মাহমুদা নাসরিন সিনথিয়ার একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত : আগস্ট ২৬, ২০১৯

আপন তত্ত্ব

কুৎসিত মনের ওজন
জানলার বাইরের ময়লা ভোজন
চলছে হরদম চলাচল
ফাঁকা বা ভর্তিবাসে ত্যাগের কলাকৌশল
বাতাস বয় ফিরফির
অনেক শব্দ শব্দহীনতায় স্থির
তুমি থাকছ যেন কোথায়,
ভুলে যাই, কোথা যাই...
আমি তবু বর্তমান নিজস্ব সংস্থায়...

থেমে না থাকা এক পিশাচিনী

কবে থেকে যে পিশাচ হয়ে গেছি,
এখনও ওকেই আঁকড়ে আছি!

তোমা থেকে যে দিন চোখ ফিরিয়ে রাখতে শিখেছি,
সে থেকেই নিজের নোনারক্ত নিজেই গিলতে জেনেছি!

তুমি তো আমার মহান শিক্ষক!
কত কিছুই না শেখালে, বলো...
এই যেমন ধরো, সকাল বাসে জগৎ ভ্রমণ
আর তারপর...
নিজস্বতায় ধ্বংসাবশেষও রইল না এমনই আপন আক্রমণ...

আজ লোকে আমায় পিশাচ বলে
নোনতা জলও শুকিয়ে গেছে
তাই বিকট স্বরে হাসি ছলেবলে আর কৌশলে!

যাই বলো বাপু
আমার যে বড্ড নেশা হয়...
খুঁজি, তবু পাই না এখন আর,  
আমার রক্তে নুনের দ্রুত ক্ষয়!

নতুন পথ

পুরনো তুমি সুন্দর অনুভব
হরদম তোমার কলরব
মিছেমিছি তোমায় নাড়ি,
তাই নষ্ট হচ্ছে বর্তমান সকল মতলব।
ভাঙছে দ্যাখো তোমার আমার আজ
কিছু মনে করো না,
ডিঙোতেই যে হবে তোমার সকল পুরনো ভাঁজ।
শুরু হলো পুরনো তোমার সর্ব ভাঙন
চিরতরে তুমি চিরস্থায়ী,
তবু আজ যে মানে না কোনো জংধরা বাঁধন,
হাতুড়ি চলে পুরনোতে,
নতুন পথে ফুটুক তবে লাল কমলা রঙ্গন...

নর্তকি

উপভোগ্য নাচ তোর মেঝেতে,
যেখানে ভাঙা কাচ সর্বময় ছড়িয়ে
হুংকার দিয়ে বলো নর্তকিকে, ‘খাঁড়িয়ে কেনে... নাচ মেঝেতে!’

একগাল হাসি মাখিয়ে মুখে নর্তকি নামল নাচতে
মেঝে যখন রক্ত মাখছে, নর্তকি নাচে আর কয়,
‘একটু আয়না দেখ তোরা
লকলকে গেঁজাভর্তি মুখ
চোখ রক্তাক্ত কোন সুখে!’

কিছু সময় পরে হুংকার ছেড়ে নোকরদের বলো,
‘আরো ঢাল কাচের টুকরো!
ওদের গায়ে কাপড় আর ভাল্লাগছে না
খুলে ফেল নর্তকির গা থেকে.. ‘

নরকের দাস ভীত মুখে টুকরো কাচ ছড়াতে থাকে
কেউ নর্তকির গা থেকে কাপড় খুলতে থাকে
মালিকের হুকুম মানতে হবে, নইলে
মৃত্যুদণ্ড অনিবার্য—
মান নেই এই নর্তকীর...
দেখ দেখ!
ছানাবড়া করে চোখ
কেমন নগ্ন হয়ে নাচছে...
পায়ে রক্ত নয়, তোদের জন্য আলতা মেখেছে নর্তকি
ধেৎ, এত দেরি কেনে!
দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় সেই কতক্ষণ...
এবার না হয় হামলে পড় নর্তকির নগ্ন নির্জন পায়ে
ডরাস কেনে!

কে বলে পুরুষ জন্ম দিতে পারে না!
তবে বলি শোন, তোরা যারা স্রষ্টা
ব্যথা নেই, রক্তাক্ত শরীর
কথা নেই, শীতল স্থির নয়ন
নর্তকির যখন রক্তবর্ণ হবে,
সামাজিক আঙিনায় তোদের চকচকে সম্ভ্রব বাঁচাস!

মনের অন্তঃরালে মন

তুমি কাহার লাগি লিখিয়া চলিয়াছ গো মন?
বৃথা তাহারে দাঁড় করাইয়া নিজ কপাটখানা বন্ধ করিয়া আঁধারে
কিসের লাগি লিখিয়া চলিয়াছ গো?

হয় নিজ বন্ধ দ্বার খুলিয়া তাহাকে বলিয়া দাও, শুভ আগমন
আর তা না হয়, একখানা ধারালো তলোয়ার লইয়া
          রক্তাক্ত করিয়া দাও তাহার সকল বৃথা ক্ষণ।

তবে কি মন বলিয়া চলিয়াছে, মনের গোপন মনেই রহিয়া যাক
সকল আলো প্রতিবিম্বিত হইবে জানি
আলোময় হইয়া উঠিবে ঘর
                         ক্ষণ সব অধীর অপেক্ষায় চলিয়া যাক!
জাগিয়া থাকিব তাহার লাগি মোর মনের সংগোপনে
সমাপ্তি নেই যেখানে। জাগিয়া থাকিব সারা রাত্রিবেলা
লইয়া মনের অন্তঃরালে মন।

পশুত্বের ঠিকানা

ঢাক বাজে
শঙ্খ বাজে
ভক্ত সব ব্যস্ত তাল ধরিবার কাজে।

ভোর রাত্তিরে আজানের ধ্বনি
কেউ মোরা চুপটি করে শুনি
কেউ বা আবার পাপ-পুন্য গুণি

যিশুর ঘরে জ্বলছে অসংখ্য মোমবাতি
রক্তাক্ত তিনি দেখছেন পুড়ছে শত সতি
সংখ্যাহীন আশাগুলো নয়ন বুজে খুঁজছে জীবন জ্যোতি

গৌতমবুদ্ধ চিরকালীন স্থির
কে জানে কাহার মনে আশঙ্কা বর্তমান দুর্বল ক্ষতির
তবে অনুসারীগণ তাঁহার ন্যায় সর্বদাই স্থবির

তাহাদের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই! মেনে চলেছে কতিপয় নাস্তিক
বিদ্রুপ করে বলে তারা, ‘ওই দ্যাখো দ্যাখো মোদের সামনে হাঁটছে আস্তিক!
ভ্রষ্ট পথে মরণ কালে কে হবে তাহাদের স্বস্তিকা?’
এ প্রশ্ন প্রায়ই করে চুপিসারে কতিপয় আস্তিক।

কেউ কালো
কেউ শ্যাম আলো
সাদা বর্ণের মানুষেরা কয়, ‘ঢাল ঢাল, বেশি করিয়া সাদা রঙ ঢাল।’
কায়া নামক গ্রহে সেই মানুষগুলো কোথায়?

নামেধামে, বর্ণে, ধর্মে, রূপে, গুণে, পেশায় এবং ঐশ্বর্যে তবে কি মনুষ্যত্ব হারালো হায়!
মনুষ্যত্বহীন মানুষগুলো শেষকালে পশুতেই পরিণত হয়
দেখব তবে, মানুষরূপী পশুত্বের ঠিক শেষটা কোথায়...