নভেরা হোসেনের মা

নভেরা হোসেনের মা

মা’র সাথে ভালো করে কথাই হলো না

নভেরা হোসেন

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৪, ২০২০

মা’রর সাথে ভালো করে কোনো কথাই হলো না
যুদ্ধের সময় কেমন করে ওরা বাড়ি ফিরলো
যে শিশুটি মায়ের শরীরেই মারা গেল তার কথাতো কিছু জানা হলো না
মায়ের কলেজের দিনগুলি?
পাকিস্তান আমলে সবাইতো সাদা শাড়ি পরে কলেজে যেত—
একবার খুব ঝড় হলো
তার মধ্যেই মাকে স্কুলে যেতে হলো
শেষে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফেরা
মা’র যেন কোনো অসুখ-বিসুখ হতো না,
সারা মাস গরম গরম ভাত, ইলিশ মাছের তরকারি, মাংসের ঝোল
আর শীতকালে ফাঁপা পিঠা
রান্নাঘরে গ্যাসের চুলার পাশে বসে
ভাইবোন মিলে পিঠে খাওয়া—

আম্মা অনেক বই পাগল
দুপুরবেলা আব্বার বইয়ের সেলফ হতে একটা একটা বই নিয়ে পড়া—
দেশ, সানন্দা সব খুঁজে নিয়ে আসতো বন্ধুদের বাসা থেকে—
আমরাও গোগ্রাসে গিলতাম—
আম্মা এক সময় কবিতা লিখতো
একবার একটা ডায়েরি খুঁজে পেলাম
খুব চমৎকার দিনলিপি
পরিপাটি শাড়ি, একটা হাতখোঁপা
গলায় একটা সোনার চেইন, আঙুলে পাথর বসানো আংটি
এই ছিল তার সাজগোজ
চাইতো, মেয়েরা খুব পড়ুক, চাকরি করুক, কাজ করুক...

গল্প উপন্যাস পড়ার পর বেশ সমালোচনা করতো মা
ওই চরিত্রটা আরেকটু সাহসী হতে পারতো
ছেলেগুলো বেশি ভালোমানুষ
আগের লেখাগুলো ভালো হতো
তোমাদের লেখাগুলো কেন যেন তত ভালো লাগে না—
দিনরাত পরীক্ষার খাতা দেখা
মাঝে মাঝে বন্ধুরা আসতো
তাদের বাড়িতে বেড়াতে যেত,
প্রতিদিন সন্ধ্যায় এক বন্ধুর বাড়িতে আড্ডা
পুরো পরিবারসহ...
মা কি ভাবতো,
কোথাও বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করে কিনা
কোনোদিন জিজ্ঞেস করা হয়নি—
মা যখন হাসপাতালের বেডে
তখনও কেমন বৈঠকি ঢঙে
এক মামি এলো তার সাথে রাজনীতির আলাপ জুড়তে
কেমন একা একা নিজের জীবনকে বয়ে নিয়ে চলা—
বাবার কাছ থেকে কোনো সাহায্যই নিতো না
নিজেই সব করে ফেলতো
টাকা জমিয়ে জমি কেনা
ভাইবোনদের লেখাপড়া, বিয়ে
বাবা-মায়ের চিকিৎসা...
একা একজন মানুষ কত কী করলো
জানা হলো না—

মা’র সাথে ভালো করে কোনো কথাই হলো না
তার আগেই চলে গেলো বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে
মা’র পুরানো শাড়িগুলো আজ
লম্বা হয়ে আলমারিতে ঝুলছে
মা’র শরীরের গন্ধ স্মৃতিতে...