রিফাত চৌধুরী

রিফাত চৌধুরী

রিফাত চৌধুরীর বচনসম্ভার

প্রকাশিত : জুন ৩০, ২০২০

১. শুধু আইন পাশ করে সমাজ বিপ্লব আনা সম্ভব নয়, এমনকি মূল্যবোধ ও মানসিক পরিবর্তন ঘটানোও সম্ভব নয়। বিশ্বে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি যেখানে এগুলো বাদ দিয়ে সমাজ বিপ্লব আনা সম্ভব হয়েছে। একমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই সমাজ বিপ্লব আনা সম্ভব।

২. পুলিশ না হাতি। দেশে যদি সত্যিই পুলিশ থাকবে তাহলে পথেঘটে এসব হয় কেমন করে? আসলে পুলিশ থেকেও নেই, তারা সবাই চোখ বন্ধ করে বসে আছে। নইলে কি এই শহরটার এমন দুর্দশা হয়?

৩. মানুষ যত দায়িত্বশূন্য হয়, সমাজিক পরিপ্রেক্ষিতে তত সে নিজের ব্যক্তিগত সমস্যার প্রতি মনোনিবেশ করতে পারে। মানুষ দায়িত্বহীন ভাবে বাঁচতে পারে না। কারণ তাতে তার সৃজনীশক্তি স্বাধীনতা ও সম্মান সবই বাধাপ্রাপ্ত হয়। অতএব শুরু হয় আত্মসচেতনা ও আত্মনির্ভরতার প্রয়াস।

৪. কাজী নজরুল ইসলাম যে খাঁটি বাঙালি কবি ছিলেন, তার প্রমাণ তিনি তাঁর দুই ছেলের খাঁটি বাঙালি নাম রেখেছিলেন, আরবি নাম নয়। আর ‘ইশারা’, ‘রুমাল’, ‘আসবাব’, ‘কারখানা’ শব্দগুলি সমস্ত হিন্দু-মুসলমান বাঙালিই ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু ‘গোসল’, ‘পানি’, ‘শাদি’, শব্দগুলি মুসলমান বাঙালিরাই শুধু ব্যবহার করে।

৫. আমার প্রয়োজন হয় মানসিক ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য সাংস্কৃতিক আহার।

৬. বড়লোকের উপরে সকলেরই প্রচণ্ড রাগ দেখতে পাই। অথচ নিরাব্বই ভাগ মানুষই বড়লোক হবার, যেনতেন প্রকারেণ বড়লোক হবার স্বপ্ন দেখে। এ এক আশ্চর্য ব্যাপার, সত্যিই!

৭. সাকসেফুল হলেই যে মানুষকে অমানুষ হয়ে যেতে হবে, তার কোনো মানে নেই। মনুষ্যত্ব না থাকলে আর মানুষের বাকি কি থাকল?

৮. আমি যা কিছুই করি না কেন, জীবনের সবক্ষেত্রেই এক নম্বর হতে চাই। দু নম্বর তিন নম্বর নয়, এক নম্বর। এক নম্বর হওয়ার জেদ যে করবে, তাকে অনেক কিছু হারাবার জন্যে তৈরি হয়েই সেই লক্ষ্যের দিকে এগোতে হবে।

৯. দেশের দুর্দিনে বাঙালির ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রথমত চরিত্র বলের উন্নতি প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টায় আত্মনিয়োগ। কারণ চারিত্রিক বিপর্যয়ই আজকে বাংলার সাহিত্য শিল্প ও জীবন বিপন্ন করে তুলেছে।

১০. সংবাদপত্র শাসকদল ও সরকারের আজ্ঞাবহ।

১১. পদ্মা সেতুকে গ্রাস করল রাজনৈতিক রাহু।

১২. জীবন আর মৃত্যুর আলাদা কোনো অর্থ নেই। জীবন বা মৃত্যু দুটোই সমান সমান।

১৩. খাঁটি ধার্মিক লোক এ দুনিয়াতে আপনি কখনোই পাবেন না। সৎ একজন মানুষের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, এমনকি মানবিক দুর্বলতা থেকে তিনি মুক্ত না থাকলেও।

১৪. বাংলাদেশের সংবিধান নাগরিকদের প্রকৃতপক্ষে একটি অধিকারই দিয়েছে, তা হলো ভোটাধিকার। আর এই মূল্যবান অধিকারটি প্রয়োগের ফলে যে জনপ্রতিনিধিদের হাতে দেশ শাসনের ভার তুলে দেয়া হয় প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রতিদানে তারা সাধারণ মানুষের কথা ভুলে যেয়ে দলীয় স্বার্থকেই বড় করে দেখে। এটাই বাংলাদেশের রাজনীতির এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিক। তাই রাজনৈতিক স্বার্থেই চলে দল বদলের খেলা। আর সাধারণ মানুষ শুধু সমস্যার বোঝা নিয়ে ফুটবলের মতো একের পা থেকে অন্যের পায়ে ঘুরে বেড়ায়। সাধারণ মানুষ চায় চিকিৎসার সুযোগ। পরিবহন সমস্যার সমাধান, সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা আর অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান, একটু মাথা গোঁজার জায়গা। এই নূন্যতম প্রয়োজনগুলি মিটলেই সকলেই খুশি। বারবার কৃতজ্ঞচিত্তে সরকারের জয়ধ্বনি করবে। সাধারণ মানুষের কাছে দল বা মন্ত্রী বড় নয়। তার বাঁচতে চায়, বাঁচার সুযোগের জন্যে তীর্থের কাকের মতো সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকে।

১৫. ধর্ম প্রশ্ন করলেন, পৃথিবীতে আশ্চর্য কী? ভাঙা মসজিদের ইমাম বললেন, বাজারের সকল সামগ্রীই অগ্নিমূল্য, তথাপি কোনো সামগ্রীই অবিক্রিত পড়ে থাকে না।

১৬. বাংলাদেশে যেখানে পরিবার পরিকল্পনার সামগ্রী পৃথিবীর সবচেয়ে কম মূল্যে বিক্রি হয় এবং গরিবদের বিতরিত হয় বিনামূল্যে, সেখানে পাশে অপুষ্টিতে ভরা শিশুকে রেখে যে জননী পৃথিবীতে আরও একজনকে আনতে চায় তার ভাববার দরকার আছে কি?

১৭. রেস্তোরাঁর বাংলা কি? নেই। অন্তত এমন কোনো বাংলা শব্দ গঠন করা যাবে না, যা দিয়ে রেস্তোরাঁ বলতে যা কিছু বোঝায় তার সবটুকু বোঝা যাবে। অতএব রেস্তোরাঁই বাংলা। যেমন স্টেশন বাংলা, ট্রেন বাংলা, পোস্টকার্ড বাংলা, ক্রিকেট বাংলা। বাংলা জানে, কেমন করে অপরের ঝুলির ধন আত্মসাৎ করে ধনী হতে হয়। তাই বাংলা এমন ধনী। অবশ্য আত্মসাৎ করা শব্দটিতে ধ্বনিগত তারতম্য হয়তো কিছু ঘটে। তা ঘটুক। সেটা এমন কিছু অঘটন নয়।

লেখক: কবি ও অভিনেতা