Painting by George E Huffman
মিনহাজুল ইসলামের গদ্য ‘লেখকের দায়’
প্রকাশিত : আগস্ট ৩১, ২০২০
লেখক কি? লেখকের কাজ কি? কী কাজ করলে, কেমন চিন্তা করলে একজন মানুষকে আমরা লেখক বলবো? এগুলা খুবই জনপ্রিয় প্রশ্ন এবং মৌলিক প্রশ্নও বটে। এসবের উত্তর অনেক পণ্ডিত ও বিদ্বান ব্যক্তিরা দিয়ে গেছেন। সুতরাং আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের ক্ষুদ্র উত্তর সেসবের সামনে কিছুই নয়। কিন্তু আমার মতে, লেখকের আরও একটা বড় কাজ আছে এবং বলা চলে যে, এটা ফরয ও অবশ্যকরণীয়। সেটা হলো, তার লেখাপত্তর নিয়ে কে কি বলছে, সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা।
অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমার দেখা এমন লেখক এই সমাজে দুই তিনজনের বেশি নাই। আগেও যে ছিল, তার পক্ষে প্রমাণ ইতিহাসেও কম এই ভূখণ্ডে। একজন লেখকের ভক্ত বা শিষ্য অনেক কিছুই থাকতে পারে, থাকাটাই স্বাভাবিক এবং থাকাটা উচিতও। কিন্তু সেই লেখকের জানতে ও বুঝতে হবে, তার লেখা নিয়ে তার ভক্তরা যে ব্যবসা করে সেটা অন্ধত্ব, অজ্ঞতা, অভদ্রতার দিকে যাচ্ছে কিনা। যদি সে সেই বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকে তাহলে সে একজন লেখকই শুধু নয়, সে একজন চিন্তাবিদও।
আর যদি সে ওই বিষয়ে ওয়াকিবহাল না থাকে, তাহলে বলতে হবে সে লেখক হতে পারে কিন্তু তার লেখার মাধ্যমে কোনো পরিবর্তন আশা করা সম্ভব হবে না। যত ভালোই সে লেখুক বা যত সুন্দর কথাই সে লিখুক। বরং তার এই বেখেয়ালিপনার জন্য তার অজান্তেই অজ্ঞতা, অভদ্রতা, মূর্খতা, অন্ধত্ব এসব প্রমোট হয়। এই সবের দায় তার নিতেই হবে। আমাদের সমাজে এরকম লেখকের উদাহরণ কয়েক হাজার আছে যারা তার লেখা নিয়ে ওয়াকিবহাল নন, তার লেখা কে কিভাবে কখন কোন পদ্ধতিতে কেন আলোচনা করছে, সে সম্পর্কে সে ওয়াকিবহাল নয়।
আপনি নিজ দায়িত্বে নৌকা একটা বানায় দিলেন আর সেই নৌকার বৈঠা দিয়ে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের মাথা ফাটাবে সেই দায় আপনি নিবেন না? হা, এখন কথা হলো নৌকা বানানো আপনার কাজ ঠিকাছে, কে কিভাবে সেটা ব্যবহার করছে তার দায়ভার আপনি কেন নিবেন, দায়ভার আপনাকে নিতেই হবে। কারণ আপনি জানেন যে, লোকেরা নদী পার হওয়ার নামে বৈঠা দিয়ে মানুষ পিটায় সেই লোকেদের জন্য নৌকা আপনি বানিয়ে দায়ভার থেকে মুক্ত হতে পারবেন না। অন্তত আপনাকে পদে পদে নিজেকে একটা ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে জাহির করতেই হবে।
স্বাভাবিকভাবেই লেখক তো ভক্তদলের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাবেন না। তাহলে সেক্ষেত্রে ওই বইয়ের মতো করেই আরও বেশ কিছু লেখা বের করতে হবে যেগুলা তার নিজের আত্মসমালোনামূলক কিংবা সে যে কম জানে বা তার যে জ্ঞানের প্রচুর সীমাবদ্ধতা, বা তাকে নিয়ে যেন লোকে ব্যবসা না করে সেই ওয়ার্নিং তার যেভাবেই হোক দিয়ে দিতে হবে। লোকে যেন তার বই পড়েই ক্ষান্ত না হয়, তার বইয়ের যে রেফারেন্স বা তার বই লেখার যে উদ্দেশ্য সেটা হাসিলের জন্য লোকে যেন আরও পড়ে সেই বিষয়ে ওই লেখকের বক্তব্য থাকা অত্যন্ত জরুরি।
কারণ, আমাদের সমাজ প্রচুর অজ্ঞতা, অন্ধত্ব, অভদ্রতায় আসক্ত। এজন্য লেখককে লিখলেই হবে না, লেখার দশা কি সেটাও যাচাই করতে হবে। কারণ সে তো আর নিজের জন্য লেখে নাই। যারা একান্ত নিজের জন্য লেখে তাদের হিসেব ভিন্ন, তাও বিষয় আছে। ফরাসি দার্শনিক জ্যা পল সার্ত্র বলেছিলেন, সে লেখে তাই বেঁচে আছে। বাট এর মানে এই নয় যে, সে নিজের জন্যই সব লিখেছে। সেও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকে লিখেছে। যে কোনো লেখকেরই একটা এদিক-সেদিক করা বা প্রশ্ন করা বা পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকেই লেখে।
























