মায়ের মাসিক ছেলে জানলেই কী, না জানলেই কী
তুহিন খানপ্রকাশিত : জুন ০৯, ২০২০
`প্রথম আলো`র `ছেলে জানে মায়ের মাসিকের কথা` শিরোনামের একটা নিউজ শেয়ার করার পরে কালকে অনেকে অনেক তর্ক তুললেন। এগুলা পরিষ্কার করা দরকার। আমাদের সমস্যা হলো, আমরা কী নিয়া তর্ক করব সেইটাই ভুলে যাই। যেমন এক আপু সেখানে প্রশ্ন করছেন, মাসিক কি যৌন ব্যাপার? এখন, আপনার যদি সেক্স এডুকেশন নিয়া ধারণা থাকে, তাইলে দেখবেন— সেখানে মাসিক সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্টগুলার একটা। মাসিকের সাথে একজন নারী ও তার জামাই-সন্তানের লাইফ সাইকেল নানাভাবে কানেক্টেড। সেইটার যৌন দিকটাও বেশ বড়। মাসিকের সাথে নারীর যৌনতার যোগ আছে, তার জামাইয়ের যৌনতার যোগ আছে। মাসিককে কেন `যৌনতা` থেকে বের করে একটা `অযৌন` জিনিশ বানাইতে হইতেছে? আমার সন্দেহ হয়।
লিবারাল ভ্যালুজগুলা এমনই। সোসাইটিতে একটা জিনিশরে নরমাল করা দরকার, এখন একগাদা ফলস অ্যাজাম্পশন ক্রিয়েট করা লাগবে। মাসিক `যৌন` ব্যাপার না, `এটা কি রোগ যে এটা নিয়া আলাপ করা যাবে না` ইত্যাদি। অথচ দেখেন, তাইলে কি যৌন ব্যাপারগুলা নিয়া আমরা আলাপ করব না? রোগ নিয়া আলাপ করব না? মাসিকের ভিতরেই নানারকম রোগ হইতে পারে৷ নির্দিষ্ট সময়ের পরেও আপনার রক্ত বন্ধ না হইতে পারে। আবার হুটহাট নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শুরু হইতে পারে। আবার একেবারে বন্ধ হয়ে যাইতে পারে। তো এইগুলা নিয়া কি ডিসকাস করবেন না আপনি? যদি করেন, সেক্ষেত্রে `মাসিক কি যৌন জিনিশ` বা `মাসিক কি রোগ`— এই কোশ্চেনগুলার কী ভ্যালু দাঁড়ায়, আমার বোধগম্য না।
লেটস টক টু দ্য পয়েন্ট। `সেক্স এডুকেশন` আমাদের সোসাইটিতে বার্নিং ইস্যু। দুইটা দল আছে এইখানে। একদল মনে করেন, মাসিক, স্বপ্নদোষ এগুলা সমাজে ট্যাবু। এগুলা নিয়া প্রপার শিক্ষার অভাবে নানারকম যৌন অপরাধ, সামাজিক/মানসিক সমস্যা ইত্যাদি তৈয়ার হয়। আরেকদল এইসমস্ত সমস্যা যে আছে সোসাইটিতে, এমনকি এইসব টপিক যে আসলে হিউম্যান সোসাইটির বেসিক টপিকস, যেকোন হিউম্যান সোসাইটিতেই যে এই টপিকগুলা ছিল, সেইটা মানতে চান না। আবার, অনেকে পুরা ব্যাপারটা মানেন, কিন্তু সেক্স এডুকেশনের তরিকা কী হবে, এই নিয়া মিডিয়া ও পশ্চিমের ভিউর সাথে ওনারা একমত না।
