মোবারক হোসেন খানের প্রবন্ধ ‘রবীন্দ্রনাথের গান’

প্রকাশিত : মার্চ ০২, ২০২১

কেমন যেন তরতর করে এক শ’ বছর পার হয়ে গেল। তার সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থেরও এক শ’ বছরে পদার্পণ ঘটে গেল। আর তিন বছর পর কবিগুরুর নোবেল বিজয়ের এক শ’ বছর পূর্তি হবে। ১৯১৩ সালে যেদিন রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন, তার আগের দিন পর্যন্ত তাঁকে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, নোবেল বিজয়ের পর রাতারাতি সেই সমালোচনার গতি পরিবর্তন করে প্রশংসায় মুখরিত হতে শুরু করল। কবিগুরু থেকে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবিতে পরিণত হলেন। আর বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হলো। পঞ্চাশ বছর আগে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। এ বছর সেই জন্মবার্ষিকী এক শ’ পঞ্চাশ বছরে পদার্পণ করল। অবশ্য তার মৃত্যুর শতবার্ষিকী পালনের জন্য আরও একত্রিশ বছর অপেক্ষা করতে হবে। ভবিষ্যত্ প্রজন্ম হয়তো প্রচুর জাঁকজমকের সঙ্গে বিশ্ব কবির সেই মৃত্যু শতবার্ষিকীও পালন করবে।

রবীন্দ্রনাথের কাব্য-প্রতিভার পাশাপাশি তার সঙ্গীত প্রতিভাও সমুজ্জ্বল। কি গানের বাণী, কি গানের সুর, দুটোতেই তিনি ছিলেন কৃতীপুরুষ। সঙ্গীত-ভুবনে তাঁর এই অবদান চিরঅম্লান হয়ে রয়েছে। গীতিকার ও সুরকার রবীন্দ্রনাথ একজন উচ্চমানের গায়ক হিসেবে, প্রভূত সুনাম অর্জন করেছেন।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আমাদের পরিবারের মেলবন্ধন সঙ্গীত ভুবনে একটা নতুন মাত্রার সংযোজন। বিশ্বের সঙ্গীত ভুবনে আমাদের পরিবার বিশ্বখ্যাত। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করার পর আমার পিতৃব্য ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁকে বিশ্বভারতীতে প্রায় প্রতি বছরই আমন্ত্রণ জানাতেন সঙ্গীতে তালিম দানের জন্য। ফলে তিনি রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে এসেছেন। শান্তিনিকেতনে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ‘আমন্ত্রিত অধ্যাপক’ হিসেবে একবার বিশ্বভারতীতে গিয়েছেন। ছয় মাস অধ্যাপনার পর রবীন্দ্রনাথ তাঁকে একটা ঘরোয়া জলসার মাধ্যমে বিদায় দিচ্ছিলেন। হঠাত্ কবিগুরু ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক নন্দলাল বসুকে ডেকে এনে বললেন, ‘নন্দলাল, আলাউদ্দিন খাঁর মাথাটা রেখে দাও।’ সবাই কবিগুরুর কথা শুনে চমকে উঠলেন (আমার কথা : শুভময় ঘোষ)। আলাউদ্দিন খাঁ কৌতুক করে এ ঘটনার উল্লেখ করে সঙ্গে সঙ্গে যোগ করতেন, ‘না, না, ভয়ের কিছু নেই। নন্দলাল বাবুর এক ছাত্র, নাম রাম কিঙ্কর, আমার আবক্ষ মাথাটা রেখে দিল মূর্তি তৈরি করে।’ ভাস্কর্য শিল্পী রাম কিঙ্করের তৈরি আলাউদ্দিন খাঁর আবক্ষ মূর্তি শুভময় ঘোষ তাঁর অনুলিখিত ‘আমার কথা’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ কবিগুরুর এই মহানুভবতার কথা স্মরণ রেখে প্রতিদানে তাঁর নামে একটি রাগ সৃষ্টি করে নাম রাখলেন ‘রাগ রবীন্দ্র’। স্বরলিপি করে পাঠিয়ে দিলেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। তারপর আমার বাবার কথা। আমার বাবা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ মাইহার রাজ্যে (তখন করদরাজ্য) মহারাজার দরবারে সভা-সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে কর্মরত। বাবার তালিমদানের দক্ষতার কথা শুনে তাঁকে বিশ্বভারতীর যন্ত্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদানের আহ্বান জানালেন। কিশোরগঞ্জের জমিদার ব্রজেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর ছেলে প্রসিদ্ধ সঙ্গীতশিল্পী ও ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্য বীরেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী আমার বাবাকে নিয়ে শান্তিনিকেতন গেলেন। সেটা ১৯৩৫ সালের কথা। বাবা কবিগুরুর অনুরোধে বিশ্বভারতীতে শিক্ষাগুরু হিসেবে সঙ্গীত বিভাগে যোগদান করেন এবং বেশ কিছুকাল দায়িত্ব পালন করেন।

