
রূপনির রূপকথা
উপন্যাস ২৯
সাজ্জাদ হায়দারপ্রকাশিত : জুন ২০, ২০১৯
আজও কোনো স্টুডেন্ট ক্লাসে আসেনি। টিচারর্স ক্লাবে বসে টিচাররাও অলস সময় কাটাচ্ছে। ভার্সিটির আমন্ত্রণে বেশ কয়েকজন গার্ডিয়ান এসেছে। এদের মধ্যে জলি বানু আছে। ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তাকে ডেকেছে বলে তিনি বিশেষ পুলকিত। বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ই তিনি স্থির করেছেন, লীডার শীপটা তাকে ধরে রাখতে হবে। রূপনির ব্যাপারে কোনো আপোষ নয়। এই ভার্সিটিতে অনেক হোমরা-চোমরার ছেলেমেয়ে পড়াশুনা করে। রুশনির ক্লাসমেটের বাবা মন্ত্রী, আরেক ক্লাসমেটের বাবা একটা বড় দলের বড়পদে আছেন। এদের ব্লেসিং থাকলে খুব সহজেই রাজনীতির মাঠ কাঁপিয়ে দেয়া যায়। মন্ত্রী নয়তো মহিলা কোটায় এমপি হওয়াটা নস্যি।
ভার্সিটির ক্ষুদ্র চত্বরটায় ছাত্র-ছাত্রীরা ঠাসাঠাসি করে বসে আছে। একজন গীটার বাজিয়ে গান গাচ্ছে, বাকিরা গলা মেলানোর চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে নাচানাচি করছে। বাকিরা তালি দিচ্ছে। মাঝে মাঝে রূপনির বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য শ্লোগান দিচ্ছে।
বোর্ড রুমে গার্ডিয়ান প্রতিনিধিদের মিটিংয়ে জলি বানু যুদ্ধদেহি মনোভাব নিয়ে হাজির হলেন। তিনি দেখলেন, বড় মাপের রাজনৈতিক দলের নেতা, যিনি মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বলে গুজব রয়েছে সেই লোক সবার মধ্যমনি হয়ে বসে আছেন। ভিসি উদ্ভূত পরিস্থিতির বিস্তারিত ব্যাখা করলেন। বক্তব্য শেষে তিনি রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য আহ্বান করলেন। রাজনৈতিক নেতা পাঁচ মিনিট নিজের ঢোল নিজে পিটিয়ে বললেন, তিনি সব সময় তৃণমূলের নেতা, সবার সাথে ছিলেন, সবার সাথেই থাকবেন। তিনি বললেন, ‘অতএব আমি মনে করি, স্টুডেন্টদের দাবি মেনে নেয়াই উত্তম। কে কার মেয়ে, কে কার ছেলে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, শিক্ষা। সুতরাং স্টুডেন্টরা ভালই করেছে একটি মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে।’
এ লোকের কথার ওপর কথা চলে না। জলি বানু হতাশ হয়ে বসে রইল। পরমুহূর্তে তিনি রুম থেকে দ্রুত বাইরে চলে এলেন। মুখে বিজয়ির হাসি নিয়ে স্টুডেন্টদের জটলার কাছে এলেন। জলি বানুকে দেখে মুখ বেঁকালো কেউ কেউ। এই মহিলাই রূপনিকে এক্সপেল্ড করতে উঠে পড়ে লেগেছিল। জলি বানু হাসি হাসি মূখ নিয়ে বললেন, ‘এই ছেলেমেয়েরা আমরা তোমাদের দাবি মেনে নিয়েছি। রূপনি আবার এখানে পড়তে পারবে।’
জলি বানুর কথায় একটু গুঞ্জন উঠল। পরমুহূর্তে ‘হুররে’ বলে লাফিয়ে উঠল গোটা দলটা। করতালি আর এ ওকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ করতে লাগল। রুশনি মায়ের কর্মকাণ্ড দেখে ফুঁসতে লাগল। জলি বানু ওকে দেখে এগিয়ে এলেন। রুশনি সরোসে তাকালো মায়ের দিকে, তারপর তীব্র কণ্ঠে মাকে বলল, ‘এটা তোমার কত নব্বর অ্যাক্টিং?’ মেয়ের কথায় জলি বানু অবাক হলেন। মেয়ের চেহারা দিকে তাকিয়ে ভয় পেলেন। রুশনিকে অচেনা মনে হচ্ছে, ওর চেহারার কাচুমাচু ভাবটা নেই। চেহারাটা এতই বেপরোয়া যেন ভস্ম করে দিতে চাচ্ছে জলি বানুকে। জলি বানু রুশনির চোখের আগুন থেকে বাঁচতে অন্যদিকে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলেন। চলবে