ভাষাতাত্ত্বিক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আজ জন্মদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৬, ২০২০

ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আজ জন্মদিন। ১৮৯০ সালের ২৬ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শিবপুরে তার জন্ম। পিতা হরিদাস চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ইংরেজদের সদাগরি অফিসের কেরানি।

মতিলাল শীল ফ্রি স্কুল থেকে ১৯০৭ সালে সুনীতিকুমার এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করেন। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯০৯ সালে তিনি তৃতীয় স্থান অধিকার করে এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

১৯১১ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে তিনি ইংরেজিতে সম্মানসহ বিএ শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ১৯১৮ সালে সংস্কৃতের শেষ পরীক্ষায় পাস করেন এবং প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি এবং জুবিলি গবেষণা পুরস্কার অর্জন করেন।

কৃতিত্বের সাথে এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯১৪-১৯১৯ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

১৯১৯ সালে তিনি ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় লন্ডনে যান এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধ্বনিবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯২১ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি লাভ করেন। তার অভিসন্দর্ভের বিষয়বস্তু ছিল `ইন্দো-আরিয়ান ফিললজি`।

লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে তিনি ধ্বনিতত্ত্ব ও ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাতত্ত্ব ছাড়াও প্রাকৃত ভাষা, ফার্সি ভাষা, প্রাচীন আইরিশ ভাষা, পুরনো ইংরেজি ও গোথিক ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। এরপর লন্ডন থেকে তিনি প্যারিসে গমন করেন।

সেখানে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্লাভ ও ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাতত্ত্ব, প্রাচীন সগডিয়ান ও প্রাচীন খোতানি ভাষা, গ্রিক ও লাতিন ভাষার ইতিহাস এবং অস্ট্রো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়াটিক ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।

১৯২২ সালে দেশে ফিরে আসার পর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কর্তৃক ভারতীয় ভাষাতত্ত্বের `খয়রা` অধ্যাপক হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় কর্মজীবন শুরু করেন। এখানে দীর্ঘ ৩০ বছর কাজ করার পর ১৯৫২ সালে এমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে পুনঃনিযুক্ত হন।

অধ্যাপক তারাপুরওয়ালার কাছে আবেস্তা তিনি অধ্যয়ন করেন। বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে তিন খণ্ডের দি অরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপম্যান্ট অব দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ গ্রন্থখানি রচনা করে অসাধারণ বিদ্যাবত্তার পরিচয় প্রদান করেন।

তদার অন্যান্য রচনাবলি হলো, বেঙ্গলি ফোনেটিক রিডার, কিরাত জনকৃতি, ভারত-সংস্কৃতি (১৯৪৪), বাঙ্গালা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা (১৯২৯), পশ্চিমের যাত্রী (১৯৩৮), ইউরোপ ভ্রমণ, জাতি সংস্কৃতি সাহিত্য (১৯৩৮), ভারতের ভাষা ও ভাষা সমস্যা (১৯৪৪), সংস্কৃতি কী, দ্বীপময় ভারত (১৯৬৫), রবীন্দ্র সঙ্গমে (১৯৬৫), শ্যামদেশ (১৯৬৫) ইত্যাদি।

১৯২৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চারজন ভ্রমণসঙ্গীর একজন হয়ে সুনীতিকুমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে যান। এই সময় তিনি ভ্রমণ করেন বালি, জাভা, কুয়ালালামপুর, মালাক্কা, পেনাং, সিয়াম ও সিঙ্গাপুর। যাত্রী গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ এই ভ্রমণের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। এসব দেশে তিনি রবীন্দ্রনাথের আদর্শ এবং ভারতীয় সংস্কৃতি ও শিল্প সম্বন্ধে বক্তৃতা প্রদান করেন।

১৯৩৫ সালে তিনি রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে হিন্দি ভাষায় বিশেষ অবদানের জন্য সাহিত্য বাচস্পতি উপাধি লাভ করেন। ১৯৫০ সালে লন্ডনের সোসাইটি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৫২-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের অধ্যক্ষ পদে বহাল ছিলেন। ১৯৫৫ সালে অসলোর নরওয়েজিয়ান অ্যাকাডেমির সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৬৩ সালে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মবিভূষণ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৬৬ সালে ভারতের জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদা লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে সাহিত্য অকাদেমি সভাপতি নির্বাচিত হন।

এছাড়া সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাচার্য উপাধি গ্রহণ করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে। ১৯৭৭ সালের ২৯ মে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।