আমার আরেক পিতৃব্যের নাম ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁ। তিনি আমাদের কাছে ‘ফকির জেঠা’ নামে পরিচিত। তিনি তাঁর সহোদর অনুজ দুই ভাই আলাউদ্দিন খাঁ ও আয়েত আলী খাঁর সঙ্গীতশিক্ষার গুরু। তিনি ছিলেন অধ্যাত্ম পল্লী সঙ্গীতের শিল্পী। পল্লীগানের বাণীতে রাগ সঙ্গীতের রাগ প্রয়োগ করে গান পরিবেশনে পারদর্শী ছিলেন। তাঁর যাতায়াত ছিল পাথুরিয়া ঘাটার ঠাকুরবাড়িতে। রবীন্দ্রনাথ থাকতেন জোড়াসাঁকোতে। একবার পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ির জমিদার সৌরিন্দ্রমোহন ঠাকুরের জলসায় গান গেয়ে বিদায় নিয়ে বের হয়ে এলেন। তিনি কিছুটা হেঁয়ালি ধরনের মানুষ। পরনে গেরুয়া আলখাল্লা। কাঁধের থলিতে বাঁশি এবং হাতে একতারা। তিনি খুব ভালো বাঁশি বাজাতেন। রাস্তায় নেমে ভাবলেন, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করবেন। রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে বাধা পেলেন। প্রহরী ঢুকতে দিল না। কুছ পরোয়া নেই। তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে দরাজ গলায় গান গাইতে শুরু করে দিলেন। কতক্ষণ গেয়েছিলেন সে খবর নেই। চোখ যখন খুললেন, দেখলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে। কবিগুরু ফকির জেঠাকে সাদরে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেলেন। তাঁর গান শুনলেন। তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বললেন। জানতে পারলেন পাথুরিয়াঘাটা জমিদার বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াতের কথা।

কবিগুরুর সঙ্গে এভাবেই আমাদের পরিবারের একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। রবীন্দ্রনাথ গানের ভুবনের এক অসাধারণ কীর্তিমান সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি গান লিখেছেন, সুরারোপ করেছেন, গান গেয়েছেন। তার লেখনী আর কণ্ঠ সঙ্গীত জগতে প্রতিক্ষণ সরব করে রেখেছেন। তাঁর অন্তর্ধানের ঊনসত্তর বছর পরেও জীবত্কালের মতোই তাঁর গান একই মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ও সমাদৃত এবং জনপ্রিয়তায় কোনো ভাটা পড়েনি।

রবীন্দ্রনাথের গান অপূর্ব সুর লহরীতে ভরপুর। অপরূপ বাণীর অভূতপূর্ব মিলন। ফলে সুর ও বাণীর অভাবনীয় সমন্বয় ঘটেছে। বাংলা গানের বাণী ও সুরের যে সুসমন্বয়, রবীন্দ্রনাথের গানেই সেই বৈশিষ্ট্য সর্বপ্রথম প্রকাশ পেয়েছে। সঙ্গীত যে ভাবের ভাষা, তাঁর গান তারই সাক্ষ্য বহন করে। রচনার গুণে রবীন্দ্রনাথের গানগুলো সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠেছে গীতিকবিতা। ফলে তাঁর গানে যেন সুর আপনা আপনি গুঞ্জরিত হয়।

