শিমুল বাশারের গল্প ‘প্রণয়ীর দৃষ্টিভঙ্গি’

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১

প্রণয়ীর দৃষ্টিভঙ্গি বিচার করতে নুসরাত একটা হাফপ্যান্ট পড়ে মেহেদী মার্টে এলো। এ জীবনে বহু ছ্যাচড়া তার দেখা হয়ে গেছে। বেশিরভাগ ছেলেই তার রূপে মুগ্ধ হয়ে যায়! চোখ ফেরাতে পারে না আর! আড়ালে আবডালে শরীরের আকর্ষণীয় ভাঁজগুলোর দিকে লুল হয়ে তাকিয়ে থাকে। নুসরাত জানে, প্রণয় প্রত্যাশী ছেলেদের একটু উপেক্ষা করলেই তারা নিজেদের যোগ্যতা আর সক্ষমতা প্রমাণ করতে অকাতরে টাকা ঢালতে থাকে। রেস্টুরেন্টে খাওয়ায়, মোবাইল, জামা, জুতা, জুয়েলারি কিনে দেয়। এসব বলদা টাইপের ছেলেদের সাথে প্রেম করাতো দূরের কথা, পাশাপাশি হেঁটে চলাটাকেও কখনো কখনো হজম করা তার জন্য কঠিন হয়ে যায়।

ছেলেটা অনেক আগে থেকেই নুসরাতের জন্য মেহেদী মার্টের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। লাস্যময়ীর মতো নুসরাত মেহেদী মার্টে ঢুকে গেল। ঢুকেই এক লাফে মেঝে থেকে একটা নোংরা কাগজ নিজে হাতে তুলে নিয়ে ওয়েস্টবিনে রেখে আসার ভব্যতা দেখিয়ে চমকে দিলো ছেলেটাকে। গ্রামের কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠা ছেলেটা তখন চারপাশের জোড়া জোড়া চোখের জ্বলজ্বলে আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল। নুসরাতের টি-শার্টে ঢাকা সুউচ্চ বক্ষ যুগল আর শুভ্র সুগঠিত নগ্ন পায়ের দিকে গলে গলে নামতে থাকলো মার্টের ক্রেতা বিক্রেতাদের দৃষ্টি। পরিস্থিতির আকস্মিকতায় ছেলেটা তখন দ্রুততার সাথে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিতে নুসরাতের কাছে জানতে চায়, এখানে তুমি কি কি কিনতে চাও?

নুসরাত ছেলেটাকে সতর্ক করে দিতেই কড়া চোখে প্রতিউত্তরে বললো, তুমি বলার অনুমতি আপনাকে এখনো দেয়া হয়নি।

বাইরে তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দু`হাত ভর্তি বাজারের থলে নিয়ে মেহেদী মার্টের গেটের কাছে এসে হাঁক দিয়ে রিকশা ডাকলো নুসরাত। গেটে থাকা গার্ড যুবকটা ছাতা হাতে এগিয়ে এসে নুসরাতকে রিকশায় তুলে দিয়ে আসলো আর ছেলেটা ভিজতে ভিজতে নুসরাতের পেছন পেছন কোনোরকমে রিকশায় চড়ে বসলো।

গার্ড যুবকের সৌজন্যতাবোধ নুসরাতকে মুগ্ধ করেছে। ছেলেটা নুসরাতের প্রকৃত মুগ্ধতার আবেশ ভরা মুখখানি দেখতে পেয়ে নিজেও তখন মুগ্ধ হয়ে আছে। এরইমধ্যে রিকশাও চলতে শুরু করেছে। সম্মুখে মেলে রাখা নুসরাতের নগ্ন পায়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। অমলিন দৃষ্টিতে পদ যুগলের সেই নগ্নতার দিকে ছেলেটাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নুসরাত মৃদু হাসলো। হেসে জিজ্ঞেস করল, কি দ্যাখেন?

ছেলেটা বললো, আপনার পা সুন্দর!
নুসরাত বললো, আমার সবই সুন্দর।

ছেলেটা বললো, আমারও সেটাই মনে হয়। তবে বৃষ্টির ফোটারা যদি একবারের জন্য জ্ঞান পেত তবে আপনার পদযুগলে পতিত হয়ে পুনরায় তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলতো।

নুসরাত ছেলেটাকে পেয়ে তখন যে আকাশ পাতালে ভাসছিল, ছেলেটা তার থেকে অনেক দূরে মাটির কাছে কবরে এক পা নামিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল।