The Dark Side of the Moon এর অ্যালবামের প্রচ্ছদ

The Dark Side of the Moon এর অ্যালবামের প্রচ্ছদ

ভারতের চন্দ্রযান-২ এর ব্যর্থতা জনতারই বিজয়

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৯

পিঙ্ক-ফ্লয়েডের প্রতিষ্ঠাতা রজার ওয়াটার্সের জন্মদিন ছিল গতকাল। রজারের সাথে চাঁদের একটা রাজনৈতিক সম্পর্ক আছে। এ কারণে তাকে টান দেয়া যায় ভারতের এই আলাপে। রজারের রাজনৈতিক দর্শন ও চিন্তার প্রতিফলন ছিল The Dark Side of the Moon। তার পরিকল্পনায় ১৯৭৩ সালের মার্চে প্রকাশ হয় এই স্টুডিও অ্যালবাম।

এটি প্রকাশের পরপরই মার্কিন দেশে ব্যপক সমালোচনা শুরু হয়। কারণ চাঁদ তখন মার্কিনিদের গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ১৯৬৯ সালে তারা চন্দ্র জয় করে। কিন্তু ফ্লয়েডের ‘ডার্ক সাইড’ ছিল চাঁদের অন্ধকার অধ্যায় নিয়ে, মানুষের হাহাকার নিয়ে (আমাদের মতো শ্রোতারা অন্তত এভাবেই দেখি বিষয়টাকে)। সত্যজিতের সিনেমাতেও প্রায় একইভাবে এসেছে বিষয়টা। একদিকে মানুষকে চাঁদ দেখানো হচ্ছে আর অন্যদিকে অনাহার, হাহাকার, যুদ্ধ চলছে। তাই ফ্লয়েডের এই অ্যালবামের মূল আখ্যানবিষয়গুলি হলো, দ্বন্দ্ব, নৈতিকতা, লোভ, সময় এবং মানসিক অসুস্থতা অন্বেষণ। ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সিড ব্যারেটও এসব বিষয়ে জড়িয়ে ছিলেন। হতাশা, ড্রাগ আর স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে ১৯৬৮ সালে তিনি দল ত্যাগ করেছিলেন।

একইভাবে বাকি অ্যালবামেও রজার চেষ্টা করেছেন মানুষের চিন্তাকে অগ্রসর করার। এমনকি সারা দুনিয়া যখন রাশিয়ার নেতা স্টালিনের সমালোচনায় মত্ত তখন ফ্লয়েড তাদের ‘এনিমেলস’ অ্যালবামে পুঁজিবাদের সমালোচনা করেছিল। ওটাকেই দুনিয়ার মূল সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছিল।

ভারত ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে। ৭০ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা সবচেয়ে সংকটে রয়েছে। দেশটির অন্যতম থিঙ্ক ট্যাংক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়ার (এনআইটিআই) উপপ্রধান রাজীব কুমার বলেন, “ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা নজিরবিহীন। পত্রিকাগুলো জানিয়েছে, কলকাতায় লাইন-ম্যান হিসেবে কাজ করে এমন চার হাজার আটশো কর্মচারী জানুয়ারি মাসের পর কোনো বেতন বা টাকা পায়নি। ভারতের বড় বড় শহরগুলোতে অনেক ফ্ল্যাট অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। দেশটির ৩০টি বড় শহরে ১২ লাখ ৮০ হাজার তৈরি ফ্ল্যাট পড়ে আছে। শুধু কলকাতায় ২০ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট অবিক্রিত।

একদিকে বেকারত্ব, ধর্মীয় উন্মাদনা আর অন্যদিকে অর্থনীতি ভেঙে যাওয়ার তীব্র সম্ভাবনা, কাশ্মীর ইস্যুতে শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই নয় বরং নিজ রাষ্টের বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়েছে ভারত সরকার। আসামের এনআরসির মতো বর্বর-অমানবিক ঘটনা! অথচ মার্কিন দেশে কত ভারতীয় বাস করছে তার হিসাব নাই। এমন পরিস্থিতে ভারতের চন্দ্র জয় আরেকটা নাটক হিসেবে সামনে আসতো। ভারতের সাধারণ জনতা আরেকটা নাটকে প্রবেশ করতো। এই অভিযানের ব্যর্থতা শেষ পর্যন্ত জনতারই বিজয়।

‘শুক্রবার দিনগত মধ্যরাত। গোটা ভারত চেয়ে আছে চন্দ্রায়ণ-২ এর চাঁদে অবতরণের দৃশ্য দেখতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরোর কন্ট্রোলরুমে শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপস্থিত হয়ে লাইভ দেখছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ল্যান্ডারটি কয়েক কিলোমিটার দূরে থাকতেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় চন্দ্রযান-২।’ এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে হবে। চাঁদের অন্ধকার অঞ্চল দেখতে হলে আগে আলোকিত অংশকে মাথা থেকে হটাতে হবে। শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশের স্যাটেলাইটও আমাদের জন্য চাঁদের সেই বানোয়াট চকচকে অঞ্চল স্রেফ! যারা রাষ্ট্রের এসব বানোয়াট জিনিসে আনন্দিত হন, তারা এরই মধ্যে তাদের মস্তিষ্কের অর্ধেকটা হারিয়ে ফেলেছেন, আফসোস।

লেখক: কবি, কলামিস্ট ও কার্টুনিস্ট