রবীন্দ্রনাথের গানে এক কল্পভুবন জেগে ওঠে মনে। তার নৃত্য তরঙ্গিত প্রবাহে সব সত্তা যেন ডুবে যায়। গান শেষ হলেও কিছুক্ষণ মোহ মায়ায় ছেয়ে থাকে বাইরের আর ভেতরের আকাশ। সঙ্গীতশিল্পী রবীন্দ্রনাথের অনুভূতিতে বাণী ও সুর সমান মর্যাদা পেয়েছে। কথায় যা আছে তার অতীত আর সব স্বরূপ প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর গানে। তাঁর গানে যে বিস্ময়কর সিদ্ধি ও সার্থকতা তার মূল কারণ তিনিই রচয়িতা এবং তিনিই সুরকার। এই দুইয়ের মিলনে রবীন্দ্রনাথের গান হয়ে উঠেছে সৌন্দর্য ও মাধুর্যের আধার।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর গীতি কবিতার কথা সম্পর্কে বলেছেন যে, গান রচনা অর্থাত্ সঙ্গীতের সঙ্গে বাণীর মিলন সাধনাই তাঁর সাধনা। এই সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেই তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকারের আসন লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ সুরকার। সুরের জাদুকর। তাঁর গানের বাণীর সঙ্গে সুরের মিলন তুলনার ঊর্ধ্বে। সুরের সঙ্গে তার বাণী মিলেমিশে যেন একাকার হয়ে গেছে। মনে হয়, যেন তিনি বিনি সুতোয় গানের মালা গেঁথেছেন।

সুরকার রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো: গানের ভাব ভাষা তথা রস অনুযায়ী রাগের প্রয়োগ, সার্থক রাগ প্রয়োগ, বাংলা তথা বিভিন্ন অঞ্চলের লোকসঙ্গীতের সুরের সুন্দর প্রয়োগ, পাশ্চাত্য সুর ও নিজের সুরের সমীকরণ এবং বিবাদী স্বরের সার্থক প্রয়োগ। সুরকার রবীন্দ্রনাথ তাঁর সৃজনশীল প্রতিভার গুণে কূপমণ্ডূকতার উপরে উঠে গতানুগতিক ধারা পরিহার করে সকল প্রথাগত সংস্কার অস্বীকার করে বাংলা গানের জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর ভাই সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তিনি ভাবকে মেনেছেন উপকরণ হিসেবে, সুরকেও লঘু করেননি, তার সুষমা ও শালীনতা অক্ষুণ্ন রেখেছেন।’ রবীন্দ্রনাথের পক্ষেই এই দুরূহ কাজ সাধন সম্ভব হয়েছে। গান মানবধর্মী ও ব্যক্তিধর্মী হয়েছে। সঙ্গীতের ভুবনে এক নতুন ধারার সংযোজন হয়েছে। এই অসামান্য কীর্তির সব প্রশংসা একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য।

গায়ক হিসেবে রবীন্দ্রনাথের জীবন গীতিকার ও সুরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই শুরু। পরিবারে গানের চর্চার ভেতর দিয়েই তিনি বেড়ে উঠেছেন। গানের পরিমণ্ডলে বাস করে গান গাইবেন না, তা হতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। বাল্যকালের কথা বলতে গিয়ে স্মৃতিচারণে বলেছেন, ‘‘মনে আছে বাল্যকালে গাঁদাফুল দিয়া ঘর সাজাইয়া মাঘোত্সবের অনুকরণে আমরা খেলা করিতাম। সে খেলার অনুকরণের আর সমস্ত অঙ্গ একেবারেই অর্থহীন ছিল, কিন্তু গানটা ফাঁকি ছিল না। এই খেলার ফুল দিয়ে সাজানো একটা টেবিলের উপর বসিয়া আমি উচ্চকণ্ঠে ‘দেখিলে তোমার এই অতুল প্রেম-আননে’ গান গাহিতেছি, বেশ মনে পড়ে।’’ বাল্যকালে নিয়মিত সঙ্গীত চর্চা না করলেও বাড়িতে সাঙ্গীতিক পরিবেশে বড় হওয়ার কারণে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সম্বন্ধে তাঁর ধারণা জন্মেছিল ছোটবেলা থেকেই। তাঁর নিজের জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘ছেলেবেলায় যেসব গান সর্বদা আমার শোনার অভ্যাস ছিল, সে শখের দলের গান নয়, তাই আমার মনে কালোয়াতি গানের একটি ঠাট আপনাআপনি জমে উঠেছিল। কালোয়াতি সঙ্গীতের রূপ ও রস আমার মধ্যে পাকা হয়ে উঠেছিল।’