যাহোক, প্রথম দলের অনেকেই এই মাসিক-বিষয়ক ট্যাবুর জন্য, পশ্চিমের অন্ধ অনুকরণে, ধর্মরে দায়ী করতে থাকেন। এইটা আসলে অজ্ঞতার ফল। ইসলামে যৌনশিক্ষার ব্যাপারটা কীভাবে হ্যান্ডেল করা হইছে, সেই বিষয়ে ছোট্ট কিছু কথা বলি। যেহেতু এইসব যৌন বিষয়াদি মানবজীবনের খুবই এজেনশিয়াল পার্ট, এর সাথে লাইফের অনেকগুলা দিক— মেন্টাল, সোশাল, সেক্সুয়াল, রিলিজিয়াস— কানেক্টেড, সেজন্য এগুলার খুব বাস্তবধর্মী, পরিষ্কার ও পৌনঃপুনিক আলোচনা আছে কোরআন ও হাদিসে। ধরেন, মাসিক ব্যাপারটা। `মাসিক` ইসলামি আইনের খুবই কেন্দ্রীয় একটা টপিক। কারণ, ইসলামি আইনের অনেকগুলা বিষয় এই মাসিকরে কেন্দ্র করেই তৈয়ার হয়।
প্রথমত, মাসিকের ব্যাপারে ভিউ। মাসিক রোগ কিনা? কোন অভিশাপ কিনা? কোরআন বলতেছে, `এইটা একটা অপবিত্র অবস্থা` (২/ ২২২)। এই `অপবিত্র` মানে কী? মানে এই না যে, আপনি তারে জঙ্গলের ভেতরে রেখে আসবেন। এর মানে হইল, এই সময়ে তার কোন এবাদত করা লাগবে না। নামাজ-রোজা করা লাগবে না। মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট থিং ইজ, এই সময় জামাই তার সাথে সেক্স করতে পারবে না।
এই মাসিক নিয়া ফিকহের বইগুলায় আলাদা একটা বড়সড় অধ্যায়ই আছে। মাসিক কী, কীভাবে হয়, কী কী রঙের রক্ত দেখা যায়, সেসময় কী করা লাগে, মাসিকের সময় কতটুকু, নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে রক্ত পড়লে সেটারে কী বলে, সেইটার বিধান কী— এই সমস্ত জিনিশ এইখানে আলাপ করা হয়।
তারপরে, বিয়া-তালাকের মাসালার সাথে মাসিকের একটা সম্পর্ক আছে। জামাই তালাক দিলে পরবর্তী বিয়ের আগে একটা নির্দিষ্ট সময় `ইদ্দত` পালন করা লাগে মুসলিম নারীর। এই সময়কাল হইল `তিন হায়েজ` (হানাফি ফেকাহ অনুযায়ী)। মানে, তিনটা মাসিক পার হইতে হবে। আবার, জামাই মারা গেলেও একই ঘটনা। বাচ্চা জন্মের পরে যে রক্ত, যেইটারে `নেফাস` বলে, সেইটাও এইসব অধ্যায়ে আলোচিত হয়।
দেখা যাচ্ছে, মাসিক একজন নারীর তো বটেই, তার সঙ্গী পুরুষ এবং তার বাচ্চাকাচ্চা— মোটকথা তার পুরা ফ্যামিলিই তার মাসিকের সাথে কোন না কোনভাবে রিলেটেড। ফলে, ইসলামি আইনে এইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিক।
রাসুল সা.-র মজলিশে নারী-পুরুষ সকলেই আসত। সাধারণ অনেকগুলা বিষয়ে রাসুল একসাথে সবাইরে সম্বোধন করে কথা বলতেন। কিন্তু নারীদের যে ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলি, সেগুলি নিয়ে তারা রাসুলের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতেন। এর কারণ এই ছিল না যে, তাদের সাহসের অভাব ছিল, বা তারা খুব জড়সড় নারী ছিলেন। যেকোন বিষয়ে সাহাবিয়্যারা কত ফ্লুয়েন্টলি কোশ্চেন করতেন এবং আন্সার দিতেন, সেইটা হাদিসের কিতাবগুলির দুই একটা পাতা উল্টাইলেই বোঝার কথা। ওনারা এইটা করতেন ওনাদের প্রাইভেসির জন্য। কার বউয়ের মাসিক হইতেছে না এই মাসে, কার বউয়ের মাসিকের পরেও রক্ত পড়ে, কার বউ মাসিকের সময় আচার খায়, কার বউয়ের মাসিকের ব্যথায় ঘুম আসে না— এইগুলা তো সোসাইটির আর দশজনের কনসার্ন না। সেজন্য এসব ব্যাপারে রাসুলের সাধারণ নিয়ম ছিল, নারীদের নিয়া আলাদাভাবে বসা।
