রাহমান চৌধুরীর চিলতে গদ্য ‘নিজস্বার্থে জ্ঞানপাপী’

প্রকাশিত : জুন ১৭, ২০২২

মনে করুন, একজন অভিনয় করছে বলে কোটি কোটি মানুষ তার ভক্ত। তিনি অভিনয় করেছেন, ভোগবিলাস করেছেন, নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন। তবুও ভক্তরা তার প্রশংসায় অন্ধ। তাকে একনজর দেখার জন্য দিশেহারা। কিন্তু আরেকজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী কঠিন রোগের টিকা আবিষ্কার করেছেন অথচ তার অগণিত ভক্ত সংখ্যা নেই। মানুষ বিজ্ঞানীর খোঁজ খবর রাখতে তত উদগ্রীব নয়। কিন্তু বিশ্বের মানুষের বৃহত্তর কল্যাণে কাকে বেশি প্রয়োজন? বিজ্ঞানীকে নাকি অভিনেতাকে? কিন্তু বিজ্ঞানীর জন্য মানুষের দিশেহারা অবস্থা নেই। মানুষ নিজের প্রিয় সঙ্গীত শিল্পী বা অভিনেতার প্রয়াণে আত্মহত্যা করেছে। বিজ্ঞানীর বেলায় করেছে কি? মানুষের জীবনে কিছু কাজ আছে যা নেশার শামিল এক উন্মাদনা।

মানুষ পক্ষের বা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের নিয়ে মারামারি করে, বিদ্বেষ ছড়ায় ঠিক ধর্ম নিয়ে দাঙ্গা করার মতো। বিজ্ঞানীদের বেলায় তেমনটা ঘটেনি কখনো। কারণ খেলোয়ারদের নিয়ে, তারকা অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়ে মানুষ যেরকম আদিখ্যেতা করে বিজ্ঞানীদের বেলায় তা ঘটে না। বিজ্ঞানীদের মতো মানুষের বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করে শ্রমিক কৃষকরা। শ্রমজীবীদের অবদান আরো বড়। যদি তারা শস্য বা ফসল উৎপাদন না করে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। কিন্তু ভদ্র বা তথাকথিত শিক্ষিত সমাজে তাদের না আছে সম্মান না আছে বিরাট ভক্তের সংখ্যা। ফলে বৃহত্তর তথাকথিত সভ্য সমাজের বিচার বিবেচনা বিবেক বুদ্ধির ওপর আস্থা রাখার কারণ নেই। কারণ তারা কোথাও না কোথাও ভক্ত অন্ধ। চোখে বিশ্বাসের ঠুলি পরে থাকে।

বলা যেতে পারে, অন্য সবরকম অন্ধ বিশ্বাসীদের মতো তারাও আর একদল অন্ধ বিশ্বাসী। নিজেদের তারা যতই প্রগতিশীল মনে করুক, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্ধ। সত্যিকারের বিশ্লেষণী ক্ষমতা তাদের নেই। হতে পারা তারা নামজাদা কবি, হতে পারে নামজাদা উপন্যাসিক কিংবা বিরাট অভিনেতা অভিনেত্রী, অথবা নামজাদা শিক্ষক বা গুণীজন, হতে পারে সমাজের তথাকথিত বিশাল ব্যক্তিত্ব; কিন্তু তাদের দৃষ্টি অন্ধভাবে পক্ষপাতমূলক-কিংবা নিজস্বার্থে জ্ঞানপাপী তারা। বিরাট জনগণের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তারা জ্ঞানচর্চা করে, সবকিছু জেনেশুনে বিশেষ কারো পক্ষে চাটুকারি করার জন্য। সভ্যতার উষালগ্ন থেকে চাটুকাররা আছে সকল সমাজে। কিছু সমাজে তাদের দেখা যায় মড়ক লাগার মতো।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