপুরের তমলুকে। তাই তার মা স্বামীসহ তমলুকেই স্থায়ীভাবে বাস শুরু করেন। সুতরাং পুলিনবিহারীর বাল্য ও কৈশোর কাটে তমলুকে। সেখানকার হ্যামিলটন স্কুল থেকে ১৯০৯ সালে বৃত্তিসহ এন্ট্রান্স পাশ করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে আইএসসি ক্লাসে ভর্তি হন।
এখানে তার সহপাঠী ছিলেন জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মানিকলাল দে, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ। ১৯১৩ সালে বিএসসি ও ১৯১৫ সালে রসায়নে এমএসসি পাশ করেন।
১৯১৬ সালে পুলিনবিহারী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে লেকচারার নিযুক্ত হন। ১৯২৫ সালে ঘোষ ট্রাভেলিং ফেলোশিপ নিয়ে প্যারিসে অধ্যাপক উরবাঁর ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করতে যান। সেখানে স্ক্যাডিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম এবং ইউরেনিয়াম নিয়ে অভূতপূর্ব কাজের উপর তার ফরাসি ভাষায় লেখা গবেষণাকর্মের জন্য সেখানকার জ্ঞান-বিজ্ঞান জগতের বিশেষ সম্মান স্টেট ডক্টরেট অব ফ্রান্স লাভ করেন।
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে পুরানো পদে যোগ দেন এবং কলেজে এক ল্যাবরেটরি তৈরি করে গবেষক ছাত্রদের নিয়ে বর্ণালি বিশ্লেষণভিত্তিক রসায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই বিষয়ে অসামান্য অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় স্বর্ণ পদক পান। তিনিই প্রথম ১৯২৬ সালে বিহারের গয়া থেকে কলামবাইট নামের এক আকরিক পদার্থ আবিষ্কার করেন এবং এই আকরিক থেকেই তিনি ১৯৩১ সালে রেনিয়াম নিষ্কাশন করেছিলেন।
ভারতে খনিজ দ্রব্য থেকে তার রেনিয়াম নিষ্কাশন এই প্রথম। তাছাড়া পান্নাজাতীয় ভারতীয় পাথরগুলি তিনি পর্যালোচনা করে তাদের বিচিত্র রঙের ব্যাখ্যা করেছেন। খনিজ পদার্থে দ্রুত ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমান নির্ণয়ের সহজ পন্থা আবিষ্কার করেন। এমনকি সাধারণ জিনিস যেমন চাল মুসুর ডাল, উচ্ছে, করলা পান ইত্যাদির মধ্যে কী কী ধাতু কত পরিমানে আছে তাও দেখেছেন। চোখের জল মাতৃদুগ্ধ নিয়েও তিনি বিশ্লেষণ করেছেন।
১৯৩৮ সালে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের রসায়ন শাখার সভাপতি, ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব কাল্টিভেশন অব সায়েন্সের আজীবন সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের ফেলো ছিলেন। ১৯৪৬ সালে বিশুদ্ধ রসায়ন বিভাগের স্যার রাসবিহারী ঘোষ অধ্যাপক ও ১৯৫২ সালে রসায়ন বিভাগের প্রধান হন। ১৯৬০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অবসর নিলেও সিএসআইআরয়ের আর্থিক সহায়তায় ছাত্রদের নিয়ে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত গবেষণায় লিপ্ত থেকেছেন।