এখন, যৌন ব্যাপারগুলিরে কি রাসুল ইগনোর করতেন? এড়ায়ে যাইতেন? না। সাহাবিয়্যারা এত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করত রাসুলরে, মাঝেমাঝে উনি ওনার স্ত্রীদের সাহায্য নিতেন। কিন্তু ইগনোর করেন নাই। দুইটা উদাহরণ দিই।
একবার উম্মে সুলাইম রাসুলের কাছে আইসা জিগেশ করলেন: `হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো সত্য প্রকাশে লজ্জা পান না। নারীদের যদি স্বপ্নদোষ হয়, তাইলে কি গোশল করা লাগে? রাসুল বললেন: হ্যাঁ। যদি তার অর্গাজম হয়। রাসুলের স্ত্রী উম্মে সালামা শরমে মুখ ঢাইকা বললেন: হে আল্লাহর রাসুল! মেয়েদেরও এইসব হয় নাকি? রাসুল বললেন: হয় তো। তোমার হাতে মাটি লাগুক! মেয়েদের যদি অর্গাজম নাই হয়, তাহলে তার সন্তান দেখতে তার মত হয় কীভাবে?` দেখেন, ইমাম বুখারি এই হাদিসটা ওনার বইতে, এমনকি স্বপ্নদোষ অধ্যায়েও আনেন নাই। আনছেন `জ্ঞানার্জনে লজ্জা` অধ্যায়ে।
আরেকটা উদাহরণ দিই। আসমা বিনতে শাকাল একবার মাসিকের পরে গোশল কীভাবে করা লাগবে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলেন। রাসুল সা. জওয়াবের এক পর্যায়ে বললেন: `এরপর একটা সুগন্ধী কাপড় দিয়া পরিষ্কার করবে নিজেরে। আসমা জিগেশ করলেন: হে আল্লাহর রাসুল! কীভাবে পরিষ্কার করবে? রাসুল সা. বললেন: সুবহানাল্লাহ! আরে, পরিষ্কার করে ফেলবে। তখন হযরত আয়েশা আসমার কানে কানে চাপাস্বরে বললেন: আরে বোঝ না! রক্তের দাগ মুইছা ফেলবা।` সহিহ বুখারির হাদিস।
তো, এই এডুকেশনগুলার উদ্দেশ্যটা কী? উদ্দেশ্যটা সিম্পল। লাইফের জরুরি অংশ যেহেতু এগুলি, ফলে লাইফের নানারকম ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য, লাইফটারে আরেকটু কমফোর্টেবল করার জন্যেই এসব ব্যাপারে জ্ঞান থাকা দরকার।
এখন, আমাদের এইখানে লজ্জার কনসেপ্ট নিয়া যেমন ফলস অ্যাজাম্পশন আছে, তেমনি সেক্স এডুকেশন ইত্যাদি নিয়াও কিছু ফলস অ্যাজাম্পশন আছে। হুমায়ুন আজাদের ঘটনাটা দেখেন।
হুমায়ুন আজাদ তার বোরকাপরা নারী ছাত্রীরে জিগেশ করতেছেন, স্বামীর সাথে সে সেক্স করে কিনা, তার অর্গাজম হয় কিনা। এখন, ওই নারী কি আজাদের সাথে এই বিষয়ে আলাপ করতে বাধ্য? কিন্তু আজাদ ভাবেন যে, সেক্স নিয়া আলাপে কোন লজ্জা থাকা যাবে না। ফলে, একরকম বাধ্যই সে। তো, কোনটা এডুকেশন আর কোনটা অ্যাম্বারাজমেন্ট, কোনটা জড়তা আর কোনটা জরুরি প্রাইভেসি— সেই পার্থক্যগুলা আমরা এখন আর বিভাজনই করতে পারি না। এই এক সমস্যা।