শৈশবকালে রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠের স্বর বেশ মিষ্টি ছিল, পারিবারিক বন্ধু শ্রীকণ্ঠ সিংহ এবং কবির পিতা সুকণ্ঠ শিশু-গায়ক রবীন্দ্রনাথের অন্যতম সমঝদার ছিলেন। কণ্ঠের মিষ্টি সম্পদের জন্য পিতা বালক পুত্রকে ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, ‘রবি আমাদের বাংলাদেশের বুলবুল’। পারিবারিক ঘরোয়া পরিমণ্ডলে গান গেয়ে আসর মাত করে দিতেন বালক-গায়ক রবীন্দ্রনাথ। তার গলার যেমন সুর, তেমনি ছিল গান। এভাবেই সেই অল্প বয়সে পারিবারিক পরিমণ্ডলে দিনের পর দিন গান করে কবি গীত পরিবেশনায় দক্ষ হয়ে ওঠেন। অল্প বয়সকালে তিনি গান গাইতে কখনও ক্লান্তিবোধ করতেন না। কণ্ঠ মাধুর্যের জন্য কবির একটা গর্ববোধও ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর কণ্ঠের সেই মিষ্টি সুর অবশ্য ছিল না। কবিও আক্ষেপ করে সে কথা বলেছেন, ‘‘আমার অল্প বয়সের সে গলা আর নেই। তোমাদের এখন আর কি শোনাব? পেয়েছিলুম বটে একটি গলার মতো গলা কিন্তু ভগবান কেড়ে নিয়েছেন, এখন কি আর গান গাইতে ইচ্ছে করে?... তখন ‘মধ্যমে’ ছেড়ে দিতাম সুর, পাখির মতো সে উড়ে চলত ধাপে ধাপে পর্দায় পর্দায়।’’

রবীন্দ্রনাথ নাটকে অভিনয় করেছেন। মঞ্চে গান পরিবেশন করেছেন। এমন কর্ম আর করব না, কাল মৃগয়া, বাম্মীকি প্রতিভা, অচলায়তন, ফাল্গুনী, নটীর পূজা, প্রায়শ্চিত্ত, রাজা, অরূপরতন নাটকে অভিনয়ের সঙ্গে অনুপম কণ্ঠে গান গেয়েছেন। সামাজিক ও শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন উত্সব-অনুষ্ঠানে তিনি গান করেছেন। ‘খামখেয়ালী সভা’ কবির গান না হলে জমতই না। অনেক আসরে প্রবন্ধ পাঠের জন্য গিয়ে শ্রোতাদের অনুরোধে গান পরিবেশন করতে হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ বিদেশেও গায়ক হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেন। তিনি ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে ও বিভিন্ন সভায় এবং অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেছেন। কবি স্বরচিত গানের রেকর্ড করেছেন। গায়ক রবীন্দ্রনাথ সুরকার বা গীতিকার রবীন্দ্রনাথের অপেক্ষা কোনো অংশে কম ছিলেন না। কবি নিজের গান সম্পর্কে বলেছেন, ‘মানুষের কতকগুলো অহঙ্কারের বিষয় আছে। যেমন আমার গান। কি রকম করে হৃদয়ে ভেসে উঠেছে—কতখানি সত্য, দুঃখ idealise করেছে। যেখানে সব বিশ্বের harmony-র মূল—আমার গান সেখানেই পৌঁছায়।’

নিজের কণ্ঠ ও গানের উপর কতখানি বিশ্বাস থাকলে একজন গায়ক এমন মন্তব্য করতে পারেন, রবীন্দ্রনাথ তারই প্রমাণ। পারিবারিক প্রতিবেশ এবং স্বভাবজ আকর্ষণই রবীন্দ্রনাথকে একজন উচ্চমানের গায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের চেয়ারম্যান মাইকেল স্যাড্লার রবীন্দ্রনাথের গান শুনে বলেছিলেন, `Under the influence of the poet and under the spell of his skill, our ears and minds became sensitive to the cadence and harmonies of Indian Music.` প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর তাঁর পরিবারে সঙ্গীতের যে বীজ বপন করেছিলেন, তা ক্রমে ক্রমে ঠাকুর পরিবারে বিশাল সঙ্গীত মহীরুহের রূপ ধারণ করেছিল। তাঁর উত্তর-পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রূপে-রসে-গন্ধে ও অপরূপ মধুরিমায় ভরে সেই সঙ্গীতকে অধিষ্ঠিত করেছিলেন শ্রেষ্ঠ আসনে। পুনর্মুদ্রিত