বিপুল জামানের ৩ কবিতা

প্রকাশিত : মার্চ ২২, ২০২০

আগ্নেয়াস্ত্র হাতে একজন জলজ্যান্ত সুবিনয় মুস্তফী

দ্যাখ তোরে মেরে ফেলতেই হবে, বুঝিসই তো আমাদেরও বালবাচ্চা আছে।
মেরেই তো ফেলবেন, শেষ একবার আমার বাচ্চাটার সাথে কথা বলতে দ্যান।
মাথা খারাপ তোর! দেখলি না কেমন একটা হসপচ বেঁধে গেল ক`দিন আগে? কথা বলতে গেলে কি আর কথা আসে মুখে, কান্না চলে আসে। গুলি করে থামাতে গেলে আবার গুলির শব্দ শোনা যায় ওপাশ থেকে। সবই তো বুঝিস তবে অবুঝের মতো কথা বলিস কেন?
স্যার, মাফ করে কি দেয়া যায় না? আমারে আর দেখবেনই না। আর একটা সুযোগ কি দেয়া যায় না?
এই কথা ভাবার দরকার ছিল সীমা পার করার আগে। এখন আর ভেবে কি হবে? সবই তো বুঝিস তবে অবুঝের মতো কথা কেন বলিস?
আমার বালবাচ্চা? ওদের কি হবে?
ওরা ওদের মতো বাঁচবে। যেন তুই কখনও ছিলি না। কেউ ওদের কিছু বলবে না তুই না থাকলে আর কারই বা ওই নাবালক আর অবলার সাথে শত্রুতা?
অবশেষে বিড়ালের হাতে ধরা ইঁদুরের মুখে ফোটে হাসি, সে নেয় নিশ্চিত মৃত্যুর প্রস্তুতি, বাহরে বাহ, সুবিনয় মুস্তফী!

গলাকাটা লেন

রাস্তায় গলা কাটা হচ্ছে আমাদেরই একজনের,
আমাকে দেখে তিনি বললেন, ভাই, আমাকে বাঁচান!
আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন একজন আমাকে বলবে, এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছেন? চলে আসেন।
গতরাতেও এখানে আমাদের একজনের গলা কাটা হয়েছে। যেভাবে বিমূঢ়ভাবে আজ আমি আছি তিনি সেখানে গতকাল ছিলেন। গতরাতে আমি এই লোকটিকে বলেছিলাম, এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছেন? চলে আসেন।
লোকটি এসেছিল। এসেছিল শেষবারের মতো বাড়িটিকে দেখতে, যেখানে তার মায়ের ছবি টাঙানো আছে।
আমি জানি আগামীকাল আমার পালা আসবে, আগামীকালের ঘটনাকে আমি আজকের দিনে এগিয়ে আনতে চাই না। আমি তাকে বাঁচাতে গেলাম না। অপেক্ষা করছি কেউ একজন আমাকে ডেকে নিক।
আমি চাইছি কেউ একজন আমাকে ডেকে নিক এই ক্রাইম সিন থেকে, আমার হাতে সারা মাসের ওষুধ আমার অসুস্থ বোনের জন্য।
আমি আমার বোনকে আমার থেকে একমাস বেশি বাঁচতে দিতে চাই।
ওই যে একজন এগিয়ে আসছে, আমি মৃত্যুপথযাত্রীকে বললাম, আসি ভাই, আগামীকাল দেখা হবে।
উনি বললেন, ফি আমানিল্লাহ!

অবশিষ্ট

পৃথিবীতে কি থাকে বলো শেষ পর্যন্ত?
থাকে না কিছুই, এমন মহার্ঘ কীর্তি ধ্বংস হয়ে যায় তাও,
কালে কালে কালজয়ীও হয়ে যায় নিতান্ত সাধারণ, স্রেফ ধূলিকণা, বালির স্তূপ।

এ পৃথিবীতে কাকে কী দিতে পারা যায় বলো?
যার নিজের কিছু নেই, চিরস্থায়ী বলে নয় যার কিছুই, সে কীভাবে অন্যকে দেবে কিছু?

দিতে পারা যায় না তাই বস্তুগত কিছু
কারণ তা স্থায়ী নয়,
অনুভূতিগত বোধ আরো আরো অস্থিতিশীল,
আরো ক্ষণস্থায়ী,
কাউকে এমন কিছু কি দিতে পারা যায়, যা কিনা চোখের পলকে মিলিয়ে যায়?

যে বাস্তবের অস্তিত্ব ক্ষণকালের তার উপরে কি আর বাজি ধরা যায়, কিংবা তার উপরই হয়ত বাজি ধরতে হয় যেহেতু তা ক্ষণকালের, বাজি তো প্রাসাদ নয় শত শত বছর জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকার দায় থাকবে তার

সে সব যদি জেনে বুঝে মেনে থাকো নিশ্চিয়ই বিশ্বাস করবে যুক্তিতে আর অনিশ্চয়তায়, আর তার থেকেও অনিশ্চিত এই বর্তমানকে,

তাই যতটুকু আছো ততটুকু বাঁচো, যেহেতু জীবন এমন ভাগ অঙ্ক যার ভাগশেষ সর্বদা শূন্য, অঙ্ক শেষে সব শূন্য শূন্য শূন্য