সেক্স এডুকেশন নিয়া আমাদের লিবারালরা যে ফলস অ্যাজম্পশন ছডায়, আগেই বলছি। আরেকটা ফলস অ্যাজাম্পশন এরকম— সেক্স এডুকেশন হইলেই একটা বাচ্চা সেক্সুয়ালি অনেক সচেতন হবে। আপনারা এখন খুঁজলে তো অনেক রিসার্চ পাবেনই এইসব ব্যাপারে। নিছক সেক্স এডুকেশন কাউরেই সেক্সুয়ালি সচেতন করে না। আপনি একটা বাচ্চারে সেক্স এডুকেশন দিলেন, কিন্তু তার কোন পলিটিকাল বা মোরাল গ্রুমিং নাই। ওই সেক্স এডুকেশন তার কোন কাজে লাগবে না।
উল্টা, রিসার্চে দেখা যাইতেছে, বর্তমানে যেভাবে সেক্স এডুকেশনগুলা দেওয়া হইতেছে, সেইটা ক্লাশরুমে নেগেটিভ প্রভাব ফেলতেছে। AVERT (এইডস এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ট্রাস্ট) ইউকের সেকেন্ডারি স্কুলগুলায় সেক্স এডুকেশন নিয়া রিসার্চ করছে। তাদের রিসার্চের একটা গুরুত্বপূর্ণ ফাইন্ডিং ছিল, বর্তমান মডেলের সেক্স এডুকেশন `টু বায়োলজিকাল`, সেখানে সেক্স এডুকেশনের ফিলোসফি, মোরাল সাইডগুলা মিসিং। সেই রিসার্চে আরো উইঠা আসে যে, এই মডেলের সেক্স এডুকেশন আন্ডারএজ সেক্সে উদ্বুদ্ধ করে, এমন একটা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেক টিচার। সার্ভেতে এই সমস্যা সমাধানে `সেক্সুয়ালি পজিটিভ` টিচার নিয়োগ দিতে বলা হইছে।
এছাড়াও সেক্স এডুকেশনের বর্তমান মডেলটা যে কত দিক দিয়া ত্রুটিপূর্ণ, তার হদিশ আপনারা অনেক রিসার্চেই পাবেন। আমি এইখানে `টাইম`-র একটা আর্টিকেলের কথা বলে শেষ করি। আর্টিকেলটা লিখছেন ম্যান্ডি ওকল্যান্ডার। এই আর্টিকেল মোতাবেক, আলাদা আলাদা ১০টা দেশে সার্ভে করে দেখা গেছে যে, সেসব দেশের বাচ্চারা তাদের সেক্স এডুকেশন ক্লাশ পছন্দ করে না।
এখন, এই ব্যাপারে কিছু কথা বলি। প্রথমত, সেক্স এডুকেশন, প্রপার সেক্স নলেজ সবারই জরুরি। কিন্তু সেক্স একটা সেন্সিটিভ ব্যাপার। এইটা স্রেফ বায়োলজিকাল কোন যন্ত্রের ঘষাঘষি না, গাড়ির নাট-বল্টু খুইলা আবার লাগানোর মত ব্যাপার না। সেক্স মানুশের লাইফের একটা ফিয়ার-প্রোভোকিং, এংজাইটি প্রভোকিং ব্যাপার। সেইরকম সেন্সিটিভিটি নিয়া প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ক্লাশের শিক্ষার্থীদের আদৌ সেক্স এডুকেশন দেওয়া হয় কিনা, বা সবার সেন্সিটিভিটির দিকে সমান নজর রাখাও সম্ভব কিনা— সেটা বিশাল প্রশ্ন।
দ্বিতীয়ত, সেক্স এডুকেশনের জরুরতটা কেন? ধরা যাক, মাসিক। এটা নিয়ে জানার জরুরত কী? যাতে আপনি এইসব ব্যাপারে আপনার মা-বোনকে হেল্প করতে পারেন। বান্ধবীদের সাথে ভাল আচরণ করতে পারেন। এইসব টাইমে তাদের রিয়েল প্রবলেমটা বুঝতে পারেন। তাইতো?
কিন্তু ব্যাপারটা এখন হয়ে গেছে `ট্যাবু ভাঙা`। মানে, কোন একটা ব্যাপারে `ট্যাবু ভাঙা`ই লক্ষ্য হইলে মুশকিল আরকি। আপনি কী ট্যাবু ভাঙবেন? তার উল্টাপিঠ আছে তো। ট্যাবু ভাঙতে গিয়া আপনি কারুর উপর জুলুম করতেছেন না তো? হুমায়ুন আজাদের মত? ট্যাবু ঝামেলার তখনই, যখন ট্যাবুর কারণে জরুরত নষ্ট হয়। ধরেন, কোন মেয়ের মাসিকের সমস্যা হইল, ভয়ে কাউরে বলতে না পাইরা মেয়েটা কষ্ট পাইল। এই হইল ট্যাবুর বিপদ। কিন্তু, আরেক মেয়ে, তার সব ঠিক আছে। কিন্তু সে মাসিক নিয়া আলাপে আগ্রহী না। তো, সেইটা কেমন ট্যাবু?
তৃতীয়ত, আপনি স্রেফ সেক্স এডুকেশন দিয়াই মানুশরে সেক্সুয়ালি সঠিক আচরণ করাইতে পারবেন, এইটা হাস্যকর কথাবার্তা। অনেক ক্লিশে টপিক, তাও বলা লাগে, ওয়েস্টে দেখেন। সেক্স এডুকেশন তাদের মধ্যে যৌন সচেতনতা তৈয়ার করছে। অসচেতনতাও কি না? অবশ্যই। তাইলে, স্রেফ এডুকেশন, তাও হইল গিয়া স্কুল এডুকেশন বা কলেজ এডুকেশন দিয়া আপনি যৌনতা শিক্ষা দেবেন, এইটা সম্ভব না। যৌনতার অনেকগুলা সাইড আছে, যৌন শিক্ষারও অনেকগুলা ব্যাপার আছে। আমাদের প্রচলিত এডুকেশন সিস্টেমে সেগুলা টাচ করা অসম্ভব।
আমি এইটে থাকতে পরীক্ষামূলক শারীরিক শিক্ষার ক্লাশ হইছিল। মার ক্লাশরুমের দৃশ্যগুলা আমার এখনও মনে আছে। পুরা ক্লাশরুমে শোরগোল আর হাসাহাসি। ছেলেতে-মেয়েতে ইঙ্গিতার্থক মেসজে চালাচালি। এগুলা এই ভার্সিটিতেও দেখি৷ তো প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা ঠিক কী টাইপের সেক্স এডুকেশন পাব, তা আন্দাজ করা যায়।
চতুর্থত, নারী আর পুরুষের সম্পর্কের ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। আমি মনে করি, নারী আর পুরুষের ভিতরে একটা জৈবিক সম্পর্কের চোরাটান অলটাইম ক্রিয়াশীল থাকে, সবসময়। নানাভাবে আমরা সেইটারে চাপা দিয়া রাখি। এখন লিবারালদের ফলস অ্যাজাম্পশন আছে যে, আপনার এমন হইতে হবে, মেয়েদের সাথে সেক্স, পর্ন সব নিয়া আলাপ করবেন, মেয়েদের সাথে থাকবেন, ঘুরবেন, কথা কবেন— কিন্তু আপনার কিছুই হবে না। এই ফলস অ্যাজাম্পশনের কারণে এতিমধ্যেই সোসাইটিতে অনেক সমস্যা হইছে, সেজন্য এইটা নিয়া বাড়তি না বলি। মেয়েদের রাইট দিতে গিয়া, তাদের জন্য সোসাইটিতে স্পেশ ওপেন করতে গিয়া মানুশের লাইফের একটা ন্যাচারাল সত্য`রে এইভাবে আন্ডারমাইন করা ঠিক না। আপনি সবসময়ই একটা মেয়ের সাথে যেকোন ধরনের সম্পর্কের সম্ভাবনায় থাকেন। এইটুকু স্বীকার করাই ভাল।
যাহোক, পত্রিকার কথা বইলা শেষ করি। আপনি তিনটা শিরোনাম নেন: ১. বন্যাদুর্গতদের জন্য ন্যপকিন বিতরণ করল অমুক। ২. মেয়েদের জন্য বিশেষ ন্যাপকিন সার্ভিস চালু করল ডাকসু। ৩. ছেলেও জানে মেয়ের মাসিকের কথা। তিনটা শিরোনামেই মাসিকের আলাপ। কিন্তু এই লাস্ট শিরোনামটা দিয়া আসলে কী বোঝানো হইল? আপনি হয়ত চান যে, সব মা ছেলের সাথে এমন সম্পর্ক হউক যে মাসিক নিয়াও তারা আলাপ করতে পারে। আমি তা চাই না। আমার মায়ের সাথে আমার প্রেম বা লাভ লাইফ বা উনার লাভ লাইফ— এগুলা নিয়া আলাপই ফালতু লাগে আমার। আমি জাস্ট প্রয়োজনের আলাপটা করতে চাই: উনার প্রয়োজন হইলে আমি যেন ন্যাপলিন কিনা আনতে পারি। এই তো। এখন, আপনি যদি আমার এই `ট্যাবু` ভাঙতে চান, তাইলে আমার জন্য মুশকিল হয়। আমি এইটারে `ট্যাবু` ভাবি না। এইটা প্রাইভেসি, পার্সোনাল প্রেফারেন্স।
এখন দেখেন, ট্যাবু ভাঙার কথা যে লিবারালরা বলে, এরাই আবার রোজার মাসে আগে আগে ঘোষণা দেয়, কোন মেয়েরে যেন কেউ রোজার কথা না জিগায়। মানে ওনারা ধইরাই নিছেন, এইক্ষেত্রে রোজার কথা জিগানো পোলামাত্রই লুইচ্চা, এবং মেয়েমাত্রই মাসিক নিয়া আলাপ করতে চায় না বা মাসিক নিয়া আলাপ খুবই অস্বস্তিকর। কিন্তু অন্যত্র লিবারালদের বক্তব্য হইল মাসিকের ব্যাপারে ট্যাবু ভাঙা লাগবে। দেখেন, মাসিক এমন কোন ব্যাপার না, যেইটা নিয়া আমি আপনি রোজ আলাপ করতে পারি। একটা অপরিচিত মেয়েরে `হাই আপু! মাসিকে আছেন নাকি?` বইলা আলাপ শুরু করতে পারি। এইটা সম্ভব না। এই টপিকটার একটা সেন্সেটিভিটি আছে, একটা কমপ্লেক্সিটি আছে, একটা বিশ্বস্ততা ও স্বতস্ফূর্ততার ব্যাপার আছে, একটা কমফোর্টের ব্যাপার আছে। মেন্টাল ও সেক্সুয়াল ডাইমেনশন আছে। প্রাইভেসি ও স্বভাবজাত লজ্জার ব্যাপারও আছে। এই গোটা প্রক্রিয়াটারে একটামাত্র শব্দ `ট্যাবু`র ভিতরে ঠাইসা ঢোকানো আর একমাত্র সমাধান হিশাবে `মাইকিং` প্রেফার করা—এইটা খুব বড় অন্যায় ও জেনারেলাইজেশন বইলাই আমার মনে হয়।
যাহোক, আমি মনে করি কে কার মাসিক জানবে না জানবে, সেইটা পারসোনাল ম্যাটার। মাসিকের সোশাল আসপেক্ট, যেমন: শিক্ষাঙ্গন, কর্মস্থল বা অন্যত্র মেয়েদের মাসিকের সময়কালীন প্রিকোশনের ব্যবস্থা থাকা, মেয়েদের ন্যাপকিন বা অন্যান্য জরুরি জিনিশ এভেইলেবল হওয়া— এগুলা নিয়া সকলের মধ্যেই সচেতনতা জরুরি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। কোন ছেলে তার মায়ের মাসিকের ব্যাপারে জানে কিনা, এই নিয়া আমার তেমন কোনও আগ্রহই নাই।
























